জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, কুমিল্লা: গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর ফিরে আসার আহ্বান জনিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে ১০ যুবকের ছবিসহ গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, তাদের একজন সাইফুল্লাহ ওজাকি।
বিজ্ঞপ্তিতে সাইফুল্লাহ ওজাকিকে সিলেটের উল্লেখ করা হলেও মূলতঃ তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। নাগরিকত্ব নিয়ে জাপানে বসবাসকারী এই মেধাবী যুবক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।
পুলিশের তালিকায় তাকে নিখোঁজ দেখানো হলেও তার পরিবারই জানে না তিনি নিখোঁজ। তাই সঠিক তদন্তের দাবি পরিবার, জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসীর।
নবীনগর উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামের জনার্দন দেবনাথের ছেলে সুজিত কুমার দেবনাথই সাইফুল্লাহ ওজাকি। ছেলেবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী সুজিত পরীক্ষায় বরাবরই প্রথম হতেন। পার্শ্ববর্তী হুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি, লাউর ফতেহপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর সিলেট ক্যাডেটে কলেজে ভর্তি হয়ে এসএসসি ও এইচএসসিতে বোর্ডের মেধা তালিকায় স্থান লাভ করেন।
২০০১ সালে জাপান সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে জাপান চলে যান সাইফুল্লাহ ওজাকি। সে দেশের এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। ওই ভার্সিটির গ্রাজুয়েটদের দেয়া হয় ওজাকি উপাধি।
অনার্স পরীক্ষর ফলাফলের পর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান তাকে একটি মোটরসাইকেল উপহার দিয়েছিলেন। সুজিত জাপানের এক সম্ভান্ত পরিবারে বিয়ে করেন। পরে সস্ত্রীক ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি নাম ধারণ করেন। সুজিতের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তার গ্রামের লোকজন মনে করেন, তিনি কোনো রকম সন্ত্রাসী কাজ করতে পারেন না।
জাপানে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী মেধাবী সাইফুল্লাহ ওজাকি ২০০৬ সালে অনার্সে প্রথম বিভাগে প্রথম হওয়ার পর একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাবা জনার্ধন দেবনাথকে সঙ্গে করে জাপানে গিয়েছিলেন। এরপর থেকে নিয়মিত মা-বাবার সঙ্গে কথাও বলতেন, খোজঁখবরও নিতেন।
কিন্তু সাইফুল্লাহ নিখোঁজ হলেন কীভাবে- সেটা ভাবিয়ে তুলেছে পরিবারকে। গণমাধ্যমে তাদের সন্তানের সংবাদ পেয়ে খুবই কাতর হয়ে পড়েছেন সুজিতের বাবা-মা। তাদের সন্তান নিখোঁজ একথা তারা জানেনই না। ছেলে জঙ্গি হতে পারে তা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না সুজিতের মা।
সুজিতের মা বলেন, ‘সে আমার ছেলে, আমি তাকে চিনি। আমাকে সব কথা বলত। আমাকে টাকা পাঠাত। আমাকেও একবার জাপান নিয়ে গিয়েছিল। আমার ছেলে তো শান্ত ও ভদ্র স্বভাবের। সে এ কাজ কখনই করতে পারে না। কেউ শত্রুতাবসত এমন কাজ করে থাকতে পারে।’
সূত্রমতে, সুজিত নিখোঁজ হয়েছে বলে কোনো সাধারণ ডায়েরি করেনি তার পরিবার। তার পরও পুলিশের নিখোঁজ তালিকায় কি করে তার নাম আসে? তিনি থাকেন জাপানে, তাহলে উত্তরা থানায় কী করে তার নামে মামলা হয়? তদন্তের পরও কেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুজিতকে সিলেটের বাসিন্দা হিসেবে দেখানো হচ্ছে? এসব প্রশ্ন উঠছে।
বাবা জনার্ধন দেবনাথ বলেন, ‘২০০৬ সালে সাইফুল্লাহ অনার্সে প্রথম বিভাগে প্রথম হওয়ার পর একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আমাকে জাপান নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে আমি প্রায় ২২ দিন ছিলাম। আমি তার কাছে কিছু চাইতাম না। তার মাকে মাঝে মধ্যে টাকা পাঠাত। সে ভদ্র, শান্ত ও মেধাবী ছিল। সে কোনো রকম সন্ত্রাসী কাজ করতে পারে না।’
