Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্টানে শিক্ষক কর্মচারীদের জাতীয় বেতন ক্রমের শত ভাগ প্রাপ্তির

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্টানে শিক্ষক কর্মচারীদের জাতীয় বেতন ক্রমের শত ভাগ প্রাপ্তির ইতিবৃত্ত প্রথম পর্ব

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ম্যানেজিং কমিটি বা ক্ষেত্রমত গর্ভনিং বডি। আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষার ৯৭% শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি। বাকি ৩% সরকারি। সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই আবার বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত যা পরবর্তীতে জাতীয়করনকৃত। এক কথায় বলা যায় আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকারের চেয়ে বেসরকারি অবদান বেশি। সরকার এক সময় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বছরে একটা থোক বরাদ্দ দিতেন যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

যে কারণে এই পেশায় মেধাবীদের ধরে রাখা যেত না। আমাদের দেশে সমাজ হিতৈষী ব্যাক্তিবর্গের দ্বারা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠে। ১০ জানুয়ারী, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাথে এক চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তি ছিল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীবৃন্দ সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের সমমানের বেতনক্রমে বেতন পাবেন এবং তা ০১/০১/১৯৮০ খ্রি. থেকে কার্যকর হবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষক কর্মচারী যে জাতীয় বেতন ক্রমের শত ভাগ পেয়েছে তার বিবরণ ক্রমে তুলে ধরা হলো – জাতীয় বেতন ক্রমের ধাপে ধাপে বেসরকারি

ক.০১/০১/১৯৮০খ্রি.থেকে ৩০/০৬ ১৯৮২ খ্রি. পর্যন্ত কেবলমাত্র বেতনক্রমের প্রারম্ভিক স্তরের ৫০% প্রদান করেন।

খ.০১/০৭/১৯৮২ খ্রি.থেকে ২৮/০২/ ১৯৮৩ খ্রি.পর্যন্ত বেতনক্রমের প্রারম্ভিক স্তরের ৫০%এবং তৎসঙ্গে ১৫% মহার্ঘ ভাতা প্রদান করেন।

গ. ০১/০৩/১৯৮৩ খ্রি. থেকে ৩১/১২/১৯৮৩ খ্রি.পর্যন্ত বেতনক্রমের প্রারম্ভিক স্তরের ৫০% বেতনের অংশ বাবদ এবং ৩০% মহার্ঘ ভাতা প্রদান করেন।

ঘ.১/১/১৯৮৪ খ্রি.থেকে ২৮/০২/১৯৮৬ খ্রি.পর্যন্ত পূর্বোক্ত বেতন ভাতাদির অংশ বহাল রেখে তৎসঙ্গে চিকিৎসা ভাতা ৬০ টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা ১০০ টাকা এবং বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সমমান সুবিধা যুক্ত করা হয়।

ঙ.০১/০৩/১৯৮৬ খ্রি.থেকে ৩০/০৬/১৯৮৬ খ্রি. পর্যন্ত বেতনক্রমের প্রারম্ভিক স্তরের ৬০% বেতনের অংশ এবং চিকিৎসা ভাতা ১০০ টাকায় উন্নীত করা হয়।

চ. ০১/০৭/১৯৮৬ খ্রি.থেকে ৩০/০৬ /১৯৮৯ খ্রি. পর্যন্ত বেতনক্রমের ৭০% বেতনের অংশ প্রদান করেন।

ছ. ০১/০৭/১৯৮৯খ্রি. থেকে বেতনক্রমের প্রারম্ভিক স্তরের ৭০% বেতনের অংশ প্রদানসহ মূল বেতনের ১০% মহার্ঘ ভাতা প্রদান করেন।

জ.০১/১২/১৯৯০ খ্রি.থেকে ৩০/০৬/১৯৯২খ্রি. পর্যন্ত অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পূর্ববৎ বহাল রেখে বেতনক্রমের প্ররম্ভিক স্তরের ২০%মহার্ঘ ভাতা প্রদান করেন।

ঝ. নতুন ৩য় বেতন স্কেল হওয়ায় ০১/০৭/১৯৯২ খ্রি.থেকে ৩০/০৬/৯২ খ্রি.পর্যন্ত ৭০% বেতন দেওয়া হয় এবংমহার্ঘ ভাতা বাদ দেওয়া হয়।

ঞ.০১/০৭/১৯৯৪ খ্রি.থেকে ৩১/১২/১৯৯৪ খ্রি.অন্যান্য সুবিধাদি বহাল রেখে চিকিৎসা ভাতা ১৫০ টাকা উন্নীত করেন। উক্ত তারিখ থেকে টাইম স্কেল চালু করা হয়।

ট.০১/০১/১৯৯৫খ্রি. থেকে অন্যান্য সুবিধাদি বহাল রেখে জাতীয় বেতন ক্রমের প্রারম্ভিক স্তরের ৮০% এ উন্নীত করেন।

