ডা. দেবী শেঠি কে কিভাবে দেখাবেন

বিশ্বসেরা চিকিৎসক ডা. দেবী শেঠি কে নিয়ে আগ্রহ শ্রদ্ধা ভালবাসার শেষ নেই। অনেকেরই প্রশ্ন , তার সিরিয়াল কিভাবে পাওয়া যায়। ডা.  দেবী শেঠি কে কিভাবে দেখাবেন এই নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা।

প্রায় প্রতি বছর অনেক মানুষ আমাদের দেশ থেকে ভারতে যায় চিকিৎসা করানোর জন্য। চিকিৎসা খরচ কম এবং ভাল মানের চিকিৎসার জন্য দিন দিন ভারতের চিকিৎসার উপর বাংলাদেশীদের বিশ্বাস এবং আস্থা  বেড়েই চলছে।

কিন্তু ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ভারতে চিকিৎসার সিস্টেম সম্পর্কে আমাদের ধারণা নাই তাই প্রথম বার ভারতে গিয়ে আমরা অনেক কিছুই বুঝি না।

আজ আমি আপনাদের ব্যাঙ্গালুরুর নারায়ণা হৃদয়ালয়ে কিভাবে চিকিৎসা করাবেন সে সম্পর্কে আলোচনা করব। এবং ধীরে ধীরে ভারতের সব হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করি আমাদের সাথেই থাকবেন।

ব্যাঙ্গালুরুতে  চিকিৎসা করানোর জন্য অবশ্যই মেডিকেল ভিসা নিয়ে ভারত গমন করতে হবে। ভুল করেও টুরিস্ট কিংবা অন্য কোন ভিসায় চিকিৎসা করাতে যাবে না। কারন অন্য কোন ভিসায় চিকিৎসা করাতে গেলে আপনাকে অনেক সমস্যার সন্মুখীন হতে হবে।

তাছাড়া অন্য ক্যাটাগরিতে ভিসা করে ভারত গেলে শুধু ডাক্তারই দেখাতে পারবেন কিন্তু কোন প্রকার অপারেশান, হাসপাতালে ভর্তি, কিংবা স্পেশাল কোন ইঞ্জেকশন পুশ করবে না। শুধু চেক আপ করাতে পারবেন। কোন কোন হাসপাতাল রোগীই দেখে না। সুতরাং মেডিকেল ভিসার ভারত যাওয়া জরুরী যেহেতু আপনি ডাক্তার দেখাতে যাবেন।

মেডিকেল ভিসার জন্য আপনার করনীয়:

  • আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ ৬ মাস থাকতে হবে।
  • ভারতের হাসপাতাল থেকে আপনাকে ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
  • বাংলাদেশী ডাক্তারের রেফারেন্স নিতে হবে। ডাক্তার আপনাকে ভারতে রেফার করবে।
  • আপনি কি করেন তার প্রমাণাদি লাগবে। যেমন আপনি ব্যবসায়ি হলে ট্রেড লাইসেন্স লাগবে।
  • সর্বোচ্চ ৩ জন রোগীর সাথে এটেনডেন্ট হিসেবে যেতে পারবেন।
  • ভারতীয় দুতাবাসের ভিসা ফি প্রতি পাসপোর্ট ৮০০ টাকা।

ভিসা পাওয়ার পর আপনার করনীয়ঃ

বাস, ট্রেন, এয়ার এই তিন ভাবে ভারত যেতে পারেন। ঢাকা থেকে বাস এ সরাসরি কলকাতা যেতে পারেন। তার মধ্যে গ্রিন লাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, দেশ পারিবহন , শ্যামলী পারিবহন এর সার্ভিস খুবই ভাল। আর আপনাকে নামিয়ে দিবে কলকাতা এর মারকিউইস স্ট্রিট এ।

আর ট্রেনে যেতে হলে ভিসা পাওয়া পর আপনাকে টিকেট নিতে হবে। টিকেট আপনাকে কমলাপুর স্টেশন থেকে সংগ্রহ করতে হবে। টিকেট এর দাম ১৩০০ টাকা থেকে শুরু। আর ট্রেনএ যাত্রা করলে আপনাকে কলকাতা ষ্টেশনে নামিয়ে দিবে। যেটা চিতপুর স্টেশন নামে পরিচিত। আর ফ্লাইট সরাসরি ব্যাঙ্গালুরুতে  চলে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভাড়া হবে ৮০০০ (আনুমানিক ) টাকার উপরে।