জনার্ধন দেবনাথের ৩ ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবার বড় সুজিত দেবনাথ (৩২)। পরিবারের সদস্যরা জানায়, সুজিত জিনদপুরের হুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পায়। এরপর ভর্তি হয় ফতেহপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে সিলেট ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হয়। সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে সুজিত। ওই দু’পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান করে নেয় সে।
এরপরই বৃত্তি নিয়ে জাপানে চলে যান । সেখানকার এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের মধ্যে দিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। সুজিত ২০০১ সালে জাপান যাওয়ার পর সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
সুজিতের মামা শংকর দেবনাথ বলেন, ‘সাইফুল্লাহ খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। সে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে স্ট্যান্ড করে। পরে বৃত্তি পেয়ে জাপান চলে যায়। জাপান এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে। পরে জাপানের কিউতো ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে যোগদান করে। অনার্স পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় ফলাফলের পর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান তাকে একটি মোটরসাইকেল উপহার দিয়েছিলেন। আর সেই তরুণ এখন পুলিশের খাতায় ওয়ান্টেড।
ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের করা একটি মামলার আসামি সাইফুল্লাহ ওজাকি (মামলা নং ২৩, তারিখ: ২৪/৫/১৫ ইং)। কয়েক মাস আগে নবীনগর থানা পুলিশ তদন্তে যায়। এরপরই গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর নিখোঁজ হিসেবে তার নাম প্রকাশিত হয়।
সাইফুল্লাহ ওজাকির বাবা জনার্ধন দেবনাথ পেশায় একজন কাপড় ব্যবসায়ী। বাজারে বাজারে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করে খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে ছেলে মেয়েদের মানুষ করেছেন। বর্তমানে জিনদপুর বাজারে দোকান করে প্রতিষ্ঠিত একজন কাপড় ব্যবসায়ী। জিনদপুর বাজারে স্থায়ী দোকান খোলার আগে বিভিন্ন হাটে ঘুরে ঘুরে কাপড় বিক্রি করতেন তিনি। তার আরেক ছেলে আশিক ঢাকা নডরডেম কলেজের ছাত্র ছিল। একটি দুঘর্টনায় ১২বছর আগে সে মারা যায়। ছেলে সুজিতের পড়াশুনার জন্যে তার শ্রমঘামের প্রশংসা আছে গ্রামে। সাইকেলে করে ছেলেকে নিয়ে যেতেন প্রাইভেট পড়াতে। প্রাইভেট শেষ হলে আবার নিয়ে আসতেন। ছেলে ধর্মান্তরিত হয়ে দূরে সরে গেলে তার ভালোবাসা কমেনি ছেলের প্রতি। বলেন, ‘সে ব্রিলিয়্যান্ট। ধর্মান্তরিত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু জঙ্গিদের সাথে জড়িয়ে পড়ছে বলে মনে হয় না।’
সুজিত ওরফে সাইফুল্লাহর মা অনিতা রানী দেবী বলেন, ‘আমার সাথে তার সখ্যতা বেশি। বাবার সাথে ততো না। আমাকে সব কথা বলে। আমাকে টাকা পাঠায়। আমাকেও একবার জাপান নিয়ে গিয়েছিল। আমার ছেলে তো শান্ত ও ভদ্র স্বভাবের। সে আমার ছেলে, আমি তাকে চিনি। সে এ কাজ কখনোই করতে পারে না।’
স্থানীয়রা বলছেন, ১৪ মাস আগে বাংলাদেশে এসে গ্রামে গিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে বাড়িতে বাবা-মার সঙ্গে দেখা করতে যান। তখনও তাকে নিয়ে কোনো সন্দেহ হয়নি কারও। কিন্তু তালিকায় নাম আসার পর ব্যবসায়ী জনার্ধন দেবনাথ জানতে পারেন, তার ছেলে নিখোঁজ।
এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সুজিতের বিষয়ে বিভ্রন্তিকর সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
