Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
হাডুডু খেলেছি, তাই কীভাবে কাউকে আটকাতে হয় জানি

হাডুডু খেলেছি, তাই কীভাবে কাউকে আটকাতে হয় জানি

প্রথম আলো: ‘ডাকাতে’র হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। ভয় লাগেনি?

হেলাল উদ্দিন: কিছুটা ভয় ছিল। তবে মনে হয়েছিল, আমি তো পুলিশের পোশাকধারী। আমার যা হওয়ার হবে। অস্ত্রধারীর গায়ে কাফনের কাপড় ছিল। এটা দেখে আমি অবাক হয়েছি। মনে হয় সবাইকে ভয় দেখানোর জন্য পরেছিল।

‘ডাকাত’কে জাপটে ধরতে গেলেন কেন, অস্ত্র ছিল না?

হেলাল উদ্দিন: আমি তো ট্রাফিকে দায়িত্ব পালন করি। আগ্নেয়াস্ত্র বহন করি না। অবশ্য আমি গ্রামে হাডুডু খেলেছি। বাহিনীতেও সাত–আট বছর হাডুডু খেলোয়াড় ছিলাম। কীভাবে কাউকে আটকাতে হয়, তা জানি।

বাসটি ডাকাতের কবলে পড়ার খবর থানায় জানিয়ে তো বাসায় ফিরে যেতে পারতেন?

দেশে টানা এক মাস করোনায় মৃত্যু নেই

হেলাল উদ্দিন: হ্যাঁ, এটা আমি করতে পারতাম। কিন্তু আমার মনে হলো, মানুষ বিপদে পড়েছে, আর আমি যাব না? আমি তো পুলিশের পোশাকধারী। আর থানার পুলিশ কোথায়, কত দূরে ছিল, কখন আসবে, তাও তো আমি জানতাম না।

সেদিন বাসে থাকা অন্য ধারালো অস্ত্রধারীরা কি ধরা পড়েছে?

হেলাল উদ্দিন: বাকি অস্ত্রধারীরা তো দৌড়ে পালিয়ে গেছে। ওই জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। পুলিশের একটু কষ্ট করতে হচ্ছে। তবে আশুলিয়া থানা–পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।

আপনি খবরের শিরোনাম হয়েছেন, কেউ কিছু বলেছে?

হেলাল উদ্দিন: মানুষের কপাল কখন খোলে, কখন পোড়ে, তা কেউ বলতে পারে না। আমি একটা কাজ করেছি, মানুষজন পাশে ছিল। এখন আমাকে সবাই বাহবা দিচ্ছে। আমাদের কাফী স্যার (ঢাকা জেলা ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহহিল কাফী) আমাকে ডেকে নিয়ে অনেক প্রশংসা করেছেন। ডিআইজি (অ্যাডমিন) আমিনুল ইসলাম স্যার আমাকে পুলিশ সদর দপ্তরে ডেকে নিয়ে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছেন। এসবের চেয়ে আর বড় কিছু পাওয়ার নেই।

পুলিশে কাজ করে আগে কখনো পুরস্কার পেয়েছেন?

হেলাল উদ্দিন: ২০০৫ সালে কুমিল্লার নানুয়ার দীঘির পাড় এলাকার এক পুকুরে পানির মধ্যে রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ধস্তাধস্তির পর এক ধর্ষণ মামলার আসামি ধরেছিলাম। ওই সময় আমাকে আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। সাভারে যেদিন বাস থেকে ধারালো অস্ত্রধারীকে ধরি, পরের দিনই একজন অপহরণকারীকে নবীনগর এলাকা থেকে ধরে থানায় হস্তান্তর করেছি।

পুলিশে যোগ দেওয়ার উৎসাহ কে দিয়েছিলেন?

হেলাল উদ্দিন: আমার দাদি। তিনি বলেছিলেন, পুলিশে ঢুকতে হবে। তবে কাউকে বিপদে ফেলে টাকাপয়সা নেওয়া যাবে না। আমার আব্বা বলতেন তাঁর সম্মান রাখতে। আমি আল্লাহর রহমতে সাধারণ মানুষ যেভাবে চলে, যে টাকায় চলে, আমি সেভাবে চলতে চাই।

পরিবারে কে কে আছেন? বাড়ি কোথায়?

হেলাল উদ্দিন: বাবা বেঁচে আছেন। তবে অসুস্থ। দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে আমার সংসার। বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলায়।

ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে কোনো কষ্টকর দিক আছে?

হেলাল উদ্দিন: যাঁরা যানবাহন চালান, তাঁরা অনেক বেশি কষ্ট দেন। দেখা যায়, রাস্তা আটকে যাত্রী ওঠানামা করানো হয়। পেছনে রোগীবাহী আম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকে। সবারই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আবার ছুটি কম। পরিবারকে সময় দিতে পারি না।

প্রথম আলো: পুলিশ সম্পর্কে অনেকে নেতিবাচক ধারণাও পোষণ করেন। আপনি কী মনে করেন?

হেলাল উদ্দিন: আমাদের মধ্যে দু-চারজনের হয়তো টাকার লোভ আছে। কিন্তু এখন ইন্টারনেটের যুগ। ভাইরাল হয়ে গেলে সমাজে মুখ দেখানো যায় না। সন্তানের কাছে, স্ত্রীর কাছে, পরিবারের কাছে মুখ দেখানো যায় না। এই ভয় সবার মধ্যেই আছে। আমি মনে করি, আমাদের ভালো কাজগুলো জানলে মানুষের নেতিবাচক ধারণা কমবে।

Leave a Reply