স্টিভ জবসের জীবন ও সফলতার আত্মকাহিনী | Steve Jobs Biography in Steve Jobs’s Life Story and Success

 

তুমি যদি প্রতিটি দিনকেই তোমার জীবনের শেষ দিন ভাব, তাহলে একদিন তুমি সত্যি সত্যিই সঠিক হবে। কথাটা আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল এবং সেই থেকে গত ৩৩ বছর আমি প্রতিদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করিআজ যদি জীবনের শেষ দিন হতো, তাহলে আমি কি যা যা করতে যাচ্ছি, আজ তা করতাম, নাকি অন্য কিছু করতাম?

পৃথিবীর সর্বকালের সেরা উদ্যোক্তা ,তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের একজন স্বপ্নদ্রষ্টা , যুক্তরাষ্ট্রের একজন সফল উদ্যোক্তা প্রযুক্তি উদ্ভাবক। এক কথায় সেরা আধুনিক প্রযুক্তিবিদ। তাকে পিসি অর্থাৎ পার্সোনাল কম্পিউটার বিপ্লবের পথ প্রদর্শক হিসেবেও আখ্যায়িত করা যায়। স্টিভ জবসের

জবসের জন্ম ১৯৫৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিস্কোতে। মা জোয়ান ক্যারোল এবং বাবা আব্দুল্লাহ ফাতাহ জান্দালি। জোয়ান খুব ইচ্ছা ছিল দত্তক পরিবার হবে উচ্চশিক্ষিত, নিদেনপক্ষে কলেজ গ্রাজুয়েট। কিন্তু জন্মের পরই তাকে পল ক্লারা জবস দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেন। এরপর তার নাম দেওয়া হয় পুরো নাম স্টিভেন পল জবস।

পল ক্লারার আদরে বেড়ে ওঠেন স্টিভ। স্কুলে পড়াশোনা শেষ করেন ১৯৭২ সালে। পরের বছর ভর্তি হন পোর্টল্যান্ডের রিড কলেজে।

বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রিড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই আমি পড়ালেখা ছেড়ে দিই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার আগে প্রায় বছর দেড়েক কিছু কোর্স নিয়ে কোনো মতে লেগেছিলাম।

কেন আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়েছিলাম?

আমার বয়স যখন ১৭ বছর, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু আমি বোকার মতো স্ট্যানফোর্ডের সমান খরচে একটি বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিয়েছিলাম। আর আমার নিম্নমধ্যবিত্ত বাবামা সব জমানো টাকা আমার পড়ালেখার পেছনে চলে যাচ্ছিলো। ছয় মাস যাওয়ার পর আমি এর কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

বন্ধুদের সাথে থাকা প্রসঙ্গে বলনে, ‘আমার কোন রুম ছিল না, বন্ধুদের রুমের ফ্লোরে আমি ঘুমাতাম। মানুষের ব্যবহৃত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে আমি পাঁচ সেন্ট করে কামাই করতাম, যেটা দিয়ে আমি খাবার কিনতাম। প্রতি রোববার রাতে আমি সাত মাইল হেঁটে হরেকৃষ্ণ মন্দিরে যেতাম শুধু একবেলা ভালো খাবার খাওয়ার জন্য।


এতো কষ্টের মধ্যেও তার মনে অনেক কিছু করার স্বপ্ন ছিল। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই ১৯৭৬ সালে বাসার গ্যারেজে বসে বন্ধু ওজনেককে নিয়ে তিনি শুরু করেন অ্যাপল কোম্পানি। তবে অ্যাপল প্রতিষ্ঠার আগে স্টিভ জবস ভিডিও গেইম নির্মাতা আটারিতে কাজ করতেন। এই অ্যাপল থেকেই ১৯৮৪ সালে বাজারে ছাড়েন ম্যাক কম্পিউটার। অ্যাপল প্রতিষ্ঠার পর তাঁর তত্ত্বাবধানেই বাজারে আসে আইপড, আইফোন, আইপ্যাডসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় প্রযুক্তিপণ্য।

অ্যাপল এবং পিক্সার অ্যানিমেশন নামের দুইটি সেরা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও ছিলেন স্টিভ জবস।     অ্যাপল এর আইফোন, অ্যাপল ট্যাব, ল্যাপটপ, ম্যাকের মত পণ্য তৈরি করে তিনি অবাক করে দিয়েছেন পুরো বিশ্বকে। মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি তৈরি করেন পৃথিবীর সবচেয়ে সফল অ্যানিমেশন স্টুডিও পিক্সার। যা থেকে ১৯৯৫ সালে বের করেন পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার অ্যানিমেশন ছবিটয় স্টোরি

 

স্টিভ জবস ১৯৯১ সালে লরেন পাওয়েলএর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহিত জীবনে চার সন্তানের জনক স্টভ জবসের দাম্পত্য জীবন খুব সাদামাটাভাবেই কেটেছে। জবস খুঁজে পেলেন তার আসল বাবামাকে।

 

২০১০ সালের ফরবেসের হিসেবানুযায়ী তিনি . মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিকারী হয়ে ৪৩তম মার্কিন ধনী হিসেবে নির্বাচিত হন। অকৃত্রিম সম্মাননা স্টিভ জবস ১৯৮৫ সালে স্টিভ ওজনিয়াকের সাথে যৌথভাবে প্রথম ন্যাশনাল মেডেল অব টেকনোলজি লাভ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্ববিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন ২০১১ সালেপার্সন অফ দ্য ইয়ারহিসেবে মনোনীত করে।

স্টিভ জবস দীর্ঘদিন অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে ভুগে ২০১১ সালের অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।

১২ বছর বয়সে জবস এইচপি’র একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম হিউলেটের কাছে কিছু যন্ত্রপাতি চেয়েছিলেন স্কুল প্রোজেক্ট সম্পন্ন করতে। হিউলেট তাকে তার কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপের অফার করেন।

  • ১৩ বছর বয়সে জবসের সাথে দেখা হয় অ্যাপলের অপর প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াকের। ওজনিয়াকের বয়স তখন ১৮।
  • এক সেমিস্টারের মাথায় রিড কলেজ থেকে ড্রপড আউট হয়ে যান জবস।
  • ১৯৯৭ সালে অ্যাপলে পুনরায় যোগ দেন জবস। সেসময় তার বাৎসরিক বেতন ছিল মাত্র ১ ডলার।
  • জবস খুঁজে পেলেন তার আসল বাবা-মা’কে। তার আসল বাবা আব্দুল ফাত্তাহ জান্দালি এবং মা জোয়ান স্কিবল। তিনি বিস্মিত হন যখন জানতে পারেন তার বোন বিখ্যাত নভেলিস্ট মোনা সিম্পসন।

টাইমলাইন:

