স্মার্ট টিভি কি, এন্ড্রয়েড টিভি কি, কোনটা ভালো?
এক কথায় বলতে গেলে, একটা স্মার্ট ফোনের সাথে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের যেম পার্থক্য স্মার্ট টিভির সাথে এন্ড্রয়েড টিভির একি রকম পার্থক্য।
সব অ্যান্ড্রয়েড টিভিই স্মার্ট টিভি , কিন্তু সব স্মার্ট টিভি অ্যান্ড্রয়েড নাও হতে পারে। অ্যান্ড্রয়েড একটি অপারেটিং সিস্টেম, বর্তমানে খুব জনপ্রিয় এই OS দিয়ে টিভিও তৈরি করা হচ্ছে যেখানে অ্যান্ড্রয়েড সকল সুযোগ সুবিদা থাকে। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ব্যতীত অনেক স্মার্ট টিভি বাজারে রয়েছে, জনপ্রিয়তার অভাবে সেগুলি হারিয়ে যাচ্ছে।
স্মার্ট টিভি:
আপনি এখন খুব সহজেই বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতনামা কোম্পানির সেরা যে কোন মডেলের স্মার্ট টিভি (Smart TV) অনলাইনে ঘরে বসেই কিনতে পারবেন ।
প্রায় দুই দশক আগ থেকেই বাংলাদেশে টেলিভিশনের চাহিদা উর্দ্ধমূখী। বাংলাদেশে খুব কম বাসা আছে যেখানে টেলিভিশন নেই। মোবাইলের পরে বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রয়োজন আর বিনোদনের নিত্য সঙ্গী টেলিভিশন। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রেতাদের যুগোপযোগী চাহিদা মেটাতে টেলিভিশনের অনলাইন বাজারও হয়ে উঠেছে চাঙ্গা। আর এখন আধুনিক ব্যবহারকারীরা দিন দিন ঝুঁকছেন উন্নত প্রযুক্তির স্মার্ট টিভি -এর দিকে। সনি (Sony), স্যামসাং (Samsung), এলজি (LG), তোশিবা (Toshiba) -এর মত বিভিন্ন নামীদামী ব্র্যান্ডের স্মার্ট টিভি বাংলাদেশের মানুষের টেলিভিশনের চাহিদা মেটাচ্ছে প্রতিদিন।
স্মার্ট টিভি কি? স্মার্ট টিভি মূলত এইচডি টিভি। স্মার্ট টিভি -তে কিছু স্মার্ট ফাংশন থাকে যেমনঃ অপারেটিং সিস্টেম, টিভি অ্যাপ ডাউনলোড করা, Wi-Fi ব্যবহার করা ইত্যাদি ফাংশন স্মার্ট টেলিভিশনে পাওয়া যাবে।
আপনি যে টিভি কিনতে যাচ্ছেন তাতে ইউএসবি পোর্ট থাকা মানেই সব ধরনের মুভি তাতে চলবে এমন কথা নয়। ভিন্ন ভিন্ন মডেল ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাট সমর্থন করতে পারে। আপনার পছন্দের টিভিতে avi, kmv, mp4 বা অন্যান্য ফাইল সমর্থন করছে কিনা তা জেনে নিতে হবে। আপনার টিভির সঙ্গে যদি পোর্টেবল হার্ডড্রাইভ ব্যবহারের পরিকল্পনা থাকে তবে টিভিতে তা সমর্থন করছে কিনা তা টিভি কেনার আগেই জেনে নিতে হবে।
এন্ড্রয়েড টিভি:
এন্ড্রয়েড টিভি হলো এক ধরনের স্মার্ট টিভি যেখানে সেটআপ বক্সের পাশাপাশি মিডিয়া স্ট্রিমিং পরিসেবা গুলোকে ক্ষমতা দেয়। এন্ড্রয়েড টিভিতে মূলত অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এই অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে এন্ড্রয়েড টিভিতে নতুন সকল ফিচার থাকে। এখানে ব্যবহারকারী শুধুমাত্র এন্ড্রয়েড টিভিতে ইনস্টল থাকা অ্যাপ সামগ্রী ব্যবহার করতে পারেন না বরং তার ইচ্ছেমত সে অ্যাপ ডাউনলোড করে স্বাচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারেন।
এমনকি ভিডিও গেমসও খেলতে পারেন। এর মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ স্টোরেজ রয়েছে। এতে এন্ড্রয়েড টিভি সফটওয়্যার ছাড়াও রয়েছে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট। বর্তমানে নতুনভাবে এন্ড্রয়েড টিভির ডিসপ্লে ব্যাকআপ তৈরি হচ্ছে HDR (HDR10 এবং HLG ফরমেট) সাপোর্ট। যা ছবি বা ভিডিও কে ঝকঝকে ও বাস্তব করে তোলে।
স্মার্ট টিভি এবং এন্ড্রয়েড টিভির মধ্যে পার্থক্য
চারকোনা বাক্সের সিআরটি টিভি থেকে এলসিডি, প্লাজমা হয়ে এখনকার বর্তমান যুগ স্মার্ট টিভির। টিভি অর্থাৎ টেলিভিশনের সংজ্ঞা তো আমরা সবাই জানি, তাহলে ‘টিভি’ এবং ‘স্মার্ট টিভির’ পার্থক্যটা কী?
