আপনার অথবা আপনার আশে পাশের অনেকেই গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার কারণে অনেকেই অনেক খাবার এড়িয়ে চলেন। কিন্তু তারপরেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে বাঁচতে পারেন না। গ্যাস্ট্রিকের মূল কারণগুলো হলো এসিডিটি, হজমের সমস্যা, বুক জ্বালা পোড়া করা ইত্যাদি। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথার আরো কিছু কারণ হতে পারে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, ফুড পয়জনিং, কিডনিতে পাথর, আলসার ইত্যাদি। আসুন জেনে নেয়া যাক গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার এবং গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায়।
একটি মাঝারী আকৃতির লেবু চিপে রস বের করে নিন। এরবার লেবুর রসের সাথে আধা টেবিল চামচ বেকিং সোডা ও এক কাপ পানি মিশিয়ে নিন। বেকিং সোডা ভালো করে মিশে যাওয়া পর্যন্ত নাড়ুন। এবার মিশ্রণটি খেয়ে নিন। নিয়মিত খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় আরাম পাওয়া যায়। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথায় সাথে সাথে আরাম পেতে চাইলে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খান। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যথা কমে যাবে।
গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রনা ভোগ করেননি এমন মানুষ খুব কমই আছে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা সাধারনত বিভিন্ন ঔষধ খেয়ে থাকি। আজ শিখে নিন গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের প্রকারভেদ এবং গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম ।
গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের প্রকারভেদ এবং গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
আমরা সাধারনত দুই ধরনের গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খাই।
১। এসিড নিউট্রালাইজার যা সাধারণত অ্যান্টাসিড নামে পরিচিত
২। এসিড ক্ষরণ বাধা প্রদানকারী। এগুলো আবার দুই ধরনের।
Proton Pump Inhibitor (PPI) এবং H2 Blocker।
আসুন দেখি এই ওষুধগুলো কিভাবে খেতে হয়।
এসিড নিউট্রালাইজার বা এন্টাসিডঃ এই জাতীয় ঔষধ পাকস্থলীতে পূর্বে থেকেই থাকা এসিড নিউট্রালাইজ করে। এই ধরনের সবচেয়ে পরিচিত ওষুধগুলো হচ্ছে এন্টাসিড এবং এন্টাসিড প্লাস। এছাড়াও ম্যাগালড্রেট (যেমনঃ মারলক্স) এবং অ্যালজিনেট (যেমনঃ অ্যালজিসিড, অ্যাসিন্টা) এই জাতীয় ঔষধ। এই জাতীয় ঔষধ খাবারের ১০ থেকে ১৫ মিনিট পূর্বে খেতে হয় বা যখন এসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় তখন খেতে হয়।
জেনে নিন গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
এসিড ক্ষরণ বাধাদানকারী ঔষধঃ এই ঔষধগুলো পাকস্থলীতে অ্যাসিড ক্ষরণে বাধা প্রদান করে। এগুলো দুই প্রকার।
PPI বা Proton Pump Inhibitor : এগুলো এসিড ক্ষরণের সর্বশেষ ধাপে কাজ করে এবং এগুলো গ্যাস্ট্রিকের সবচেয়ে কার্যকরী ঔষধ। PPI সাধারণত চার ধরনের হয়
১। ওমিপ্রাজল (Omeprazole) যেমন সেকলো, ওমেপ, ওপি ইত্যাদি।
২। ইসমিপ্রাজল (Esomeprazole) যেমন নেক্সাম, এক্সিয়াম, ম্যাক্সপ্রো ইত্যাদি।
৩। প্যানটোপ্রাজল (Pantoprazole) যেমন পেন্টানিক্স, প্যান্টিড ইত্যাদি
৪। র্যাবেপ্রাজল (Rabeprazole) যেমন রেব, ব্যারেগাট, ফিনিক্স ইত্যাদি
PPI খাবারের আগে সাধারণত ৩০ মিনিট আগে বা কমপক্ষে ১০–১৫ মিনিট আগে খেতে হয়।
H2 blocker: এই ঔষধগুলো হিস্টামিন রিসেপ্টর এর উপর কাজ করে এসিড ক্ষরণ কমায়। H2 Blocker কয়েক ধরনের হয়। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় রেনিটিডিন (যেমন রেনিটিড, নিউট্যাক) এবং ফ্যামোটিডিন (যেমন ফেমোট্যাক)।
H2 Blocker ও PPI এর মতো খাবার ৩০ মিনিট পূর্বে বা কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পূর্বে খেতে হয়।
ENO কিনে রাখুন ঘরে, বেশ কার্যকর ।
নোটঃ PPI এবং H2 Blocker খাবারের আগে খেতে ভুলে গেলে যখন মনে পড়বে তখন খাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে ভালো ফলাফলের জন্য খাবারের আগে খেতে হবে।
ঔষধ কখন খাবেন….