  • ১৯৭২: হাইস্কুলের পাঠ শেষ করে ভর্তি হন রিড কলেজে। কিন্তু এক সেমিস্টারের বেশি সেখানে পড়তে পারেননি।
  • ১৯৭৪: আটারিতে ভিডিও গেম ডিজাইনের চাকরি নেন। একই বছর ভারত ভ্রমণের জন্য চাকরি ছেড়ে দেন তিনি।
  • ১৯৭৬: বাসার গ্যারেজে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাপল। তার সাথে সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন স্টিভ ওজনিয়াক। একই বছর বিশ্বকে পরিচয় করিয়ে দেন অ্যাপল ওয়ান কম্পিউটারের সাথে।
  • ১৯৭৭: অ্যাপল এ বছর নিয়ে আসে অ্যাপল টু কম্পিউটার।
  • ১৯৮০: বাজারে আসে অ্যাপল থ্রি।
  • ১৯৮৪: এ বছর অ্যাপল তৈরি করে বিখ্যাত ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার।
  • ১৯৮৫: ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে অ্যাপল ত্যাগ করেন জবস। একই বছর নেক্সট নামক একটি কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নেক্সট।
  • ১৯৮৬: জর্জ লুকাসের কাছ থেকে কিনে নেন অ্যানিমেশন স্টুডিও পিক্সার।
  • ১৯৯৬: অ্যাপলের কাছে পিক্সার বিক্রি করে দেন জবস। অ্যাপলে পরামর্শক হিসেবে যোগ দেন।
  • ১৯৯৭: অ্যাপলের অন্তর্বর্তীকালীন সিইও হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়।
  • ১৯৯৮: অ্যাপল বাজারে আনে আইম্যাক।
  • ২০০০: অ্যাপলের স্থায়ী সিইও হিসেবে নিয়োগ পান জবস।
  • ২০০১: অ্যাপলের সাড়া জাগানো পণ্য আইপড এ বছর বাজারে আসে।
  • এপ্রিল ২৮, ২০০৩: অ্যাপল চালু করে আইটিউন্স স্টোর।
  • জুলাই ২০০৩: আইটিউন্সে অ্যাপল লোগোর ব্যবহার নিয়ে বিটলসের মালিকানায় থাকা অ্যাপল কর্পোরেশন স্টিভ জবসের অ্যাপলের বিরুদ্ধে মামলা করে। ২০০৭ সালে এ মামলার নিষ্পত্তি হয়।
  • ২০০৩: জবসের শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে।
  • জুলাই ৩১, ২০০৪: টিউমার অপসারণের জন্য ডাক্তারের ছুরির নিচে যান তিনি।
  • ২০০৪, ২০০৫, ২০০৭, ২০০৮, ২০১০: টাইম ম্যাগাজিনের তৈরি বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালি ব্যক্তির তালিকায় তার নাম আসে।
  • ২০০৬: ওয়াল্ট ডিজনির সাথে একীভূত হয়ে যায় পিক্সার। ডিজনির বোর্ড অফ ডিরেক্টরে জোগ দেন জবস।
  • এপ্রিল ১, ২০০৬: ৩০ বছর পূর্ণ করে অ্যাপল।
  • ২০০৮: বাজারে আসে ম্যাকবুক এয়ার।
  • জানুয়ারি ৫, ২০০৯: নিজের স্বাস্থ্যের কথা জানিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে এক খোলা চিঠি লিখেন জবস। তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়গুলোতে তার স্বাস্থ্যহানী হয়েছে হরমোন সমস্যার কারণে।
  • জানুয়ারি ১৪, ২০০৯: জুন ২০০৯ পর্যন্ত মেডিকেল ট্রিটমেন্ট নেওয়ার জন্য ছুটির আবেদন করেন জবস। কিন্তু এতদিনে তার ধারণার চেয়েও খারাপ অবস্থায় চলে যায় তার শরীর।
  • জুন ২০, ২০০৯: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, এপ্রিলে জবসের যকৃত প্রতিস্থাপন করা হয়।
  • জুন ২৯, ২০০৯: স্টিভ জবস আবার কাজে ফিরেছেন বলে জানান অ্যাপলের একজন মুখপাত্র।
  • জানুয়ারি ২৭, ২০১০: জবস বিশ্ববাসীকে পরিচয় করিয়ে দেন আইপ্যাডের সাথে। যা পরবর্তীতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
  • জুন ৬, ২০১১: অ্যাপলের ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেভেলপার কনফারেন্সে জবস আইক্লাউড চালুর ঘোষণা দেন।
  • আগস্ট ২০১১: যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দামি কোম্পানির স্বীকৃতি পায় অ্যাপল এবং এক্সন মবিল। এ সময় অ্যাপলের মূলধনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৪৫ থেকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে।
  • আগস্ট ২৪, ২০১১: অ্যাপল সিইও’র পদ থেকে পদত্যাগ করেন জবস। টিম কুককে পদোন্নতি দিয়ে এই পদে নিয়োগ করা হয়।
  • অক্টোবর ৪, ২০১১: অ্যাপল তাদের নতুন স্মার্টফন আইফোন ৪এস’র ঘোষণা দেয়।
  • অক্টোবর ৫, ২০১১: মাত্র ৫৬ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন স্টিভ জবস।

 

১৯৭৬ সালে তিনি স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েনএর সাথে অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম এবং সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। স্টিভের জন্মবৃত্তান্ত পরিবার জবস ১৯৫৫ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিস্কোতে জন্মগ্রহণ করেন এবং পরে পল ক্লারা জবস নামক এক দম্পতি তাকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেন এবং সেই দম্পতির নেম টাইটলে অনুযায়ী তার নামকরণ করা হয় স্টিভেন পল জবস। কিন্তু তার আসল মা খ্রিস্টান, জোয়ান ক্যারোল এবং বাবা ছিলেন মুসলমান, আব্দুল্লাহ ফাতাহ জান্দালি। তিনি রাস্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। যারা জবসএর বোন হলেন বিখ্যাত নারী সাহিত্যিক মোনা সিম্পসন।

স্টিভ জবস ১৯৯১ সালে লরেন পাওয়েলএর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহিত জীবনে চার সন্তানের জনক স্টভ জবসের দাম্পত্য জীবন খুব সাদামাটাভাবেই কেটেছে। স্টিভের স্কুল জীবন স্টিভ জবস ১৯৭২ সালে হাই স্কুলের পাঠ শেষ করেন এবং রীড কলেজ়ে ভর্তি হন। তবে তিনি পরবর্তীতে কলেজ ছেড়ে দেয়ার পরেও ক্যালিগ্রাফীসহ আরো কিছু ক্লাসে যোগদান করেছিলেন। তিনি প্রায়ই কুপারটিনো জুনিয়র হাই স্কুলে এবং হোমস্টিড হাই স্কুলে গিয়ে হিউলেটপ্যাকার্ড কোম্পানির লেকচারগুলোতে অংশগ্রহণ করতেন। যেখানে পরবর্তীতে তিনি গ্রীষ্মকালীন কর্মচারী হিসাবে স্টিভ ওজনিইয়াকের সাথে কাজ শুরু করেন।

এই সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিল, “যদি আমি ওই কোর্সে না যেতাম তবে ম্যাকের কখনোই বিভিন্ন টাইপফেস বা সামঞ্জস্যপূর্ণ ফন্টগুলো থাকতো না।কর্ম জীবনের শুরুতে ১৯৭৪ সালে জবস ক্যালির্ফোনিয়াতে চলে এসে ওজনিয়াকের সাথে নিয়মিতভাবে হোমব্রিউ কম্পিউটার ক্লাবের সভাগুলোতে উপস্থিত থাকতেন। পরবর্তীতে তিনি ভিডিও গেমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আটারিতে টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ শুরু করেন। ধর্মান্তরিত স্টিভ মূলত তিনি ভারতে যাবার জন্য অর্থ জমানোর চেষ্টা করছিলেন। অতঃপর স্টিভ জবস ভারতে নিম কারোলি বাবার কাইনিচি আশ্রমে তার বন্ধু ড্যানিয়েল কটকের সাথে ভ্রমন করেন এবং পরবর্তী সময় তিনি আধ্যত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য আবার ভারতে এসে বৌদ্ধধর্মে ধর্মান্তরিত হন। পেশাদারী কর্মজীবনে স্টিভ অ্যাপল প্রতিষ্ঠা১৯৭৬ সালের ১লা এপ্রিল স্টিভ জবস, স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েন অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছরে তারা অ্যাপল নামের প্রথম কম্পিউটারও অবমুক্ত করে। উল্লেখ্য, অ্যাপল প্রতিষ্ঠার আগে ১৯৭১ সালে ইলেকট্রনিক্স হ্যাকার ২১ বছরের ওজনিয়াকের সাথে জবসের পরিচয় হয়।

আর জবসের তখন বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। আশির দশকের শুরুতে জবসের আগ্রহেই অ্যাপল লিসা নামের ,৯৯৫ ইউএস ডলার মূল্যের ডেক্সটপ কম্পিউটার বাজারজাত করা শুরু করা হয়। কিন্তু অত্যাধিক মূল্যের কারনে লিসা বাজারে তেমনভাবে সুবিধা করতে পারেনি। ১৯৮৩ সালের অক্টোবর মাসে স্টিভ জবস নতুন ধরনের ডেক্সটপ ম্যাকিন্টশ নির্মানের ঘোষনা দেন। সেই সুবাদে ১৯৮৪ সালের জানুয়ারিতে অ্যাপল ম্যাকিন্টশের বাজারজাতকরন শুরু হয়। ১৯৮৫ সালের মে মাসে জবসকে অ্যাপলের ম্যাকিন্টশ কম্পিউটারের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। নেক্সট কম্পিউটার১৯৮৫ সালের অক্টোবর মাসে স্টিভ জবস নিজে থেকেই অ্যাপল প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করেন এবং মিলিয়ন ইউএস ডলার দিয়ে নেক্সট কম্পিউটার নামক নতুন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

নেক্সট কম্পিউটার থেকে জবস ১৯৯০ সালে নেক্সটষ্টেশন নামের পিসি বাজারজাত করন শুরু করেন। এই ওয়ার্কষ্টেশন গুলোর দাম ছিল ,৯৯৯ মার্কিন ডলার। পিক্সার ডিজনী১৯৮৬ সালে জবস পিক্সার (সাবেক নাম দ্য গ্রাফিক্স গ্রুপ) লুকাস ফিল্ম এর কাছ থেকে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই জবস ডিজনীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কম্পিউটার অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র বানাতে শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে মুক্ত পাওয়া টয় ষ্টোরি চলচ্চিত্রটি প্রথম চলচ্চিত্র যেখানে স্টিভ জবস এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যা কিনা পুরো বিশ্বে ব্যাপকভাবে সাড়া পড়ে যায় এ্যানিমাটাড চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে পরবর্তীতে স্টিভ জবস পিক্সারের ক্রিয়েটিভ প্রধান জন লেস্যেটার এর সাথে একত্রিত হয়ে অনেকগুলো চলচ্চিত্র নির্মান করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিখ্যাত চলচ্চিত্রগুলো হল বাগস লাইফ (১৯৯৮), টয় ষ্টোরি (১৯৯৯), ফাইন্ডিং নিমো (২০০৩), টয় ষ্টোরি (২০১০) প্রভৃতি।

