একসময় মন্দিরের চারদিকে ছিল বিল। একদিন মান্দার বিলে স্নান করতে যান এক দরিদ্র অন্ধ ব্রাহ্মণ। তিনি ছিলেন রামভক্ত । স্নানকালে তিনি রাম, লক্ষ্মণ ও সীতা বিগ্রহ পান। তিনি বিগ্রহগুলোকে কোলে করে নিজের বাড়ি নিয়ে যান। পরে তিনি মন্দির তৈরি করে পুজো অর্চনা শুরু করেন। এতে তিনি তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। আর তার দরিদ্রতাও দূর হয়ে যায়। এ কথা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়লে নাটোরের রাণী ভবানী ১৭৮০ সালে এই মন্দিরটি বড়ো পরিসরে নির্মাণ করেন।[২][৩] মন্দিরের সেবাইত ছিলেন “মানদাদেবী”। তার নামে এই এলাকার নাম মান্দা হয়েছে । এছাড়া রঘুনাথ নামে মন্দিরের এক পুজারীর কথা শোনা যায় । জাগ্রত মন্দির হওয়ার জন্য মন্দিরের নাম শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউ মন্দির হয়েছে। ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ভারত সরকারের অর্থে তৈরি মন্দিরের বিশ্রাম ভবনের উদ্বোধন করা হয়।[
এই মন্দিরটি খুব জাগ্রত । এই মন্দিরে মানত করে অনেকের ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। অনেকে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছে । অনেকের সন্তান লাভ হয়েছে। মানতে অনেক মৃত শিশু প্রাণ ফেরার কথাও শোনা যায়। অনেক মুসলিমও এখানে মানত করে। [৫]বাসন্তী পূজার মহানবমীতে মন্দিরে রামচন্দ্রের পূজার মাধ্যমে রাম নবমী উৎসব শুরু হয়।যা ১৫ দিন অবদি চলে ।[৬] রাম নবমীতে এখানে ৯ দিনের মেলা বসে।[৭] এছাড়া মন্দিরে লক্ষাধিক ভক্ত আসে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে।[৮]
১ কুসুম্বা মসজিদ, মান্দা নওগাঁ – রাজশাহী মহাসড়কে বাসযোগে ৪০ মিনিট সময় লাগবে
২ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, বদলগাছী নওগাঁ বালুডাংগা বাস টার্মিনাল হতে সরাসরি বাসযোগে ঐতিহাসিক পাহাড়পুরে যাওয়া যায় |আনুমানিক দূরত্ব আনুমানিক ৩২ কিঃমিঃ বাসভাড়া- ৩০- ৪০ টাকা
৩ বলিহার রাজবাড়ী, নওগাঁ সদরঃ জেলা সদর হতে দূরত্ব ২০ কিঃ মিঃ। সড়কপথে যেকোন যানবাহনে যাওয়া যায় ।
৪ পতিসর কাচারীবাড়ী, আত্রাই জেলা সদর হতে দূরত্ব ৪৮ কিঃ মিঃ। সড়কপথে যেকোন যানবাহনে যাওয়া যায়।
৫ জবাইবিল জেলা শহর হতে বাসযোগে আনুমানিক ২ ঘন্টা থেকে ২ঘন্টা ৩০ মিনিট লাগবে
৬ জগদ্দল বিহার, ধামইরহাট জেলা সদর হতে দূরত্ব ৫৪ কিঃ মিঃ। সড়কপথে যেকোন যানবাহনে যাওয়া যায়
৭ ভীমের পান্টি, ধামইরহা জেলা সদর হতে দূরত্ব ৬৭ কিঃ মিঃ। সড়কপথে যেকোন যানবাহনে যাওয়া যায়।
৮ দিব্যক জয় স্তম্ভ, পত্নীতলাঃ জেলা সদর হতে দূরত্ব ৫৭ কিঃ মিঃ। সড়কপথে যেকোন যানবাহনে যাওয়া যায়
৯ মাহি সন্তোষ, ধামইরহাট জেলা সদর হতে দূরত্ব ৬২ কিঃ মিঃ। সড়কপথে যেকোন যানবাহনে যাওয়া যায়
১০ আলতাদিঘী , ধামইরহাট জেলা সদর হতে দূরত্ব ৫৬ কিঃ মিঃ। সড়কপথে যেকোন যানবাহনে যাওয়া যায় ।