ইমিগ্রেশনে আপনার ককরনীয়:

বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনু্যায়ী আপনাকে ট্রাভেল টেক্স দিতে হবে। আপনি চাইলে সোনালী ব্যাংক এর যে কোন শাখা থেকে কেটে নিতে পারেন। অথবা ইমিগ্রেশনে গিয়েও পে করতে পারেন। মূল্য হবে ৫০০ টাকা।

বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন আপনার পাসপোর্ট ভিসা ভাল ভাবে দেখার পর আপনার পাসপোর্ট এ একটি সিল দিয়ে দিবে। যেটা বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন পার হওয়ার প্রমান হিসেবে দেখা হয়।

কাজ শেষে আপনি ইন্ডিয়ার ইমিগ্রেশন এ প্রবেশ করুন। প্রথমে আপনার লাগেজ চেক করার পর, আপনাকে একটি ফরম পূরণ করতে হবে।

এখানে আপনার নাম, পাসপোর্ট নম্বর এবং আপনি কোথায় যাবেন তা ফিলাপ করতে হবে।আর ১০ টাকা দিয়ে আপনি ফরম ফিলাপ করিয়ে নিতে পারবেন। এই কাজ শেষ করার পর ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন আপনার ছবি তুলবে এবং আপনার পাসপোর্টে সিল দিয়ে দিবে প্রমাণ হিসেবে।

ইমিগ্রেশন পার হবার পর কিভাবে কলকাতা যাবেনঃ

ইমিগ্রেশন পার হবার পর আপনি চাইলে বাস অথবা ট্রেন দুভাবেই কলকাতা যেতে পারবেন। বাস আপনাকে সরাসরি কলকাতা মারকিউস স্ট্রিট(নিউ মার্কেট) এ নামিয়ে দিবে।ভাড়া হবে ২৫০রুপি।

আর ট্রেন এ প্রথমে আপনাকে সি এন জি দিয়ে বনগাঁ স্টেশন যেতে হবে ভাড়া হবে ৩০ রুপি। বনগাঁ স্টেশনে নামবার পর আপনাকে দমদম অথবা শিয়াল দহ এর টিকেট নিতে হবে ভাড়া হবে ২০রুপি। ট্রেনে প্রথমে দমদম স্টেশন আসবে তারপর শিয়াল দহ।

যদি আপনি শিয়ালদহ স্টেশনে নামেন তাহলে স্টেশন থেকে নেমে প্রি পেইড টেক্সিতে সরাসরি নিউ মার্কেট চলে যেতে পারেন। আর যদি দম দম স্টেশনে নামেন তাহলে প্রথমেই আপনি মেট্রো (পাতাল ট্রেন)এর টিকেট নিয়ে নিন।ভাড়া হবে ১০ রুপি। আপনাকে নামতে হবে এসপ্লানেড মেট্রো স্টেশনে। যাকে বলা হয় নিউ মার্কেট, ধর্মতলা। আর ফ্লাইট এ দমদম এয়ারপোর্ট এ নামার পর নিউ মার্কেট আর টেক্সি নিয়ে নিন ভাড়া হবে ৩০০ রুপি।

কলকাতা ছোট বড় মিলিয়ে অনেক ধরনের হোটেল আছে। আপনি আপনার পছন্দ মত হোটেল এ উঠতে পারেন। ৬০০ রুপি থেকে ২৫০০ রুপি পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর নিউ মার্কেট এর আসে পাসে অনেক খাবার হোটেল আছে যেখানে কম টাকায় খাবার খেতে পারবেন।

কিভাবে টিকেট পাবেনঃ

টিকিট এর জন্য আপনাকে ফেয়ারলী প্যালেস যেতে হবে। আপনাকে নিউ মার্কেট / ধর্ম তলা থেকে হাওড়া এর বাস এ উঠতে হবে। পথেই আপনি ফেয়ারলী প্যালেস বাস স্টপ পাবেন। ভাড়া হবে ৮ রুপি।