অ্যাপলে প্রত্যাগমন পুনরায় ত্যাগ১৯৯৬ সালে অ্যাপল ৪২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেক্সট কম্পিউটারকে কিনে নিলে জবস আবার অ্যাপল প্রতিষ্ঠানে ফিরে আসেন। ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসের দিকে স্টিভ জবস অ্যাপলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ২০০০ সালে তিনি অ্যাপলের প্রধান সিইও হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। উল্লেখ্য, স্টিভ জবস সময়ে কম্পিউটার যন্ত্রপাতি নির্মাণ ছাড়াও ডিজিটাল বিনোদনের নানা উপকরন নির্মাণের দিকে বিশেষভাবে নিজেকে মনোনিবেশ করেন। তিনি ২০০৭ সালের ২৯ জুন প্রথম আইফোন বাজারজাত করা শুরু করেন। নান্দনিক প্রযুক্তি আধুনিকতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিনোদনের জগতে স্টিভ জবস একে একে প্রবর্তন করেন আইপড, আইপ্যাড। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের আগষ্ট মাসে জবস অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব থাকাকালিন পদত্যাগ করেন।

কিন্তু তারপরেও তিনি কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে যান। স্টিভের অর্থসম্পদ স্টিভ জবস অ্যাপল কম্পিউটারের প্রধান নির্বাহী হিসেবে বছরে মাত্র মাকিন ডলার বেতন গ্রহন করতেন। কিন্তু তার কাছে ছিল অ্যাপলের .৪২৬ মিলিয়ন শেয়ার এবং ডিজনীর ১৩৮ মিলিয়ন শেয়ার। ২০১০ সালের ফরবেসের হিসেবানুযায়ী তিনি . মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিকারী হয়ে ৪৩তম মার্কিন ধনী হিসেবে নির্বাচিত হন। না ফেরার দেশে স্টিভ স্টিভ জবস দীর্ঘদিন অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে ভুগে ২০১১ সালের অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। মাত্র ৫৬ বছর বয়সে এই আধুনিক প্রযুক্তিবিদের মহা প্রয়াণে বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বের অপরিসীম ক্ষতি হয়েছে। যা কখনোই পূরণ হবার নয়। অকৃত্রিম সম্মাননা স্টিভ জবস ১৯৮৫ সালে স্টিভ ওজনিয়াকের সাথে যৌথভাবে প্রথম ন্যাশনাল মেডেল অব টেকনোলজি লাভ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্ববিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন ২০১১ সালে ৩২ জনের নামপার্সন অফ দ্য ইয়ারহিসেবে মনোনীত করে। তালিকায় আঙ্গেলা ম্যার্কেল, বারাক ওবামা, সিলভিও ব্যার্লুস্কোনি, লিওনেল মেসির মতো বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি তিনিও স্থান পেয়েছেন৷

 

স্টিভ জবসের পৃথিবী বদলে দেওয়া কালজয়ী সেই বক্তৃতা

(পৃথিবীর সর্বকালের সেরা উদ্যোক্তাদের তালিকায় স্টিভ জবসের নামটি একদম প্রথম দিকে থাকবে। তথ্য-প্রযুক্তি বিপ্লবের একজন স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তাঁর অবদান বিশ্ববাসী শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে সবসময়। আরেকটি কারণে অমর হয়ে থাকবেন তিনি চিরদিন। সেটি একটি অসামান্য বক্তৃতার জন্য। ২০০৫ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এ বক্তৃতা দেন তিনি। পৃথিবীজুড়ে লাখো মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এ বক্তৃতাটি পাঠকদের জন্য ভাবানুবাদ করা হলো।)

 

আজ তোমাদের সামনে হাজির হতে পেরে বড় গৌরব হচ্ছে আমার! পৃথিবীর সবচেয়ে চমৎকার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর একটির ছাত্র তোমরা। মজার ব্যাপার হলো আমি নিজে কখনো কলেজের পাটও চুকোতে পারিনি! আজ এই আনন্দের দিনে কোন জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দেওয়ার ইচ্ছা নেই আমার। কেবল তিনটা গল্প শেয়ার করতে চাই তোমাদের সাথে। আমার জীবনের তিনটি গল্প। ব্যাস, এটুকুই।

 

প্রথম গল্পটা হচ্ছে জীবনটাকে এক সুতোয় বাঁধা নিয়ে

আমি রীড কলেজে ভর্তি হওয়ার মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ড্রপ আউট হয়ে যাই! কিন্তু দেখা গেল তারপর আরো প্রায় বছর দেড়েক সেখানে থেকে গেলাম সবকিছু ছেড়েছুড়ে চলে আসবার আগে। প্রশ্ন হচ্ছে, এত সাধের একটা কলেজ থেকে কেন ড্রপ আউট হলাম আমি?

এই গল্পের শুরু আসলে আমার জন্মেরও আগে। আমার মা ছিলেন কলেজে পড়ুয়া কমবয়সী একটি মেয়ে। আমাকে লালন পালন করার মত অবস্থা তার ছিল না। তিনি ঠিক করলেন আমাকে কারো কাছে দত্তক দিয়ে দেবেন। মায়ের খুব ইচ্ছা ছিল আমার দত্তক পরিবার হবে উচ্চশিক্ষিত, নিদেনপক্ষে কলেজ গ্র‍্যাজুয়েট।

সেভাবেই সব ঠিকঠাক, এক আইনজীবী পরিবারের সাথে দফা হলো আমাকে দত্তক নেওয়ার। সমস্যা বাঁধলো ঠিক আমার জন্মের সময়। শেষ মুহূর্তে সেই দম্পতি ভেবে দেখলেন তারা আসলে একটা কন্যাশিশু চান! তখন ওয়েটিং লিস্ট থেকে ফোন গেল আরেক দম্পতির কাছে।

“আমাদের কাছে একটি ছেলেশিশু এসেছে। আপনারা কি তাকে দত্তক নিতে আগ্রহী?”

“অবশ্যই!”

এভাবেই আমার নতুন বাবা মার কোলে চলে গেলাম আমি। কিন্তু আমার মা কিভাবে যেন খবর পেয়ে গেলেন এই নতুন বাবা মা কেউই আসলে কলেজের দোরগোড়া পেরোন নি! মা তো রেগে কাঁই! অবশেষে তাকে বহুকষ্টে ঠান্ডা করা গেলো এই শর্তে যে একদিন আমাকে অবশ্যই কলেজে পাঠানো হবে!

আমার নতুন বাবা মা তাদের কথা রাখলেন। সেদিনের সেই ছোট্ট আমি সতের বছর পর সত্যি সত্যি কলেজে পা রাখলাম! কিন্তু বোকার মত এত খরুচে একটা কলেজ বেছে নিলাম যে বেচারী বাবা মার সারা জীবনের সঞ্চয় জলের মত খরচ হতে লাগলো আমার পিছনে! এভাবে ছয় মাস চলার পর ভেবে দেখলাম ভুল সবই ভুল। আমি যে আসলে জীবনে কি করতে চাই সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। কলেজের পড়ালেখা বিরাট যন্ত্রণা, এই আপদ বয়ে বেড়ানোর কোন মানে দেখলাম না। হুট করে সিদ্ধান্ত নিলাম ড্রপ আউট হয়ে যাই!

ঠান্ডা মাথায় ভাবতে গেলে নিজেকে বেকুব মনে হওয়ার কথা। কিন্তু আমার কেন যেন অনুভব হলো একদম ঠিক কাজ করেছি! মন যদি নাই টেকে কেন তবে ঝুলে থেকে খামাখা নিজেকে কষ্ট দেওয়া?!

সুতরাং কয়দিন পর দেখা গেল আমি মহানন্দে ক্লাস করা ছেড়ে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি ক্যাম্পাসে! বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে ঘুরাঘুরি করি, যখন যেই ক্লাস ইন্টারেস্টিং লাগে সেখানে ঢুঁ মেরে আসি।

ব্যাপারটা কাগজে কলমে খুব বিপ্লবী শোনাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে রোমান্টিসিজমের ছিঁটেফোঁটাও ছিল না! যেহেতু আমি আর ছাত্র না, সুতরাং কোন রুম পেলাম না। সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করে রাতে বন্ধুদের রুমের মেঝেতে মরার মত ঘুমাই। পকেটে কোন পয়সা নাই,  কাউকে কিছু বলতেও পারি না লজ্জায়। ক্ষিধেয় চোখে অন্ধকার দেখি। কোকের বোতল কুড়িয়ে ফেরত দিলে পাঁচ সেন্ট করে দেয়, আমি এই কাজ করে খাওয়ার খরচ জোটানো শুরু দিলাম। প্রতি রবিবার সাত মাইল হেঁটে হরে কৃষ্ণ মন্দিরে যেতাম, সেখানে মুফতে বড় ভাল খাবার মিলতো সেদিন!

