আজ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মদিন | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন

জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা, নোবেল বিজয়ী ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মদিন আজ। ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দের (৭ মে ১৮৬১ খিষ্টাব্দ) এ দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সাহিত্যের অনন্য এ কবি।

‘মানবতার সংকট ও রবীন্দ্রনাথ’ স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে এ বছর জাতীয় পর্যায়ে বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে সরকার।

বিশ্বসাহিত্যের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রতিভাদের একজন হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে যার অবদান অসামান্য। তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য পায় নতুন রূপ। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মননশীলতা দিয়ে বিশ্ব অঙ্গনে বিরল সম্মান আর্জন করেন তিনি।

বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তার ‘অভিলাষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা।

১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তার পত্নীবিয়োগ হয়।

১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।

১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। ১৯৪১ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তার মৃত্যু হয়।

সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন- রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন।

রবীন্দ্রনাথের গান তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তার রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ ও ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ গানদুটি যথাক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত। এছাড়া শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতের কথাও তার গানের অনুবাদ।

দিনটিকে উদযাপন করতে এবার সরকারি পর্যায়ে মূল অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে।

মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদা দেবীর চতুর্দশ সন্তান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম কলকাতার বিখ্যাত জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে।

বাংলা সাহিত্যকে তিনি দিয়ে গেছেন এক নতুন মাত্রা। তার রচিত সঙ্গীত, কবিতা ও গদ্য জড়িয়ে আছে বাঙালির সত্তায়।

১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়ে সারা বিশ্বে বাংলা ভাষার মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বাংলা সাহিত্যে এটিই একমাত্র নোবেল পুরস্কার।

রবীন্দ্রনাথের লেখা গান ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার দীর্ঘ সংগ্রামসহ বিভিন্ন সঙ্কটে রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতা বাঙালিকে যুগিয়েছে সাহস, তার চেতনাকে করেছে শাণিত।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রোববার দুপুর আড়াইটায় রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অংশ নেবেন।

আরও পড়ুনজাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলার অভিযোগে আটক ৫ জনকে আদালতে প্রেরণ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তিন দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনী এবং কবির ওপর নির্মিত ডকুমেন্টারির মাসব্যাপী প্রচারের ব্যবস্থা করবে।

ঢাকাসহ কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে।

এ উপলক্ষে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্র বিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমি কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণিকা ও পোস্টার মুদ্রণ করছে। বাংলা একাডেমিসহ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও সংস্থাগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।

আরও পড়ুনফানি ভিডিওতে মিঠুনের বাজিমাত, মাসে আয় ২ লাখ

এছাড়া কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালকের তত্ত্বাবধানে ঢাকার রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।

ঢাকাসহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো কর্মসূচি গ্রহণ করবে বলে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়।

জাতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করবে।

কবিগুরুর ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে কবির স্মৃতিবিজড়িত জেলাগুলোতে বিশ্বকবির ছবি, কবিতা, পরিচিতি ও চিত্রকর্ম প্রদর্শন এবং বিভিন্ন সড়ক দ্বীপসমূহে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন এবং আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসিতে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

রবীন্দ্রনাথ বাঙালির অমৃতসন্তানরাষ্ট্রপতি

রবী ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক বাণীতে বিশ্বকবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেছেন, “বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক বিস্ময়কর প্রতিভা। বাংলা সাহিত্যকে তিনি তুলে ধরেছেন বিশ্বপরিমণ্ডলে। …মনুষ্যত্বের বিকাশ ও মানবমুক্তি ছিল তার জীবনবোধের প্রধানতম দিক।”

রবীন্দ্রনাথ বাঙালির অমৃতসন্তান মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “তার গান বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আমাদের প্রেরণাশক্তি।”

বাঙালির অস্তিত্বের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ মিশে আছেনপ্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, “কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চেতনা ও মননের প্রধান প্রতিনিধি। বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই তিনি স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত নির্দেশকের ভূমিকা রেখেছেন। তিনি আমাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীতস্রষ্টা। চিত্রকর, সমাজচিন্তক এবং মানবতাবাদী দার্শনিক হিসেবেও রয়েছে তার বিশ্বখ্যাতি। বাঙালি জাতীয়তাবোধের অন্যতম রুপকারও তিনি।”

বাঙালির অস্তিত্ব ও চেতনার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ওতপ্রোতভাবে মিশে আছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের গান হয়ে উঠেছিল প্রেরণার উৎস। শাশ্বত বাংলার মানুষের দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা অর্থাৎ সকল অনুভব বিশ্বস্ততার সঙ্গে উঠে এসেছে রবীন্দ্রসাহিত্যে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইচ্ছাতেই রবীন্দ্রনাথের অনবদ্য সৃষ্টি ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ আমাদের জাতীয় সংগীত করা হয়।”

আরও পড়ুনধর্মতত্ত্ব পড়তে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন এই জাপানি শিক্ষাবিদ

জাতির পিতা সংকট উত্তরণে রবীন্দ্র সাহিত্য থেকে প্রেরণা নিতেন বলে তিনি বাণীতে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “…আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাদর্শ ও তার সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চণামুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন, বাংলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ও বংশ পরিচয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান কোথায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজি কত সালে জন্মগ্রহণ করেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনের স্ট্যাটাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ উপন্যাস কোনটি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবার নাম কি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা জীবন

Leave a Reply