কানাডা ভিত্তিক বেঙ্গল টাইমস নামে একটি অনলাইন পত্রিকায় ২৩ জুলাই সংবাদ প্রকাশ করে যার শীরোনাম ‘ধর্মান্তরিত হয়ে সপরিবারে ‘আইএসে’ সাইফুল্লাহ ওজাকি’। অনলাইন দ্য জাপান টাইমস এর বরাত দিয়ে প্রকাশ করা ওই প্রতিবেদনে উল্লেক করা হয়, ‘স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ইউরোপ হয়ে সিরিয়া পাড়ি দিয়েছেন সাইফুল্লাহ ওজাকি। মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি কিয়োটো প্রিফেকচারে রিটসুমেইকান ইউনিভার্সিটিতে তিনি অধ্যাপনা করতেন। তার স্ত্রী একজন জাপানি। গত বছর তিনি সপরিবারে ইউরোপের উদ্দেশে জাপান ত্যাগ করার পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন।’
বেঙ্গল টাইমসের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘ধর্মান্তরের পর বাংলাদেশে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা সাইফুল্লাহ ২০১১ সালে পিএইচডি ডিগ্রি নেয়ার পর রিসুমেকান ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে শিকতায় যোগ দেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে যোগ দেন তিনি। অথচ তার (সুজিতের) পরিবারের সাথে কথা বলে পরিবার থেকে সুজিতের বিচ্ছিন্ন থাকার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানা গেছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘সাইফুল্লাহ ওজাকি ২০১৫ সালের ১৫ মে তুরস্কের ইস্তাম্বুল হয়ে সিরিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তখন জাপান ফিরে আসার পর পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তবে তখন উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে সাইফুল্লাহ ওজাকির কোনোরকম যোগসাজশ না পাওয়ার কথা জানিয়েছিল জাপান পুলিশ।’ সব মিলিয়ে প্রতিবেদনটিতে পরষ্পর বিরোধী তথ্য প্রকাশ করায় বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলেও অনেকে মনে করছেন।
জিনদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রউফ বলেন, ‘সুজিতকে আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি। পরে জানতে পারি সে জাপান গিয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কয়েক মাস আগে সুজিতের নাম পরিচয় জানতে পুলিশ আসার পর তাকে ফোন করে আমি এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। তখন সে আমাকে বলেছে এই অভিযোগ ঠিক নয়। তার ক্ষতি করার জন্য এটা কিছু লোকের যড়যন্ত্র বলে জানায় সুজিত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ আহম্মেদ জানান, থানায় সুজিতের নামে কোনো জিডি নেই। এ বছরের ৪ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ থেকে মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকির নাম-ঠিকানা যাচাইকরণের জন্য বলা হয়েছিল। সেই লক্ষ্যে আমরা তার গ্রামের বাড়িতে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠাই। -বাংলামেইল
ক্যাডেট কলেজ পড়ুয়া সুজিত দেবনাথকে নিয়ে তোলপাড় চলছে। কেবল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নয়, এই আলোচনা চলছে গোয়েন্দা মহলেও। হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে নাম রাখেন সাইফুল্লাহ ওজাকি। কি তার আসল পরিচয়, কিভাবে নাম লেখালো জঙ্গি খাতায়, কার সহায়তায় এই পথে পা রাখলো এসব হিসাব নিকাশ চলছে তাকে নিয়ে। অনার্স পরীক্ষায় ঈর্ষনীয় ফলাফলের পর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের তত্কালীন মহাসচিব কফি আনান তাকে একটি মোটরসাইকেল উপহার দিয়েছিলেন। আর সেই তরুণ এখন পুলিশের খাতায় ওয়ানটেড। গোয়েন্দারা তার ব্যাপারে ইতোমধ্যে নানান তথ্য তালাশ শুরু করেছেন। তারা বলছেন, সাইফুল্লাহ ওজাকি কি আসলেই সুজিত দেবনাথ? নাকি সাজানো নাম? এই বিষয়েও তদন্ত চলছে।