 

মজার ব্যাপার হলো এত দুঃখ কষ্টের মাঝেও আমার কোন আফসোস ছিল না। এই ভবঘুরে জীবন নিয়ে বেশ ছিলাম। যখন যেটাতে আগ্রহ পাই সেটা নিয়ে লেগে থাকি। ব্যাপারটা যে কত সুদূরপ্রসারী ছিল তার একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই-

কলেজে হঠাত একবার ক্যালিগ্রাফি কোর্স চালু হলো। ক্যাম্পাসের দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারে, ড্রয়ারের লেবেল পর্যন্ত অসম্ভব সুন্দর ক্যালিগ্রাফি দিয়ে সাজানো। আমি বড় মুগ্ধ হলাম দেখে। যেহেতু কোন কাজ নেই, ভর্তি হলাম ক্যালিগ্রাফি কোর্সে। সারাদিন এটা নিয়েই পড়ে থাকি। টাইপোগ্রাফির যত খুঁটিনাটি, বিভিন্ন রকম ফন্ট, কালির ব্যবহার আরো কত কী শিখলাম। আমি বিজ্ঞানের মানুষ, শিল্পের এই প্রগাঢ় সৌন্দর্যের জগৎ আমাকে বিমোহিত করলো। শিল্পের প্রতি আমার জন্ম নিল গভীর আবেগ।

এই তুচ্ছ ক্যালিগ্রাফি কোর্স আমার জীবনে কোন কাজে লাগার কথা না। (যদি না আমি পোস্টারে লেখালেখির কাজ করে জীবন চালানোর কথা ভাবি!) কিন্তু বছর দশেক পর একটা দারুণ ব্যাপার ঘটলো! আমরা যখন প্রথম ম্যাক কম্পিউটার ডিজাইন করছিলাম, তখন আমার মনে ভীড় করলো সেই কলেজ জীবনে ক্লাস বাদ দিয়ে শেখা ক্যালিগ্রাফি কোর্সের কথা। দেখা গেল এতদিন পরেও কিছুই ভুলিনি, সব ঠিকঠাক মনে আছে! আমরা পরম মমতায় ম্যাক কম্পিউটারকে সাজালাম অসম্ভব সুন্দর সব টাইপোগ্রাফি দিয়ে।

একবার ভেবে দেখো তো, আমি যদি সেদিন ড্রপ আউট হয়ে এই ক্যালিগ্রাফি না শিখতাম, তাহলে ম্যাক কম্পিউটারে আগের খটোমটো ডিজাইনই থেকে যেতো। আর উইন্ডোজও যেহেতু আমাদের ডিজাইন চোখ বুঁজে মেরে দিয়েছে (!), সুতরাং বলাই যায়, সেদিনের সেই পাগলামিটা না করলে আজ পৃথিবীর কোথাও কম্পিউটারে এমন মন জুড়ানো টাইপোগ্রাফি হয়তো থাকতো না!

আমি যখন ক্যালিগ্রাফি শিখলাম, তখন কি আদৌ জানতাম আমার এই জ্ঞান একদিন পৃথিবী বদলে দেবে? এটাই হচ্ছে জীবনের আনন্দ। তুমি যখন কিছু শেখো, নতুন কিছু করো, ক্লাসের পড়ালেখার বাইরেও বিভিন্ন কাজে অংশ নাও, মনে হতে পারে এসব করে কী হবে?! কিন্তু দশ বছর পর যখন স্মৃতির পাতা উল্টাবে, তখন দেখবে এই টুকরো টুকরো পরিশ্রমগুলোর কি সুন্দর এক সুতোয় বাঁধুনি হয়েছে তোমার জীবনে! সুতরাং তুমি যাই কিছু করো না কেন, বিশ্বাস রেখো সবসময় নিজের উপর। একদিন তারায় তারায় রটিয়ে দেবে তোমার গল্প, এই অসম্ভব দৃঢ় বিশ্বাসটাই দেখবে বদলে দেবে জীবন চিরদিনের জন্য!

আমার দ্বিতীয় গল্পটা ভালবাসা নিয়ে। ভালবাসবার এবং হারাবার।

নেশা আর পেশা যার মিলে যায় সে বড় ভাগ্যবান। আমি খুব কম বয়সেই আমার ভালবাসার জায়গাটা খুঁজে পেয়েছিলাম। ওজ এবং আমি যখন বাসার গ্যারেজে অ্যাপলের যাত্রা শুরু দিলাম তখন আমার বয়স মাত্র বিশ! রাতদিন উন্মাদের মত খাটতাম আমরা। দেখা গেল মাত্র দশ বছরের মাথায় সেই গ্যারেজের ঘুঁপচিতে জন্ম নেওয়া অ্যাপল এখন দুই বিলিয়ন ডলারের বিশাল এক প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে চার হাজারেরও বেশি মানুষ কাজ করে! আমার তিরিশতম জন্মদিনের কয়দিন পরই বাজারে আসলো অ্যাপলের কালজয়ী উদ্ভাবন- দ্যা ম্যাকিন্টশ।

এবং তারপর পরই আমাকে অ্যাপল থেকে বের করে দেওয়া হলো!

কি আজব কান্ড! নিজের হাতে তৈরি করা একটা প্রতিষ্ঠান থেকে কিভাবে কেউ তোমাকে বের করে দেয়? ঘটনা হচ্ছে অ্যাপল যখন বড় হতে লাগলো, তখন এই বিপুল কাজের চাপ সামলানোর জন্য আমরা একজন চৌকস লোককে এনেছিলাম। কয়দিন পর দেখা গেল তার সাথে আমার চিন্তাভাবনা মিলছে না। অ্যাপলের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার আর আমার পরিকল্পনায় আকাশ-পাতাল ফারাক! তখন দুজনের মাঝে বেশ ধুন্ধুমার কান্ড বেঁধে গেল, এবং অ্যাপলের পরিচালনা পর্ষদের সবাই গম্ভীর মুখে জানিয়ে দিলো তাদের সমর্থন ওর সাথেই আছে! সুতরাং মাত্র তিরিশ বছর বয়সে আমাকে নিজের হাতে তিল তিল করে গড়ে তোলা কোম্পানি থেকে রীতিমত ঢাকঢোল বাজিয়ে বের করে দেওয়া হলো! সারা জীবনের ভালবাসা আর সাধনা এক ফুঁৎকারে উড়ে গেল বাতাসে। আমার বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেল কষ্টে।

এরপর বেশ কিছুদিন আমি দিশেহারার মত ঘুরে বেড়ালাম। ভেতরটা একদম এলোমেলো লাগছিলো। একবার ভাবলাম সব ছেড়েছুড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাই! কিন্তু এত দুঃখের মাঝেও একটা জিনিস অনুভব করলাম- আমার ভালবাসাটা হারিয়ে যায়নি!

অ্যাপল থেকে অপমানিত হয়ে বেরিয়ে আসতে হয়েছে আমাকে, সবার কাছে ব্যর্থতার প্রতীক এই স্টিভ জবস, কিন্তু তাতে আমার ভালবাসার নক্ষত্র এতটুকু ম্লান হয়নি! আমি ঠিক করলাম সবকিছু নতুন করে শুরু করবো।

প্রকৃতির এই এক লীলাখেলা। অ্যাপল থেকে ছাঁটাই হওয়ার পর আমার মনে হচ্ছিল লজ্জায় মাটিতে মিশে যাই! কিন্তু পিছন ফিরে তাকালে মনে হয়- আরে! এর থেকে চমৎকার আর কিইবা হতে পারতো জীবনে! সাফল্যের একটা বিশাল ভার আছে। হাজারো প্রত্যাশা আর দম্ভ বুকের মাঝে পাথর হয়ে চেপে বসে। সবসময় একটা গন্ডির ভিতর চলতে হয়, চাইলেই যা ইচ্ছা করা যায় না। কিন্তু আমি যেহেতু সবকিছু একদম নতুন করে শুরু করছি, আমার এরকম কোন ঝামেলা নেই! যা ইচ্ছা, যেমন খুশি তেমন চলার আনন্দে বিভোর আমি প্রত্যাশার শিকল ভেঙ্গে ডুব দিলাম সৃজনশীলতার এক অপূর্ব জগতে!

পরের পাঁচ বছরে আমি “নেক্সট” নামে একটা কোম্পানি খুললাম। তারপর “পিক্সার” নামে আরো একটা, এবং প্রেমে পড়লাম অসাধারণ এক রমণীর, বিয়ে করে ফেললাম দুজনে! এই পিক্সার থেকেই আমরা বের করলাম পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার এনিমেটেড ফিল্ম “টয় স্টোরি”। এখন তো পিক্সার পৃথিবীর সবচেয়ে সফল এনিমেশন স্টুডিও!

