Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
অড়হর পাতার উপকারিতা, মটর ডালের উপকারিতা, অড়হর ডালের দাম,

অড়হর ডালের উপকারিতা ও পুষ্টি গুনাগুন

খাবারের পাতে ডাল না থাকলে সেই খাবার একেবারেই যেন অসম্পূর্ণ লাগে। ভারতীয়, বিশেষ করে অধিকাংশ বাঙালির কাছে তো অন্তত ব্যাপারটা এরকমই। তাদের কাছে ভাত-রুটির সঙ্গে অন্যতম সঙ্গীই হল ডাল। ডালে থাকে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি। তাই ডাল যে খাবার হিসেবে শুধু পেটই ভরায়, এমন নয়, বরং পাশাপাশি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতেও ডাল ভীষণ সাহায্য করে। এরকমই একটি ডাল হল অড়হর ডাল। অবাঙালিদের কাছে এটি তুর ডাল নামে পরিচিত এবং ইংরেজিতে এই ডালকে বলে পিজিয়ন পি।

অনেকেই বলে থাকেন এবং মনে করেন যে, অড়হর ডাল বেশ কিছু রোগের হাত থেকে আমাদের দূরে রাখতে এবং কিছু রোগের উপসর্গ কমাতেও সাহায্য করে। স্টাইলক্রেজের এই প্রতিবেদনে আমরা আপনাদের জানাব আমাদের শরীরের জন্য অড়হর ডালের উপকারিতা এবং তার বিভিন্ন ব্যবহারিক উপায়। এর পাশাপাশি এই প্রতিবেদনে আমরা উল্লেখ করব অড়হর ডালের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও। তবে পাঠকরা মনে রাখবেন, এই প্রতিবেদনে আলোচিত রোগগুলির উপসর্গ কমাতে অড়হর ডাল উপকারী হতে পারে। কিন্তু এটি সেই সব রোগের চিকিৎসা নয়।

অড়হর ডালের উপকারিতা ও পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। এই ডাল স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী একটি ভেষজ খাদ্য। আজকে আমরা অড়হর ডালের সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

অড়হর এক ধরনের ডাল বীজ এবং হার্ব জাতীয় বর্ষজীবি গাছ। এর ইংরেজি নাম Pigeon pea এবং বৈজ্ঞানিক নাম Cajanus cajan. এই অড়হরের অনেক ধরনের গুনাগুন কার্যকারিতা রয়েছে তা আমরা লিখে শেষ করতে পারবো না। তবে এই অড়হরের বিশেষ কিছু গুনাবলি কার্যকারিতা, পুষ্টিগুন, পরিচি্তি, চাষাবাদ এবং বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধরা হয়েছে। তবে চলুন সেই সব বিষয়ে জেনে নেয়া যাক।

অড়হরের পরিচিতি (Introduction to Pigeon pea)

এর শাখা প্রশাখাযুক্ত গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, ফুলের কালার হলুদ এবং বীজ ছোটো গোলাকার হয়। এই অড়হর গাছের পাতা পাচ থেক সাত সেন্টিমিটার লম্বা এক থেক দেড় সেন্টিমিটার চওড়া হয়। এই গাছের উচ্চতা দুই থেকে আড়াই মিটার উচু হয়। তবে মাথা চোখা আকারের হয়। এই গাছ খুব শক্ত হলেও এর শাখ গুলো নরম হয়। তবে এই ফল আকারে ছোটো কড়াইন শুটির মতো হয়ে থাকে, এই অড়হর গাছের বীজ সামান্য একটু চ্যাপ্টা হয়ে থাকে।

অড়হর ডালের ছবি

তবে এটি যে কোন জমিতে সহজে জন্মায়। এই অড়হর লিগিউম পরিবারভূক্ত ডাল জাতীয়একটি ফসল, তবে এই গাছ ঝোপালো হয়ে থাকে। পাতা ঘন, পাতার রং সবুজ ও ডালপালা যুক্ত হয়। বীজ ধরে শুটিতে। এই অড়হর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ হয়। অড়হরের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার এবং গুনাগুন, কার্যকারিতা রয়েছে। যেমনঃ জন্ডিস, অশ্বরোগ, কাশি, জিহ্বার ক্ষত ডাইবেটিস ইত্যাদি রোগের কাজ করে থাকে।

