ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা ১
ভূমিকা : ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে – “Student life is the seed time of life.” অর্থাৎ ছাত্রজীবন হচ্ছে জীবনের বীজ বপনের সময়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের সময়কে সাধারণ অর্থে ছাত্রজীবন বলা হয়। যদিও দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে। ছাত্রজীবনের প্রধান ধর্ম অধ্যয়ন করা। এর পাশাপাশি তাদের আরও অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সমাজের কল্যাণকর সব ক্ষেত্রেই ছাত্রদের ভূমিকা রয়েছে। তাই তো ছাত্রজীবন মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান ও মধুর সময়।
ছাত্রজীবনের স্বরূপ : কবির ভাষায়-
“বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র
নতুনভাবে নানা জিনিস শিখছি দিবা রাত্র”
ছাত্রজীবনের প্রকৃত স্বরূপ এটাই। মানুষ আমৃত্যু কোনো না কোনো বিষয়ে জ্ঞানার্জন করে। তবুও সংসার ও কর্মজীবনে প্রবেশের পূর্বে প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক পড়াশোনার সময়টিকেই ছাত্রজীবন ধরা হয়। এ জীবন বড়ই মধুর ও সুন্দর। তাই ছাত্রদের কর্তব্য এমনভাবে নিজেকে গঠন করা, যাতে সে মানুষ হয়ে উঠতে পারে। এই সময় একজন ছাত্র যে জ্ঞান ও বিদ্যা অর্জন করে, যে চিন্তাবীজ রোপণ করে, তাই-ই তার ভবিষ্যৎ জীবনের চালিকাশক্তি। তাই বলা হয় ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক।
ছাত্রজীবনের কর্তব্য : “ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ”- অর্থাৎ ছাত্রদের প্রধান তপস্যা হচ্ছে অধ্যয়ন। ছাত্রজীবন কর্মজীবনে প্রবেশের প্রস্তুতি-পর্ব। জ্ঞানার্জনে আত্মনিয়োগই একজন ছাত্রের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য। অধ্যয়নই ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা হওয়া উচিত। তবে পড়াই একমাত্র তপস্যা নয়- সে সঙ্গে চাই শরীর গঠন। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে -“A sound mind is sound body.” অর্থাৎ সুস্থ দেহ-ই সুন্দর মন। কিংবা “Health is wealth.” স্বাস্থ্যই সম্পদ। এই সম্পদ ছাত্রজীবনেই অর্জন করতে হবে। এজন্য পরিমিত আহার, নিয়মিত ব্যায়াম ও সময়মতো খেলাধুলা করা প্রয়োজন। সে সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-
“অন্ন চাই প্রাণ চাই আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু।”
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব : ছাত্রজীবনে দেশ, সমাজ ও পরিবারের প্রতি অনেক দায়িত্ব থাকে। ছাত্রজীবন থেকেই দেশপ্রেম গড়ে তুলতে হবে। সমাজের কল্যাণমূলক কাজে নিজকে নিয়োজিত করতে হবে। পরিবারের সদস্যদের প্রতি সদাচার প্রদর্শন করতে হবে। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। নিয়ম-কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, অধ্যবসায়ী হতে হবে, সৎ চরিত্রবান হতে হবে। কেননা কথায় আছে-
“When money is lost nothing is lost
When health is lost something is lost,
When character is lost everything is lost.”