এইসময় দারুণ চমকপ্রদ এক কাহিনী ঘটলো!অ্যাপল নেক্সটকে কিনে নিলো আমি আবারও ফিরে আসলাম প্রাণের প্রতিষ্ঠানে! নেক্সটে আমরা যেই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছিলাম সেটার উপর ভিত্তি করেই  অ্যাপলের আজ এই জয়জয়কার। লরেন আর আমি দুজনে গড়ে তুললাম দারুণ সুখী একটি পরিবার।

আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি সেদিন অ্যাপল থেকে ছাঁটাই না হলে এই অসাধারণ ব্যাপারগুলো ঘটতোই না আমার জীবনে! এটাই তো জীবনের আনন্দ, মাঝেমধ্যে এমন সব ঘটনা ঘটবে যে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে তোমার। কিন্তু হাল না ছাড়লেই দেখবে সবকিছু নতুন করে আরো সুন্দর হয়ে উঠছে! জীবনের রংধনু আরো বর্ণিল হয়ে দেখা দিচ্ছে তোমার কাছে!

অনিবার্য মৃত্যু আমাকে গ্রাস করতে এসেছিলো, অথচ কি অবাক বিস্ময়ে বেঁচে রইলাম আমি

ভালবাসার জায়গাটি খুঁজে পাওয়ার চেয়ে সুন্দর আর কিছু হয়না। জীবনের নেশাই হয়ে উঠুক পেশা। ম্যাড়ম্যাড়ে ছাপোষা একটা জীবন কাটানোর কোন মানে হয়? জীবন এত সস্তা না। তোমার মাঝে যেই ছাইচাপা বারুদ আছে, সেটাকে বের করে আনো। জ্বালিয়ে দাও পৃথিবী ভালবাসার উচ্ছ্বাসে। মহৎ কিছু করো, পৃথিবীর যে বড় প্রয়োজন তোমাকে।

জগৎটাকে ঘুরে দেখো, উপলব্ধি করো জীবনের মানে। দেখবে, আপনা থেকেই অনুভব করবে কোন কিছুর প্রতি একটা তীব্র আবেগ। যে স্বপ্নের তাড়নায় ছুটে চলা যায় হাজার বছর অটল পরিশ্রমে।

কাজের মধ্যেই ভালবাসা, কাজের মধ্যেই জীবন। জীবন্মৃতের মতো বেঁচে থাকার প্রশ্নই উঠে না। তোমার ভালবাসার নক্ষত্রটি খুঁজে বের করো। হাল ছেড়ো না। কক্ষনো না।

আরও পড়ুন:Biography of Buddhist guru Dalai lama || বৌদ্ধ ধর্মগুরু দালাইলামার জীবন কাহিনী

আমার তৃতীয় গল্পটা মৃত্যু নিয়ে।

আমার বয়স যখন সতের, তখন কোথায় যেন পড়েছিলাম- “যদি প্রত্যেকদিন এমনভাবে কাটাও যেন আজই তোমার জীবনের শেষ দিন, একদিন না একদিন ব্যাপারটা সত্যি হবেই!” এই উক্তিটি আমাকে গভীরভাবে অভিভূত করলো। আমি বিগত তেত্রিশ বছর প্রতিদিন সকালে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে বলি, “তুমি আজ যা যা করবে প্ল্যান করেছ, আজ যদি তোমার জীবনের শেষ দিন হতো তবুও কি তাই করতে?”

যদি দেখি যে বেশ কয়দিন হয়ে যাচ্ছে আমি উত্তরে নিজেকে “হ্যা” বলতে পারছি না, বুঝতাম একটা কিছু পরিবর্তন করা দরকার শীঘ্রই!

“মরে তো একদিন যাবোই!” এই কথাটা মাথায় থাকলে জীবনের কঠিন সিদ্ধান্তগুলো নেওয়াও একদম জলের মত সহজ হয়ে যায়। জীবনটাকে আসলে আমরা অনেক জটিল করে তুলি। মৃত্যু তো একদিন আসবেই! চারপাশের মানুষের প্রত্যাশা, গর্ব, হেরে যাওয়ার ভয়- এই জঞ্জালগুলো আমাদের মাথায় বোঝা হয়ে চেপে বসে। অথচ এগুলো কত তুচ্ছ একেকটা বিষয়! একশ বছর পর কেউ মনে রাখবে না তুমি ক্লাস নাইনে একটা পরীক্ষায় খারাপ করেছিলে!

মৃত্যু আছে বলেই জীবনটাকে আমি অনেক সহজভাবে নিতে পারি। পৃথিবীতে এসেছিলাম একদম নগ্ন হয়ে। ফিরেও যেতে হবে তেমনি খালি হাতে। হারানোর কিছুই নেই আমাদের। তাহলে কেন খামাখা মানুষের প্রত্যাশার চাপ বয়ে বেড়ানো? তোমার হৃদয় যা বলে, মন যা চায়, সেটাই তো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ!

বছরখানেক আগে আমার ক্যান্সার ধরা পড়লো। ডাক্তার থমথমে মুখে জানালেন, আমার ক্যান্সারটা সেরে যাবার সম্ভাবনা খুব কম। মাস ছয়েক বেঁচে থাকতে পারলে সেটাই হবে পরম পাওয়া! স্ক্যানে দেখা গেল আমার প্যানক্রিয়াস একটা টিউমার ধরা পড়েছে। প্যানক্রিয়াস কি জিনিস সেটাই আমি জানি না!

ডাক্তার বললেন বাসার গিয়ে বিশ্রাম নিতে। পরিবারের সাথে সময় কাটাতে। সবকিছু গোছগাছ করে নিতে।

আমি বুঝলাম বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেছে। আমার বাচ্চাগুলো কি সুন্দর প্রাণবন্ত, ওদের হাসি দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়! তাদেরকে আমি কিভাবে বলবো, বাবা কিন্তু আর বেশিদিন নেই তোমাদের কোলে নিতে? আমার বুকটা ভেঙে গেল।

আমি সারাদিন ডায়াগনোসিস এর কাগজটা হাতে নিয়ে বসে থাকলাম। সন্ধ্যায় আরেকটা বায়োপসি করানো হলো, আমার গলার ভেতর এন্ডোস্কোপ ঢুকিয়ে সেই টিউমারের কিছু কোষ নিলেন তারা। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে যখন ফলাফলের পালা আমার স্ত্রী দেখলেন ডাক্তারের চোখ অশ্রুসিক্ত! তিনি ডুকরে উঠে জানালেন, আমি অসম্ভব সৌভাগ্যবান একজন মানুষ! আমার ক্যান্সারটা খুব বিরল পর্যায়ের, যেটা অস্ত্রোপচার করে সারানো সম্ভব!

আমি সেই অস্ত্রোপচারটা করালাম এবং এখন আমি একদম সুস্থ একজন মানুষ!

মৃত্যুকে এত কাছে থেকে আমি আর কখনো দেখিনি। অনিবার্য মৃত্যু আমাকে গ্রাস করতে এসেছিলো, অথচ কি অবাক বিস্ময়ে বেঁচে রইলাম আমি! এই অভিজ্ঞতার পর মৃত্যু নিয়ে আমার এক গভীর উপলব্ধি হলো।

মরতে চায় না কেউ এ সুন্দর ভুবনে। যে মানুষটা স্বর্গে যাবার স্বপ্নে বিভোর সেও কিন্তু মারা যেতে চায়না এতো তাড়াতাড়ি! তবুও মৃত্যু আমাদের সবার শেষ গন্তব্য। আমার মনে হয় কি, প্রকৃতির সবচেয়ে চমৎকার উদ্ভাবন এই মৃত্যু! প্রকৃতি একঘেয়েমি পছন্দ করে না। সে পুরনোদের সরিয়ে দেয় নতুনের আবাহনে।

আজ পৃথিবী তোমাদের, সামনে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।  কিন্তু দেখতে দেখতে একদিন তোমরাও বুড়িয়ে যাবে, প্রকৃতি মুছে দেবে তোমাদের কোলাহল। ব্যাপারটা যদিও খুব নাটকীয় শোনাচ্ছে, কিন্তু এটাই যে বাস্তবতা!

আমাদের জীবনটা কত ছোট, কত মূল্যবান! সারা পৃথিবী ঘেঁটে তোমার মত ঠিক আরেকটা তুমি কোথাও পাওয়া যাবে না! এই জীবনটা অন্যদের মত হতে চেয়ে কেন নষ্ট করবে! লোকে কি বললো, কি ভাবলো সেটা নিয়ে ভাবার কোন মানে হয়? এই যে তোমার বুকের ভেতর একটা স্বপ্নের বীজ, সেটাকে বাড়তে দাও। ডালপালা মেলতে দাও। ছড়িয়ে দাও তোমার স্বপ্ন!