১১ কুশুম্বা মসজিদ নওগাঁ হতে রাজশাহী মহাসড়কের মান্দা ব্রিজ থেকে পশ্চিম দিকে কুশুম্বা নামক স্থানের ৪০০ মিটার উত্তরে ঐতিহাসিক কুশুম্বা শাহী মসজিদ ও কুশুম্বা দিঘি অবস্থিত।
১২ ঠাকুর মান্দা মন্দির নওগাঁ, রাজশাহী রোডে মান্দা ব্রিজ থেকে হাজী গোবিন্দপুর মোড় থেকে সোজা পশ্চিম দিকে ঠাকুর মান্দা বিল পার হয়ে কাঁচা রাস্তার সাথে অবস্তিত। তবে বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১ কিলো মিটরি রাস্তা পানির কারনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে সে সময় নৌকা যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকে। তবে মান্দা থানার উপর দিয়ে পরানপুর হয়ে শড়ক পথে ঠাকুর মান্দা যাওয়ার এ রাস্তাটি সারা বছরই চলাচল উপযোগী।
১৩ হাপানিয়া খেয়া ঘাট সাপাহার উপজেলার জিরো পয়েন্ট হতে বাস/অটোরিক্সা/ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেল যোগে গোয়ালা ইউনিয়নে যেতে হবে। তার এখান হতে পায়ে হেটে বা ভ্যানে করে হাপানিয়া খেয়া ঘাটে যেতে হবে। এই হাপানিয়া ঘাট থেকেই পূর্নভবা নদীর অপরুপ দৃশ্য অবলোকন করা যায়। উপজেলা সদর হতে ১৫ কিঃমিঃ দূরত্ব।
কুসুম্বা মসজিদ, মান্দা
ঐতিহ্য বাহী কুশুম্বা শাহী মসজিদ
কিভাবে যাওয়া যায়ঃ
কুশুম্বা মসজিদ আত্রাই নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এবং মান্দা উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দুরে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পশ্চিমে অবস্থিত।
বর্ননাঃ
বরেন্দ্র জনপদের নওগাঁ জেলার বৃহত্তম উপজেলা মান্দায় অবস্থিত ঐতিহাসিক কুশুম্বা মসজিদ সুলতানী আমলের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। এর মিহরাবের উপরে সুলতান আলা-উদ-দীন হোসাইন শাহ এর নাম লিপিবদ্ধ থাকায় ধারনা করা হয় তাঁর শাসনামলে মসজিদটি নির্মিত হয়। এই মসজিদটি চতুস্কোণ বিশিষ্ট কালো ও ধুসর বর্ণের পাথর এবং পোড়া মাটির ইষ্টক দ্বারা নির্মিত। জ্যামিতিক নক্সার আদলে পোড়ামাটির সুদৃশ্য কারুকাজ খচিত মাটির টালি, মিহরাবে বিভিন্ন ফুল, লতা-পাতা ঝুলন্ত শিকল ও মনোরম শৈল্পিক কারুকাজ যা মুসলিম স্থাপত্য কলার অপূর্ব সমাহার। ইটের তৈরী এই মসজিদের দেওয়াল গুলো বাইরে ও ভিতরে পাথর দ্বারা আবৃত। মসজিদের চার কোনে ৪ টি অষ্টকোনাকার বুরুজ বা টারেট আছে। মসজিদের অভ্যন্তরে দুটি প্রসস্থ স্তম্ভ আছে। এই দুটি স্তম্ভ ও চার পাশের দেয়ালের উপর মসজিদের ৬ টি গম্বুজ আছে। মসজিদটির সম্মূখে ২৫.৮৩ একের আয়তনের একটি বিশাল জলাশয় রয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরে উত্তর-পশ্চিম কোনে স্তম্ভের উপর একটি উচু আসন রয়েছে। এই আসনে বসেই কাজী/বিচারক বিচার কার্য পরিচালনা করতেন বলে ধারনা করা হয়।
অবস্থানঃ
কুশুম্বা মসজিদ নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলাধীন ৮ নং কুশুম্বা ইউনিয়নের কুশুম্বা নামীয় গ্রামে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পার্শে উপজেলা সদর হতে তিন মাইল দক্ষিন-পূর্ব দিকে অবস্থিত ।
