ভগ্নিপতির ধর্ষণের শিকার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসা নিচ্ছে ৯ বছরের এক শিশু। তার আরেক বোনও বড় বোনের ওই স্বামীর ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। রোববার মেয়েটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু এই মাইয়্যা না, আমার তিনটা মাইয়্যারই জীবনডা শ্যাষ কইরা দিছে এই ছেলে। বড় মাইয়্যা পালায় বিয়া করছে। তারপর মেয়ের জামাই আমার মেজো মাইয়্যার সঙ্গেও খারাপ কাজ করছে। আর এখন ছোট মাইয়্যার অবস্থা তো খুবই খারাপ।’ বৃহস্পতিবার সাভারে এই ঘটনার পর মেয়েটির বাবা সাভার থানায় ধর্ষণের মামলা করেছেন। ওই মামলায় আসামি বর্তমানে কারাগারে আছেন। ঘটনা জানার পর মেয়েকে নিয়ে প্রথমে সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান মা–বাবা। পরে সেখান থেকে মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই বাবা জানালেন, তাঁর বড় মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর সন্তান হওয়ার কথা রয়েছে।
সাইদার টানে মুসলিম হয়ে আমেরিকার যুবক গাজীপুরে
এই সময়ে এ ঘটনায় ওই মেয়েও ভেঙে পড়েছেন। ছোট মেয়ের ঘটনার পর পোশাক কারখানায় কাজ করা ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী মেজো মেয়েও জানিয়েছে, তার সঙ্গেও এই ভগ্নিপতি বিভিন্ন সময় খারাপ আচরণ করতেন, ভয়ে সে কথা মেয়ে বলতে পারেনি। মেয়েটির বাবার সঙ্গে সন্ধ্যায় কথা হয়। মেয়ে কেমন আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাইয়্যার ওই জায়গায় মনে হয় সেলাই দিতে হইছে। তাই হাঁটতে একটু সমস্যা হয়। তবে আগের চাইতে অনেক ভালো আছে আজ (রোববার)।’ ধর্ষণের শিকার মেয়েটি মা–বাবার সঙ্গে সাভারে যে বাসায় থাকে, তার পাশের ঘরেই বড় বোন ও তাঁর স্বামী থাকতেন। মেয়েটির মা পোশাক কারখানায় কাজ করেন। বাবা অটোচালক। ধর্ষণের শিকার মেয়েটির ভগ্নিপতিও অটোচালক ছিলেন।
‘হিরো আলমকে থামান, কেউ ওর নামে মামলা করেন’
দুই বোনই বড় বোনের বাসায় যেত। বাবার ভাষ্যমতে, ঘটনার দিন বড় বোন ছাদে ছিলেন। সেই সুযোগে ছোট মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন ভগ্নিপতি। ভয় দেখান, এ কথা কাউকে বললে মেয়েটির বড় দুই বোনকে মেরে ফেলবেন। তাই মেয়েটি বাড়ি ফিরেও কাউকে কিছু বলতে পারেনি। পাশাপাশি অনেকগুলো ঘরের এক ঘরের একজন জানতে চেয়েছিলেন, মেয়েটির জামায় কী লেগেছে? মেয়েটি ভয়ে রক্তের কথা না বলে রং লেগেছে বলে সেখান থেকে চলে যায়।
মেয়েটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কাজ শেষ করে বাসায় ফেরেন। তখনো তাঁর স্ত্রী ও মেজো মেয়ে কাজ থেকে ফেরেননি। ছোট মেয়েকে খাবারের জন্য ডাকলে বলে তার পেট ব্যথা করছে। পরে কাছে গিয়ে জানতে চাইলে জানায়, তার রক্ত পড়ছে। এই বাবা বললেন, ‘মাইয়্যার কাছে যাইয়া আমার তো মাথা নষ্ট হইয়া যায়।’
মেয়ের সঙ্গে এই বাবার খুব ভালো সম্পর্ক। সে তার মা ও বোনদের ভয় পেলেও বাবাকে ভয় পায় না। বাবা কাউকে কিছু বলবেন না এ কথা বলার পর মেয়ে জানায়, ভগ্নিপতি তার সঙ্গে এ কাজ করেছেন। মেয়ের ভাষায়, ভগ্নিপতি তার সঙ্গে খেলতে চেয়েছিলেন। ভগ্নিপতি মুখ চেপে ধরেছিলেন, যাতে চিৎকার দিতে না পারে। আর এ কথা কাউকে বলে দিলে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার ৭ বিব্রতকর মুহূর্ত
তাই মেয়ে বাড়ি ফিরেও কাউকে কিছু বলতে পারেনি। বাবা বললেন, ছোট মেয়ে ভয়ে বারবার বলছিল, ‘আব্বু, তুমি কিন্তু এই কথা কাউরে বলবা না।’ বড় মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে বিভিন্নভাবে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে বলে জানান ধর্ষণের শিকার মেয়েটির বাবা। তিনি বলেন, ‘ছোটখাটো অপরাধ হইলে মাফ কইরা দিতাম। কিন্তু এইটা তো তেমন অপরাধ না। ছোট মাইয়্যাটার সারা জীবনের লাইগ্যা দুর্নাম হইল। মেজো মাইয়্যা আগেই ওর কথা জানাইলে ছোট মাইয়্যাটার আজ এই হাল হইত না। খুব জ্বালায় আছি, কষ্টের মধ্যে আছি। কিছু কিছু অন্যায় তো আর মানা যায় না।’
এই বাবাকে কাজ ফেলে একবার থানা, একবার হাসপাতাল করতে হচ্ছে। এলাকার লোকজনও ঘটনার কথা জেনে গেছেন। ওসিসির আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়েটির শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। এখন আস্তে আস্তে ভালো হচ্ছে।’ সাভার থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ধর্ষণ মামলার আসামিকে ঘটনার দিনই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।
Source: Prothom alo