বয়স মাত্র ১০ বছর। এর মধ্যেই জীবন অনেকটাই কঠিন হয়ে ওঠে ভারতের বিহারের স্কুলছাত্রী সীমার কাছে। দুর্ঘটনায় তার এক পা কাটা গেছে। কিন্তু ‘প্রতিবন্ধী’ তকমা নিয়ে থেমে যেতে সে রাজি নয়। তাই এক পায়ে ভর দিয়েই রোজ স্কুলে যায় সীমা। তাও আবার ১ কিলোমিটার রাস্তা এক পায়ে হেঁটে! বিহারের জামুই জেলায় দিনমজুর পরিবারের সন্তান সীমার স্বপ্ন বড় হয়ে শিক্ষক হবে।
স্কুলেও ভর্তি হয়েছিল সে। কিন্তু দুই বছর আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারাতে হয় সীমাকে। পরিবারের সবাই মেয়ের স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কা করছিলেন, সীমা কিন্তু নিজের স্বপ্নের জাল ছিঁড়তে দেয়নি কোনোভাবেই। সীমার পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সে তার পরিবারকে জানায়, স্কুলে যাবে এবং এক পা নিয়েই। তার জেদের কাছে হার মানতে হয় পরিবারকেও। এক পা নিয়েই ফের শুরু হয় সীমার স্বপ্ন গড়ে তোলার সফর। রোজ এক কিলোমিটার পিঠে ব্যাগ নিয়ে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হয় সে।
ছোট্ট মেয়েটির এভাবে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যাওয়ার একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। আশ্চর্যজনক এবং অনুপ্রেরণামূলক ক্লিপটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অভিনেতা সোনু সুদ, যিনি করোনা মহামারি চলাকালীন জনহিতকর কাজের জন্য প্রশংসা অর্জন করেছিলেন তিনি সীমাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছেন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে সোনু সুদ লিখেছেন, ‘এখন সে এক নয়, দুই পায়ে লাফিয়ে স্কুলে যাবে। আমি টিকিট পাঠাচ্ছি, দুই পায়ে হাঁটার সময় এসেছে।’
পড়ুন: এক পায়ে স্কুলে যাওয়া সেই সীমার পাশে সোনু সুদ
বিহার সরকারের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন বিভাগের মন্ত্রী ড. অশোক চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে ট্যাগ করে সীমার ভিডিও শেয়ার করেছেন।
লিখেছেন, ‘আমরা গর্বিত যে আমাদের রাজ্যের শিশুরা শিক্ষার প্রতি সচেতন হচ্ছে, সমস্ত বাধা অতিক্রম করছে এবং একটি শিক্ষাগ্রহণ। সীমা এবং তার মতো প্রতিটি শিশুকে চিহ্নিত করে তাদের যথাযথ সাহায্য করা হবে। যাইহোক, মেয়ে শিশুর কাছে প্রয়োজনীয় সাহায্য পৌঁছেছে।’ অন্যদিকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এক টুইটে লিখেছেন, ‘১০ বছরের সীমার কাজ আমাকে আবেগপ্রবণ করে তুলেছে। দেশের প্রতিটি শিশু সুশিক্ষা চায়। আমি রাজনীতি জানি না, আমি জানি প্রতিটি সরকারেরই যথেষ্ট সম্পদ রয়েছে। সীমার মতো প্রতিটি শিশুকে সর্বোত্তম শিক্ষা দেওয়া প্রতিটি সত্যিকারের দেশপ্রেমের মিশন হওয়া উচিত, এটাই প্রকৃত দেশপ্রেম।’ এরই মধ্যে স্থানীয় জেলা প্রশাসন তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে।
গতকাল বিকেলে তার বাড়িতে গিয়েছিলেন জেলাশাসক অবনীশ কুমার। সীমার চলার পথকে সুগম করতে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি ট্রাইসাইকেল। এদিকে তাকে কৃত্রিম পা দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন অবনীশ কুমার।
“মনের ইচ্ছা শক্তি প্রবল হলে কোনো প্রতিবন্ধকতা দমিয়ে রাখতে পারে না” সত্যি অনেক সুন্দর একটি ব্লগের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।