সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন স্কেল ও চাকরির গ্রেড

বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজ তথা প্রজন্মের যে বিষয়ে আগ্রহ বেশি সেটি হচ্ছে সরকারি চাকুরীজীবী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা।
কিন্তু বর্তমান সময়ে সরকারি চাকুরী পাওয়া সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার মতো।
ব্যাপক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটি চাকরি পাওয়াই দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে উঠেছে। সরকারি যেকোন চাকরি পাওয়ার আশায় মানুষ ব্যাপক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়।
সরকারি জব এখন গ্রেডের উপর চলে আগে যেটা ৪ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল এখন ২০ গ্রেডে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও কমে গেছে শ্রেণী বৈষম্য।
যেমন আগে যেটা প্রথম শ্রেণী ছিল বর্তমানে সেটা ১ম থেকে ৯ম গ্রেড এবং দ্বিতীয় শ্রেণী হলো ১০ম গ্রেড শুধু ১০ম গ্রেডই দ্বিতীয় শ্রেণী। ১১-১৬ তম গ্রেড তৃতীয় শ্রেণীর এরপর ১৭-২০ তম গ্রেড হলো সর্বশেষ চতুর্থ শ্রেণী।
১ থেকে ৯ নং গ্রেডে যিনি সে প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা বা গেজেটেড অফিসার বা ক্যাডার। এদের নিয়োগের সময় সরকারী গেজেট বা বিজ্ঞপ্তি বের হয়, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট (রাষ্ট্রপতি) এদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় মান মর্যাদা, দায়িত্ব-কর্তব্যের পরিধি এবং সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়ে প্রথম শ্রেনীর গেজেটেড অফিসারগণ তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকেন। তার উপরে আছে সচিব / মূখ্য সচিব।
পিএসসি কর্তৃক নিয়োগকৃত ২৭ ধরণের চাকুরিকে ক্যাডার এবং পিএসসি কর্তৃক নিয়োগকৃত অন্যান্য সরকারী চাকুরীকে নন ক্যাডার জব বলা হয়।
নন ক্যাডার জব গ্রেড ৯ হলে ১ম শ্রেণী এবং গ্রেড ১০ হলে ২য় শ্রেণী বলা হয় ক্যাডার আর নন ক্যাডার জব এর মধ্যে মূল পার্থক্য হল, ক্যাডারগণ প্রমোশন পেয়ে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে যেতে পারেন, যা নন-ক্যাডার গণ যেতে পারেন না।
প্রায় সব ক্যাডারই কমপক্ষে সর্বোচ্চ গ্রেড পর্যন্ত যেতে পারেন, অন্যদিকে নন ক্যাডারে বেশির ভাগ পদই ব্লক পোস্ট।
বিসিএস ক্যাডার মূলতঃ দুই প্রকার জেনারেল ( পুলিশ, এডমিন, পররাষ্ট্র ইত্যাদি) এবং টেকনিকাল ( শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সড়ক ও জনপদ ইত্যাদি)।
জেনারেল ক্যাডারে যে কেউ যে কোন সাবজেক্ট থেকে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি করতে পারেন, কিন্তু টেকনিকাল ক্যাডারে চাকুরি করতে হলে নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা লাগবে। যেমন , এমবিবিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ সরকারী ডাক্তার হয়ে চাকুরি
করতে পারবেন না।
এদের চেনার উপায় হল, সরকারী যে কোন অফিসে ৪ ধরনের স্টাফ থাকে। যার মধ্যে রয়েছে ক্যাডার, তার নীচে কর্মকর্তা তার নীচে কর্মচারী। এদের মাঝে ১ম, ২য় এদের গেজেটেড কর্মকর্তা বলা হয়।
৩য় শ্রেনীর যারা তারাও হল কর্মকর্তা। ৪র্থ শ্রেণির যারা তারা হল কর্মচারী।
প্রথম শ্রেণী মানেই ন্যূনতম ৯ম গ্রেড আর দ্বিতীয় শ্রেণী কেবল ১০ম গ্রেড। আর সকল ডিপার্টমেন্টের সহকারী পরিচালক (Assistant Director) প্রথম শ্রেণীর বাংলাদেশ ব্যাংক এর এডি না সব এডিই প্রথম শ্রেণীর।
পুলিশের এস আই দ্বিতীয় শ্রেনীর এবং প্রাইমারি প্রধান শিক্ষক দ্বিতীয় শ্রেণীর। সরকারি হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক দ্বিতীয় শ্রেনীর।