ছাত্রজীবনে দেশাত্মবোধ : ছাত্রজীবন দেশাত্মবোধ গঠনের সবচেয়ে উপযুক্ত ক্ষেত্র। এ সময় থেকেই দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণে দেশের প্রতি অনুগত থেকে কাজ করে যেতে হবে। ছাত্রজীবনেই দেশপ্রেম, সেবাপরায়ণতা, স্বার্থত্যাগ, সাহসিকতা, জনসেবা, অধ্যবসায় প্রভৃতি গুণাবলি অর্জন করতে হবে। এ সময় থেকেই জনকল্যাণ করার সুপ্ত বীজ উপ্ত হলে প্রগাঢ় দেশপ্রেমের ভিত রচিত হবে।
ছাত্রজীবন চরিত্র গঠনের সময় : চরিত্র মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ছাত্রজীবনেই এ সম্পদকে অর্জন করতে হয়। চরিত্র গঠনের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষা ও সাধনা। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছাত্রসমাজকে শিষ্টাচার, ভদ্রতা, সত্যবাদিতা, বিনয়, কর্তব্যপরায়ণতা প্রভৃতি গুণাবলি অর্জন করে সৎ চরিত্র গঠন করতে হবে।
ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলাবোধের গুরুত্ব : ছাত্রজীবনই শৃঙ্খলা অনুশীলনের সর্বোত্তম সময়। মানবজীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে হলে প্রয়োজন নিয়মের শাসন। ছাত্রজীবন শৃঙ্খলাবোধ চর্চার একটি উত্তমক্ষেত্র। প্রত্যেক ছাত্রকে একটি যথাযথ নিয়মের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করতে হবে। কেননা নিয়ম ছাড়া জীবন আর নাবিক ছাড়া নৌকা দুই-ই মূল্যহীন।
নৈতিক মূল্যবোধ গঠনে ছাত্রজীবন : নৈতিক মূল্যবোধ হল মানবজীবনে অনুসরণযোগ্য এমন কিছু আচরণবিধি, যা জীবনব্যবস্থাকে করে তোলে সুন্দর, নির্মল, কলুষতামুক্ত। এ বোধ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, সৌহার্দ্যবোধ প্রভৃতি গুণাবলি। নৈতিক মূল্যবোধ মানব চরিত্রকে করে তোলে সার্থক ও সুষমামণ্ডিত। প্রকৃত শিক্ষা ছাত্রজীবনে এ মূল্যবোধ গঠন করে। শিক্ষার বাস্তবভিত্তিক প্রয়োগে গঠিত মূল্যবোধ একজন ছাত্রকে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। তার সুকুমার বৃত্তিগুলো বিকাশের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। শ্রদ্ধা, ভক্তি, সম্মান, ভালোবাসা, øেহ প্রভৃতি ছাত্রজীবন থেকেই নৈতিক মূল্যবোধকেই সুদৃঢ় করে।
উপসংহার : ছাত্রজীবন ভবিষ্যৎ জীবন গঠনের প্রস্তুতি পর্ব। সকালের সূর্য যেমন সুন্দর দিনের আভাস দেয় তেমনি ছাত্রজীবনের সাফল্যও সফল জীবনের ইঙ্গিত দেয়। ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ছাত্রসমাজকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই ছাত্রজীবন থেকেই অধ্যয়নের পাশাপাশি সৎ গুণাবলীর চর্চা করা উচিত। তাহলেই আমরা বলতে পারব-
“আমরা শক্তি আমরা বল
আমরা ছাত্রদল”
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা ২
ভূমিকা: মানবজীবনের সে সময়টুকু স্কুল , কলেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য নাগরিক ও যথার্থ জ্ঞানী করে তোলার কাজে ব্যাপৃত থাকে, তাকে ছাত্রজীবন বলে। ছাত্রজীবন জীবন সংগ্রামের প্রস্তুতির সময়। সঠিক প্রস্তুতির ওপরই নির্ভর করে পরবর্তী কর্মজীবনের উজ্জ্বল সাফল্য।