সাইফুল্লাহ ওজাকি উত্তরা পশ্চিম থানার একটি মালার আসামী। মামলা নম্বর ২৩(৫) ২০১৫। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী নিখোঁজ ১০ জনের মধ্যে সাইফুল্লা ওজাকিও আছেন। তার বিস্তারিত পরিচয় মিলেছে। গুলশানের জঙ্গি হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ যে ১০ যুবকের তালিকা দেয়া হয়, এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়রেন কড়ইবাড়ি গ্রামের সুজিত দেবনাথ ওরফে সাইফুল্লাহ ওজাকির নামও রয়েছে। কে ওই সুজিত দেবনাথ: এলাকাবাসী জানান, সুজিত দেবনাথই ধর্মন্তরিত হয়ে নাম রাখেন সাইফুল্লাহ। আর জাপানের রিটসো মেইকান এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নেয়ার পর তার উপাদি দেয়া হয় ওজাকি হিসেবে। ওই ভার্সিটির গ্রাজুয়েটদের এই উপাধি দেয়া হয়। এদিকে ছেলের নিখোঁজের খবরে শয্যাশায়ী তার পিতা জনার্ধন দেবনাথ। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও করছেন কান্নাকাটি। যদিও ওজাকি হিন্দু ধর্ম ছেড়ে মুসলমান হয়েছেন। জাপানে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী মেধাবী ওজাকি নিখোঁজ হলেন কিভাবে সেটি ভাবিয়ে তুলেছে তার পরিবারকে। পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিলো কমই। জিনদপুর বাজার আর গ্রামের বিভিন্ন স্থানে আলোচনা হচ্ছিল জনার্ধনের ছেলে সাইফুল্লাহ ওজাকিকে নিয়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক প্রকাশিত এ তালিকায় সাইফুল্লাহ ওজাকির ছবি থাকার বিষয়টি মঙ্গলবার বিকালের পর জানতে পারেন জানার্ধন। এরপরই ভেঙ্গে পড়েন তিনি। বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া গেছে শয্যাশায়ী। আত্মীয় স্বজনরাও ছুটে এসেছেন দূরদূরান্ত থেকে। জনার্ধনের প্রশ্ন তার ছেলে নিখোঁজ কিভাবে হয়েছে তার জানা নেই। তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, নিখোঁজ কথাডা আইলো কি করে? সেতো জাপানে ইউনিভার্সিটিতে প্রফেসারি করে। তাহলে কি জাপান নাই?
saifullah ojaki তিনি বলেন কয়েক মাস আগে পুলিশ আসার পর তাকে ফোন করে আমি এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। তখন সে আমাকে বলেছে এই অভিযোগ ঠিক নয়। তার বন্ধুরা হিংসাত্বক হয়ে তার অনিষ্ট করার জন্যে এই অভিযোগ এনেছে। আমার ধারনা আর্ন্তজাতিক কোনো সংস্থা তার ব্রেইন ওয়াশ করে থাকতে পারে। বাবা জনার্ধন দেবনাথ জানান, ২০০৬ সালে সাইফুল্লাহ অনার্সে প্রথম বিভাগে প্রথম হওয়ার পর একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আমাকে জাপান নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে আমি প্রায় ২২ দিন ছিলাম। বাংলাদেশে আসলে আমাদের সঙ্গে দেখা করে যেত। মাঝে মধ্যে ফোনে খোঁজ-খবর নিত। তবে গত ৬ মাস ধরে আর কোন খোঁজ-খবর নেয় না। আমি তার কাছে কিছু চাইতাম না। তার মাকে মাঝে মধ্যে টাকা পাঠাত। সে ভদ্র, শান্ত ও মেধাবী ছিল। সে কোন রকম সন্ত্রাসী কাজ করতে পারে না। জনার্ধনের ৩ ছেলে মেয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন সুজিত দেবনাথ (৩২)। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর নাম রাখেন সাইফুল্লাহ ওজাকি। কয়েক মাস আগে নবীনগর থানা পুলিশ তদন্ত করতে গেলে হতবাক হন তার বাবা জনার্ধন দেবনাথ। পুলিশ তাকে জানায় তার ছেলে জঙ্গিদের অর্থায়ন করে। ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের করা একটি মামলার আসামী। (মামলা নং ২৩,তারিখ:২৪/৫/১৫ ইং) পুলিশ তদন্তে যায়। ওই থানা থেকে নবীনগর থানার ওসির কাছে পাঠানো অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়- ঘটনার সঙ্গে জড়িত পলাতক আসামী সুজিত চন্দ্র দেবনাথ, পিতা-জনার্দন দেবনাথ, গ্রাম কড়াই বাড়ি, ডাকঘর: জিনোদপুর। পরবর্তীতে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে। তার নাম পরিবর্তন করে সাইফুল্লাহ ওজাকি নামধারণ করে। বর্তমানে সে জাপানে বসবাস করছে। সে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশে আসে ও বিভিন্ন জংঙ্গী সংগঠনের সাথে যোগাযোগ রাখে। সে জেএমবি’র সক্রিয় সদস্য। এ বছরের ৪ জানুয়ারি ওই অনুসন্ধান প্রতিবেদ নবীনগর থানায় পাঠানো হয়। এরপরই গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর নিখোঁজ হিসেবে তার নাম প্রকাশিত হয়। Ritsumeikan_APU_Univ,_JapanCL
