ভয়াবহ 10 লঞ্চ দুর্ঘটনা দেশের। বাংলাদেশের ভয়াবহ ৯ লঞ্চ দুর্ঘটনা, লাশের মিছিল!

বাংলাদেশে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম বিভিন্ন ধরনের নৌযান। অন্য যোগাযোগ মাধ্যমের তুলনায় নিরাপদ এবং ব্যয়-সাশ্রয়ী হওয়ায় দেশের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের একটি বড় অংশ এখনো নৌপথেই হয়ে থাকে। যান চালনায় নিয়ম না মানা এবং অদক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে লঞ্চ বা ফেরি পরিচালনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্য পরিবহনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এবং যান্ত্রিক ত্রুটি এমন নানান কারণে নৌপথে বড় বড় দুর্ঘটনাও ঘটে। যার ফলে নৌপথে লাশের মিছিল যেন থামছেই না!

বেসরকারি সংস্থা কোস্ট বিডির গবেষণা অনুযায়ী, গত ২০ বছরে বাংলাদেশের নৌপথে বড় ধরনের ১২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে; যাতে মারা গেছেন দেড় হাজারের বেশি মানুষ।

আসুন, জেনে নেওয়া যাক- প্রাণহানির হিসাবে দেশের নৌপথে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনার কয়েকটি সম্পর্কে। বাংলাদেশের নৌযান কর্তৃপক্ষ, নৌ-নিরাপত্তা এবং যাত্রী পরিবহন নিয়ে কাজ করেন এমন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে এই তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে।

 

অভিযান-১০

 

চলতি বছরের ২৩ ডিসেম্বর রাত ৩টা নাগাদ বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ হয়ে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। আর আহত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭০ জনেরও বেশি। আগুন লাগায় অনেকে নদীতে ঝাঁপ দেন; যার জেরে লঞ্চের বেশ কয়েকজন যাত্রী এখনও নিখোঁজ। সেখানে কাজ করছে উদ্ধারকারী দল। ডুবুরিও নামানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জোহর আলী।

 

এম এল সাবিত আল হাসান

 

চলতি বছরের ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের কয়লাঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল সাবিত আল হাসান ডুবে ৩৪ জন নিহত হয়েছিলো। এসকেএল-৩ নামের একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় সেটি ডুবে গিয়েছিল।

 

মর্নিং বার্ড

 

২০২০ সালের ২৯ জুন ঢাকার পোস্তগোলা-সংলগ্ন বুড়িগঙ্গায় মর্নিং বার্ড নামে একটি লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ সেই লঞ্চ দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৩ জনের প্রাণহানি ঘটে।

 

পিনাক-৬

 

২০১৪ সালের ৪ অগাস্ট আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে পদ্মা নদীতে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চ। নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, ওই লঞ্চটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি এবং এর ধ্বংসাবশেষও এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

 

ডুবে যাওয়া ওই লঞ্চ থেকে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছিল। আর খোঁজ পাওয়া যায়নি ৫০ জন যাত্রীর। বাকিরা সাঁতরে এবং জেলেদের সহায়তায় তীরে উঠতে পেরেছিলেন।

 

এমভি নাসরিন-১

 

২০০৩ সালের ৮ জুলাই ঢাকা থেকে ভোলার লালমোহনগামী এমভি নাসরিন-১ নামের লঞ্চটি চাঁদপুরের মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় ডুবে যায়। বিআইডব্লিউটিএ বলছে, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালবোঝাইয়ের কারণে লঞ্চটির তলা ফেটে গিয়েছিল।

 

ডুবে যাওয়ার সময় লঞ্চটিতে কত যাত্রী ছিলেন, সে বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। তবে ওই দুর্ঘটনায় সরকারি হিসাবে প্রায় সাড়ে ৬০০ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।

 

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলছিলেন, মৃত্যুর হিসেবে এই লঞ্চডুবিকে দেশের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা বলা হয়।

 

এমভি সালাউদ্দিন-২

 

২০০২ সালের ৩ মে চাঁদপুরের ষাটনল-সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ডুবে যায় সালাহউদ্দিন-২ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চ। এতে ভোলা এবং পটুয়াখালীর প্রায় ৪০০ যাত্রী মারা যান।

 

ওই দুর্ঘটনার পর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের করা একটি তদন্ত কমিটি নকশামতো লঞ্চ নির্মাণ না করায় মালিককে এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহনের জন্য মাস্টারকে অভিযুক্ত করে। এতে ওই লঞ্চের মালিককে জরিমানা এবং মাস্টারকে চাকরিচ্যুত করা হলেও অন্যদের শাস্তি হয়নি।

 

এমভি রাজহংসী

 

২০০০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঈদুল আজহার রাতে চাঁদপুরের মতলব উপজেলার ষাটনল এলাকায় মেঘনা নদীতে এমভি জলকপোত এবং এমভি রাজহংসী নামের দুটি যাত্রীবাহী লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে রাজহংসী লঞ্চটি পানিতে তলিয়ে যায় এবং ওই লঞ্চের ১৬২ জন যাত্রী নিহত হন।

 

অ্যাটলাস স্টার

১৯৮৬ সালে অ্যাটলাস স্টার নামে একটি লঞ্চ ডুবে ২০০ জন যাত্রী মারা যায়। লঞ্চটি ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে ডুবে গিয়েছিল বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।

এমএল মিতালি ও এমএল মজলিশ

২০০৫ সালে এমএল মিতালি ও এমএল মজলিশ নামে দুটি ছোট লঞ্চ মুখোমুখি সংঘর্ষে ডুবে যায়। যাতে বেশ কয়েকজন মারা যান।

এ ছাড়া ২০০৫ সালে একটি ফেরী ডুবে গিয়ে ১১৮ জন যাত্রী নিহত হন।

কোস্ট বিডি থেকে বলা হয়,১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত নৌ-দুর্ঘটনার জন্য দেশে পাঁচশর বেশি মামলা চলছে। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র একটি মামলার বিচার হবার নজির রয়েছে।

সূত্র- বিবিসি

 

 

Leave a Reply