অড়হর চাষ পদ্ধতি (Pigeon Pea Cultivation Method)

অড়হর ডালের বংশ বিস্তার বা আদি নিবাস ভারতের বোম্বাই, মাদ্রাজ, মায়ানমার, যুক্ত প্রদেশ, মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশের উত্তর বঙ্গে চাষাবাদ হয়। বাংলাদেশের যে সব অঞ্চলে অড়হর উৎপাদন হয়ে থাকে যেমনঃ- রংপুর, দিনাজপুর,যশোর, কুষ্টিয়া। এর বীজ বোপনের সঠিক সময় হলো এপ্রিল- মে মাসে এবং পাকে ফেব্রুয়ারি- মার্চের দিকে। আনুমানিক সারাবিশ্বে ৪৫ লক্ষ টন অড়হর উৎপাদন হয়ে থাকে তার মধ্যে ৬৩% আসে ভারত থেকে।

অড়হরের পুষ্টি গুনাগুন ও ব্যবহারবিধি(Quality and usage of Pigeon Pea)

এই ঔষধি গাছের অনেক গুনাগুন রয়েছে। এটি ব্যবহার করে নানাবিধ অসুখ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। চলুন জেনে নেই কোন কোন রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা যাবে।

জন্ডিস (Jaundice): এটি লিভার জনিত রোগ। অনেক ঔষধ খেয়েও এই রোগ সহজে নির্মূল হতে চায় না। যদি কেউ এই অড়হর গাছের পাতার রস দুই থেকে তিন চামচ সামান্য লবণ সাথে মিশিয়ে খাবার পর সামান্য গরম করে খেলে এই জন্ডিস দ্রুত্ব ভালো হয়।

অশ্বরোগ (Haemorrhoids) নিরাময়: এটি একটি মারাক্ত্য এবং বেদনাদায়ক রোগ। এই রোগে যে একবার আক্রান্ত হয়েছে সে বুঝবে তার যন্ত্রনা বা বেদনা কতো কষ্টের হয়। এই গাছের পাতার রস দুই চামচ সামান্য গরম করে সকালে এবং বিকালে দুইবার খেলে ভালো হয়ে যাবে। যদি অড়হর এর ডালের সাথে ঘী দিয়ে ভেজে খেলে আরোও অনেক উপকারিতা পাবে।

মুখের অরুচি (Disgust of the mouth): যে সব মানুষের খাওয়ার রুচি কমে যায় বা মুখে অরুচি তাদের জন্য এই ডালের বিচি বা ডালের জুস পরিমাণ মতো আদা, মরিচ, সামান্য লবণ মিশিয়ে দিনে এক থেকেদেড় কাপ সামান্য সামান্য করে খেতে হবে। এটি নিয়মিত খেলে মখের অরুচি দ্রুত্ব ফিরে আসবে।

জিহ্বায় ক্ষত (Wounds on the tongue): অনেক মানুষের জিহ্বায় বা মাড়িতে ক্ষত হয়ে থাকে এবং সহজে সারে না। তাদের জন্য এই গাছের কচি পাতা ভালো করে ধুয়ে লাগাতের কয়েক দিন খেলে নিশ্চিত ভালো হয়ে যাবে।

কাশি নিরাময় (Cough Remedies) যাহাদের হালকা কাশি রয়েছে। বিশেষ করে শীত কালে কাশি হয়ে থাকে তারা যদি নিয়মিত অড়হর গাছের পাতার রস সাত থেকে আট চা চামচ সামান্য গরম করে তার সাথে মধু মিশিয়ে সেবন করলে দ্রুত্ব সেফা লাভ করবেন।

ডায়াবেটিস (Diabetes) রোগ: এটি একটি বহুমূত্ররোগ। তবে আমাদের সকলেরই পরিচিত একটি শব্দ হচ্ছে রক্ত শর্করা বা ব্লাড সুগার কথাটি। বর্তঅমান এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত। পথে ঘাটে ঘরে বাইরে সব স্থরের মানুষের মুখে। এমন কি আবাল বৃদ্ধ বনিতার কাছে এই বিষয়টি যেন এখন চা-পান হয়েছে। সারাবিশ্বে এখন এটি একটি বিষ্ময় ও ভীতির কর বিষয়। সধারনত যাদের বয়ষ চল্লিশের বেশি বয়স তাদের জন্য বেশি ভীতি সঞ্চালন।