ঠ.০১/০৭/২০০০ খ্রি. থেকে বেতন ক্রমের প্রারম্ভিক স্তরের ৯০% বেতন ধার্য করেন।

ড. ০১/০৭/২০০৬ খ্রি. থেকে বেতনক্রমের প্রারম্ভিক স্তরের ৯৫% প্রদান করেন।

ঢ. ০১/০৭/২০০৭ থেকে বেতনক্রমের প্রারম্ভিক স্তরের ১০০% বেতন হিসেবে প্রদান করেন। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী বেতনক্রমের ১০০% প্রাপ্তির সাথে সাথে এই চাকরি অনেকটা লোভনীয় হয়ে উঠে। এখান থেকেই ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে বানিজ্য বা স্বজন প্রীতির বিষয় উঠে আসে । কলুষিত হতে থাকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গর্ভনিং বডি। যতটা দুর্নীতির অভিযোগ আসে তার পুরোটা সত্য নয়। তবে একেবারেই জোর দিয়ে বলা যাবেনা যে, কোন ম্যানেজিং কমিটিই দূর্নীতির সাথে জড়িত নয়। একইভাবে এটাও বলা যাবেনা যে, সকল ম্যানেজিং কমিটি দূর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। অধিকাংশই ভালো ছিল। এই বদনাম আসায় অনেক ভালো মানুষ এ সিষ্টেম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এই সুযোগে খারাপ লোকগুলো বেশি করে ঢুকে পড়েছে। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায়, বেকারত্ব সমস্যা সমাধানে নিজ উদ্যোগে কেউ জমি দান, কেউ অর্থ দিয়ে সম্মিলিত ভাবে যত্র তত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

এরা কিন্তু সত্যিকারের শিক্ষানুরাগী নন। নিজেদের চাকুরির স্বার্থে কয়েকজন বেকার মিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। তাদের উদ্দেশ্য চাকুরি। আর চাকুরীর নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ পক্ষ ম্যানেজিং কমিটিকে নিজেদের আয়ত্বে রাখা। তাই নিজের চাকুরীর নিশ্চিতার জন্য ম্যানেজিং কমিটিতে ঢুকানো হয় নিজেদের আত্মীয়-স্বজন। এভাবেই কিছু ম্যানেজিং কমিটির মধ্যে দূর্নীতি প্রবেশ করে। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে। এই ধারা ক্রমান্নয়ে প্রায় অধিকাংশ স্কুলে স্থানান্তরিত হতে থাকে। প্রথমে আত্মীয় দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও পরে সেটা অর্থের বিনিময়ে নিম্ন মানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে থাকে। শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়োগ দিয়ে অর্থ উপার্জন করা যায় জেনে তখন থেকে দুষ্টচক্র কমিটিতে আসার চেষ্টা করে এবং তারা এসে যায়। এ সমস্ত গুটি কয়েক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির জন্য দুর্নাম ছড়িয়ে পরে সকল ম্যানেজিং কমিটির নামে। তখন কেউ এর প্রতিবাদ করেনি। বিষয়টির ব্যাখ্যাও কেউ দেয় নি।

এধরণের নতুন স্কুলগুলোর পাঠদান অনুমতি কে দিয়েছেন? এম.পি ও ভুক্ত হল কাদের মাধ্যমে? তারা কিন্তু ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে গেল। যে সকল সরকারি কর্মকর্তারা নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে বিধি ভঙ্গ করে পাঠদানের অনুমতি দিল, তা কী এমনি এমনিই দিয়ে দিল? না এর সাথে কোন কিছুর বিনিময় আছে। শিক্ষক নিয়োগে বানিজ্য করনের কথা বলে ম্যানেজিং কমিটির বদনাম করা হলো। হয়তো কিছু কিছু ম্যানেজিং কমিটি এ ধরনের অনৈতিক কাজের সাথে যুক্ত আছে। কিন্তু সব ম্যনেজিং কমিটি নয়। আমরা কেন শুধু ম্যানেজিং কমিটি বা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে দায়ী করব? নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে ডি.জি মহোদয়ের প্রতিনিধি হিসাবে সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক থাকেন, মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসাবে মাধ্যমিক থানা শিক্ষা অফিসার থাকেন , ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং অন্য একজন সদস্য। নিয়োগ কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে দুজন সরকারি লোক, তারা ম্যানেজ হয় কী ভাবে? যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং অপর সদস্য তাদের আত্মীয় বা টাকার বিনিময়ে তুলনামূলক দূর্বল প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে চায়। তা প্রতিরোধ করার জন্য নিয়োগ কমিটিতে সরকারের প্রতিনিধিরা আছেন, তারা কেন এটা মেনে নিচ্ছেন? এখানে তারা সভাপতি বা ম্যানেজিং কমিটির সাথে তাল মিলিয়ে নিয়োগ দিয়ে আসলে ধরে নিতে হবে নিয়োগে কোন রূপ স্বজনপ্রীতি বা অনিয়ম হয়নি।

যদি অনিয়ম হয় তবে তার দায় সবার উপরেই বর্তাবে। শুধু ম্যানেজিং কমিটির উপর কেন যাবে? এই কথাটা কেউ বলেনা। সব কাজ কী ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করেন? তাঁর কাছে প্রধান শিক্ষক বাঁধা থাকেতে পারে কিন্তু ডি.জি মহোদয়ের প্রতিনিধি ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তো সভাপতির কাছে বাঁধা পরে নাই। তাদের বাঁধার কী ব্যবস্থা নিলেন ম্যানেজিং কমিটি? দোষ করলে সবাইকে নিয়েই করতে হয়েছে। কিন্তু শুধু ম্যানেজিং কমিটির কারণে অযোগ্য, নিম্নমানের শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। এই বিষয়টির সাথে আমি একমত নয়। আমি মনে করি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেসরকারি উদ্যোগকে ক্ষতি গ্রস্ত করা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বেসরকারি উদ্যোগকে অস্বীকার করা হয়েছে।

দুলাল চৌধুরী

সাংগঠনিক সম্পাদক

বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রধান পরিষদ

Leave a Reply