ছাত্রজীবনের স্বরূপ: ছাত্রজীবন উদ্যমতায় পরিপূর্ণ । এ জীবন শৃঙ্খলায় ভরপুর । তাই এ জীবন সৈনিকের জীবনের সঙ্গে তুলনীয়। এ জীবনে পরীক্ষা নামক বাধার দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর ডিঙিয়ে একজন ছাত্র মেতে উঠে বিজয়ের আনন্দে। পরীক্ষা থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা সে সঞ্চিত রাখে ভবিষ্যৎ দায়িত্বও কর্তব্য পালনে। মূলত ছাত্রজীবনের স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিশেষ করে জীবনের শেষ পূর্বে মানুষ ছাত্রজীবনের অম্লমধুর স্মৃতিকেই বেশি রোমন্থন করে।
ছাত্রজীবনের মূল্য : ছাত্রজীবনের মূল্য অত্যধিরক । ছাত্রজীবন মানবজীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সময়। ছাত্রজীবনকে ভবিষ্যৎ জীবনের বীজ বপনের সময়ও বলা যায়। এ সময়ে যেমন বীজ বপন করা হয়, ভবিষ্যতে তেমন ফলই পাওয়া যায়। ইমারতের ভিত্তি সুগঠিত না হলে যেমন ইমারত শক্ত হয় না, তেমনি বাল্যকালে উপযুক্ত শিক্ষা লাভ না করলে মানুষের ভবিষ্যৎ জীবনও উজ্জ্বল হয় না। এ সময়ে নিয়মিত জ্ঞানানশিীলন করলে ভবিষ্যৎ জীবন সফল ও সুখময় হয়ে উঠে। তবে এ জ্ঞানানুশীলন শুধু পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় প্রতিযোগিতার সাথে এগিয়ে যেতে হবে। আর এর জন্য আমাদের দেশের ছাত্রদেরকে বইপত্রের জ্ঞানর্জনের সাথে সাথে জীবন ও বাস্তবমুখী জ্ঞানর্জন করতে হবে। এভাবেই যথার্থ জ্ঞান ও চিন্তাশক্তির সম্প্রসারণ ঘটবে।
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব: অধ্যয়নই ছাত্রদের প্রধান কর্তব্য । সংস্কৃতে একটি কথা আছে- “ ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ” অর্থাৎ অধ্যয়নই ছাত্রদের তপস্যা। তবে শুধু পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না। পাঠ্যবিষয়ের সাথে সাথে তাদের বহির্জগতের জ্ঞানভান্ডার হতে জ্ঞান আহরণেরও চেষ্টা করতে হবে। নিজেকে কর্মী ও জ্ঞানী করে তোলাই ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য হতে হবে।
জীবনের সব ক্লান্তি হতাশা, অবিশ্বাস দূর করে দৃঢ় প্রত্যয় ও সৎ সাহস নিয়ে ছাত্রদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ছাত্রদের উচিত ত্যাগ ও সত্যের অভিমুখী হওয়া। তাদেরকে সুস্থ ও সবল মনের অধিকারী হতে হবে। ছাত্রদের উচিত অনাড়ম্বর জীবনযাপন করা। উচ্চ চিন্তা ও সহজ জীবনাচরণ তাদেরকে প্রকৃত মানুষ করতে সহায়তা করবে। মিথ্যা পরিহার করা, নকল প্রবণতাকে ঘৃণার চোখে দেখা ছাত্রদের দায়িত্ব। সৎকথা,সদাচরণ, সদালাপ ছাত্রদের ভূষণ। সবরকম লোভ-মোহ ত্যাগ করে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা ছাত্রদের প্রধান দায়িত্বও কর্তব্য। কারণ ছাত্ররা পথভ্রষ্ট হয়ে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমাজ্জিত হতে বাধ্য।
চরিত্র গঠন: চরিত্র মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার। চরিত্রহীন ব্যক্তি পশুর সমান। ছাত্রদের চরিত্রের উপরই জাতির চরিত্র নির্ভরশীল। তাই চরিত্র গঠনের দিকে ছাত্রদের বিশেষ তৎপর হতে হবে। লেখাপড়ার সাথে সাথে তাদেরকে বিনয়, শিষ্টাচার , সত্যবাদিত্য , কর্তব্যপরায়ণতা ইত্যাদি সদ্গুণের অধিকারী হতে হবে।
স্বাস্থ্য গঠন: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তাই স্বাস্থ্য গঠনের দিকে ছাত্রদের বিশেষ নজর দিতে হবে। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়ে। প্রত্যেক ছাত্রকে স্বাস্থ্যা গঠনের নিয়ম গুলো মেনে চলতে হবে। তা ছাড়া নিজের কাপড়- চোপড় , আসবাবপত্র ইত্যাদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