ডায়াবেটিস নিয়ে বহু মানুষ গভীর উদবিগ্নতার মধ্যে দিয়ে দিন পার করতেছেন। তবে এমন তো নয় যে টেনশন বা চিন্তাভাবনা করার কোনো কারণ নেই। আমরাপ্রায়ই তো শোনা যায় যে ডায়াবেটিস বা ব্লাড সুগারের জন্য প্রেসারের রোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস প্রভৃতি বিষয়ে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সবাই। তারপর বাত ব্যথা, আর্থ্রাইটিস, কিডনি রোগ, থ্রম্বোসিস এমনকি স্ট্রোকের মতো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই রোগের জন্যে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে কাজকর্ম করার ক্ষমতা হ্রস পায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস বা ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে। বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে যেমনঃ ব্লাড প্রেসার ঘটিত রোগ, হৃদয় ঘটিত, মূথ্রঘটিত রোগ বা কিডনি সব রকমের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বর্তমান ডায়াবেটিস বা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে-বিদেশে বহু বিজ্ঞানী ও বিষেষজ্ঞগণ দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে গবেষণা ও অনুসন্ধান করে যাচ্ছেন।

কয়েকটি দেশের বিজ্ঞানি টিম জাপান, আমেরিকা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক ভেষজ উদ্ভিদ থেকে অনেক গুলো উপকারি উপাদান আবিষ্কার করতে বিজ্ঞানিগণ সক্ষম হয়েছেন। বিভিন্ন গবেষক বা বিজ্ঞানীদের মতে, গবেষনা করে পেয়েছেন ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মধ্যে অনেক গুলো উপায় রয়েছে সেগুলো মানুষের রক্ত শর্করা বা ব্লাড সুগার এমন কি ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে করতে পারে। এমন কি কোনোটির প্রয়োগে ব্লাড সুগার প্রায় সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যাওয়ার মতো।

কিন্তু বাংলাদেশে কয়েকটি ভেষজ উদ্ভিদ ঔষধি গাছ রয়েছে সেগুলো বাজারে পাওয়া যায়।
যে একবার আক্রান্ত হবে আমরা জানি তার আর কোনো নিস্তার নেই। তবে হ্যা এর একটি প্রতিকার রয়েছে। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে ও ডায়াবেটিস নিরাময়ে ভেষজ ব্যবহার অড়হর ডাল সিদ্ধ করে নিয়মিত খেলে উপকার পাওয়া যায়। অথবা এর মূল আট থেকে দশ গ্রাম ছেচে সিদ্ধ করে ছেকে আধা কাপ করে সেবন করলে আরও বেশি উপকার হয়।

আরোও পড়ুন:  ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক ও বিকল্প উপায়

অড়হর ডালের পুষ্টিগুণের বৈশিষ্ট্য(Nutritional properties)

পৃথীবিতে যত প্রকার ডাল জাতীয় উদ্ভিদ রয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে অড়হর। আয়ুবেদিক ভাবে গবেষনা করে এই উদ্ভিদে নানা ধরনের পুষ্টি রয়েছে যা অন্যন্য ডাল জাতীয় উদ্ভিদের মধ্যে নেই বিজ্ঞানীগণ পেয়েছেন। এই অড়হর ডাল জাতীয় উদ্ভিদের মধ্যে যে সব পুষ্টি, উপাদান রয়েছে তা আমরা এই ওয়েবসাইটে সুন্দর ভাবে ছক আকারে তুলে ধরেছি।

অড়হর ডালের পুষ্টি গুনাগুন তালিকাঃ
অড়হর ডালের অড়হর অপরিপক্ক,কাঁচা ও শুকানো অবস্থায় এর পুষ্টি গুনাগুন নিয়ে নিম্নে একটি তালিকা দেওয়া হলো।