বিশ্বাস করো, তোমার ভেতরের স্বপ্নটাকে অনুসরণ করে কখনো ঠকবে না। সে কিভাবে যেন সবসময় আগে থেকেই জানে আমাদের জন্য কোনটা সবচেয়ে ভাল! সেই তোমাকে পথ দেখাবে অন্ধকারে। উড়িয়ে দেবে বিজয়ের নিশান।

আমাদের ছোটবেলায় খুব চমৎকার একটা প্রকাশনা ছিলো “The Whole Earth Catalog” নামে। আমাদের প্রজন্মের কাছে সেটা ধর্মগ্রন্থের চেয়ে কিছু কম ছিলো না! স্টুয়ার্ট ব্র‍্যান্ড নামে এক অসাধারণ মানুষ ছিলেন এই পত্রিকার প্রাণপুরুষ। তিনি পরম মমতায় পত্রিকাটিকে গড়ে তুলেছিলেন অসাধারণ কাব্যিক ছোঁয়ায়। ষাটের দশকের সেই সময় কম্পিউটারের সুবিধা ছিল না। তাই পোলারয়েড ক্যামেরায় ছবি তুলে, হাতে কাঁচিতে কেটে, টাইপরাইটারে লিখে মহা ধকলের মধ্য দিয়ে ছাপাতে হতো একেকটা প্রকাশনা! অনেক মানুষের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে সেটা হয়ে উঠতো অনন্য। এখন তোমাদের কাছে গুগল যেমন, সেই পঁয়ত্রিশ বছর আগে আমাদের কাছে পত্রিকাটা ছিল অনেকটা তেমনি। কি অপুর্ব জীবনবোধ, আনন্দ আর জ্ঞানের মিশেল ছিল পত্রিকাটির পাতায় পাতায়!

 

স্টুয়ার্ট আর তার দল নিরলস নিষ্ঠা আর সাধনায় অনেকগুলো সংখ্যা বের করলেন প্রকাশনাটির। তারপর যখন বিদায়ের পালা আসলো, তারা সবটুকু আবেগ ঢেলে প্রকাশ করলেন  “The Whole Earth Catalog”, শেষবারের মতো। সময়টা ছিল সত্তরের দশকের মাঝামাঝি। আমার বয়স তখন তোমাদের মতোই। আমি ছলছল চোখে স্টুয়ার্ট আর তার দলের সেই শেষ সংখ্যাটি হাতে নিলাম। পিছনের কভারজুড়ে একটা ছবি। খুব সুন্দর একটি গ্রামের মেঠোপথ। সকালের সূর্যের ঝলমলে রোদ। চারপাশের গাছপালা চোখজুড়ানো সবুজে ঘিরে রেখেছে। তার মাঝ দিয়ে পথটা চলে গেছে বহুদূর। মিশে গেছে দিগন্তে।

তার নিচে লেখা, “ক্ষুধার্ত থেকো। বোকা থেকো।”

এটা ছিলো বিদায়বেলায় তাদের শেষ উপহার আমাদের জন্য। আমি সারাজীবন এই কথাটি গভীর আবেগে মনে রেখেছি। সবসময় চেয়ে এসেছি তেমনটাই যেন থাকতে পারি চিরদিন। আজ আমার পালা ফুরোল। তোমাদের সামনে এক নতুন দিগন্ত। এগিয়ে যাও নবীন প্রাণের উচ্ছ্বাসে। তোমাদের কাছে আমার শুধু একটাই চাওয়া।

 

উক্তি অবিস্মরণীয় চিন্তার সম্মিলন ঘটাতে এ প্রতিবেদন।

 

পালক বাবা-মা কাছে বড় হয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পর বুঝতে পারেন তার পড়াশুনা ঠিকভাবে হচ্ছে না। তাই লেখাপড়া ছেড়ে এক বন্ধুর সঙ্গে গ্যারেজে বসে শুরু করলেন কম্পিউটার বানানোর কাজ। শুরু হলো এক কিংবদন্তীর পথচলা।

সেই গ্যারেজে তৈরি প্রতিষ্ঠান এক সময় রুপ নিলো টেক জায়ান্ট অ্যাপলে। যে ব্যক্তির হাত ধরে শুরু তাকেই এক সময় প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া হলো। পকেট নেই পর্যাপ্ত টাকা, এমন সময় ধরা পড়লো ক্যান্সার।

চিকিৎসক জবাব দিয়ে দিলেন। বললেন, আপনার সময় শেষ। বড় জোর তিনমাস। তবুও নিজের জীবনকে নতুন করে শুরু করেন তিনি। তৈরি করে ডিজনি’র মত প্রতিষ্ঠান। এক সময় ভুল বুঝতে পেরে অ্যাপল প্রধান নিবার্হী হিসেবে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। আবার নতুন করে পথচলা শুরু। আর বাকিটা ইতিহাস। একের পর এক চমকে বিশ্বকে তাকি লাগিযে দিয়েছেন। তিনি আর কেউ নন প্রযুক্তি বিশ্বের নায়ক স্টিভ জবস।

 

মহান এ প্রযুক্তির যাদুকর নিজে যেমন কাজে ডুবে থেকেছেন, তেমনি অন্যদেরও উৎসাহ যুগিয়েছেন। তার চিন্তাধারা প্রকাশ করেছেন নি:সংকোচে। এগুলো প্রযুক্তি বিশ্বে অমর বাণী হিসেবে সোনার অক্ষরে লেখা রয়েছে। চিন্তাধারা পরিবর্তন করে দিতে পারে এসব উক্তি। স্টিভ জবসের তেমনি ১২টি উক্তি অবিস্মরণীয় চিন্তার সম্মিলন ঘটাতে এ প্রতিবেদন।

একটু ভালো খাবার আশায় স্টিভজব আনেক দুরের ইসকন মন্দিরে যেতেন হেটে ।

১. মহৎ কাজের একমাত্র উপায় তুমি যে কাজ করছো তা ভালোবেসে করা।

২. যদি এখনও তোমার ভালোবাসার কাজ খুঁজে না পাও, তাহলে খুঁজতে থাকো। অন্য কোথাও স্থায়ী হয়ে যেয় না। তোমার মনই তোমাকে বলে দেবে, যখন তুমি তোমার পছন্দের কাজটি খুঁজে পাবে। যে কোন ভালো সম্পর্কের মতোই, তোমার কাজটি যতই তুমি করতে থাকবে, সময় যাবে, ততই ভালো লাগবে।

৩. প্রায় সবকিছুই যেমন- অতি প্রত্যাশা, সব গর্ব, সব লাজলজ্জা ও ব্যর্থতার গ্লানি-মৃত্যুর মুখে হঠাৎ করে সব নেই হয়ে যায়। টিকে থাকে শুধু সেটাই, যা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। তোমার কিছু হারানোর আছে—আমার জানা মতে, এ চিন্তা দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, সব সময় মনে রাখা যে- একদিন তুমি মরে যাবে। তুমি খোলা বইয়ের মতো উন্মুক্ত হয়েই আছ। তাহলে কেন তুমি সেই পথে যাবে না, যে পথে তোমার মন যেতে বলছে তোমাকে?

৪. অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুতির কারণে কাজের প্রতি আমার ভালোবাসা এক বিন্দুও কমেনি। তাই আমি আবার একেবারে গোড়া থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রথমে মনে না হলেও পরে আবিষ্কার করলাম, অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুতিটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো ঘটনা। সেই সময় আমি প্রবেশ করলাম জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল অংশে।

৫. আমি এটা ভেবেই সন্তুষ্ট, সফল উদ্যোক্তাদের ব্যর্থ উদ্যোক্তাদের থেকে যা আলাদা করেছে, তার অর্ধেকই হলো অধ্যবসায়।

৬. কখনও কখনও জীবন তোমাকে ইটপাটকেল মারবে; কিন্তু বিশ্বাস হারিয়ো না।

৭. ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো।

 

৮. তোমাদের সময় সীমিত। কাজেই কোনো মতবাদের ফাঁদে পড়ে, অর্থাৎ অন্য কারও চিন্তাভাবনার ফাঁদে পড়ে অন্য কারও জীবনযাপন করে নিজের সময় নষ্ট করো না। যাদের মতবাদে তুমি নিজের জীবন চালাতে চাচ্ছ, তারা কিন্তু অন্যের মতবাদে চলেনি, নিজের মতবাদেই চলেছে। তোমার নিজের ভেতরের কণ্ঠকে অন্যদের শেকলে শৃঙ্খলিত করো না। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, নিজের মন ও ইনটুইশনের মাধ্যমে নিজেকে চালানোর সাহস রাখবে।

৯.‘বিশ্বের সেরা ধনী হওয়া আমার কাছে মুখ্য বিষয় নয়, …বরঞ্চ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় নিজেকে যেন বলতে পারি, হ্যাঁ সত্যিই আমি দারুণ কিছু করেছি’।

১০. আপনি কি আপনার বাকি জীবন চিনিযুক্ত পানি বিক্রি করতে চান, নাকি আপনি আমার সাথে আসবেন এবং বিশ্বকে বদলে দেবেন?

