মৌলভীবাজারের শমশেরনগর কানিহাটি চা-বাগানের সেই সংগ্রামী তরুণ সন্তোষ রবিদাস অঞ্জন এখন নবীন ব্যাংকার। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। আগামীকাল রবিবার থেকেই তাঁর কর্মজীবন শুরু হবে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের একটি সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
কালের কণ্ঠে সন্তোষ ও তাঁর মায়ের কষ্টের জীবন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই সন্তোষের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়।
সূত্রটি জানায়, রবিবার থেকেই সন্তোষের এক মাসের বনিয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু হবে। নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে দারুণ খুশি সন্তোষ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রতিবেদনের পরে অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সব কিছু বিবেচনায় এই চাকরিটি আমার জন্য উপযোগী বলে মনে হয়েছে। এখন এটাই আমার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। ’ ছেলের চাকরি পাওয়ার খবরে খুশিতে কেঁদে ফেলেন মা কমলি রবিদাস।
তিনি বলেন, ‘তাইনে (স্বামী) মারা যাওয়ার পর থেকে হামার কষ্টের শুরু হইছে। ভাবছিলাম, যে পর্যন্ত মাটিতে না যাইব হামার দুঃখ যাইব না। বাচ্চা চাকরি লইয়া যেন সুখী হইতে পারে। ’ এর আগে সন্তোষের মা কমলি রবিদাসের জন্য এক লাখ টাকা উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিও ফোন করে সন্তোষের খোঁজখবর নিয়েছেন। এর আগে ১৭ আগস্ট সরকারি খাদ্য সহায়তা নিয়ে তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন কমলগঞ্জের ইউএনও সিফাত উদ্দিন।
মৌলভীবাজারের শমশেরনগরে ফাঁড়ি কানিহাটি চা-বাগানের এক শ্রমিক পরিবারে জন্ম সন্তোষের। জন্মের মাস ছয়েকের মাথায় বাবাকে হারিয়েছিলেন। মা কমলি রবিদাস চা-বাগানের শ্রমিক। তখন মজুরি পেতেন দৈনিক ১৮ টাকা। সেই সময় ছেলেকে অন্যের বাসায় রেখে তিনি কাজে যেতেন।
চরম অভাবের মধ্যে খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছেন সন্তোষ। ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছেন। পরবর্তী সময়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ছেলের কলেজে ভর্তির টাকা, ইউনিফর্ম আর আর বই-খাতা কিনে দিয়েছিলেন মা। ঋণের কিস্তি শোধের জন্য চা-বাগানের কাজ ছাড়াও অনেক দূরে গিয়ে বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। অভাবের সংসারে নিজে একপেট আধপেট খেয়ে ছেলেকে খাইয়েছেন।
একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে পড়ার সুযোগ পান সন্তোষ। কিছুদিন আগে এমবিএ শেষ করেছেন তিনি। মা-ছেলের এই সংগ্রামের কাহিনি নিয়ে ১৬ আগস্ট ‘মায়ের নামটা কেটে দিল’ শিরোনামে একটি ফিচার প্রকাশিত হয়েছিল কালের কণ্ঠের ‘অবসরে’ পাতায়। কালের কণ্ঠের অনলাইনেও লেখাটি প্রকাশিত হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় আলোচিত ফিচারটি। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান সন্তোষকে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিল। ১৮ আগস্ট এ নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় কালের কণ্ঠে। শিরোনাম ছিল ‘সন্তোষের ঘরে সন্তুষ্টি নিয়ে এলো চাকরি’।
Source: kalerkanth