অড়হর ডালের পুষ্টি গুনাগুন তালিকা

অড়হর গাছের উপকারিতা ও আরো কিছু গুনাবলি

এই ডাল মানুষের মুখের ফেস উজ্জ্বল করে। কারন এই ডালে প্রচুর পরিমান চর্বি থাকে তাই এই ডাল নিয়মিত খেলে মুখের ফেস সুন্দর হয়। আয়ুর্বেদ এর মতে, এই ডা জাতীয় গাছেটি শরীর শীতল করে , মলরোধ করে। এই উদ্ভিদ রক্তের দোষ নাশ করে থাকে এবং হজম অ হয় তাড়াতাড়ি। এই অড়হর এর পাতার সাথে যদি নিম পাতার রস মিশিয়ে খেলে অশ্বরোগ ভালো হয় এবং মুত্র রোগে উপকারো হয়।

এই অড়হর ডালের আরো বিশেষ কিছু গুনাবলি নিচে তুলে ধরা হলো যেমন।

  • এই অড়হর ডাল খেলে মানুষের শ্রবণ শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শ্রবণশক্তির ত্রুটি ভালো হয়। যদি শরীরে জালাপোড়া থাকলে তা দ্রুত্ব ভালো হয়।
  • এই ডাল রুক্ষময় রান্নার সময় দই বা দুধ দিলে এই ডালের রুক্ষতা নষ্ট হয় না।
  • একশিরা রোগের জন্যে এই ডাল দারুন কাজ করে। কেউ যদি জলে পিষে প্রলেপ দিলে অনেক উপশম হয়।
  • চোখের ছানির জন্যে বেশ উপকারিতা রয়েছে যদি কেউ এর শিকড় ঘষে নিয়ে ছানি উপর দিলে উপশম হয়।
  • অড়হর গাছের পাতা সেদ্ধ করে পানি দিয়ে কুলি করলে দাতবেথা ভালো হয়।
  • অড়হর ডালে ঘি মিশিয়ে আহার করলে বায়ুকার আর থাকে না।
  • এই ডাল একটি ত্রিদোষ নাশক যেমনঃ বায়ু, কফ ও পিত্ত নাশক এবং ছোলার চেয়ে একটু কম কাজ করে থাকে।
  • এই ডালের পাতার রসের সাথে ঘি মিশিয়ে সেবন করলে হঠাৎ করে নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
  • চুলকানির জন্য মহেশ্ব ঔষধ, এই অড়হর ডালের পাতার ছাই এর সাথে টক দই মিশিয়ে চুলকানো স্থানে লাগালে চুলকানি ভালো হয়।
  • সিদ্ধির অতিরিক্ত নেশা হলে এই ডাল পিষে পানির সাথে মিশিয়ে খেলে নেশা কেটে যায়।

আরোও পড়ুন:  পুদিনা পাতার উপকারিতা ও ব্যবহার এবং ভেষজ গুনাগুন

এই অড়হর এর ডাল সব পরিবেশেই চলে বাঙালি অবাঙালি দুটোতেই। বাংলাদেশে এই ডালের প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং এই ডাল অনেক মানুষের প্রিয়। ভারতের দক্ষিণ অঞ্চল গুলোতে সম্বর বা টক ডাল তৈরি করা হয় এবং ভারোতের বিখ্যাত খাবার ইডলি, ধোসার সাথে এই ডাল পরিবেশন করে। পরিশেষে বলতে পারি যে এই অড়হর ডাল মানুষের জন্য বহুগুন উপকারি একটি উদ্ভিদ।

 

 

 

 

 

অড়হর পাতার উপকারিতা, মটর ডালের উপকারিতা, অড়হর ডালের দাম, অড়হর ডালের রেসিপি, অড়হর ডালের অপকারিতা, ছোলার ডালের উপকারিতা, অরহর চাষ, মুগ ডালের পুষ্টিগুণ

অড়হর গাছের ছবি, অড়হর ডালের উপকারিতা, অড়হর ডালের দাম, আরল পাতা, আড়ল গাছ, অড়হর ডালের রেসিপি, খেসারি শাকের উপকারিতা, অরল পাতার ছবি

Leave a Reply