কিভাবে যাওয়া যায়:
নওগাঁ – রাজশাহী মহাসড়কে বাসযোগে ৪০ মিনিট সময় লাগবে
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, বদলগাছী
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বা সোমপুর বিহার: বদলগাছী উপজেলা তথা নওগাঁ জেলার সর্বাপেক্ষা গৌরবময় দর্শনীয় স্থান হলো সোমপুর বিহার বা পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। বর্তমান পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের অর্ন্তগত পাহাড়পুর গ্রামে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার অবস্থিত। পাহাড়পুর নামটি আধুনিক এর প্রাচীন নাম সোমপুর। বাংলাদেশে সপ্তম শতাব্দিতে (৭৭০-৮১০ খ্রি:) বৌদ্ধ ধর্মীয় পাল রাজ বংশের প্রতিষ্ঠা হয়। খ্রীষ্টিয় অষ্টম ও নবম শতাব্দিতে পাল বংশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাজা ধর্মপাল ও তার পুত্র দেবপাল বাংলা, বিহার এবং কনৌজ পর্যন্ত বিরাট সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। বৌদ্ধ ধর্মের চরম উৎকর্ষতার যুগে তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে এই পাহাড়পুর বিহার ও মন্দির গড়ে ওঠে। ঐতিহাসিক ও ভৌগলিক কারণে এই মহাবিহারটি ধ্বংসস্তুপে পরিনত হলেও আজও এই অপূর্ব বিহারটি এশিয়ার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ বিহার বলে সগৌরবে দন্ডায়মান।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য ১৭৭ টি কক্ষ ছিল। মোট ৭০.৩১ একর জমির উপর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার অবস্থিত। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এখানে একটি যাদুঘর, একটি রেষ্ট হাউজ ও কয়েকটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করেছে। ১৯৩৪ খ্রি: পর্যন্ত খননের ফলে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই বিহারের পূর্ব দিকে সত্যপিরের ভিটা ও মন্দিরের চর্তুদিক বেষ্টীত কক্ষগুলো ও সমগ্র প্রত্নাবশেষটি আবিস্কার করেন। এর মধ্যভাগে প্রধান বিহার এবং তাকে ঘিরে ১৯৮টি বাসপযোগি কক্ষ, বিস্তৃত প্রবেশ পথ, অসংখ্য বিনোদনস্তুপ, ছোট ছোট মন্দির, পুষ্করিণী অবস্থিত। মন্দিরটি উত্তর-দক্ষিণে দৈঘ্য ৩৫৭ ফুট প্রস্থে পূর্ব-পশ্চিমে ৩১৪ ফুট। মূল বিহারটি এর মধ্যস্থলে অবস্থিত। সন্ধ্যাবর্তী এখানকার রাজার কণ্যা ছিলেন। আকর্ষনীয় স্থাপত্য বিশাল আয়তন ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার আজ বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃত। সম্প্রতি এটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা ভূক্ত হয়েছে।
