প্রখ্যাত শিল্পী চার্লস ড’য়লি বাংলাদেশে আসেন ১৮০৮ সালে। তিলোত্তমা ঢাকার প্রেমে পড়ে থেকে যান প্রায় ৯ বছর। তার হাতে ক্যামেরা ছিল না, পেন্সিল আর কাগজই তখন ভরসা। তা দিয়ে তিনি এঁকেছেন বুড়িগঙ্গা, ঘর-বাড়ি, নাম না জানা কোন গলি, ভাঙা সেতু অথবা লোকজন। এর মধ্যে তার আঁকা কিছু ছবি বিখ্যাত হয়ে ওঠে। পাগলা সেতু’র চিত্রটি এর মধ্যে অন্যতম।
১৮১৭ সালে চার্লস ড’য়লি পাগলা সেতুর ছবি আঁকেন। সেই সময়ে পাগালা সেতুর অবস্থা ছিল বেশ নাজুক। সেটার ওপর গাড়ি-ঘোড়া কিছুই চলতো না। তবে তখন মানুষজন ব্রিজে বসে আড্ডা দিতো। এছাড়া ব্রিজের নিচ দিয়ে নৌকাও চলতো। তারওপরে এটি ডাকাতদের মাথা কেটে ঝুলিয়ে রাখা স্থান হয়ে ওঠে।
পাগলা সেতুর ইতিহাস বহু আগের। ১৬৬২ সালে এটি নির্মিত হয় এবং ‘পাগলার পুল’ নামে অধিক পরিচিত। জানা যায়, মোগল সুবেদার মীর জুমলা তৎকালীন আরাকানি ও মগদের আক্রমণ ঠেকানো এবং দস্যুদের দমনের জন্য সোনাকান্দা, ইদরাকপুর, হাজিগঞ্জ প্রভৃতি ভাটি অঞ্চলে কয়েকটি জলজ দুর্গ নির্মাণ করেন। ওই দুর্গগুলোর সঙ্গে রাজধানী শহর ঢাকার সংযোগের জন্য পাগালু নামের স্রোতস্বিনী নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। যদিও ওই নদীর এখন কোনো অস্তিত্ব নেই।
তিনটি মজবুত ও সুঁচালু খিলান সহযোগে নির্মিত হয়েছিল পাগলা সেতু। খিলানের স্প্যান্ড্রেলে সুদৃশ্য গোলাপ ফুলের প্লাস্টার নকশা দেয়া ছিল। পুলটির চার কোনায় ছিল চারটি অষ্টকোনাকৃতির ফাঁপা টাওয়ার। টাওয়ারগুলোতে খিলানী দরজা জানালা ছিল। টাওয়েরর উপরে ছিল গম্বুজ। সেতুর নিরাপত্তা প্রহরীরা এসব টাওয়ারে অবস্থান করতেন।
১৬৬৬ সালে ফরাসী অলংকার ব্যবসায়ী ট্যাভেরনিয়ার লিখেছেন, তিনি ওই পুলের পাশে থাকা উঁচু উঁচু থামে দস্যুদের কাটা মাথা ঝুলিয়ে রাখতে দেখেছিলেন। ঢাকা কেন্দ্রের গবেষক ড. মো. আলমগীর এক প্রবন্ধে লিখেছেন, সেখানে ডাকাতদের খুব উপদ্রব ছিল। প্রায়ই ডাকাতদের মেরে মাথা ঝুলিয়ে রাখা হতো।
পাগলা সেতুর চিহ্ন এখনও আছে। সেতুর পশ্চিম পাশের একটি টাওয়ার এখনো স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আরেকটি নদীর দিকে হেলে পড়ে জীর্ণ অবস্তায় আছে। পূর্বদিকের একটি টাওয়ার এখন মন্দিরের গর্ভগৃহ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে পুরানো একটি পিপুল গাছ রয়েছে। সেতুর খিলানগুলো বহু আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। ১৯৬০ সালেও সেতুটির অস্তিত্ব ছিল। অযত্ন-অবহেলা, দূষণ-দখলের কবলে পড়ে এটি এখন শুধুই ইতিহাস!
ডেইলি বাংলাদেশ/এনকে
প্রথম প্রকাশঃ Prothom-alo