আমরা হরহামেশাই বলে থাকি যে, গ্যাস্ট্রিক প্রবলেম বা গ্যাসের সমস্যার জন্য ঔষধ খাচ্ছি। বা পেট ব্যথা পেট ফাঁপা বমি বমি ভাব এই সমস্ত কারণ পরিলক্ষিত হলে আমরা এটাকে গ্যাস্ট্রিক বলে থাকি।বা এসিডিটির প্রবলেম হিসেবে ধরে নিয়ে আমরা যত্রতত্র আশেপাশে যে কোন ফার্মেসিতে বা ঔষধের দোকান থেকে নিজের মন মর্জি অনুযায়ী, সেকলো, লোসেকটিল, ম্যাক্সপ্রো এই ধরনের ঔষধ হরহামেশা নিত্যদিন খেয়ে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন:Biography of Buddhist guru Dalai lama || বৌদ্ধ ধর্মগুরু দালাইলামার জীবন কাহিনী
এগুলো বেশিরভাগ ওটিসি প্রোডাক্ট হওয়ার কারণে যেমন বিক্রি করতেও প্রেসক্রিপশন এর প্রয়োজন হয় না ।এবং খেতে গেলেও আমরা ডাক্তারের পরামর্শ বা ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার কোনো তোয়াক্কা করি না।
গবেষণায় দেখা গেছে ঔষধ কোম্পানী গুলো বা ফার্মেসিগুলো বিক্রির তালিকায় শতকরা ৮৫ ভাগ বিক্রি হয় গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির ঔষধ গুলো।
কাজেই এ থেকেই ধারণা করা যায় আমাদের দেশে গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির ঔষধ গুলো কতটা জনপ্রিয়।
ভয়ানক বিষয় হচ্ছে …
আমাদের অজ্ঞতা বা অবহেলার কারণে গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির প্রবলেম এর জন্য ট্যাবলেট খাওয়ার পরও পুরোপুরি ভাবে সেরে উঠছে না । যেখানে হয়তো ওষুধের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে আমাদের দৈনন্দিন খাবার দাবার যদি আমরা পরিবর্তন করতে পারি ।বা ভেজাল খাবার থেকে যদি নিজেদেরকে নিরাপত্তা দিতে পারি ।তাহলে আমরা অনেকাংশে এই গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে পারি।
আরেকটি কঠিন বিষয় হচ্ছে আমাদের অজ্ঞতাবশত কোন ওষুধটি কখন খেতে হবে তা জানার প্রয়োজন বোধ করি না ।আমরা মনে করি যে কোন গ্যাসের ঔষধ যে কোন ব্যাক্তির জন্য প্রযোজ্য বা যে কেউ যে কোনো সময় যে কোনো ওষুধ সেবণে তার গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির প্রবলেম দূর হয়ে যাবে।
Read More: ১০ মিনিটেই দূর হবে চোখের নিচের কালো দাগ
বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলতে চাই..