ঐ পাহাড়পুরের প্রস্তর গ্রাত্রে ৬৩টি মুর্তি দেখা যায়। মন্দির গ্রাত্রেও বহু জীব-জন্তুর মুর্তি পাওয়া যায়। মূল ভূমি থেকে বিহারটির উচু প্রায় ৭২ ফুট। পাহাড়পুরকে প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি সংস্করণ হিসেবে চিহিত করা যায়। প্রতি বছর এখানে বহু দেশী-বিদেশী পর্যটক ও সাধারণ মানুষের সমাগম হয়।
কিভাবে যাওয়া যায়:
নওগাঁ বালুডাংগা বাস টার্মিনাল হতে সরাসরি বাসযোগে ঐতিহাসিক পাহাড়পুরে যাওয়া যায় |আনুমানিক দূরত্ব আনুমানিক ৩২ কিঃমিঃ বাসভাড়া- ৩০- ৪০ টাকা
বলিহার রাজবাড়ী, নওগাঁ সদরঃ
বলিহার রাজবাড়ি:
নওগাঁ জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার পশ্চিমে বলিহার ইউনিয়নের কুড়মইল মৌজায় বলিহার রাজবাড়ি অবস্থিত। নওগার পুরাতন জমিদারের মধ্যে যারা মুসলিম পর্বে জায়গীর লাভ করেছিল বলিহারের জমিদার তাদের মধ্যে একজন। কথিত আছে যে, সম্রাট আওরঙ্গজেবের এক সনদ বলে বলিহারের এক জমিদার জায়গীর লাভ করেন। বলিহারের নয় চাকার রথ প্রসিদ্ধ ছিল। বলিহারের জমিদারদের মধ্যে অনেকেই উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন। রাজা কৃষ্ণেন্দ্রনাথ রায় একজন লেখক ছিলেন। বলিহারের জমিদার রাজেন্দ্র ১৮২৩ খিস্টাব্দে লোকান্তরিত হবার পূর্বে এখানকার বিখ্যাত দূর্গামন্দিরে রাজ রাজেশ্বরী দেবীর অপরূপা পিতলের মুর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মন্দির ভবনের ভিতরে অনেক কক্ষ। এই কক্ষগুলিও এক একটি মন্দির ছিল বলে জানা যায়। বলিহার রাজবাড়ির সম্মুখের কারুকার্যময় অলংকরণ বিশিষ্ট মন্দির ও বিশাল দ্বিতল রাজবাড়ির অংশ দর্শকদের নিকট আজও আকর্ষণীয়।
কিভাবে যাওয়া যায়:
জেলা সদর হতে দূরত্ব ২০ কিঃ মিঃ। সড়কপথে যেকোন যানবাহনে যাওয়া যায় ।
পতিসর কাচারীবাড়ী, আত্রাই
পতিসর কাচারী বাড়ির বণর্না।
কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের বাংলাদেশে শিলাইদহ, শাহাজাদপুর ও কালিগ্রাম পরগনাসহ মোট তিনটি জমিদারি ছিল। ভাগবাটোয়ারা সূত্রে রবীন্দ্রনাথের ভাগে পড়ে কালিগ্রাম পরগনা। গোলাম মুরশিদের মতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারির দায়িত্ব নিয়ে পতিসর আসেন ১৮৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে। আহমদ রফিকের মতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯১ সালের ১৩ জানুয়ারী শাহাজাদপুর হতে পতিসর অভিমুখে রওনা হয়ে সম্ভবত ১৬ জানুয়ারী পতিসর পৌঁছান। পতিসর থেকে স্ত্রী মৃণালিনী দেবীকে পত্রে লেখেন-‘‘আজ আমি কালীগ্রামে এসে পৌঁছালুম, তিন দিন সময় লাগল।’’ কালিগ্রাম স্টেটের কাচারীবাড়ী ছিল পতিসরে । কাচারীবাড়ীটি নাগর নদীর তীরে অবস্থিত। কাচারীবাড়ীটি নির্মাণের পর ১৯৯১ সালে সংস্কার করা হয়। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজরিত অনেক নিদর্শন রয়েছে। কাচারী বাড়ীটির পাশেই রয়েছে দেবেন্দ্র মঞ্চ ও রবীন্দ্র সরোবর। এখানে প্রতি বছরের ২৫শে বৈশাখ রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়। পতিসর সম্পর্কে তিনি লেখেন-বাংলাদেশের আর পাঁচটা গ্রামের মতই পতিসর ছোটোখাটো একটি গ্রাম, স্থানীয় লোকজনের ভাষায় অবশ্য গন্ডগ্রাম। পতিসর-কালীগ্রাম পরগনার জমিদারির সদর কাছারি এই গ্রামে বলেই এর গুরুত্ব ভিন্ন। এখানে এসে তিনি বৃহৎ গ্রামময় পল্লী বাংলা মানুষের দুঃভরা মুখ দেখতে পেয়েছিলেন। ‘স্বর্গ হইতে বিদায়’ নিয়ে মানুষের কাছে তাঁর অবস্থান নির্ধারণ করে কবি ধূলিধূসরিত মাটির পৃথিবীতে, তাঁর ভাষায় ‘সংসারের তীরে’ নেমে আসেন। তিনি অনুন্নত পরগনার রাস্তাঘাট নির্মাণ, কূপ, দীঘি, পুকুর খনন, জঙ্গল পরিষ্কার, গ্রাম্য সালিসী ব্যবস্থা ও মহাজনদের সুদের হাত হতে দরিদ্র প্রজাদের রক্ষা করেন। রবীন্দ্রনাথ পরগণার উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার দিকে বেশি গুরুত্ব দেন। এ মানুষগুলোর শিক্ষার জন্য তিনি গ্রামে গ্রামে অবৈতনিক শিক্ষা চালু করেন। কালীগ্রাম পরগনার প্রজাদের শিক্ষায় আলোকিত করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে তিনটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নোবেল পুরস্কারের সমুদয় অর্থ কালীগ্রাম পরগনার উন্নয়নে কাজে লাগান। পতিসরে তিনি কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত অসংখ্য কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস ও চিঠিপত্র লিখেছেন।
কিভাবে যাওয়া যায়:
জেলা সদর হতে দূরত্ব ৪৮ কিঃ মিঃ। সড়কপথে যেকোন যানবাহনে যাওয়া যায়।
জবাইবিল
নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলায় জবাই বিল মৎস্য উৎপাদনের একটি বড় উৎস। এটি একটি জলমহাল। আয়তন ৪০৩ হেক্টর। জলমহালটি ২০২০ সাল পর্যন্ত ২০ বৎসরের জন্য মৎস্য বিভাগে হস্তান্তরিত হয়। প্রতি ০৫ বৎসর আন্তর নবায়নযোগ্য।
বিলটি বর্ষা মৌসুমে অত্যন্ত সুন্দর আকার ধারণ করে এবং বহু পর্যটক আসে।
কিভাবে যাওয়া যায়:
জেলা শহর হতে বাসযোগে আনুমানিক ২ ঘন্টা থেকে ২ঘন্টা ৩০ মিনিট লাগবে
জগদ্দল বিহার, ধামইরহাট
ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি প্রাচীন কীর্তি। বর্তমানে স্থানীয় জনগণ এটাকে বটকৃষ্ণ রায় নামক একজন জমিদারের বাড়ীর ধ্বংসাবশেষ বলে মনে করে।
কিভাবে যাওয়া যায়:
জেলা সদর হতে দূরত্ব ৫৪ কিঃ মিঃ। সড়কপথে যেকোন যানবাহনে যাওয়া যায়
ভীমের পান্টি, ধামইরহা
ধামইরহাট উপজেলায় অবসিহত। বিষ্ণুর উদ্যোগে (৮৩৬-৯২০খ্রিঃ) নির্মিত স্তম্ভটি পাল রাজা নারায়ন পালের সময় নির্মিত। যোগাযোগের ঠিকানা- উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ধামইরহাট, নওগাঁ।
কিভাবে যাওয়া যায়:
জেলা সদর হতে দূরত্ব ৬৭ কিঃ মিঃ। সড়কপথে যেকোন যানবাহনে যাওয়া যায়।
কুশুম্বা মসজিদ
