“অর্থই অনর্থের মূল” দুলাল চৌধুরী :প্রধান শিক্ষক ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয় ও যুগ্ম আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় কমিটি বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ

সম্প্রতি একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে ফেইসবুক গরম। পক্ষে বিপক্ষে নানা জন নানান মত প্রকাশ করছেন। মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যখন যে যেটা বলেছেন তখন আমার কাছে সেটাই গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। আমার অবচেতন মনে সেটাই সমর্থন দিয়েছে। তবে পরে বিচার বিশ্লেষণ করে দেখলাম প্রত্যকের বক্তব্য বিবৃতি তার পূর্বের পক্ষ-বিপক্ষ, বিশ্বাস- অবিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল ছিল। তবে কেউ একপক্ষকে সমর্থন করে কথা বলেন নি।কোন একপক্ষকে সামান্য সমর্থন দিয়ে অন্য পক্ষকে ঢালাউভাবে প্রাকারান্তে সমর্থন দিয়েছেন।তবে প্রত্যেকের পক্ষেই কমবেশি যুক্তি আছে।

যুক্তিহীন কার বক্তব্যই নয়।সবকিছুর মূলে অর্থ।দ্বাদশ শ্রেণি পড়ুয়া সুর্দশনা মেয়ে চল্লিশ উর্ধব বয়সের ছেলের সাথে প্রেমে পড়েছে। সেটা নিছক লাইলী মজনু,চন্ডী দাস রজকিনীর প্রেমের মত এরকমটি নয়।এর পিছনে রয়েছে অর্থ।অনেকে বলেছেন আবেগী বয়স এতকিছু বুঝতে পারেনি। অনেক কিছু বুঝতে পারেনি ঠিকই কিন্ত অর্থ ঠিকই বুঝেছেন। কেউ একদিন আমাকে বলেছিলেন কেউ পাগল কী? পাগল না তা চেনার উপায় তার কাছে টাকা দাও। সে যদি টাকা চিনে তবে বুঝবে পাগল নয়। এমেয়ে টাকা চিনে তাই সে আবেগী হতে পারে কিন্তু পাগল নয়।যদি ধরেও নেই যে প্রেম স্থান, কাল, পাত্র, ধনী গরীব বিচার করে হয়না।এত বয়সের পার্থক্যে প্রেমের রের্কড অতীত কখনো দেখা যায় নাই।মেয়েটির বাবা নেই। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ধরে নেওয়া যায় সে পারিবারিক ভাবে ভালো শিক্ষা পেয়েছেন। বাবা জীবিত থাকলে হয়তো তিনি তার মেয়েকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তাকে এপথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারতেন। সেটা করার মতো নিকটজন কেউ আছেন বলে আমার মনে হয় না। যদিও তার বোন তার মৃত্যুর পরে মামলা করেছেন।

 