শিক্ষক ও পিতামাতার প্রতি কর্তব্য: পিতামাতা ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি প্রদর্শন করা ছাত্রদের আর একটি প্রধান কর্তব্য। পিতামাতার আছেন বলেই পৃথিবীতে তাদের আবির্ভাব ঘটেছে। পিতামাতা ও শিক্ষকদের মাধ্যমেই ছাত্ররা খুঁজে পায় ভবিষ্যৎ জীবনের পথ । তাই তাঁরা যা আদেশ বা নিষেধ করেন তা প্রত্যেক ছাত্রের মেনে চলা উচিত। মনে রাখতে হবে পিতামাতা ও শিক্ষক সর্বদাই আমাদের মঙ্গল চান।
পরিবারিক দায়িত্ব: পরিবারের সকলের আদর, যত্ন, ¯েœহ, মায়, মমতার , মদ্যে বেড়ে উঠে ছাত্র-ছাত্রীরা । তাই সবার আগে তাদের পরিবারের প্রতি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। বাবা-মা, ভাই-বোনদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা এবং খোঁজ-খবর নেয়া তাদের দায়িত্ব। ভবিষ্যৎ জীবনের যে বিশাল গুরুদায়িত্ব তাদের উপর অর্পিত হবে, তার অনুশীলন শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই ॥ এজন্য তাদেরকে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সহানুভুতি ও আস্তা অর্জন করতে হবে।
সামজিক দায়িত্ব: Man is a social being অর্থাৎ, মানুষ সমাজিক জীব। তাই একজন ছাত্রকেও সমাজে বসবাস করতে হয়। আর এ সমাজের একটি সচেতন অংশ হচ্ছে ছাত্রসমাজ। মিথ্যা ও জরা জীর্ণতাকে মুছে ফেলে কুসংস্কার ও গোড়াঁমিকে ঝেড়ে ফেলে একটি সুস্থ, স্বাভাবিক উন্নত ও সুন্দর সমাজ গড়ার দায়িত্ব আজকের ছাত্রসমাজের । বিশ্বমানবতা ও মানবিকতার বিজয় কেতন ছাত্রদের হাতেই । তারা বুহুক্ষু মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। আশাহীন বুকে জাগাতে পারি আশা। বিভিন্ন ধরণের সংঘ, স্কাউটিং , এবং স্বেচ্ছাসেবামূলক ফোরামের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা এ দায়িত্ব পালন করতে পারে।
রাজনৈতিক দায়িত্ব : একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রয়োজনে দেশের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কখনো কখনো কাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হয় । তারা প্রয়োজনে কলম ছেড়ে অস্ত্র ধরে। জীবনের বাজি রেখে বীরদর্পে ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকাই মূখ্য ছিল। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ এর জ্বলন্ত প্রমাণ। ভাষার জন্য জবিন দিয়েছে এদেশের ছাত্ররা। যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশকে পুণর্নিমাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্ররা।
বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জন: বইয়ের পুথিঁগত বিদ্যার মদ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে জ্ঞানর্জনে পাঠ্যতালিকা বহির্ভূত ভালো বই ,পত-পত্রিকা ও সাময়িকী পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে ছাত্রদের। সেই সাথে তাদেরকে আধূনিক জ্ঞান বিদ্যায় পারদর্শী হতে হবে। লেখাপড়ার অবসরে তাদের খেলাধূলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে হবে। এতে করে তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফলতার সাথে সম্মান বয়ে আনতে সক্ষম হবে।