বরেন্দ্র জনপদের নওগাঁ জেলার বৃহত্তম উপজেলা মান্দায় অবস্থিত ঔতিহাসিক কুশুম্বা মসজিদ সুলতানী আমলের একটি উজ্জ্বল পুরাকীর্তি। গৌড়ের সুলতান দ্বিতীয় গিয়াস-উদ-দীন বাহাদুর শাহ‘র আমলে জনৈক সুলাইমান এটি নির্মাণ করেন। কিন্তু এর মিহরাবের শিরে সুলতান আলা-উদ-দীন হোসাইন শাহ‘র লিপিফলক থাকায় মসজিদটির প্রকৃত নির্মাতা ও নির্মাণকাল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক উত্থাপন হয়। রাজশাহীর বরেন্দ্র যাদুঘরে রক্ষিত কুশুম্বা ধ্বংসস্তুপ থেকে পাওয়া আরেকটি লিপি ফলক প্রমাণ দেয় দৃশ্যমান মসজিদটির অদুরে একটি ঐতিহাসিক মসজিদের অস্তিত্ব ছিল যা সুলতান আলা-উদ-দীন হোসাইন শাহ‘র আমলে নির্মিত হয়েছিল। ইতিহাসে সোনাবিবির মসজিদ নামে উল্লেখ মসজিদটির ধ্বংশাবশেষ অংশটুকু এখানথেকেই উদ্ধার করা যায়। কুশুম্বা ঐতিহ্যতিলক এসব পুরাকীর্তি সুলতান আমলে এজনপদের ঐতিহাসিক গুরুত্বের এক বিশ্বস্ত সংবাদ বহন করে। কুশুম্বা অঞ্চলের নামকরণ নিয়েও গ্রন্থকার যৌক্তিক দাবি উত্থাপন করেছেন। প্রচলিত মত এবং অধিকাংশ নিবন্ধকারের ধারণা সুলতান আলা-উদ-দীন হোসাইন শাহ‘র পত্নীর নামানুষারেই কুশুম্বা নাম করণ হয়ে থাকতে পারে।
বাংলাদেশে মুসলিম স্থাপত্য শিল্পরীতির প্রথম যুগপর্বের (১২০২-১৫৭৫খ্রিঃ) নির্মিত যে সমস্ত পুরাকীর্তি দেখতে পাওয়া যায়, তন্মধ্যে ৮ নং কুশুম্বা ইউনিয়ন এবং প্রাচীন কুশুম্বা গ্রামের একটি বিশাল দিঘির সু-উচ্চপশ্চিম পাড়ে অবস্থিত ও প্রসিদ্ধ মসজিদ হলো কুশুম্বা শাহী মসজিদ।
এই মসজিদ বাংলার স্বাধীন সুলতানী আমলে নির্মিত চতুস্কোণ বিশিষ্ট কালো ওধুসর বর্ণের পাথর এবং পোড়া মাটির ইষ্টক দ্বারা নির্মিত কুশুম্বা শাহী মসজিদ মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের এক অনুপম ও উজ্জ্বল নিদর্শন। জ্যামিতিক নক্সার আদলে পোড়ামাটির সুদৃশ্য কারুকাজ কৃত স্টাইল, মিহরাবে বিভিন্ন ফুল, লতা- পাতা ঝুলন্ত শিকল ও মনোরম মৌলিক কারুকাজ যা মুসলিম স্থাপত্য কলারীতির অপূর্ব সমাহার। কুশুম্বা মসজিদ আত্রাই নদীরদক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এবং মান্দা থানা সদর থেকে তিন মাইল দুরে অবস্থিত। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পশ্চিমে এবং ২৫.৮৩ একর জলা বিশিষ্ট বিশাল কুশুম্বা দিঘির পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত।
কুশুম্বা মসজিদের চারকোণে অতন্দ্র প্রহরীর মতো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে অষ্টাভুজাকৃতির চারটি শক্ত বুরুজ বা টারেট। আর উপরে ছয়টি গম্বুজ।
কিভাবে যাওয়া যায়:
নওগাঁ হতে রাজশাহী মহাসড়কের মান্দা ব্রিজ থেকে পশ্চিম দিকে কুশুম্বা নামক স্থানের ৪০০ মিটার উত্তরে ঐতিহাসিক কুশুম্বা শাহী মসজিদ ও কুশুম্বা দিঘি অবস্থিত।
ঠাকুর মান্দা মন্দির