১০০ প্রশ্নোত্তরে মুজিব শতবর্ষ ও বঙ্গবন্ধু
প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক তৃতীয় শ্রেনীর এবং সকল ডিপার্টমেন্টের অফিস সহকারী, কম্পিটার অপারেটর/ সাঁট মুদ্রাক্ষরিক তৃতীয় শ্রেনীর।
অফিস সহায়ক চতুর্থ শ্রেনীর যার স্কেল ৮,২৫০ যেমন প্রাইমারি স্কুলের পিওন ও অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের পিওন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন গ্রেডে কত বেতন ও সরকারি ভাতা রয়েছে। সর্বনিম্ন মূল বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকা আর সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার টাকা নির্ধারণ রয়েছে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫।
সর্বোচ্চ মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা সুপারিশ করা হলেও, এই স্কেলের বেতন ভাতাসহ অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। একইভাবে সর্বনিম্ন বেতন স্কেল ৮ হাজার ২৫০ টাকা সুপারিশ করা হলেও সব মিলে দাঁড়ায় ২০ হাজার ১০ টাকা।
প্রথম স্কেলে মূল বেতন, বাড়ি ভাড়া পাশাপাশি চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা, ডোমেস্টিক এইড ভাতা ৩ হাজার টাকা, উৎসব ভাতা মূল বেতনের সমপরিমাণ বছরে ২টি, আপ্যায়ন ভাতা ৩ হাজার টাকা ও শিক্ষা ভাতা ১ হাজার টাকা করা হয়েছে।
একইভাবে সর্বনিম্ন স্কেলে মূল বেতন, বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৬০-৪৫% এবং চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৩০০ টাকা, সন্তানের শিক্ষা ভাতা ১ হাজার টাকা, ধোলাই ভাতা ১০০ টাকা ও টিফিন ভাতা ২০০ টাকা।
সরকারি বেতন স্কেল অন্যান্য ভাতা ও সুবিধাদি
বাড়ি ভাড়া
মূল বেতনের ৬০-৫০ শতাংশ হারে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কক্সবাজার ও সাভার এলাকার জন্য। উপজেলা লেভেল এ মূল বেতনের ৪০-৪৫%।
চিকিৎসা ভাতা
মাসে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ টাকা। অবসরভোগীদের ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের কম বয়স্কদের জন্য মাসিক ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা। ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা।
যাতায়াত ভাতা
দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কর্মরত চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে ১০ নম্বর থেকে ২০ গ্রেডে চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে যাতায়াত ভাতা মাসে ৩০০ টাকা।
গাড়ির সুবিধা
সার্বক্ষণিক গাড়ির সেবার জন্য প্রাধিকারভুক্ত কর্মকর্তাদের জন্য নগদায়নের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। রাখা হয়েছে সুদ বিহীন গাড়ি কেনার জন্য সুবিধা।
শিক্ষা সহায়ক ভাতা
সকল শ্রেণীর চাকরিজীবীদের সন্তান প্রতি মাসে ৫০০ টাকা, ২ সন্তানের জন্য ১ হাজার টাকা শিক্ষা সহায়ক ভাতা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড হতে বৃত্তি সুবিধা গ্রহনের ব্যবস্থা রয়েছে ১১-২০ তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য।
টিফিন ভাতা
মাসে টিফিন ভাতা ২০০ টাকা। তবে যে সব চাকরিজীবী তাদের প্রতিষ্ঠান দুপুরের খাবার পান কিংবা দুপুরের খাবারের ভাতা পান তাদের জন্য এ টিফিন ভাতা প্রযোজ্য হবে না।
উৎসব ভাতা
সকল চাকরিজীবীদের জন্য প্রতি বছরে ২ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ উৎসব ভাতা দেয়া হয়। একই সঙ্গে একজন অবসরভোগীর জন্য তার মাসিক নিট পেনশনের দ্বিগুণ হারে বছরে ২টি উৎসব ভাতা দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা
সকল শ্রেণীর চাকরিজীবীকে বর্তমান প্রচলিত প্রতি তিন বছর অন্তর ১৫ দিনের গড় বেতনে অর্জিত ছুটিসহ ১ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা হিসাবে মঞ্জুরের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ধোলাই ভাতা
৪র্থ শ্রেণীর চাকরিজীবীদের জন্য ধোলাই ভাতা মাসে ১০০ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে ড্রাইভারসহ দাপ্তরিক পোশাক সরবরাহ করা হয়।