স্মার্ট টিভি মূলত এমন একটি টেলিভিশন, যার মাধ্যমে টেলিভিশন দেখার পাশাপাশি আপনি অন্যান্য অনেক কাজও করতে পারবেন যেগুলো সাধারণ টেলিভিশনে করা সম্ভব নয়। স্মার্ট টেলিভিশনে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের সুযোগ থাকে। আর ফেসবুক ও ইউটিউব সহ স্কাইপ ও টুইটার প্রভৃতি সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলো ব্যবহার করা যায় এই টিভিতে।
স্মার্ট টিভিতে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সুবিধা থাকে। স্মার্ট টিভি কেনার আগে ‘ওয়াইফাই বিল্ট ইন’ নাকি ‘ওয়াই-ফাই রেডি’ সে সুবিধা আছে কিনা তা জেনে নিতে হবে। শুধু ওয়াই-ফাই রেডি স্মার্ট টেলিভিশন হলে পরে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে আলাদা ওয়াইফাই ডঙ্গল কেনার প্রয়োজন হবে। স্মার্ট টিভি কেনার আগে আরো দেখে নিতে হবে এতে ইউএসবি পোর্ট সুবিধা আছে কিনা।
ইউএসবি পোর্ট থাকলেই যে, এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ বা পেনড্রাইভ কিংবা মেমরি কার্ড সমর্থন করবে এমন কথা নয়। স্মার্ট টিভি কেনার আগে তা পোর্টেবল হার্ডডিস্ক বা অন্য কোন ধরনের ডিজিটাল ফরম্যাট সমর্থন করে কিনা তা অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে। স্মার্ট টিভিতে একের অধিক HDMI পোর্ট থাকে। আবার অনেক টিভি সরাসরি রাউটার থেকে ইন্টারনেট কানেক্ট করা যায়। যদি আপনার বাজেটের মধ্যে হয়, তবে অবশ্যই বিল্ট ইন Wi-Fi সুবিধার স্মার্ট টিভি কিনবেন।
স্মার্ট টিভি এবং এন্ড্রয়েড টিভির মধ্যে পার্থক্য কি
স্মার্ট টিভি এবং এন্ড্রয়েড টিভির মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। শুধুমাত্র এদের সুবিধা এবং অসুবিধা এদের মধ্যে পার্থক্য তৈরী করেছে। একটি কথা বরাবরের মতো প্রচলন আছে যে, সকল এন্ড্রয়েড টিভি স্মার্ট টিভি কিন্তু সকল স্মার্ট টিভি এন্ড্রয়েড টিভি না। কারণ এন্ড্রয়েড টিভিতে স্মার্ট টিভির চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। স্মার্ট টিভিতে পূর্বে ইন্সটলড করা অ্যাপ সমূহ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায় কিন্তু নতুনভাবে অ্যাপ ইনস্টল সুবিধাজনক নয় হলেও বেশি কার্যকর হয় না।
অপরদিকে এন্ড্রয়েড টিভিতে পূর্বে থেকে উন্নত মানের কিছু ফিচার ইনস্টল করা থাকলেও প্লে স্টোরের মাধ্যমে নতুন নতুন পছন্দনীয় অ্যাপসমূহ নামিয়ে সহজে কাজ করা যায়। স্মার্ট টিভিতে রিমোট এন্ড্রয়েড টিভির চেয়ে তুলনামূলকভাবেমূলক ভাবে ধীর গতিতে কাজ করে। এন্ড্রয়েড টিভিতে উন্নতমানের সেন্সর ব্যবহার করায় এটি খুব দ্রুত কাজ করে এটি।
এছাড়াও এন্ড্রয়েড টিভিতে HDMI বা VGA কেবল কানেক্ট থাকায় যে কোনো কম্পিউটার বা ল্যাপটপ এর সাথে সংযুক্ত করা যায় কিন্তু স্মার্ট টিভিতে তা সম্ভব নয়। এন্ড্রয়েড টিভিতে এর আল্ট্রা প্রজেক্ট টেকনোলজি ব্যবহার করায় ছবি বা ভিডিও যতটা ক্লিয়ার বা বাস্তব মনে হয় এবং স্মার্ট টিভিতে ঠিক ততটা মনে হয় না।
সাধারণ স্মার্ট টিভি না এন্ড্রয়েড টিভি, কোনটা ভালো?
টিভি কিনার প্রথম শর্ত হচ্ছে বাজেট। আপনার বাজেট ভালো হলে নিশর্তে একটা ভালো ব্র্যান্ডের Android Smart TV কিনার চেষ্টা করুন।
বাংলাদেশে বিভিন্ন কোম্পানির স্মার্ট টিভি রয়েছে-
Samsung
Panasonic
MI
Nokia
Philips
One plus y series LED smart tv
LG smart tv
TCL smart tv
Onida
এছাড়াও, বাজারে আরো অনেক কোম্পানির স্মার্ট টিভি পাওয়া যায়। দাম সাধারণত ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করে।
একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, “সাধারণ Linux OS থাকা টিভি কিনবেন নাকি Android OS থাকা টিভি?”
এটার সহজ উত্তর হবে, অবশই একটি android LED smart tv কিনবেন”. কারণ, একটি android টিভিতে গুগলের android OS ব্যবহার করা হয়। যে কারণে up-to date system এর সাথে android এর সব ধরনের ফিচার পেয়ে যাবেন আপনার টিভিতে। পছন্দমতো হাজার হাজার apps থেকে আপনার প্রয়োজনীয় অ্যাপসটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। যা আপনি Linux based সাধারণ smart LED টিভিতে পাবেন না।
সবশেষে, Linux based LED স্মার্ট টিভির তুলনায় Android based smart টিভির দাম খুব একটা বেশি না। দুই ধরনের টিভির মধ্যে দামের পার্থক্য খুবই কম। তাই, একটি আধুনিক টিভির সব সব ধরনের মজা পেতে চাইলে, অবশই Android smart tv কেনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।