সুজিতের পড়াশুনা: জনার্ধন দেবনাথের ৩ ছেলে মেয়ের মধ্যে সবার বড় সুজিত চন্দ্র দেবনাথ। পরিবারের সদস্যরা জানায়- সুজিত জিনদপুরের হুরুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পায়। এরপর ভর্তি হয় ফতেহপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে । সেখান থেকে সিলেট ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হয় সে। সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে সুজিত। ওই দু’পরীক্ষায় মেধা তালিকার শীর্ষে জায়গা করে নেয় সে। এরপরই বৃত্তি নিয়ে জাপানে চলে যায় । সেখানকার এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের মধ্যে দিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করে। সুজিত ২০০১ সালে জাপান যাওয়ার পর সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সুজিতের মামা শংকর দেবনাথ ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, সাইফুল্লাহ খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। সে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে স্ট্যান্ড করে। পরে বৃত্তি পেয়ে জাপান চলে যায়। জাপান এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে। পরে জাপানের কিউতো ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে যোগদান করে। অনার্স পরীক্ষার ফলাফলের পর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের তত্কালীন মহাসচিব কফি আনান তাকে একটি মোটরসাইকেল উপহার দিয়েছিলেন। পরে সে একজন জাপানিকে বিয়ে করে। তারপর স্বামী-স্ত্রী দু’জনই মুসলমান হন। তাদের তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। তার পিতা একসময় এলাকায় ফেরি করে কাপড় বিক্রি করতেন। গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় জিনদপুর বাজারে দোকান নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করছে।
সাইফুল্লাহ ওজাকির একটি ছোট বোন রয়েছে। সে-ও মাস্টার্স করেছে। তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়েছে।
baba সেখানে যাওয়ার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। সুজিতের পিতা জনার্দন দেবনাথ ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, তার ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন তিনি অনেক পরে। ২০০৬ সালের দিকে। তবে আমাদের আগে বাইরের মানুষ জানতে পেরেছে। তারা আমাকে প্রশ্ন করে সে ধর্মান্তরিত হয়েছে কিনা। তাছাড়া সে তখন দাড়িও রাখে। জানান একবছর আগে বাড়িতে এসেছিলো সুজিত। স্থানীয় একজন ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে আসে প্রথম। এরপর চেয়ারম্যানকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। কিন্তু ১০/১৫ মিনিট পরেই আবার চলে যায়। জনার্ধন জানান, এরপর মাস সাতেক আগে ছেলের সাথে তার কথা হয়। তখন সে খোজঁখবর নেয়। কিন্তু সে এখন কিভাবে নিখোঁজ অইলো তা বুঝতে পারছিনা। জনার্ধনের আরেক ছেলে অশিত দেবনাথ মারা যান ২০০৪ সালে। মেয়ে রীনা দেবনাথকে বিয়ে দিয়েছেন। সুজিতই ছিলো তার আশা ভরসা। সুজিতের ধর্মান্তরিত হওয়ার পর স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় তার।