Skin Care Tips: রাতে ঘুমানোর আগে করুন এই ৫ কাজ, কয়েকদিনের মধ্যেই বদলে যাবে মুখের রং
কার্যভার ভাতা
কার্যভার ভাতার শতকরা হার অপরিবর্তিত রেখে সর্বোচ্চ সীমা মাসে ১ হাজার ৫০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
পোশাক পরিচ্ছদ সুবিধা
প্রচলিত নিয়মে পোশাক পরিচ্ছদ প্রদানের সুবিধা চালু রাখা হয়েছে।
পাহাড়ি ও দুর্গম ভাতা
পার্বত্য এলাকায় কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পাহাড়ি ভাতা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে হাওড়-বাওড়, দুর্গম দ্বীপ অঞ্চলে উপকূলীয় ভাতাও চালু করা হয়েছে।
আপ্যায়ন ভাতা
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মূখ্য সচিব ৩ হাজার টাকা, সচিব ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তা ২ হাজার ৫০০ টাকা, অতিরিক্ত সচিব ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তা ২ হাজার টাকা, যুগ্ম সচিব ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ১ হাজার ৫০০ টাকা সুপারিশ করা হয়েছে।
ভ্রমণ ভাতা
বদলিজনিত ভ্রমণ ভাতা ২০১৬ সালের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক পুন: নির্ধারণ করা হয়েছে। বদলিজনিত কারণে প্রতি ১০০ কেজির জন্য প্রতি কি:মি: ২ টাকা হারে এবং ডিএ নির্ধারণে মূল বেতনকে ভিত্তি ধরা হয়েছে।
বিশেষ ভাতা
বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এসএসএফ ইত্যাদি বিভিন্ন সার্ভিসের জন্য বিশেষভাতা বেতন কাঠামোর নির্ধারিত রয়েছে।
অবসর ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা
পেনশনযোগ্য চাকরিকাল প্রথম গ্রেড থেকে ২০ গ্রেড পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে পেনশনযোগ্য চাকুরিকাল ৫ বছর থেকে শুরু করে ২৫ বছর পর্যন্ত ৯০ শতাংশ করা হয়েছে। সাধারণত ২৫ বছরের আগে স্বেচ্ছায় পেনশনে যাওয়ার সুযোগ নাই।
বাধ্যতামূলক সমর্পিত ৫০ শতাংশ পেনশনের ক্ষেত্রে আনুতোষিকের হার ৫ বছর থেকে শুরু করে ২০ বছর পর্যন্ত প্রতি ১ টাকায় ২৭৫ টাকা থেকে শুরু করে ২৩০ টাকা করা হয়েছে।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ঋণের পরিমাণ গ্রেড অনুযায়ী ২০ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা গৃহ ঋণ দেয়ার নীতিমালা জারি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সুদের হার হবে ব্যাংক রেটে ৫ শতাংশ। এর পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে খাস জমি চিহ্নিত করে সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসনের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে বেতন ইএফটির আওতায় থাকতে হবে।

২০২১ সালের সকল চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান pdf, ৩য় শ্রেণীর চাকরির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন ,কম্পিউটার লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন, লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর, অফিস সহায়ক লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান pdf, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান, ড্রাইভিং লাইসেন্সের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে লিখিত পরীক্ষার

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন স্কেল ও  চাকরির গ্রেড

Leave a Reply