দেশের প্রতি কর্তব্য: দেশের প্রতি কর্তব্য পালন ছাত্র-ছাত্রীদের গুরুদায়িত্ব। দেশের কল্যাণ সাধন ও অজ্ঞ মানুষকে আলোর পথে আহ্বান করা তাদের কাজ। আত্মসচেতন নাগরিক হিসেবে ছাত্রদের উচিত মানুষের মনে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা। শিক্ষার আলো ছড়ানোর কাজেও তাদের আত্মনিয়োগ করার যথেষ্ট অবকাশ আছে। নিপীড়িত মানুষের পাশে বিপদের দিনে ছাত্ররা দাঁড়াতে পারে। এভাবে তারা দেশমাতৃকার সেবায় এগিয়ে আসতে পারে।
উপসংহারঃ আজকের ছাত্ররাই আগামী দিনের জাতির কর্ণধার। আজ যারা ছাত্র দু‘দিন পর তারাই হবে দেশের দায়িত্বশীল নেতা ও কর্মী । তাই প্রত্যেক ছাত্রের বিপথগামিতা এবং ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে দূরে থেকে সৎ , চরিত্রবান ও আত্মনির্ভরশীল আদর্শ মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা উচিত। এতে দেশের প্রকৃত উন্নতি ও সমৃদ্ধির সূচনা হবে এবং তাদের কর্মপ্রেরণার দ্বারাই নির্মিত হবে দেশের প্রগতিরা ধারা।
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা ৩
ভূমিকা : আজ যারা ছাত্র, আগামীকাল তারা দেশের নাগরিক। কাজেই
দেশের ভালাে-মন্দ ভবিষ্যৎ নিরূপিত হয় ছাত্র সমাজের জীবন ও চরিত্র গঠন, শিক্ষা
দীক্ষা, রুচি-প্রকৃতি এবং কর্মপন্থা প্রভৃতির উপর। সতরাং মানব জীবনের গুরুত্ব পূণ।
সময়ই হলাে ছাত্র জীবন। এই সময়কে কর্ম জীবনের উদ্যোগ-পর্ব বলেও ধরা যেতে
পারে।
ছাত্র জীবন ; বিদ্যারম্ভের সময় হতে শিক্ষা সমাপ্তির কাল পর্যন্ত কালকে
ছাত্র জীবন বলা হয়। এই সময়সীমায় বর্তমান শিক্ষাক্রমে চারটি স্তর আছে। প্রাথমিক
শিক্ষা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। এর সময়সীমা এক থেকে নয় বছর পর্যন্ত। দ্বিতীয় স্তর হল
মাধ্যমিক শিক্ষা। এই স্তরে দশ-এগারাে বছর বয়সে শিক্ষা আরম্ভ আর পনের-যােল
বছর বয়সে দশম শ্রেণীতে শিক্ষা-সমাপ্তি। তৃতীয় স্তর – উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা। এই স্তরে
শিক্ষাথীকে দুই বছর শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। চতৰ্থ স্তর – উচ্চ শিক্ষা বা কলেজ
ইউনিভারসিটির শিক্ষা। এই স্তরে উনিশ-কুড়ি বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীকে কলেজীয়
বা স্নাতক শ্রেণির শিক্ষাক্রম এবং একশ-বাইশ বছর বয়স পর্যন্ত স্নাতকোত্তর
শিক্ষাক্রম গ্রহণ করতে হয়।
ছাত্র-জীবন অনুশীলন-পর্ব : অধ্যয়ন ছাত্রদের তপস্যা। “ছাত্রানং অধ্যয়নং
তপঃ।” সর্ব স্তরেই ছাত্রদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য জ্ঞান অর্জন, অধ্যয়ন ও অনুশীলন।
এ সময়ে সংযম, সহিষ্ণতা,ত্যাগ, সেবা প্রভৃতি মহৎ মূল্যবােধগুলিরও আহরণের উপযুক্ত
সময়। একদিকে শিক্ষাচর্চা অন্যদিকে শিল্পিত স্বভাব ও সুদৃঢ় চরিত্র সংগঠনের উপযুক্ত
প্রভৃতি কাল ছাত্রজীবন।
প্রাচীন ভারতের ছাত্র জীবন : প্রাচীন ভারতে ছাত্রগণ গুরুগৃহে বাস করে
অধ্যয়ন করত। গুরুকে কোন বেতন দিতে হতাে না।বরং গুরুই ছাত্রদের থাকা
খাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। ছাত্ররা শুরুর সেবা ও গৃহের কাজ কর্ম করে অবসর সময়ে
পড়া-শুনা করত। ছাত্রদেরকে কঠোর ব্রহ্মচর্যের মধ্যদিয়ে জ্ঞান লাভ করতে হত।
ব্রহ্মচর্যের কঠোর নিয়মে সকল প্রকার ভোগ বিলাসিতা ত্যাগ করে গুরুর কাছ থেকে
লাভ করত সর্বশাস্ত্রের পূর্ণ জ্ঞান। সমস্ত সমাজের তখন মূল ভিত্তি ছিল গুরুকুলবাসী
ছাত্র-সমাজ।
দায়িত্ব-কর্তব্য ও চরিত্র গঠন শিক্ষা : একথা স্বীকার করতে হয় যে, শিশুর
পক্ষে শিক্ষার অপরিহার্যতা ও চরিত্র গঠনের উপযোগিতা উপলব্ধি করা কঠিন ব্যাপার।।
কাজে প্রথমাবস্থায় শিক্ষায় ও চরিত্র গঠনে মনোযোগী করে তোলার দায়িত্ব পিতামাতা।
এবং শিক্ষকের। তারপর যখন শিশু কৈশােরকালে উপনীত হয় তখন হতে শিক্ষা ও
চরিত্র গঠনে ছাত্রকে কিছুটা স্বনির্ভর হওয়া দরকার। যথা – পরিমিত বিদ্যাভ্যাস,
খেলাধুলা, ভ্রমণ, দেহ ও মনের বলিষ্ঠ বিকাশ সাধনে নিজেকে যত্নবান হতে হবে। নিয়ম
শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতা প্রভৃতি বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা,ক্ষমা,
উদারতা প্রভৃতি চারিত্রিক গুণাবলী শিক্ষা জীবনে অর্জন করতে হবে। মনে রাখা
ভাল, চরিত্রহীন বিদ্যাশিক্ষা লােক সমাজে কোন মূল্যই বহন করে না। চরিত্র এমন একটি সম্পদ যা একবার অধঃ পতিত হলে বিশাল সম্পদের বিনিময়েও তা পুনরুদ্ধার
করা যায় না।
ভবিষ্যৎ নাগরিক হওয়ার শিক্ষা : এগুলি ছাড়া ছাত্র ছাত্রীদের যে বিষয়ে
সচেতন হওয়া দরকার তা হলাে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে
গড়ে তুলা। ছাত্র পাঠ্যগ্রন্থ বহুতর অনুসরণীয় আদর্শের কথা পাঠ করে, মনীবী
মহাপুরুষদের জীবন কথা, তাদের ত্যাগ ও কর্তব্য নিষ্ঠার কথা জানতে পারে। এসব
আদর্শ নিজেদের জীবনে রূপায়িত করার দায়িত্ব কিন্তু ছাত্রদেরই। এ ভাবেই একজন
ছাত্র ভবিষ্যতে একজন পূর্ণাঙ্গ সামাজিক মানুষ ও নাগরিক হয়ে উঠতে পারবে।
সেবাধর্মঃ ছাত্রসমাজ নিজেদের জীবনে শিক্ষার মূল্য উপলব্ধি করতে পারে,
তাই আশা করা যায় তারা দেশের অশিক্ষিত মানুষদের শিক্ষিত করে তুলতে অগ্রণী
ভূমিকা পালন করবে। নিজ নিজ পল্লীতে নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করে বয়স্ক ও দরিদ্রদের
মধ্যে শিক্ষার আলাে বিতরণ করে দেশের ও দশের কল্যাণ সাধন করবে। তাছাড়া
রোগীর সেবা ও দরিদ্রের সাহায্য ইত্যাদি কাজের ভারও ছাত্রদের কাঁধে তুলে নেওয়া
দরকার। কারণ সেবা ধর্ম অতি পবিত্র ধর্ম।
উপসংহার : অল্প কথায়, ছাত্রজীবন গঠন-পর্ব। ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের
প্রধান লক্ষ্য বিদ্যাভ্যাস ও জ্ঞান চর্চা। এ সবের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য চর্চা, চরিত্র গঠন,
অধ্যবসায় ও অধায়নও পাশাপাশি চলবে। কূপমণ্ডুকতা ছাত্রজীবনেও মারাত্মক অভিশাপ।
সুস্থ স্বাস্থ্য, মুক্ত জ্ঞান, মুক্ত দৃষ্টি, আনন্দোল পরমায়ু – এসবই ছাত্রের দরকার।
ভবিষ্যতের সুখী কর্মঠ জ্ঞানী – বিবেকবান নাগরিক তারাই। মনে রাখতে হবে দেশ
একটি মানচিত্র সম্মত ভূখণ্ড নয় কেবল, দেশ বহু জ্ঞানী-গুণী কর্মী, শিল্পী, ভাবুক কবি,
সমাজসেবী রাজনীতিক প্রকৃতির লীলাভূমি – রম্য বাসস্থান।
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা ৪
ভূমিকা:
মানুষ জ্ঞান আহরণের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জীবনের যে মূল্যবান সময় ব্যয় করে থাকে এককথায় তাকে বলে ছাত্রজীবন । ছাত্রজীবন জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণের সময়। এ সময়টিকে জীবনের উজ্জ্বলতম সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ছাত্রজীবনই একটি সফল জীবনের বীজ বপনের সময় বলে এ সময়টির রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য।
ছাত্রজীবনের স্বরূপ:
ছাত্রজীবনে জ্ঞান ও বিদ্যা অর্জনের জন্যে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। পরীক্ষা নামক সুকঠিন প্রাচীর পেরিয়ে একজন ছাত্র লাভ করে বিজয়ের আনন্দ। ছাত্রজীবনে মেনে চলতে হয় শৃঙ্খলা, গ্রহণ করতে হয় অধ্যবসায়ের মূলমন্ত্র । কঠোর অধ্যবসায়ী হতে পারার মধ্যেই ছাত্রজীবনের প্রধান লক্ষণ প্রকাশ পায়। অলস-উদ্যমহীন জীবন ছাত্রজীবনের প্রকৃত পরিচয়কে তুলে ধরতে পারে না। ছাত্রজীবনে নানা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণির বােম্বা গবেষক ও খ্যাতিমান শিক্ষকদের সান্নিধ্য লাভ করে ছাত্রছাত্রীরা। ফলে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরেও শিক্ষার্থী লাভ করে জ্ঞান অর্জনের সুযােগ । ছাত্রজীবনে অর্জিত জ্ঞান ও বুদ্ধি-বিবেচনা পরবর্তী জীবনে ব্যাপকভাবে প্রয়ােগ হয় বলে ছাত্রজীবনই জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে বিবেচিত।
দায়িত্ব ও কর্তব্য:
ছত্রাণং অধ্যয়নং তপঃ- অধ্যয়নই ছাত্রজীবনের পরম কর্তব্য। ছাত্রজীবনের সর্বপ্রথম এবং সর্বপ্রধান দায়িত্ব হচ্ছে অধ্যয়ন করা। কারণ পরিশ্রম ও অধ্যবসায় ব্যতীত কোনাে ছাত্র তার জীবনকে আলােকিত করতে পারে না। পৃথিবীর বুকে যারা বিজ্ঞান, শিল্পকলা, সাহিত্য ও অন্যান্য বিষয়ে খ্যাতির স্বর্ণতােরণে আসীন হয়েছেন তাঁদের জীবন পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, তারা ছাত্রজীবনে ছিলেন কঠোর অধ্যবসায়ী। অর্থাৎ তাদের ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে তাঁরা ছিলেন সদা সচেতন। ছাত্রজীবনের মূল দায়িত্ব অধ্যয়ন হলেও সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবােধ, আদব-কায়দা ইত্যাদি মানবিক গুণগুলাে এ সময়েই চর্চা করতে হয়। ছাত্রজীবনের সমস্ত সঞ্চয়ই ব্যক্তি জীবনের পরবর্তী সকল পদক্ষেপে কাজে লাগে। তাই সৎ চরিত্রবান হতে হলে সততার চর্চা করা, সত্যবাদী হওয়া, নিজ কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া ইত্যাদি সৎ গুণগুলাে ছাত্রজীবনে অনুশীলন করা ছাত্রদের কর্তব্য। স্বাস্থ্যই সুখের মূল। তাই ছাত্রজীবনে স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়াও ছাত্রছাত্রীদের কর্তব্য। কেননা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হলে তার পক্ষে অধ্যয়ন অনুশীলন কোনােটাই সম্ভব নয়।
ছাত্রজীবনের মূল উদ্দেশ্য:
ছাত্রজীবনের মূল কাজ অধ্যয়ন হলেও মূল উদ্দেশ্য তা নয়। প্রত্যেকটি মানুষের কাজই একটি লক্ষ্য নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া। তেমনি ছাত্রজীবনেরও একটি লক্ষ্য থাকা প্রয়ােজন। শুধু পরীক্ষার পর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একগাদা সনদ অর্জন ছাত্রজীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে না। ছাত্রজীবনের প্রধান লক্ষ্য হবে জ্ঞানার্জন। জ্ঞানার্জন না হলে মানুষ মুক্তচিন্তার অধিকারী হতে পারে না ফলে সংকীর্ণ ও অনুদার দৃষ্টিভঙ্গি হয় তাদের। যা কিনা কোনাে সুশিক্ষিত মানুষের ভূষণ হতে পারে না। তাই ছাত্রজীবনের উদ্দেশ্য হবে নিজেকে জ্ঞানে গুণে বিকশিত করে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তােলা।