এর মধ্যে বোন তো শেষ। বিচার যাই হোক বোনকে তো আর পাওয়া যাবে না।বাবা মারা গেছেন বড় ভাই জীবিত আছেন তথ্য মতে মেয়েটির আপন ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ভালো নেই।ভাই বোনের মধ্যে সম্পর্কে অবনতি এর পিছনেও অর্থ।করোনা সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে সকল শিক্ষার্থী ঢাকা ছেড়ে যার যার অভিভাবকদের সাথে থাকছেন তখন এই মেয়েটা কেন ঢাকায় থাকলেন? কারণ তো অবশ্যই আছে।এখানে যতই না অন্য কারণ দেখান হউক, তবে অর্থকে বাদ দেওয়া যাবেনা।এবার আসি বসুন্ধরার এম.ডি সাহেবের বিষয়ে, তিনি পারিবারিক ভাবে শিক্ষা পেয়েছেন সবকিছুকে অর্থের দন্ডে পরিমাপ করতে।তিনি অর্থ বিত্তের মধ্যেই বড় হয়েছেন।অবৈধ অর্থ কিভাবে উপার্জন করতে হয়। কি ভাবে অর্থ দিয়ে মানুষের মনুষ্যত্ব বাজারের পন্যে রূপান্তর করা যায়?কীভাবে মানুষের বিবেক বোধকে অর্থ দিয়ে ভূলুণ্ঠিত করা যায়? এটার জন্য তাকে কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হয় নি।এটা তিনি তার পরিবার থেকে শিক্ষা পেয়েছেন।তিনি কাছ থেকে দেখেছেন, কিভাবে মানুষকে ঠকাতে হয়।নৈতিক শিক্ষা তারা পায়নি।তারা মানুষের সততা বলতে বুঝে “খারাপ হওয়ার সুযোগের অভাব”। এভাবেই তারা বড় হয়েছে। তাই সে এ রকম অপরাধ করার সাহস পেয়েছে। অর্থের দম্ভে তারা অপরাধ করেছেন অনায়াসে, পার পেয়েছেন কোন প্রকার বিচারের মুখোমুখি না হয়েই।তাই তারা অন্যায় করে অনুতপ্ত না হয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন।কলেজ পড়ুয়া মেয়ে একটা অপরিচিত জায়গায় কার সাথে থাকেন,এ খোঁজটুকু তারা রাখেন না।এটা মানতে পারা যায়না।এটা না জানার পিছনেও অর্থ।জানতে গেলে তার মাসিক খরচের বিষয়ে দায় নিতে হবে।। ভাই বা বোন কেউ সে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়নি।আজকাল এ বিষয় অনেকই মাথা ঘামান না।যখন বড় একটা কিছু ঘটে যায় তখন সবাই আমরা হইচই শুরু করে দেই।

দেখুন একলক্ষ টাকা মাসিক ভাড়ায় একটি ফ্লাট দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি মেয়েকে ভাড়া দিলেন।তিনি তার সম্পর্কে কিছু খোঁজ খবর নিলেননা। অন্তত মাসিক ভাড়া সে কীভাবে পরিশোধ করবে সে বিষয়টি তিনি জানেন নি।এটা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।তিনি অবশ্যই জানেন কে বা কারা তার ভাড়া পরিশোধ করবে। কে কে থাকবেন, এ বিষয়ও বাড়িওয়ালা জানতে চান নি।এটাও বিশ্বাস করার মত নয়।এখানেও রয়েছে অর্থ। কারণ করোনার মধ্যে বাড়িওয়ালার প্রয়োজন ছিল ভাড়াটিয়া এবং ভাড়া। তাই কে থাকছেন? কী হচ্ছে সেখানে? সে বিষয় নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। স্বাভাবিকভাবে কোন বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া আসলে তার সম্পর্কে স্থানীয় থানায় তার তথ্য দিতে হবে। কিন্তু বাড়িওয়ালা কী এর কিছু করেছেন? আর না করার পিছনেও অর্থ।

এত বড় একটি ঘটনা ঘটে গেল, কোন কোন সংবাদ মাধ্যম নিরব রইলেন। তাদের দায়ী করা হল সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য। বেরিয়ে এল থলের বিড়াল। সাংবাদিক ভাইয়েরাও স্বাধীন নয়।ইচ্ছে করলেই তারা সকল সংবাদ প্রকাশ করতে পারেন না। মালিক পক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন সংবাদ প্রকাশ করা যায় না।চাকুরী হারানোর ভয় থাকে। চাকুরী হারালে পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন।তাই অনেক কিছুই তারা স্বাধীন ভাবে করতে পারেন না।এর পিছনে রয়েছে অর্থ। তাই বলা হয় অর্থ অনর্থের মূল। তবে অর্থ ছাড়া আমরা তো কোন কাজই করতে পারি না। তাই বৈধভাবে উপার্জিত অর্থে অনর্থ সৃষ্টি করতে পারে না।আর অবৈধ ভাবে উপার্জিত অর্থ মানুষকে অন্যায় করতে প্রলুব্ধ করে। তবে সকল অর্থই অনর্থের সৃষ্টি করে না

Leave a Reply