তথ্য সুত্রে জানা যায় যে, নাটোরের ছোট রাজা নামীয় রাজ তন্ত্রের সময়ে এই মন্দিরটি এবং বগুড়া জেলার মা ভবানী মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ মন্দিরের বর্তমান সেক্রেটারী জনাব সত্যেনন্দ্র নাথ এর কাছ থেকে জানাযায় যে এটি একটি জাগ্রত মন্দির, প্রচলিত রয়েছে যে এই মন্দিরে মানত করে অনেক লোকের আশা-আকাঙ্খা পূর্ন হয় এবং অতীতে অনেক অন্ধ জনেরও চোখ ভালো হয়েছে। বর্তমানে মহানবমী (বাসন্তী) পূজার সময় সেখানে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়। জাগ্রত মন্দিরের কারনে এই মন্দিরটির নাম শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউ মন্দির নামে অভিহিত আছে। প্রবাদ আছে যে, হিন্দু প্রধান বর্তমানের কসবা মান্দায় (নামান্তরে ঠাকুরমান্দা) যে রঘুনাথ মন্দির আছে, তার সেবাইত ছিলেন জনৈক “মানদাদেবী” এবং পুজারী ছিলেন জনৈক রঘুনাথ । এখানে বহু অলৌকিক ঘটনা ঘটে । অন্ধ ব্যক্তি চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতেন । এই মানদা দেবীর কৃপা তথা সেবা লাভের আশায় সমবেত ভক্ত গণের ভক্তি ভাবেদেয়া নামে এলাকার নাম হয় (মান্দা বা মান্দা) মান্দা।
কিভাবে যাওয়া যায়:
নওগাঁ, রাজশাহী রোডে মান্দা ব্রিজ থেকে হাজী গোবিন্দপুর মোড় থেকে সোজা পশ্চিম দিকে ঠাকুর মান্দা বিল পার হয়ে কাঁচা রাস্তার সাথে অবস্তিত। তবে বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১ কিলো মিটরি রাস্তা পানির কারনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে সে সময় নৌকা যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকে। তবে মান্দা থানার উপর দিয়ে পরানপুর হয়ে শড়ক পথে ঠাকুর মান্দা যাওয়ার এ রাস্তাটি সারা বছরই চলাচল উপযোগী।
হাপানিয়া খেয়া ঘাট
নদী মাত্রিক দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ । সাপাহার উপজেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্য হাপানিয়া খেয়াঘাট অন্যতম। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদাহ জেলার মধ্যদিয়ে পূর্নভবা নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ নদী বিভক্ত করেছে বাংলাদেশ এবং ভারতকে। হাপানিয়া ঘাট নামক স্থানে এ নদীটির উপর একটি ব্রিজ তৈরী করা হয়েছে।যাতে করে এখান কার অপরুপ সৌন্দর্য পর্যটকদের মন কিছুক্ষনের জন্য হলেও প্রশান্ত করেদেয়। আর এ নদীকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে অনেক জেলে পরিবার। আর এ নদী থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ যা, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানী করা হয়ে থাকে । এনদী বক্ষ থেকেই অবলোকন করা যায় নদী মাতৃক আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
কিভাবে যাওয়া যায়:
সাপাহার উপজেলার জিরো পয়েন্ট হতে বাস/অটোরিক্সা/ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেল যোগে গোয়ালা ইউনিয়নে যেতে হবে। তার এখান হতে পায়ে হেটে বা ভ্যানে করে হাপানিয়া খেয়া ঘাটে যেতে হবে। এই হাপানিয়া ঘাট থেকেই পূর্নভবা নদীর অপরুপ দৃশ্য অবলোকন করা যায়। উপজেলা সদর হতে ১৫ কিঃমিঃ দূরত্ব।
সংগ্রহ-বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন