ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা (৫টি রচনা) | Digital Bangladesh composition

ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা

ভূমিকা

আধুনিক এই তথ্য – প্রযুক্তির যুগে প্রতিদিন নতুন নতুন তত্ত্ব, তথ্য ও সত্য উদঘাটিত হচ্ছে , মানুষের জীবন এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর । সময়ের পরিবর্তন এসেছে । রাজনীতি , অর্থনীতি , জলবায়ুর পরিবর্তনসহ নানা কারণে দ্রুত বদলে যাচ্ছে বিশ্বপ্রেক্ষাপট । সেই সঙ্গে সােনার বাংলাদেশেও লেগেছে প্রযুক্তি নামের যাদুর কাঠির ছোঁয়া ।যার নাম  ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ’। এদেশের মানুষ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে । শুধু স্বপ্নই দেখছে না , স্বপ্ন ও বাস্তবতার আলােকে নানা কর্মকৌশল নির্ধারণ ও বাস্তবে তার প্রয়ােগ শুরু  করে দিয়েছে । ফলে , তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়ােগ ও অগ্রগতিতে সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ হবে একটি মডেল ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘােষণা||ডিজিটাল বাংলাদেশের ইতিহাস

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ১২ ডিসেম্বর ২০০৮ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘােষণা করে । দলের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন তার নির্বাচনী ইশতেহারে ঘােষণা করেন যে , বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হবে । একটি উন্নত  দেশ, একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ , একটি ডিজিটাল যুগের জনগােষ্ঠী , রূপান্তরিত উৎপাদন ব্যবস্থা , নতুন ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি সবমিলিয়ে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজগঠন — এই সপ্নটাই দেখিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা । নির্বাচনে জয়ী হবার পর আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের প্রতি অনড় থাকে ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ’ কী ? 

বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মঞ্চ থেকে ডিজিটাল  বাংলাদেশ গড়ার কথা উচ্চারিত হওয়ার পর থেকে দেশের বৃহত্তর জনগােষ্ঠী বিষয়টি বুঝার জন্য কৌতূহলী হয়ে  উঠেছে । তরুণ প্রজন্ম- যাদের চোখে আগামী দিনের নানা রঙের স্বপ্ন রয়েছে -দারুণভাবে আলােড়িত হয়েছে । তাদের স্বপ্নের পালে নতুন করে হাওয়া লেগেছে । ‘

ডিজিটাল বাংলাদেশের সংজ্ঞার্থ (Meaning from Definition):

ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে সেই সুখী , সমৃদ্ধ দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বৈষম্যহীন  জনগণের রাষ্ট্র , এবং যা প্রকৃতপক্ষেই সম্পূর্ণভাবে জনগণের রাষ্ট্র , যার মুখ্য চালিকাশক্তি ডিজিটাল প্রযুক্তি ।

ডিজিটাল বাংলাদেশের  স্বরপ ও বৈশিষ্ট্য 

ইন্টারনেটে পরিবেশিত তথ্যাবলি পর্যালােচনা করলে দেখা যায় যে , একটি ডিজিটাল দুনিয়া গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া সারাবিশ্বে একটি অবিশ্বাস্য গতিতে বিকশিত হচ্ছে । তথ্যযুগ বা ডিজিটাল যুগ যে নামেই আমরা ডাকি না কেন , কৃষি ও শিল্প যুগের পর মানব সভ্যতার জন্য আসা এ যুগের সার্বিক অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের একটি উন্নত দেশ হিসেবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের জীবনযাত্রার মান সর্বোচ্চ পর্যায়ে  নিয়ে যাওয়া এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর জীবনধারা গড়ে তুলে পুরাে জাতির জন্য একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য । এটি বাংলাদেশের জনগণের উন্নত জীবনের প্রত্যাশা স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা । এটি বাংলাদেশের সকল মানুষের ন্যূনতম মৌলিক প্রয়ােজন মেটানাের প্রকৃষ্ট পন্থা বাস্তবায়নের রূপকল্প। এটি বাংলাদেশের জন্য স্বল্পোন্নত বা দরিদ্র দেশ থেকে সমৃদ্ধ ও ধনী দেশে রূপান্তরের জন্য মাথাপিছু আয় বা জাতীয় আয় বাড়ানোর অঙ্গীকার । এটি বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সোপান।এটি হচ্ছে একুশ শতকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা।

ডিজিটাল বাংলাদেশ একটি সময়োপযােগী পদক্ষেপ

আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী  পালন করা হবে । ইতােমধ্যে দেশটি ওই সময় নাগাদ একটি ডিজিটাল রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের লক্ষ্য ঠিক করেছে । । বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশকে উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন দেশসমূহের কাতারে স্হাপনের লক্ষ্যমাত্রা একটি সঠিক সিদ্ধান্ত বলে  সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে ।

বাংলাদেশে যখন ডিজিটাল ব্যবস্থা নিয়ে আলাপ – আলোচনা চলছে সেই মুহুর্তে এ ব্যবস্থা বিশ্বকে একটি পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে । একবিংশ শতাব্দীতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইলেক্ট্রনিক সংসদ আমরা দেখতে পাব , যে সংসদ জটিল  কোনাে মুহূর্তে আইন প্রণয়নে ইলেকনিক গণভােটের সহায়তায় সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে । সুপারমার্কেটে যাওয়া ছাড়াই ইলেক্ট্রনিক শপিং – এর মাধ্যমে ৫০ % ভােক্তাদের বাড়িতে খাদ্য বা পণ্য পৌছে যাবে । উল্লেখ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির  বিশ্বব্যাপী উন্নতির সর্বশেষ পূর্বাভাসমূলক গবেষণা Karls – Tube – based Fraunhofer for System and Research ( ISI ) ফেডারে মিনিস্টি ফর এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ পক্ষে পরিচালিত হয় । এ থেকেই বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে , ২০১২  সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বে ৩o% , অফিস কর্মির ৫ কর্মদিবসের ২ দিন অফিস করবে বাড়িতে বসে । প্রতিদিন ও প্রত্যেকের জন্য সম্ভব না হলেও টেলিওয়ার্কিং আরাে সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হবে । মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তিও আমাদের দৈনন্দিন  জীবনে প্রবেশ করবে ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জাতীয় অগ্রাধিকার

ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম জাতীয় অঙ্গীকার হচ্ছে  ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করে দেশ থেকে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার প্রাতিষ্ঠাসহ ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করে জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা । ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য জাতীয় পর্যায়ে অবকাঠামােগত অগ্রাধিকার থাকতে হবে। সারাদেশের সকল ঘরে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারতে হবে । একই সঙ্গে প্রতিটি ঘরকে তার বা বেতার পদ্ধতিতে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় যুক্ত করতে হবে । এছাড়াও ,দেশের  সকল অঞ্চলের জনগণের প্রত্যেককে ডিজিটাল যন্ত্রে সজ্জিত করাসহ ডিজিটাল ডিভাইড দূর করা জাতীয় অগ্রাধিকার  হিসেবে গণ্য হবে । জনগণের নিজস্ব সংযুক্তি এবং সরকারের সঙ্গে জনগণের সংযুক্তির পাশাপাশি সরকারের ডিজিটাল  রূপান্তর , শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর ও ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরি করা এবং কৃষি – শিল্প ও ব্যবসায়ের রূপান্তর অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য হবে ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্য

ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য হচ্ছে এটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্তরে স্তরে এর অনুন্নত জীবনধারাকে বদলে দিয়ে বাংলাদেশের সমাজকে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রপান্তর করা। কার্যত এদেশের মানুষের জীবনযাপন , শিক্ষা , স্বাস্থ্য , ব্যবস্থাপনা , কার্যপদ্ধতি , শিল্প – বাণিজ ও উৎপাদন , অর্থনীতি , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন ধারা ও জনগণের সরকারসহ সমাজের সকল স্তরের  সব কাজকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর হল ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কিছু রাজনৈতিক লক্ষ্যও রয়েছে । সেইসব লক্ষ্যকে খুব সংক্ষেপে এভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে :

( ক ) জনগণের রাষ্ট্র : ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য হবে বাংলাদেশকে একটি জনগণের রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা । এই রাষ্ট্রটি হবে প্রকৃতপক্ষেই জনগণের । এই রূপরেখার ভিত্তি হচ্ছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ঘােষণা । এই রাষ্ট্রে ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণের উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পাশাপাশি মৌলিক মানবিক অধিকার সংরক্ষণসহ সকল সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার সকল প্রকারের  নিশ্চয়তা থাকবে । এই রাষ্ট্রের সকল স্তরে বৈষম্যহীনভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে এবং জনগণের কাছে এই প্রযুক্তি সহজলভ্য ও সুলত করা হবে ।

( খ ) মৌলিক চাহিদা রাষ্ট্রকেই পূরণ করতে হবে : রাষ্ট্রকে জনগণের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পুরণ , অন্ন – বস্ত্র বাসস্থান – শিক্ষা ও চিকিৎসার ন্যূনতম দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে । জনগণ যাতে তাদের জীবন জীবিকানির্বাহ করার মতো উপার্জন করতে সক্ষম হয় তার জন্য তাকে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শেখাতে হবে এবং সেই সঙ্গে প্রযুক্তি তার কাছে রাষ্ট্রকেই সহজলভ্য করতে হবে । দরিদ্র জনগণকে জ্ঞানকর্মী বা ডিজিটাল প্রযুক্তিকর্মী , মেধা ও জ্ঞানভিত্তিক শিল্প , বাণিজ্যসহ কৃষি , শিক্ষা , টেলিযােগাযোগ ইত্যাদি খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করতে হবে । সমাজে পেশীশক্তির প্রভাবের বদলে জ্ঞানশক্তির প্রভাব বিরাজ করবে । দারিদ্র্য দূর করা , জীবনমান উন্নত করা , সকল জনগণকে ডিজিটাল যুগের শিক্ষা প্রদান করা , সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং উন্নত আয়ের ডিজিটাল জীবনধারা প্রতিষ্ঠা করাসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রের বৈষম্য দূর করাসহ সকল ধরন ও প্রকারের ডিজিটাল ডিভাইড দূর  করতে হবে ।

( গ ) রাজনীতির ডিজিটাল ধারা :ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য হচ্ছে সরকার ও জাতীয় সংবাদসহ সকল রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ব্যবস্থা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত করা এবং রাজনীতির ডিজিটাল ধারা প্রতিষ্ঠা করা । জনগণ এই পদ্ধতিতে সাল সময়েই সংসদ, সরকার ও রাজনীতিতে ইন্টারএ্যাকটিভ পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ বলতে পারবে ।

ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মসূচি 

ডিজিটাল সরকার প্রতিষ্ঠা করে সরকারের কাজ করার পদ্ধতি ডিজিটাল করা এবং জনগণের দোরগোড়ায় সরকারের সেবা পৌঁছানো।এর মাঝে ডিজিটাল ভূমিব্যবস্থা , বিচার ব্যবস্থা, ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা,ডিজিটাল নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ সরকারের সকল কাজকে রূপান্তর করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মাঝে রয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করা। শিক্ষার বিষয়বস্তু এবং শিক্ষাদান পদ্ধতিতে রূপান্তর করা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার একটি অগ্রাধিকার। কৃষি শিল্প ও বাণিজ্য ব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর করে বিদ্যমান আর্থিক কাঠামোকে জ্ঞানভিত্তিক মেধাকেন্দ্রিক সৃজনশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য।২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে অর্থ ও শারীরিক শক্তির বদলে মেধা ও জ্ঞানের শক্তির প্রাধান্য  থাকবে। কৃষি ভিত্তিক একটি সমাজ থেকে বাংলাদেশে একটি সৃজনশীল ও মেধা ভিত্তিক শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হয়ে মানব সভ্যতার ডিজিটাল যুগে নেতৃত্ব দেবে। মানুষের বিদ্যমান কর্মসংস্থান কৃষিতে কমবে, শিল্পে বাড়বে এবং মেষাবধি শিল্প থেকেও অধিকতর হবে সেবাখাতে। জাতীয় আয়ের এর বৃহদাংশ আসবে মেধাজাত খাত থেকে।

অগ্রগতি

সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘােষণার প্রথম বছরে দৃঢ়তার সঙ্গে গড়ে তুলেছে এর প্রথম সােপান বা ভিত্তি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে পূর্ববর্তী সরকার দুটির সকল প্রকারের স্থবিরতা কাটিয়ে উঠে সরকার আইসিটি নীতিমালা অনুমােদন করেছে এবং সেটি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে । এর সঙ্গে ই – কমার্স  চালু করা , ডিজিটাল কৃষিপ্রযুক্তি চালুকরাসহ নানারকম পদক্ষেপ নিয়েছে।

See also  (৫টি রচনা) একটি ঝড়ের রাত রচনা / একটি ঝড়ের অভিজ্ঞতা রচনা

রপকল্প ( ভিশন ২০২১ ) অনুযায়ী কতিপয় লক্ষ্যমাত্রা

ভিশন ২০২১ অনুযায়ী কতিপয় লক্ষ্যমাত্রা নিচে দেওয়া হল:

( ১ ) ২০১০ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে নিট ভর্তির হার হবে  ১০০ % । ( ২ ) ২০১১ সালের মধ্যে দেশের সকল মানুষের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা ।
( ৩ ) ২০১২ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে ।
( ৪ ) ২০১৩ সালের মধ্যে প্রতিটি বাড়িকে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থায় আওতায় আনা হবে ।
( ৫ ) ২০১৩ সালে বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ৮ % ।
( ৬ ) ২০১৭ সালে এই হার ১০ % এ উন্নত করে অব্যাহত রাখা হবে । ( ৭ ) ২০১৩ সালে বাংলাদেশে বিদ্যুতের ব্যবহার হবে ৭ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০১৫ সালে ৮ হাজার মেগাওয়াট ।
( ৮ ) ২০২১ সাল নাগাদ দেশের বিদ্যুৎ ২০ হাজার মেগাওয়াট ধরে নিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে ।

( ৯ ) ২০২১ সালে জাতীয় আয়ের বর্তমান হিস্যা কৃষিতে ২২ ; শিল্পে ২৮ ও সেবা খাতে ৫০ % – এর পরিবর্তে হবে যথাক্রমে ১৫,৪০ এবং ৪৫ %।
(১০) ২০২১ সালে বেকারত্বের হার বর্তমান ৪০% থেকে ১৫ শতাংশে নেমে আসবে।
(১১)২০২১ সালে কৃষিখাতে শ্রমশক্তি ৪৮ % থেকে কমে দাঁড়াবে ৩০ % ।
( ১২ ) ২০২১ সাল নাগাদ বর্তমান দারিদ্রের হার ৪৫%  থেকে ১৫% নামবে।
(১৩)২০২১ সালের মধ্যে দেশের ৮৫ শতাংশ নাগরিকের মানসম্পন্ন পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করা হবে।
( ১৪ ) ২০২১ সালে তথ্য – প্রযুক্তিতে’ ডিজিটাল বাংলাদেশ ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ ।
( ১৫ ) ২০২১ সালের মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিদিন ন্যূনতম ২১২২ কিলাে ক্যালােরির উর্ধ্বে খাদ্য নিশ্চিত করা হবে ।
( ১৬ ) ২০২১ সালের মধ্যে সকল প্রকার সংক্রামক ব্যাধি সম্পূর্ণ নির্মূল করা হবে ।
( ১৭ ) 2021 সালে গড় আয়ুস্কাল ৭০ এর কোঠায় উন্নীত হবে । শিশু মৃত্যুর হার ৫৪ থেকে ১৫ % এ নামিয়ে আনা হবে ;

( ১৮ ) ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ – প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

একটি দেশকে ডিজিটাল রূপান্তরের অর্থ হলো তাকে একটি ইস্টেট  পরিবর্তন করা।  অর্থাৎ দেশটির শাসন ব্যবস্থা , শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষি ইত্যাদি পরিচালনায় কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে মােবাইল ফোন , ইন্টারনেট, কম্পিউটার, ই-লার্নিং, ই-গভর্নেন্স, ইত্যাদির সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তির অন্যতম অবদান হল ইন্টারনেট। দেশের প্রতিটি বিভাগ, জেলা, উপজেলা, গ্রামে তথ্যপ্রযুক্তির মহা প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।এর জন্য ছড়িয়ে দিতে হবে কম্পিউটারের সঙ্গে অনলাইন বা ইন্টারনেট। নেটওয়ার্ক সুবিধার জন্য প্রয়োজন চট্টগ্রামে এসে থেমে থাকা ফাইবার অপটিক ক্যাবলকে দেশের সর্বত্র অর্থাৎ জেলা, উপজেলা, গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে দেয়া, আর এটা সম্ভব ই-গভর্নমেন্ট এর মাধ্যমে।

ই-গভর্নমেন্ট হচ্ছে সেই সরকার ব্যবস্থা যার মাধ্যমে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছ এবং শ্রদ্ধাশীল থাকবে জনসংশ্লিষ্ট গণতন্ত্রের প্রতি।জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অস্বচ্ছ সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুমােদন উন্মুক্ত সরকার বা ই-গভর্নমেন্টের  নেই । ই – গভর্নমেন্ট এমন এক ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা যার মাধ্যমে সরকারের সব কাজে জনগণ অংশগ্রহণ করতে পারবে।সরকারি কর্মকাণ্ডে গােপন অনুশীলন বন্ধ করার জন্য আইসিটির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে । রেকর্ড থেকে শুরু করে সরকারি সব অফিস আদালতের সর্বক্ষেত্রে যদি তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়, অর্থাৎ ই-গভর্নেন্স চালু করা যায় তাহলে দুর্নীতির ফাঁকফোকর অনেকাংশে কমে আসবে । আগের চেয়ে স্বচ্ছতা ও । দিহিতা আসবে । এই সমস্ত কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সফটওয়্যার শিল্পটি পৃষ্ঠপােষকতা পাওয়া স্বাভাবিক হবে। বাংলাদেশও সফটওয়্যার রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে । দেশের শিক্ষিত বেকাররা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে । মাথাপিছু আয় বাড়বে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে । দূরত্বকে জয় করে সেবা মানুষের দোরগােড়ায় পৌছে দেয়ার জন্যই  ই – গভর্নেন্স ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা ২

মোস্তাফা জব্বার, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী : ২০২০ সালে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার একযুগ বা ১২ বছর পার করলাম। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘোষণা প্রদান করেন। সেই ঘোষণাটি এখন বস্তুত আমাদের রাষ্ট্রস্বত্ত্বার অংশ।

২০১৭ সালে এই দিনটি দিনটি তথ্যপ্রযুক্তি দিবস হিসেবে পালন করার সরকারি সিদ্ধান্ত হয় এবং তা পালিত হয়। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর মন্ত্রীসভা আমাদের প্রস্তাবে এর নাম পরিবর্তন করে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস হিসেবে পরিবর্তন করে। সেই মোতাবেক গত ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস পালিত হয়।

২০১৮ সালে ডাক, টেলি যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে পালিত এই দিনটির প্রতিপাদ্য ছিলো “ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা”।

জাতীয় নির্বাচনের নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে চলার জন্য দিনটির অনেক আয়োজন অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। ঢাকাসহ দেশব্যাপী র‌্যালী আয়োজিত হতে পারেনি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত দিবসটির উদ্বোধন করেন। তার সাথে আমি এবং স্থপতি ইয়াফেস ওসমানসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলাম। দিনটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো ডিজিটাল বাংলাদেশ এর ১১তম জন্মদিনে ১১টি ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্মাননা প্রদান। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, জনাব এইচটি ইমাম, সজীব ওয়াজেদ জয়, মোস্তাফা জব্বার, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, নূহ উল আলম লেনিন, বিটিআরসি, এটুআই, হাইটেক পার্ক, ডিএমপি ও ওয়ালটনকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। পুরষ্কারপ্রাপ্তদের প্রায় সবাই ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার স্বপ্নের প্রথম সিড়িতে পা রাখা মানুষ। ২০১৯ সালে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের পাশাপাশি ডাক ও টেলি যোগাযোগ বিভাগ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিভাগ উদযাপন করেছে। ২০২০ সালেও করোনার মাঝে ডাক ও টেলি যোগাযোগ বিভাগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ দিনটি সীমিতভাবে পালন করে। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তর: বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তর, তার জন্য প্রণীত নীতিমালা, আমাদের অর্জন ইত্যাদি ছাড়াও আমি নিজে বিষয়টি একটু ভিন্ন মাত্রায় দেখতে চাই। বস্তুত আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রযুক্তি ও জীবনধারায় পেছনে থাকার বদলে দুনিয়াকে ডিজিটাল যুগে নেতৃত্ত দেয়া। আমাদের জন্য স্বপ্ন হচ্ছে ২০২০ সালের মুজিব বর্ষ, ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, ২০৩০ সালে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা ও ২০৪১ সালের সুখী সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশের স্বপ্ন, এমনকি ২১০০ সালের বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।

এখনকার সময়ে অবস্থান করে ২১০০তো দূরের কথা ৪১ সালের অবস্থাটি আমাদের জন্য আন্দাজ করাও দুরুহ। এমনকি ২১ সালে আমরা কেমন পৃথিবীতে বাস করবো সেটিও এখনই অনুমান করা কঠিন। তবুও আমরা কিছু মৌলিক ও কৌশলগত বিষয় চিহ্নিত করে একটি কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি করছি। বলার অপেক্ষা রাখেনা এর সবই পরিবর্তনশীল। ২১, ৩০, ৪১ ও ২১০০ এর লক্ষ্যটা স্থির রেখে সময়ে সময়ে এর আনুসঙ্গিক বিষয়াদি আপডেট করতে হচ্ছে। যেসব মৌলিক উপাদান আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবে সেগুলোর মাঝে রয়েছে দেশের সকল মানুষের জন্য ডিজিটাল সংযুক্তি, ডিজিটাল যুগের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন, ডিজিটাল সরকার প্রতিষ্ঠা ও ডিজিটাল শিল্পখাতের বিকাশ কিংবা ডিজিটাল জীবনধারা গড়ে তোলা। আমরা মনে করি এই স্বপ্নগুলো পূরণ হলে আমাদের জনগণ একটি ডিজিটাল জীবনধারায় বসবাস করবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ যে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বা সৃজনশীল অর্থনীতি গড়ে তোলার প্লাটফরম রচনা করবে সেটিও আমরা ভাবছি। আমরা দেশটিকে ডিজিটাল শিল্পবিপ্লব, সৃজনশীল অর্থনীতি, মেধাভিত্তিক শিল্পযুগ বা সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অন্তত তিনটি সময়কালের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছি।

See also  (৪টি রচনা) একটি নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

২১ সালে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছি বলেই রূপকল্প ২০২১ নির্ধারণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে আমরা স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরকে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকীর সাথে যুক্ত করেছি বলে আমাদের সার্বিক স্বপ্নটি ২০২০-২১ সালকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। সেই সময়কে কেন্দ্র করে আমাদের যাত্রাপথও আমরা চিহ্নিত করেছি। সেই পথচলা আমাদের অব্যাহত রয়েছে। তবে এখন সময় হয়েছে একুশ সালের পরের ভাবনাও ভাববার। বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে বিশ্বসভ্যতার আগামীর আকাক্সক্ষা, প্রযুক্তির অসাধারণ অগ্রগতি ও বিকাশ এবং সামগ্রিকভাবে মানব সভ্যতার ডিজিটাল রূপান্তর আমাদেরকে সামগ্রিক প্রেক্ষিতটাই নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।

ক) এক যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্জনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ :

১) ২০২১ সালে গড়ে তোলার ডিজিটাল বাংলাদেশ তার আগেই সুষ্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। বিশেষত করোনাকালে সারা দেশের সকল স্তুরের মানুষ ডিজিটাইজসনের সুবিধাসমূহ কাজে লাগিয়ে জীবন সচল রেখেছে। আমরা এখন হয়তো ভাবতেই পারছিনা যে ডিজিটাল প্রযুক্তি না থাকলে আমাদের সকল স্তরের জীবন ধারণ কেমন হতো।

২) ৩-জি মোবাইল প্রযুক্তির পর দেশে ৪-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার বিস্তৃত হয়েছে। মোবাইল প্রযুক্তিকে আরও সুরক্ষিত করতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধিত হয়েছে। সহসাই এনইআইআর চালু করে সিম ও মোবাইল সেট ব্যবস্থাপনা পূর্ণাঙ্গভাবে ডিজিটাল করা হচ্ছে।

৩) ৫ হাজার ৭৩৭টি ডিজিটাল সেন্টার এবং ৮২০০ ডিজিটাল ডাকঘরের মাধ্যমে জনগণকে ৬০০ এরও বেশি ধরনের ডিজিটাল সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

৪) ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অপটিকেল ফাইবার সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

৫) প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল, হাওর, বিল চর, পাহাড়ি, উপকূলীয় ও দ্বীপ এলাকায় মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হচ্ছে।

৬) দেশে মোবাইল সিম গ্রাহক ১৭ কোটির ওপরে । ইন্টারনেট গ্রাহক ১১ কোটিতে পৌছেছে।

৭) ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল ‘তথ্য বাতায়ন’ চালু করা হয়েছে যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছে।

৮) সারাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের পাশাপাশি স্মার্টকার্ড প্রদান করা হয়েছে।

৯) মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট চালু করা হয়েছে। এরপর ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে।

১০) ডিজিটাল অপরাধ দমনে ও ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। এটির প্রয়োগও করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি স্থাপিত হয়েছে ।

১১) মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে মহাকাশ বিজ্ঞানের যুগে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর প্রকৃতি নির্ধারণের পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে।

১২) লার্নিং আর্নিং, শি পাওয়ার, হাইটেক পার্ক, বিসিসি, বিআইটিএম, এলআইসিটি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় প্রশিক্ষণ দিয়ে লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীকে ডিজিটাল যুগের উপযোগী মানব সম্পদে পরিণত করা হয়েছে ও কর্মসংস্থান করা হয়েছে। এটি অব্যাহত চলমান প্রক্রিয়া

১৩) তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মাত্র ২৬ লক্ষ ডলারের রপ্তানী এখন ১ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। ডিজিটাল শিল্পখাতকে কর সহায়তা ও নগদ সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

১৪) দেশে ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন ও রপ্তানী শুরু হয়েছে। মোবাইল ফোনের বাজারের শতকরা ৫২ ভাগ দেশে উৎপাদিত হয়। মোবাইল ও ল্যাপটপ রপ্তানী হয় ।

১৫) ডিজিটাল-কমার্স নীতিমালা ১৮, জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা ২০১৮ ও জাতীয় টেলিকম নীতিমালা ২০১৮ প্রণীত হয়েছে। মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি গাইডলাইন, সিগনিফিকেন্ট মার্কেট প্লেয়ার গাইডলাইন, ইনফ্রাস্ট্রাকচার গাইডলাইন, কোয়ালিটি অব সার্ভিস গাইডলাইন, আইএসপিএবি গাইডলাইন প্রণীত হয়েছে। টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এর অনুসারে টাওয়ার তৈরি শুরু হয়েছে।

১৬) ফোর টায়ার ডাটা সেন্টার চালু হয়েছে।

১৭) সি-মি-উই-৬ এর সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। প্রকল্পটিও অনুমোদিত হয়েছে। ২৪ সালে সেটি চালু হবে।

১৮) ডিজিটাল শিল্পযুগের ৫টি প্রযুক্তির কৌশলপত্র প্রণীত হয়েছে।

খ) ২৪-এর লক্ষ্যমাত্রা :

১) ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০২০ সালের মুজিব বর্ষ, ২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও ২০৩০ সালের এসডিজি, ৪১ সালের জ্ঞানভিত্তিক সমাজের লক্ষ্য পূরণ এবং ২১০০ সালের বদ্বীপ পরিকল্পনার পথে এগিয়ে যাওয়া।

২) ২০২১-২৩ সালের মাঝে ফাইভ-জী চালু করা। দেশের প্রতিটি মানুষকে ৪জির আওতায় আনা। ৫জির সূচনা ও সম্প্রসারণ। ফাইভ জির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানো। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রেবোটিক্স, বিগ ডাটা, ব্লক চেইন, আইওটিসহ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানো। ৩) ই পাসপোর্ট এবং ই-ভিসা চালু করা ।

৪) সরকারের সম্পূর্ণ ডিজিটাল রূপান্তর করা ও সরকারের সকল সেবা জনগণের হাতের নাগালে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পৌছানো।

৫) শিক্ষার সম্পূর্ণ ডিজিটাল রূপান্তর। শিক্ষার সকল কনটেন্ট ডিজিটাল করা, ডিজিটাল ক্লাশরুম, ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা ছাড়াও প্রাথমিক স্তরসহ সকল স্তরের শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেয়া। প্রাথমিক স্তরসহ সকল স্তরে প্রোগ্রামিং ও তথ্যপ্রযুক্তি অবশ্যপাঠ্য করা।

৬) অর্থনীতি সম্পূর্ণ ডিজিটাল করা। সৃজনশীল-জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশ ঘটানো।

৭) শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল যুগের উপযোগী মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া ও দেশ বিদেশে কর্মসংস্থান করা।

৮) প্রতিটি বাড়ি ও প্রতিটি মানুষকে সংযুক্তির আওতায় আনা। দ্বীপ, ছিটমহল, হাওর, পাহাড় ও পার্বত্য অঞ্চলসহ সর্বত্র সকল মানুষের জন্য ডিজিটাল সংযোগ প্রদান করা।

৯) টেলিকম আইন, আইএলটিডিএস নীতিমালাসহ সকল নীতিমালা আপডেট ও প্রয়োজনীয় আইন, নীতিমালা গাইডলাইন প্রণয়ন।

১০) তথ্যপ্রযুক্তির সফটওয়্যার, সেবা ও ডিজিটাল যন্ত্রের রপ্তানী ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা।

১১) দেশে ডিজিটাল পণ্যসহ সকল উচ্চপ্রযুক্তির পণ্য উপাদনের জন্য সকল সহায়ক ব্যবস্থা নেয়া।

১২) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ২ উৎক্ষেপণ এবং সাবমেরিন ক্যাবল ৩ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া।

১৩) একটি পরিচিতি নাম্বারের আওতায় প্রতিটি নাগরিকের পরিচিতি নিশ্চিত করাসহ সরকারের সকল সেবা সমন্বিত করা।

১৪) সামরিক বাহিনী, আইন শৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনীসহ সকলকে ডিজিটাল সক্ষমতা প্রদান করা এবং জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও ডিজিটাল যুদ্ধ মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করা হবে।

১৫) সকল নাগরিকের ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধান করা। নগর ও গ্রামগুলোকে ডিজিটাল নগর ও ডিজিটাল গ্রামে পরিণত করা । এমনকি দ্বীপ ও হাওরকেও ডিজিটাল করা।

১৬) কৃষি-শিল্প, বাণিজ্য, জ্বালানী ও বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসহ জীবনের সকল খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগ করা। এজন্য সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা।

১৭) ডিজিটাল-কমার্স নীতিমালা, জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা ১৮ এবং টেলিকম নীতিমালা ১৮ বাস্তবায়ন।

১৮) তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল চালু করা।

ডিজিটাল বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ : আমি মনে করি ২০২১ সালের পরবর্তী জ্ঞানভিত্তিক সমাজ, ডিজিটাল শিল্প বিপ্লবের দেশ বা উন্নত বাংলাদেশ কিংবা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন হবে দেশটির সম্পূর্ণ ডিজিটাল রূপান্তর। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে এখন থেকে সমাজ-সভ্যতার অগ্রগতির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো ডিজিটাল প্রযুক্তি। আমরা এই প্রযুক্তির সমষ্টিকে ডিজিটাল শিল্প বিপ্লব, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, সোসাইটী ৫.০, ৫জি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, ব্লক চেইন, বিগডাটা বা অন্য যে কোন নাম বা প্রযুক্তি হিসেবেই চিনিনা কেন সকল অগ্রগতির প্রাথমিক নিয়ামক হচ্ছে ডিজিটাল রূপান্তর। বাংলাদেশের এই ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য আপাতত আমাদেরকে কয়েকটি বড় কৌশল নিয়ে কাজ করতে হবে। বর্তমানের ভাবনায় এসব কৌশল আমাদেরকে ২০২০-২১ সাল পার করে দিতে পারে। তবে নতুন প্রেক্ষিত ও নতুন প্রযুক্তির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য এই চ্যালেঞ্জগুলোকে পরিবর্তনশীল করতে হবেই।

আমাদের আপাত চ্যালেঞ্জগুলোগুলো হলো ১) শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর ও ডিজিটাল দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদ উন্নয়ন, ২) সরকারের ডিজিটাল রূপান্তর ও জনগণের সকল সেবা ডিজিটালকরণ ও তাদের হাতের নাগালে পৌছানো ৩) শিল্প-বাণিজ্য তথা অর্থনীতির ডিজিটাল রূপান্তর ৪) ডিজিটাল সংযুক্তি ৫) ডিজিটাল জীবনধারা এবং বাংলাদেশকে জন্মের প্রতিজ্ঞায় স্থাপন করা।

প্রথম, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে ডিজিটাল শিল্পবিপ্লব বা জ্ঞানভিত্তিক সমাজের উপযোগী মানব সম্পদ সৃষ্টি নিয়ে। আমরা এজন্য শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। অতি সাধারণভাবেও যদি আমরা এই বিষয়টি পর্যালোচনা করি তবে দেখতে পাবো যে শিক্ষার বিষয়টি এখনও ঔপনিবেশিক স্তরেই রয়ে গেছে। এর পাঠদান পদ্ধতি, পাঠক্রম, শিক্ষক প্রশিক্ষণ সকল ক্ষেত্রেই যুগান্তকারী রূপান্তর দরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশ এই ভাবনাটিই এই খাতে প্রতিফলিত হয়নি। যদিও ২০২৩ সাল থেকে শিক্ষার পরিবর্তনের কথা আমরা বলছি তবুও বিশেষে করে যে খাতটির বিশেষজ্ঞরাই ডিজিটাল রূপান্তরের বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেন না তারা কতোটা সামনে দেখতে পাবেন সেই শঙ্কাতো রয়েই গেছে।