দেশের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব:
আজকের ছাত্রছাত্রীরা আগামী দিনে জাতির নেতৃত্ব দান করবে। এ নেতৃত্ব দান নিছক দায়িত্ব মাত্র
নয়। এ গুরুদায়িত্ব পালনে সক্ষম হতে হলে আজকের ছাত্রকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যথাযথ যােগ্যতা অর্জন করতে হবে। তাদের নৈতিক চরিত্র হতে হবে সর্বজন। ছাত্রদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। জাতিকে সঠিক এবং উন্নয়নের পথে পরিচালনা করার জন্যে তাদের হাতেই একদিন দায়িত্ব বর্তাবে। তাই ছাত্রদের দেশের কর্ণধার হিসেবে নিজকে প্রস্তুত করতে হবে।
সমাজ সচেতনতা:
একজন ছাত্রকে সমাজ সচেতন হতে হবে । ছাত্র যদি তার দেশ, কাল, সমাজ সম্পর্কে সচেতন না হয় তাহলে তার দ্বারা সমাজের হিত কাজ অসম্ভব । সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কোনাে অন্যায়, অনাচার দুর্নীতি যদি প্রকট আকার ধারণ করে তখন ছাত্রদের বসে থাকলে চলবে না। এর প্রতিকার প্রতিরােধের জন্যে সােচ্চার প্রতিবাদ করাও ছাত্রদের দায়িত্ব। ছাত্রসমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সমাজ-সংসারের কুসংস্কার দূরীভূত হয়ে, অন্যায়-অবিচার তিরােহিত হয়ে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ হতে পারে। তাই ছাত্রজীবনে হতে হবে দেশ, কাল ও সমাজসচেতন, সমাজহিতৈষী।
পিতামাতা ও গুরুজনদের প্রতি কর্তব্য:
পিতামাতা ও গুরুজনদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা ছাত্রদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মনােভাব তাদের নৈতিক দিক থেকে আদর্শবান করে তােলে। গুরুজনের আদেশ-নিষেধ মেনে না। চললে জীবনে উন্নতি অসম্ভব। তাই তাদের দিক নির্দেশনা যথাযথ পালনে ছাত্রদের ব্রতী হতে হবে। পিতামাতা ও গুরুজনদের প্রতি সম্মান ও কর্তব্য সম্পাদনের মধ্য দিয়ে ছাত্ররা শিষ্টাচার চর্চার সুযােগও লাভ করে।
রাজনৈতিক দায়িত্ব:
ছাত্ররা একটি দেশের জাগ্রত অংশ। তাদের কখনাে কখনাে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ছাত্রদের দেখা গিয়েছে অগ্রণী ভূমিকায়। আমাদের বাংলাদেশের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। অধিকার আদায়েও ছাত্রদের থাকে একটি বড় ভূমিকা। আমাদের মাতৃভাষা হবে আমাদের রাষ্ট্রভাষা— এ অধিকার আদায়ে রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে একদিন কেঁপে উঠেছিল দেশ। ছাত্ররা অধিকার আদায়ে প্রাণ দিয়েছিল । এটি পৃথিবীর একটি উল্লেখযােগ্য ঘটনা। তাই ছাত্রদের রাজনীতি সচেতন হতে হবে, প্রয়ােজনে যেন তারা রাজনৈতিক কর্তব্য পালন করতে পারে।
উপসংহার:
আজ যারা বিদ্যালয়গামী শিশু, কিশাের, তরুণ, তারাই আগামী দিনের দেশের পরিচালক। দেশ ও জাতি তাদের কাছে প্রত্যাশা করে অনেক কিছু। তাই ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে ছাত্রদেরই হতে হবে অগ্রণী, তাদের হাতেই দেশের ভবিষ্যৎ।