১১. আমার বয়স যখন ১৭, তখন আমি একটা উদ্ধৃতি পড়েছিলাম—‘তুমি যদি প্রতিটি দিনকেই তোমার জীবনের শেষ দিন ভাব, তাহলে একদিন তুমি সত্যি সত্যিই সঠিক হবে।’ এ কথাটা আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল এবং সেই থেকে গত ৩৩ বছর আমি প্রতিদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করি—আজ যদি জীবনের শেষ দিন হতো, তাহলে আমি কি যা যা করতে যাচ্ছি, আজ তা-ই করতাম, নাকি অন্য কিছু করতাম? যখনই এ প্রশ্নের উত্তর একসঙ্গে কয়েক দিন ‘না’ হতো, আমি বুঝতাম, আমার কিছু একটা পরিবর্তন করতে হবে।

১২. তুমি কখনই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে এক সুতায় বাঁধতে পারবে না। এটা কেবল পেছনে তাকিয়েই সম্ভব। অতএব, তোমাকে বিশ্বাস করতেই হবে, বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো একসময় ভবিষ্যতে গিয়ে একটা অর্থবহ জিনিসে পরিণত হবে। তোমার ভাগ্য, জীবন, কর্ম, কিছু না কিছু একটার ওপর তোমাকে বিশ্বাস রাখতেই হবে। এটা কখনোই আমাকে ব্যর্থ করেনি, বরং উল্টোটা করেছে।

১. কোনো কিছু ডিজাইন করা শুধু দেখা ও অনুভূতির বিষয় নয়। ডিজাইন হলো এটি কিভাবে কাজ করবে তা।

২. বহু প্রতিষ্ঠানই নিম্নমানের পণ্য তৈরিকেই বেছে নেয়, এটি তাদের জন্য সঠিক হতে পারে। তবে আমরা একটু ভিন্ন পথে চলি। আমাদের বিশ্বাস যে, আমরা ক্রেতাদের জন্য অসাধারণ পণ্য আনব। এতে তারাও তাদের মানিব্যাগ উন্মুক্ত করবেন।

৩. মাণের ক্ষেত্রে মাপকাঠি হয়ে উঠুন। কিছু মানুষ এমন পরিবেশে অভ্যস্ত নয় যা মাপকাঠিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের।

৪. আমার মনে হয় আমরা মজা করি। আমি মনে করি গ্রাহকরা সত্যিই আমাদের পণ্য

৫. অধিকাংশ মানুষের কথায় উঠে আসে ডিজাইন অর্থ পাতলা আচ্ছাদন। এটি ইন্টেরিয়র ডেকোরেটিং। এটি সোফার কাপড়ের কভার। যদিও আমার কাছে এসব কোনোটিই নয়। ডিজাইন হলো মানুষের কোনো একটি নির্মাণের প্রধান বিষয়, যা পণ্যটির বাইরের আস্তরেও প্রকাশিত হবে।

৬. উদ্ভাবন হলো একজন নেতা ও তার অনুসারীর মাঝে পার্থক্য সৃষ্টিকারী।

৭. কোনো উদ্ভাবনের সময় আপনি ভুল করতে পারেন। এ ভুল দ্রুত স্বীকার করে তা ঠিক করে নেওয়া উচিত। এ ছাড়া এ শিক্ষা অন্য উদ্ভাবনেও কাজে লাগানো উচিত।

৮. আপনার গ্রাহকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত নয় যে, তারা কী চায় এবং সে অনুযায়ী পণ্য বানানোর চেষ্টা করাও উচিত নয়। কারণ যে সময়ে আপনি তা বানাবেন সে সময়ে তারা আরও নতুন কিছু চাইবেন।

৯. যারা কাজ করছেন তারা মেকিন্টোমের পেছনের কর্মশক্তি। আমার কাজ হলো তাদের কাজ করার স্থান করে দেওয়া, প্রতিষ্ঠানের অন্য অংশের তা সাগরে ফেলা থেকে রক্ষা করা।

১০. একমাত্র আমিই জানি যে কারণটিতে বছরে এক বিলিয়ন ডলারের এক চতুর্থাংশ ক্ষতি হয়…. এটি হলো চরিত্র-গঠন।

১১. কোনো বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করার জন্য সবচেয়ে কঠিন হলো ফোকাস করা। আপনি হয়ত মনে করতে পারেন ফোকাস করা হলো কোনো বিষয়কে ‘হ্যাঁ’ বলা। তবে না, ফোকাস করা হলো কোনো বিষয়কে ‘না’ বলা। আর যখনই আপনি তা বলবেন তখন মানুষের বিরাগভাজন হবেন।

১২. আমি যা করেছি তার জন্য যেমন গর্বিত তেমন যা করিনি তার জন্যও গর্বিত।

১৩. মান সব সময়ই সংখ্যার তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ।

Read More: ভারতীয় সেক্স গুরু ভগবান রাজনীশের উত্থান ও জীবনী 

স্টিভ জবস। প্রযুক্তি দুনিয়ার কিংবদন্তী। জন্ম ১৯৫৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের  ফ্রান্সিস্কোতে। বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল এর প্রতিষ্ঠাতা। ২০১১ সালে অক্টোবর প্রযুক্তি দুনিয়ার এই বরপুত্র ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। স্টিভ জবস যখন মারা যান তখন এ্যাপলের ব্যাংক একাউন্টে জমা ছিলো ৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশী। টেকনোলজির এই রাজপূত্র মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে একেবারে অন্তিম মুহুর্তে জীবন সম্পর্কে কিছু অসাধারণ কথা বলেছিলেনযা জাপানি, চায়নীজ, হিন্দি, উর্দু, আরবী, স্প্যানিশ, পর্তুগীজ, রুশ সহ প্রায় আঠারোটি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। শুধু তাই নয়শিশুদের মানসিক উৎকর্ষতা বিধান এবং তাদের সুন্দর মনন গঠনের লক্ষে একাধিক ভাষায় স্টিভ জবসের এই অমর কথাগুলো সহ উনার জীবনী বিভিন্ন দেশের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

বাণিজ্যিক দুনিয়ায় আমি সাফল্যের একেবারে সর্বোচ্চ চুড়ায় আরোহণ করেছি।যা আপনাদের কাছে সাফল্যের এক অনুপম দৃষ্টান্ত। কিন্তু, এ কথা ধ্রুব সত্য, কাজের বাইরে আমার সামান্যই আনন্দ ছিলো। সম্পদের প্রলোভনে বিভোর ছিলাম সারা জীবন। আজ মৃত্যুশয্যায় শুয়ে যখন জীবনটাকে দেখি-তখন মনে হয়, আমার সব সম্মান, খ্যাতি আর অর্জিত সম্পদ আসন্ন মৃত্যুর সামনে একেবারেই ম্লান, তুচ্ছ আর অর্থহীন। এ্যাপলের বিশাল সাম্রাজ্য আমার নিয়ন্ত্রনে ছিলো- কিন্তু মৃত্যু আজ আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পৃথিবীর অন্যতম ধনী ব্যক্তি কবরের বিছানায় শুয়ে আছে সেটা আদৌ কোনো বড় ব্যাপার না। প্রতি রাতে নিজের বিছানায় শোয়ার আগে আমি কী করলাম- সেটাই আসল ব্যাপার। অন্ধকার রাতে জীবনরক্ষাকারী মেশিনের সবুজ বাতিগুলোর দিকে চেয়ে আমার বুকের গহীনে হাহাকার করে ওঠে। মেশিনের শব্দের ভিতরে আমি নিকটবর্তী মৃত্যু দেবতার নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারি। অনুধাবন করতে পারি-শুধু সম্পদ না, সম্পদের সাথে সম্পর্কহীন জিনিসেরও মানুষের অন্বেষণ করা উচিত।