অবশ্যই মূল পাসপোর্ট সাথে নিবেন এবং পাসপোর্ট, ভিসা এর ফটোকপি। এছাড়াও আপনি নিউ মার্কেট এ এজেন্টদের কাছ থেকেও টিকেট নিতে পারেন সে ক্ষেত্রে আপনার ভাড়া ৫০০ রুপি এর মত বেশি পড়বে। সে ক্ষেত্রে আপনি ঝামেলা ছাড়া টিকেট পাবেন।

ট্রেন যাত্রা :

ব্যাঙ্গালুরুর ট্রেন সাধারণত হাওড়া স্টেশন এর ১৮ – ২৮ নম্বর প্লাটফর্ম থেকে ছেড়ে যায়। ট্রেনের টাইম এর ১ ঘন্টা আগে স্টেশনে পৌছানোর চেষ্টা করুন। কারন হাওড়া স্টেশন অনেক বেশী ব্যস্ত আর এখানে অনেক যাত্রীর ভিড়।

আপনার আগে থেকেই শুকনো খাবার, পানি নিয়ে নেয়া উচিত কারন ট্রেনে দাম অনেক বেশি। ট্রেনে উঠার পর আপনার লাগেজ সিট এর নিচে ভাল করে বেঁধে  নিন পারলে শিকল এবং তালা চাবি নিয়ে নিন। আর রাতের বেলায় টাকা এবং পাসপোর্ট সাবধানে রাখবেন। ট্রেন এ যাত্রা সময় ৩৬ ঘন্টা লাগবে ব্যাঙ্গালুরু পৌঁছাতে।

ব্যাঙ্গালুরুর স্টেশনের নাম যশবন্তপুর । আমাদের ঢাকা স্টেশনের নাম যেমন কমলাপুর। হাওড়া থেকে সরাসরি যশবন্তপুর স্টেশনের ট্রেন আছে। আর ব্যাঙ্গালুরুর (যশবন্তপুর)  স্টেশনে নামার পর প্রথমে আপনি হেল্প বুথ এ যান। তারপর আপনি যশবন্তপুর ষ্টেশনে নামার পর বাইরে যান টেক্সি পাবেন।  ৬০০ রুপি ভাড়া নিবে। আপনাকে যেতে হবে নারায়ণা হৃদয়ালয়া।

নারায়ণা হৃদয়ালয়া এর আশেপাশে অনেক হোটেল পাবেন ৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া।

দেবী শেঠি কে কিভাবে দেখাবেন:

রবিবার ছাড়া , সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে হাসপাতালে  যান।  ঢুকলেই সামনে পাবেন বাংলা বুথ।  সেখান থেকে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।  মূল পাসপোর্ট সাথে নিয়ে যাবেন।  রেজিস্ট্রেশন শেষ হলে আপনাকে দেবী শেঠি এর এসিট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট দেখবে আপনাকে  কিছু টেস্ট  দিবে।

সকল রিপোর্ট নিয়ে দেবী শেঠি এর এসিট্যান্ট  মি.দীপক সুবেদি আপনাকে দেবীশেঠির  কাছে নিয়ে যাবেন ।  একটা কথা মনে রাখতে হবে উনি জটিল হার্ড এর সমস্যা ছাড়া চিকিৎসা করেন না।  বিশেষ করে বাচ্চা এবং মহিলা  রুগীর প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।  সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ডা. দেবী শেঠির সাক্ষাত পেতে আপনাকে ১-৭ দিন সময় লাগতে পারে।

তার কয়েকজন সেক্রেটারীর মধ্যে মি. দীপক সুবেদি বেশ সাহায্যর হাত বাড়ান সবসময়।

দেবী শেঠি কে হোয়াট’স এ্যাপস এ ম্যাসেজ দিলে তিনি নিজেই উত্তর দেন । তার What’s App নম্বর হলো +919980199801 ,

ই-মেইলও করতে পারেন devishetty@narayanahealth.org।

মি. দীপক সুবেদি (দেবীশেঠির এসিট্যান্ট)  রিপোর্ট যার কাছে দেখতে নিয়ে যাবেন। উনিই আপনাকে রিপোর্ট নিয়ে ৮ তলায় নিয়ে যাবে দেবীশেঠির কাছে ।

Mob: +91 9538178958

ভিসা সংক্রান্ত যে কোনো সহযোগিতা এবং এপয়েন্টমেন্ট জন্যে আমাদের ফোন করতে পারেন : +8801715723294

Leave a Reply