জনার্ধন আরও বলেন, আমার জীবনডা শেষ। কোন রকমে বাইচ্চা আছি। আশা-ভরসা বলতে কোন কিছু নেই। যদি তাড়াতাড়ি মরতে পারতাম। জনার্ধন জিনদপুর বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করেন। স্থায়ী দোকান খোলার আগে বিভিন্ন হাটে ঘুরে ঘুরে কাপড় বিক্রি করতেন তিনি। ছেলে সুজিতের পড়াশুনার জন্যে তার শ্রমঘামের প্রশংসা আছে গ্রামে। সাইকেলে করে ছেলেকে নিয়ে যেতেন প্রাইভেটে। প্রাইভেট শেষ হলে আবার নিয়ে আসতেন। ছেলে ধর্মান্তরিত হয়ে দূরে সরে গেলে তার ভালোবাসা কমেনি ছেলের প্রতি। বলেন, সে ব্রিলিয়্যান্ট। ধর্মান্তরিত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু জঙ্গিদের সাথে জড়িয়ে পড়ছে বলে মনে হয় না। কয়েক মাস আগে পুলিশ এসে এসব বলার পর হতবাক হয়েছিলাম। নিখোঁজের খবরে একই অবস্থা আমার। জিনদপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রউফ বলেন, মেধাবী ছাত্র হিসেবে সবাই তাকে আদর করতো। খুবই ভালো ছেলে ছিলো সে। নবীনগর থানার ওসি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনে করা একটি মামলায় তার ব্যাপারে তদন্তের অনুরোধ এসেছিল। আমরা তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেই। এ ব্যাপারে তার আর কিছু জানা নেই।
Read More: হ্যাল এলরড 10টি বানী হ্যাল এলরড 10টি বানী
কালিদাস গোপাল ভাঁড় খনার জনপ্রিয় বচন ধাঁধাঁ 1000 শালি দুলাভাই এর রসের ধাঁধা সমগ্র ডাউনলোড PDF
মজার তথ্য ✓ হাসির জোকস ✓ বাংলা হট জোকস ✓ বুদ্ধির ধাধার বই সমগ্র ডাউনলোড PDF
MOST POPULAR DOWNLOADS:
Adobe Premiere Pro CC
TechSmith Camtasia Studio 8.6.0
TechSmith Camtasia Studio 9.1
TechSmith snagit
sonyvags
Download and Install Explaindio Video Creator For FREE 2021
PROSHOW PRODUCER 9 FULL WITH CRACK
DOWNLOAD AND INSTALL SPARKOL VIDEOSCRIBE FREE
DOWNLOAD AND INSTALL EDIUS PRO FOR FREE
TOP POPULAR DOWNLOADS:
Top Maltimedia Media Player Download
wondershare-filmorago-Free download
বাণী চিরন্তণী all Quotes 1000 TOP POPULAR DOWNLOADS.pdf
Tutorial html blog code all.pdf
Himu Ebong Harvard Ph.D. Boltu Bhai By Humayun Ahmed [2011] PDF Downloads
বিখ্যাত লেখক ও মণীষীদের নির্বাচিত ৩০০০ টি [বাংলাঃ ১২০০ English 1800 ] বানী বা উক্তি সমূহের বাংলা বই বা ই-বুক বা PDF [ কম্পিউটার + মোবাইল ভার্সন ]
বাণী চিরন্তণী all Quotes 1000 TOP POPULAR DOWNLOADS.pdf
পড়ুন
আরও পড়ুন: Stephen Hawking Biography
বন্ধুরা, এই পোস্টে আমরা আপনাকে পোস্টটি সম্পর্কে বলেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পছন্দ করবেন।
আপনার এই পোস্টটি কেমন লেগেছে, মন্তব্য করে আমাদের জানান এবং এই পোস্টে কোনও ত্রুটি থাকলেও আমরা অবশ্যই এটি সংশোধন করে আপডেট করব।
Biography, Famous Quotes ও উক্তি সমূহ লেখাটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো। এই ধরনের লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি ফলো ।
ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।
Subscribe to the Daily News Times bd.com YouTube channel and follow the Facebook page.
উক্ত আর্টিকেলের উক্তি ও বাণীসমূগ বিভিন্ন ব্লগ, উইকিপিডিয়া এবং .. রচিত গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
আরও পড়তে পারেন: বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও ব্যবহার
আরও পড়ুন: খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করলেন ২২জন, গ্রেফতার ২, যাজককে খুঁজছে পুলিশ
Read More: লাভ জিহাদ আইন: ভারতে হিন্দু-মুসলিম প্রেম হুমকিতে
তথ্যসূত্র: Wikipedia, Online
Sourc of : Wikipedia, Online Internet
ছবিঃ ইন্টারনেট
দৃষ্টি আকর্ষণ এই সাইটে সাধারণত আমরা নিজস্ব কোনো খবর তৈরী করি না.. আমরা বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবরগুলো সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি.. তাই কোনো খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ সবাইকে।