পরের চ্যালেঞ্জটি হলো সরকারের ডিজিটাল রূপান্তর বা একটি ডিজিটাল সরকার প্রতিষ্ঠা বিষয়ক। এর আওতায় সরকার পরিচালনা পদ্ধতি ডিজিটাল করা ছাড়াও জনগণের কাছে সকল সংস্থার সকল সেবাকে ডিজিটাল উপায়ে উপস্থাপন করার বিষয়টিও রয়েছে।

See also  (৫টি রচনা) আমার প্রিয় খেলা রচনা

তৃতীয় চ্যালেঞ্জটি মূলত শিল্প-বাণিজ্য ও অর্থনীতির ডিজিটাল রূপান্তর। শিল্প-কল-কারখানা-ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনীতির সকল ধারার ডিজিটাল রূপান্তর এর প্রধান উদ্দেশ্য। সামগ্রিকভাবে এর উদ্দেশ্য একটি ডিজিটাল, সৃজনশীল বা জ্ঞানভিত্তিক অর্র্থনীতিও গড়ে তোলা।

চতুর্থ চ্যালেঞ্জটি হলো জনগণকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংযুক্ত করা।

পঞ্চম চ্যালেঞ্জটি হলো চারটি চ্যালেঞ্জের সম্মিলিত রূপ যা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার আদর্শিক স্বপ্নপূরণ বা একটি পরিপূর্ণ ডিজিটাল-জ্ঞানভিত্তিক সাম্য সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণ। একই সাথে একটি ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা ও সাম্প্রদায়িক চেতনার বিপরীতে একটি আধুনিক ভাষাভিত্তিক জাতি রাষ্ট্র পূর্ণাঙ্গভাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন এটি।

ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা ৩

  • ডিজিটাল বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
  • ডিজিটাল বাংলাদেশের পূর্বশর্ত
  • অনলাইনের সুবিধাসমূহ
  • ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জন ও বাস্তবতা
  • ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ
  • উপসংহার

ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা

ভূমিকা:

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হবে ২০২১ সালে। এই সালকে ঘিরে বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। যার মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পদক্ষেপটি অন্যতম। উন্নত দেশসমূহের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্যে এটি একটি সময়ােচিত পদক্ষেপ। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশই জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশকেও এর থেকে বাইরে থাকলে চলবে না। কিন্তু একটি দেশকে ডিজিটাল দেশে রূপান্তর করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন সহজ নয়।

আমাদের বিদ্যালয় রচনা (4টি রচনা) | OUR SCHOOL

“ডিজিটাল বাংলাদেশ’–এর অর্থ:

ইন্টারনেটের সুফল সমাজের সকল স্তরে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে একটি সমাজ বা দেশকে ডিজিটাল করা যেতে পারে। “ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কী এ বিষয়কে বুঝতে হলে আমাদের আগেই জানতে হবে একটি দেশ কীভাবে ডিজিটাল দেশে পরিণত হতে পারে। একটি দেশকে তখনই ডিজিটাল দেশ (Digital Country) বলা যাবে যখন ওই দেশ ই-স্টেট (e-state)-এ পরিণত হবে। অর্থাৎ ওই দেশের যাবতীয় কার্যাবলি যেমন সরকার ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি প্রভৃতি কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:

২০০৮ সালে সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর নির্বাচনি ইশতেহারে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার । ফলে একটা বিশাল সংখ্যক তরুণ ভােটার তাদেরকে ভােট দিয়েছে । এখন যদি সরকার বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে, তবে বাংলাদেশের মানুষের জন্যে তা হবে আর্শীবাদ স্বরূপ আশার কথা এই যে, বর্তমান সরকার তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তি (Information Communication Technology বা সংক্ষেপে ICT) উন্নয়নকে মৌলিক ইস্যু হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের পূর্বশর্ত:

একটি ডিজিটাল সমাজ নিশ্চিত করবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। যেখানে সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকাণ্ডে পর্যাপ্ত অনলাইন প্রযুক্তির প্রয়ােগ ঘটবে । তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ নিশ্চয়তা দেবে দ্রুত ও কার্যকর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি সুশাসিত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার । এক্ষেত্রে শক্তিশালী তথ্যপ্রযুক্তি কাঠামাে মূলভিত্তি কঠিন বাস্তবতাকে অতিক্রম করে বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ করতে গেলে এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিশেষ নজর দিতে হবে। যেমন—

বৃত্তিমূলক বা কর্মমুখী শিক্ষা রচনা | Vocational education (৫টি রচনা)

১. শিক্ষা:

বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়ছে । এই হারকে আরও বাড়িয়ে নিরক্ষরতার হারকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। কেননা শিক্ষিত মানুষ ছাড়া ডিজিটাল শব্দটি অর্থপূর্ণ হবে না। কেননা অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে প্রযুক্তি তুলে দিয়ে গণমানুষকে তার আওতায় আনা না গেলে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া স্বপ্নই থেকে যাবে।

২. বিদ্যুৎ ঘাটতি:

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২০০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এতে প্রায় ১৩% বিদ্যুৎ ঘাটতির মুখােমুখি হতে হয়। একটি পরিপূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তি কাঠামাে গড়ে ওঠার জন্যে যথাযথ বিদ্যুতের ব্যবহার একান্ত প্রয়ােজন। সেক্ষেত্রে বিদ্যুত ঘাটতি কমাতে হবে।

৩.নেটওয়ার্ক-কাঠামােউন্নয়ন:

ঢাকার বাইরে এখনও পর্যন্ত খুবই কমসংখ্যক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কাঠামাের আওতায় আসতে পেরেছে।
ঢাকা শহরের বাইরের কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করে তথ্য পাওয়া গেছে যে, বেশিরভাগ LAN (লেন) ঢাকাকেন্দ্রিক। এই পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের পার্থক্যকে প্রতীয়মান করে।