বেকুবের মতো সম্পদ আহরণই সবকিছুই নয়- আরো অনেক কিছু মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আর তা হলো- মানুষের সাথে সুসম্পর্ক তৈরী, চিত্রকলার সৌন্দর্য্য উপলব্ধি করা আর তারুণ্যে একটি সুন্দর স্বপ্ন নিজের হৃদয়ে লালন করা। শুধু সম্পদের পেছনে ছুটলেই মানুষ আমার মতো এক ভ্রান্ত মানুষে পরিণত হতে পারে। ঈশ্বর আমাদের সবার হৃদয়ে ভালোবাসা অনুভব করার জ্ঞান দিয়েছেন। কেবলমাত্র এই নশ্বর দুনিয়ায় সম্পদের মোহে জড়িয়ে পড়ার জন্য নয়। এই যে মৃত্যু শয্যায় শুয়ে আছি। কই, সব সম্পদতো এই বিছানায় নিয়ে আসতে পারিনি। শুধু আজ সাথে আছে ভালোবাসা, প্রেম, মায়া, মমতার স্মৃতি । এগুলোই শুধু সাথে থেকে সাহস যোগাবে, আলোর পথ দেখাবে। ভালোবাসা পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে আছে- সম্পদ না খুঁজে ভালোবাসাও খোঁজে নিতে হয়। সম্পদ কখনো শান্তি আনে না।মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ আর ভালোবাসাই শান্তি আনে।পৃথিবীটাকে দেখো। শুধু সম্পদের পেছনে ছুটে হাহাকার করলে জীবনটাকে উপভোগ করতে পারবে না…

পৃথিবীতে সবচেয়ে দামী বিছানা কি জানেন? তাহলো- হাসপাতালের মৃত্য শয্যা। আপনাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আপনি একজন গাড়ি চালক রাখতে পারেন। আপনার নিযুক্ত কর্মচারীরা আপনার জন্য অনেক টাকাই আয় করে দিবে।কিন্তু এটাই সবচেয়ে বড় সত্য গোটা পৃথিবী চষে, পৃথিবীর সব সম্পদ দিয়ে দিলেও একজন মানুষও পাবেন না যে আপনার রোগ বয়ে বেড়াবে।

বৈষয়িক যে কোনো জিনিস হারালে আপনি পাবেন। কিন্তু একটা জিনিসই হারালে আর পাওয়া যায় না, তা হলো, মানুষের জীবন। মানুষ যখন অপারেশান থিয়েটারে যায় তখন সে কেবলি অনুধাবন করে- কেন জীবনের মূল্যটা আগে বুঝিনি!! জীবনের যে পর্যয়ে আপনি আজ থাকুন না কেন- মৃত্যুর পর্দা আপনার জীবনের সামনে হাজির হবেই। সাঙ্গ হবে জীবন। তাই, এই নশ্বর জীবনের পরিসমাপ্তির আগে পরিবারের জন্য, আপনজনের জন্য, বন্ধুদের জন্য হৃদয়ে সবসময় ভালোবাসা রাখুন। নিজের জীবনটাকে ভালোবাসুন। ঠিক নিজের মতো করে অন্যকেও ভালোবাসুন।

মেডিটেশন যেভাবে বদলে দিয়েছিল স্টিভ জবসের জীবন

টিভ জবসের বয়স তখন মাত্র ১৯ বছর। রীড কলেজ থেকে ড্রপআউট এই কিশোর চলে গেলেন ভারতে। তবে ভারত থেকে যখন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরলেন, তখন তাকে দেখে সবাই চমকে গেল।

স্টিভ জবসের বয়স তখন মাত্র ১৯ বছর। রীড কলেজ থেকে ড্রপআউট এই কিশোর চলে গেলেন ভারতে। তবে ভারত থেকে যখন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরলেন, তখন তাকে দেখে সবাই চমকে গেল। সান ফ্রান্সিসকো বিমান বন্দরে অবতরণের পর তার বাবা মা তাকে দেখে চিনতে পারলেন না।

ভারতে তিনি এসেছিলেন মূলত আধ্যাত্মিক জীবনের খোঁজে। ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু ধর্মগুরু কিংবা বৌদ্ধ ধর্মের আধ্যাত্মিক সাধকদের কথা তিনি আগেই শুনেছিলেন। তবে তিনি নিজেও হয়তো কখনও চিন্তা করতে পারেননি তার এই ভারত সফরই পুরো জীবনকে পালটে দেবে। শুধু তার নিজের জীবনই নয়, পালটে দেবে প্রযুক্তি বিশ্বকেও।

ভারত থেকেই শুরু হলো তার আধ্যাত্মিক সাধনার। পরবর্তীতে তিনি যখন নিজ দেশে ফিরে যান, তখনও তার এই সাধনা অব্যাহত ছিল। ১৯৭০ সালের সে সময়টাতে যুক্তরাষ্ট্রেও জেন মেডিটেশন ডালপালা মেলতে শুরু করে। তার সাথে তখন দেখা হলো শুনর‍্যু সুজুকি নামের এক লেখকের যার বিখ্যাত একটি বই ‘জেন মাইন্ড, বিগিনারস মাইন্ড’। স্টিভ জবস তার কাছে জেন মেডিটেশন শেখার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। গুরু হিসেবে পেতে চাইলেন সুজুকির এক শিষ্য কোবান অতোগাওয়াকে।

জবসকে নিয়ে লেখা জীবনীতে ওয়াল্টার আইজাকসন জানান, জবস প্রায় প্রতিদিনই অতোগাওয়ার সাথে দেখা করতেন। আর কয়েক মাস পরপরই তারা দুজন মিলে ধ্যান করতে চলে যেতেন।

বৌদ্ধ ধর্ম এবং এই ধর্মের আলোকে ধ্যান করার মাধ্যমে জবস তার নিজের মানসিক চিন্তাধারাকে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চালনা করতে শিখেছিলেন যা তার জীবনযাত্রা পরিবর্তনের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে।

আইজাকসনকে স্টিভ জবস বলেন, “আপনি যদি একটা জায়গায় স্থির বসে থাকেন, তাহলে দেখতে পাবেন আপনি মন কতো অস্থির এবং ছটফট করে।” তিনি আরও বলেন, “আপনি যদি মনকে শান্ত করতে চান, তাহলে দেখা যাবে ভালোর পরিবর্তে আরও খারাপ হচ্ছে। তবে সময়ের সাথে সাথে একসময় ঠিকই আপনার মন মানসিকতা একটা জায়গায় এসে স্থির হবে। আর সে সময় আপনি অনেক সূক্ষ্ম বিষয় নিয়েও চিন্তা করতে পারবেন, আপনার অনুমান জ্ঞান আরও প্রখর হবে, আপনি কোন কিছু নিয়ে আরও গভীরভাবে অনুমান করতে পারবেন।”

জবস আরও বলেন, “আপনার মনে হবে সময় অনেক ধীরগতির হয়ে গেছে, প্রতিটি মুহূর্ত আপনার কাছে অনেক দীর্ঘ মনে হবে। আপনি আগে যা দেখতে পেতেন, তার থেকে অনেক বেশি দেখতে পাবেন। এটা একটা শৃঙ্খল জীবন, আপনাকে এর অনুশীলন করতে হবে।”

মজার ব্যাপার হলো জেন মেডিটেশন জবসকে এতোটাই নাড়া দিয়েছিল যে তিনি আরও গভীরভাবে পুরো বিষয়টিকে আয়ত্ব করতে জাপান যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে এই সিদ্ধান্তে বাধ সাধেন তার গুরু অতোগাওয়া। তিনি জবসকে বলেন তার এখানেই অনেক কাজ করার আছে। অতোগাওয়া ছিলেন একজন দূরদর্শী ব্যক্তি।

জবসের কর্মজীবনের দিকে লক্ষ্য করলে খুব সহজেই জেন মেডিটেশনের প্রভাব বোঝা যায়। ১৩০০ বছর ধরে জেন মেডিটেশন মানুষকে শিখিয়েছে কিভাবে সাহস করে কোন কাজ করতে হয়, কোন কাজে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হয় এবং কঠোর হতে হয়। তবে এর সাথে এটাও শিখিয়েছে কিভাবে সাধারণ জীবনযাপন করতে হয়।

স্টিভ জবস কিংবা অ্যাপল, যেদিকেই আপনি তাকাবেন, সেদিকেই এই বিষয়গুলো দেখতে পাবেন।

আপনি যদি অ্যাপলের এই মাউসগুলোর দিকে লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন শুরুটা হয়েছে যেখান থেকে, সেই মাউসটি জেন ভিজ্যুয়াল আর্টের কতো কাছাকাছি।

তবে জবস শুধুমাত্র অ্যাপল পণ্যে নান্দনিকতার ছাপই স্থাপন করেননি, তিনি গ্রাহকদের চাহিদা তৈরিতে সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। তিনি খুব গর্ব করেই বলতেন, তার কাজ এটা ছিল না যে গ্রাহকরা যা চায় তা তাদের সামনে তুলে ধরা। বরং তার কাজ ছিল তাদের সামনে এমন কিছু তুলে ধরা যা তাদের দরকার ছিল কিন্তু তারা নিজেরাও তা জানতো না।

স্টিভ জবসের মৃত্যুর পর নিউ ইয়র্ক টাইমস তাকে নিয়ে একটি বিশেষ উক্তি ব্যবহার করেছিল। সেটি ছিল, “এক কুশ্রী প্রযুক্তি বিশ্ব আপনার ছোঁয়ায় হয়ে উঠল অপরূপ।” -বিজনেস ইনসাইডার অবলম্বনে

ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।

 

 

Leave a Reply