রাশিয়ার নাগরিক কৃষক ফিওদর ভাসিলিয়েভের প্রথম স্ত্রী ভ্যালেন্টিনা ভাসিলিয়েভ। রাশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর শুয়াতে ১৭০৭ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মোট ৬৯ সন্তানের জন্মম দিয়েছিলেন। জীবনে ২৭বার গর্ভবতী হয়েছিলেন তিনি। জীবনের প্রায় ৪০ বছর তিনি গর্ভবতী চ্ছিলেন। তিনিই বিশ্বের একমাত্র নারী যিনি এতগুলো সন্তান জন্ম দিয়েছেন। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সন্তান জন্মদানকারী নারীর স্বীকৃতিও দিয়েছে। ১৭২৫ সাল থেকে ১৭৬৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৪০ বছর তিনি গর্ভধারণ করেই কাটিয়েছেন। তিনি একসঙ্গে ৪ সন্তান ৪ বার, একসঙ্গে ৩ সন্তান ৭ বার, যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন ১৬ বার। ৬৯ জন জন্ম দেওয়া শিশুর মধ্যে ২ জন ছোটবেলায়ই মারা যায়। তবে বাকি ৬৭ জন সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে ছিল।
মিসেস ভ্যাসিলিভের সন্তান জন্মের বিস্ময়কর এই সংখ্যা ১৭৮২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নিকোলস্কের ‘মনাস্ট্রি ম্যাগাজিনে’ প্রথম প্রকাশিত হয়। যদিও এই খবর খুব একটা প্রচার হয়নি সেসময়। একদল সন্ন্যাসী ‘মনাস্ট্রি ম্যাগাজিনে’ রিপোর্টটি পাঠিয়েছিলেন। তবে ১৭৮৩ সালে ‘জেন্টলম্যানস ম্যাগাজিনে’ রিপোর্টটি প্রকাশের পর পুরো পশ্চিমা বিশ্বে সারা ফেলে দেয়। সেন্ট পিটার্সবার্গে বাণিজ্য করতে যাওয়া এক বণিক ‘জেন্টলম্যানস ম্যাগাজিন’ নামে এক ম্যাগাজিন পত্রিকায় চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
আমেরিকার ‘ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার’ এর তথ্য অনুসারে, একটি আমেরিকান পরিবারের একজন সন্তানকে লালন-পালন করার জন্য প্রত্যাশিত গড় খরচ হলো প্রায় ২ লাখ ৩৩ হাজার ৬১০ ডলার। এই গবেষণা সংস্থাটি ১৯৬০ সাল থেকে এই বিষয়ে গবেষণা করে তথ্য প্রদান করে আসছে। সেই হিসেবে বেঁচে থাকা শিশুরা বর্তমানে জন্মালে খরচ লাগতো প্রায় দেড় কোটি ডলারের বেশি।
ঘুরতে নিয়ে ধর্ষণ করল প্রেমিক ও তার বন্ধু, সাহায্য চেয়ে ফের দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার
নারী হিসেবে মিসেস ভাসিলিয়েভ অত্যন্ত শক্তিশালী একজন নারী ছিলেন। সে সময় নারীর সন্তান জন্মহারের মৃত্যু হার ছিলো খুবই বেশি। আর চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ছিলো যা তা। তারপরেও এতোগুলা সন্তান জন্ম দিয়েও তিনি দীর্ঘকাল বেঁচে ছিলেন।
কিছুদিন আগে উগান্ডার এক নারী ৪৪ সন্তানের জন্ম দিয়ে বিশ্বে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। মরিয়ম নাবাতানজি নামের ওই নারী মাত্র ৪০ বছর বয়সে হয়েছেন ৪৪ সন্তানের মা। তার বয়স যখন ২৩ বছর তখন তিনি ২৫ সন্তানের জননী হয়ে গিয়েছিলেন। তার ৬টি সন্তান মারা গিয়েছে। তবে সুস্থভাবেই বেঁচে আছে বাকি ৩৮টি সন্তান। এদের মধ্যে ২০ জন ছেলে ও ১৮ জন মেয়ে।
গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের কাছ থেকে বিশ্বরেকর্ডের স্বীকৃতিও মিলেছে মরিয়মের। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড তাদেরকে ‘সর্বকালের সর্বকালের সর্বজনীন মা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে, এর অর্থ হল তারা তাদের ঘন ঘন গর্ভধারণের পরেও মাতৃমৃত্যু থেকে বেঁচে থাকার ভাগ্যবান বিভাগে রয়েছে।
সারাবিশ্বে যেখানে নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ গর্ভকালীন সময় ও সন্তান প্রসবকালীন সময়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সিডিসি রেকর্ড করে যে প্রতি ১ লাখের মধ্যে মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর হার ২৩.৮ শতাংশ। শ্বেতাঙ্গ ও হিস্পানিক নারীদের তুলনায় কালো নারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর ঝুঁকি ২.৯ গুণ বেশি। সেখানে সুস্থ অবস্থায় এতগুলো সন্তানের জন্য দিয়েছেন এই দুই নারী। এবং তারাও শারীরিকভাবে একেবারেই সুস্থ ছিলেন সন্তান পরবর্তী সময়ে।
তবে ফিওদর ভ্যাসিলিয়েভের দ্বিতীয় স্ত্রী জন্ম দিয়েছিলেন মোট ১৮টি সন্তানের। এর মধ্যে জমজ সন্তান ৬ বার, ৩টি করে সন্তান জন্ম দেন ২ বার। এতে ফিওদর ভ্যাসিলিয়েভের সন্তানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৮৭ জনে। তবে এদের জন্মতারিখ, নাম, মৃত্যুর তারিখ সবই অজানা।
রাতের ঢাকায় লাঠি, রড হাতে চাঁদাবাজি
রাশিয়ান সাম্রাজ্যের সামন্তবাদী সমাজে সেসময় বেশি সন্তান জন্ম দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। বিশেষ করে কৃষক পরিবারগুলোতে। কারণ সেসময় প্রচলিত ছিল দাস প্রথার। অর্থাৎ একটি কৃষক পরিবারে যত বেশি সন্তান থাকবে ততই তাদের জন্য লাভ। একদিকে সন্তানদের রাজ্যের দাসের কাজ করার জন্য ধরে নিয়ে যাবে রাজার লোক। অন্যদিকে বাকিরা পরিবারের খাবার জোগাড় করতে কাজ করতে পারবে।
ভ্যালেন্টিনা ভাসিলিয়েভ ১৭৮২ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। জীবদ্দশায় এতগুলো সন্তান জন্ম দেওয়ার পরও তেমন কোনো কঠিন রোগে আক্রান্ত ছিলেন না তিনি।
সূত্র: ডেইলি টাইমস,মিডিয়াম