যদি এত সহজেই ঔষধপত্র দোকান থেকে কিনে খাওয়া যেত তাহলে ডাক্তারদের এতদিনের কষ্ট করে লেখা পড়ার কোন মূল্য ছিল না বা ডাক্তারের এত প্রয়োজন ছিল না।
কিছু লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে…
ওমিপ্রাজল গ্রুপের ঔষধ
যেমন…
Seclo
Losectil
Ominix
Omep
Ometem
Proceptin
Xeldrin
ইত্যাদি
এই ধরনের ঔষধ গুলো খাবার গ্রহণের আধা ঘন্টা পূর্বে খেতে হয় ।
এগুলো যদি খাবার গ্রহণের পরে খাওয়া হয়। তাহলে এদের কার্যকারিতা অনেকাংশেই কমে যায় । বা অনেক ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা হয় না বললেই চলে।
Epilepsy বা মৃগী রোগ
যেমন…
Pantonix
Pronex
Panoral
pansec
Pantex
Pantid
Pantobex
Trupan
ইত্যাদি
এই সমস্ত ঔষধ খাবার গ্রহণের ২০ থেকে ৩০ মিনিট পূর্বে খেতে হয়।
ইসোমিপ্রাজল গ্রুপের ঔষধ
যেমন…
Sergal
Esoral
Maxpro
Esonix
Esomep
Exium
Maxima
Nexum
ইত্যাদি
- এই সমস্ত ওষুধ গুলো খালি পেটে বা খাবার গ্রহণের আধা ঘন্টা পূর্বে খেতে হয়।
Read More: হেঁচকিতে অস্বস্তি? জেনে নিন সমাধান,ঘরোয়া পদ্ধতি হেঁচকি কমানোর উপায়
যেমন…
Rabe
Finix
Rabeca
Rabifast
Rabizol
Rabiprazol
Axifix
Paricel
ইত্যাদি
এগুলো খাওয়ার পূর্বে এবং খাবার পরে যেকোনো সময় সমানভাবে কাজ করে। সুতরাং এগুলো যে কোন সময় খাওয়া যায়।
বর্তমানে নতুন প্রযুক্তির যে ঔষধ বের হয়েছে সেটি হচ্ছেঃ-
যেমন…
Esoral MUPS
Maxpro MUPS
Exium MUPS
Nexum MUPS
Remmo MUPS
Sergal MUPS
Maxima MUPS
ইত্যাদি
এই ধরনের ওষুধ গুলো খুব দ্রুত কাজ করে। মানে হচ্ছে দুই থেকে তিন মিনিটের ভিতরে কার্যকারিতা শুরু করে এবং খালি পেটে ভরা পেটে যে কোন সময়ে সেবন করা যায়।
তবে সব সময় খাওয়ার উপযোগী ঔষধ হচ্ছে ওমিপ্রাজল ।একটি গবেষণায় দেখা গেছে দীর্ঘ চল্লিশ বৎসর যাবৎ যদি কেউ ওমিপ্রাজল ঔষধ একটানা খেয়ে যান ।তা হলেও তার তেমন কোনো সাইড ইফেক্ট বা ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায় না।
ওষুধ খাওয়ার আগেই সতর্ক হন । কোন ঔষধ কখন খেতে হবে সেটা আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে বা কোন ব্র্যান্ডের ঔষধ আপনার জন্য উপযোগী তা সেবন করুন ।
উল্লেখিত বিষয় সমূহ শুধুমাত্র তথ্য উদ্দেশে করা । কোন ক্রমেই পেশাদার ডাক্তারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার যোগ্য নয়। এই ঔষধটি সেবনের ফলে যদি কেউ ক্ষতির সম্মুখীন হন তাহলে এর দায়ভার আমরা বহন করবো না। সুতরাং যে কোন ঔষধ খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে তারপর সে ওষুধ সেবন করুন।
গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট কোনটা ভালো, গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের নাম, বাংলাদেশ ওমিপ্রাজল ও ইসোমিপ্রাজল এর পার্থক্য, দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া কতটা ভালো, এন্টাসিড প্লাস সিরাপ এর কাজ, গ্যাস্ট্রিক এর সমাধান বাচ্চাদের গ্যাসের, ঔষধের নামের তালিকা