৪. ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্প্রসারণ:

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের জন্যে একটি দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলাের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান সব থেকে খারাপ। সর্বশেষ ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী জনসংখ্যার হিসেবে ইন্টারনেট বতি একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান পাঁচ নম্বরে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাত্র ১৩% প্রকৃত ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। অবশ্য সরকারি হিসেবে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৭০ লাখ যা মােট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ।

৫. ইংরেজি শিক্ষার হার বৃদ্ধি:

বাংলাদেশে ইংরেজিতে শিক্ষিতের হার এক শতাংশের কম যেখানে ভারত ও পাকিস্তানে এর পরিমাণ যথাক্রমে প্রায় ৬০ এবং ২০ শতাংশ। মূলত ইংরেজি ভাষা তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারকে ত্বরান্বিত করছে। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আমরা প্রয়ােজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারিনি। এজন্যেই আমাদের দেশে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন করতে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।

৬. সমুদ্রের তলদেশের সাবমেরিন ক্যাবল সংযােগ:

২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সুপার হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমুদ্র তলদেশের সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কিন্তু একটি মাত্র সাবমেরিন ক্যাবল প্রায়শই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তবে আশার কথা হলাে, সম্প্রতি SEA-ME-WE5 সাবমেরিন ক্যাবলে বাংলাদেশ যুক্ত হতে পেরেছে। এর কার্যক্রম শুরু হলে দেশের ইন্টারনেট আরও সহজলভ্য হবে আশা করা যায়।

শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতা 2021 || ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি রচনা | শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু শব্দ সংখ্যা 800

৭.ভাষান্তর:

কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংক্রান্ত বিষয় ও ধারণাগুলাে বাংলায় ভাষান্তর করতে হবে। যাতে অল্পশিক্ষিত মানুষ ও এসব কার্যক্রম চালাতে পারে ।

এ ছাড়াও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। তবে উপরিউক্ত বিষয়গুলাে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে।

অনলাইনের সুবিধাসমূহ:

বাংলাদেশের মানবসম্পদ যত বেশি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ছে, ততই অনলাইনের গুরুত্ব বাড়ছে। গ্লোবাল ভিলেজের আজকের এই দিনে পৃথিবীর মানুষ ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে প্রয়ােজনীয় যাবতীয় কাজ সমাধান করছে। অনলাইনের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা বর্তমানে ঘরে বসেই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে। পৃথিবীর বিভিন্ন তথ্য সহজেই পেয়ে যাচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে । চাকরিপ্রার্থীরা খুব সহজেই ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরির আবেদন করছে। অনলাইন ব্যাংকিং চালু হওয়ার ফলে এখন গ্রাহক যেকোনাে ব্যাংক থেকেই টাকা জমাদান, উত্তোলন, বিল পরিশােধ ইত্যাদি কাজ ঘরে বসেই করতে পারছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জন ও বাস্তবতা:

বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির দুত প্রসারের ফলে বাংলাদেশ ইতােমধ্যে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যােগাযােগ স্থাপন করেছে। আজ তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য মােবাইল ফোনের ক্রমবর্ধিত ব্যবহার। এটি বাংলাদেশের যােগাযােগ মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন অনেক কম। দেরিতে হলেও বাংলাদেশ SEA-ME-WE4 35 সাবমেরিন ফাইবার অপটিক ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তবে শহরের কিছু উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযােগ পাচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ জনগণই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযােগ থেকে বর্ণিত। বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপে গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে ইন্টারনেট ব্যবহারকে অবশ্যই সবার জন্য সহজলভ্য করতে হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ:

ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই বিশাল কর্মপদ্ধতি চালানাের জন্যে অনেকগুলাে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একসঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে । নিচে বিষয়গুলাে তুলে ধরা হলাে-

১. ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করতে গেলে আমাদের উন্নয়নের একটি বিজ্ঞানসম্মত নকশা তৈরি করতে হবে। এ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমেই ‘e-readiness’ প্লান তৈরি করে তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী মানবশক্তি তৈরি করতে হবে।
২. ইন্টারনেট কাঠামাের উন্নয়ন ও ইন্টারনেটের ব্যয় সাধারণের সীমার মধ্যে এনে জনগণের জন্যে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সরকারি, আধাসরকারি ও বেসরকারি কাজে ইন্টারনেট ব্যবহারে স্বচ্ছতা আনতে হবে যা বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজড় করতে সহযােগিতা করবে ।
8. জনগণকে পরিবর্তনশীল মানসিকতার পরিচয় দিতে হবে এবং সরকারের পাশাপাশি বিরােধী দলসমূহকেও মানুষের পাশে দাড়াতে হবে।
৫. গ্রাম ও শহর অঞ্চলের মধ্যে একটি ভালাে যােগাযােগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
৬. বাংলাদেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত ও সহজলভ্য করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলােকে তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে সাজাতে হবে।

উপসংহার:

বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে বাংলাদেশকে অবশ্যই তথ্যপ্রযুক্তিকেন্দ্রিক জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থার প্রচলন নিশ্চিত করতে হবে। এ স্বপ্নকেই ধারণ করছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হবে— এটি সকলেরই আশা। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় ভূমিকা রাখতে হবে ।

আজকে আপনাদের কে ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা দিয়েছি আশা করি আপনাদের অনেক উপকার হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা ২০২2, ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা ২০২১, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা, ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা ২০২০, ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা ১৫০ শব্দ, ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা ২৫০ শব্দের, ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে কী বুঝ ডিজিটাল, বাংলাদেশ রচনা ssc ডিজিটাল বাংলাদেশ ছোট অনুচ্ছেদ

Leave a Reply