আনন্দ মোহন কলেজের ইতিকথাঃ আনন্দ মোহন বসু ময়মনসিংহ

একটি কলেজের ইতিকথাঃ
ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জের জয়সিদ্ধি গ্রামের ছেলে আনন্দ৷আনন্দ মোহন বসু৷ ময়মনসিংহ জজ আদালতের পেশকার পদ্মলোচন বসু ছিলেন তাঁর বাবা। মায়ের নাম উমা কিশোরী৷১৮৪৭সালে জন্ম, প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু হয় ময়মনসিংহে৷ ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৯ম স্থান অধিকার করেন৷প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ এবং বিএ পরীক্ষায় ১ম হন৷ ১৮৭০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন। বৃত্তি নিয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে ইংল্যান্ড যান। সেখানে কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজ থেকে উচ্চতর গণিত বিষয়ে পড়াশোনা করেন। অনার্সসহ ডিগ্রী পরীক্ষা তথা ট্রাইপস পরীক্ষাতে প্রথম শ্রেনি লাভ করেন৷ তিনি ছিলেন বাঙালি এবং প্রথম ভারতীয় যিনি কেমব্রিজে গণিতশাস্ত্রের সর্বোচ্চ সম্মান— “র‌্যাংলার ” উপাধী অর্জন করেন৷

১৮৮৩সালে নিজের বাড়ির একাংশে একটি বিদ্যাঙ্গন প্রতিষ্ঠা করেন আনন্দ মোহন৷”ময়মনসিংহ ইনস্টিটিউশন৷”প্রায় একই সময়ে “কলকাতা সিটি কলেজ”এর প্রতিষ্ঠাতাও তিনি৷
ঐ প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তীতে ১৯০১ সালের ১৮ই জুলাই “ময়মনসিংহ সিটি কলেজ”নামে যাত্রা শুরু করে৷ প্রথম অবস্থায় কলকাতা সিটি কলেজ কাউন্সিলের আর্থিক সহযোগিতায় ময়মনসিংহের কলেজটি পরিচালিত হতো৷কিছু দিনের মধ্যে স্থানীয় অধিবাসীদের অর্থ সাহায্যে রাস্তার পাশে কলেজের পাকা ভবন তৈরি হয়৷
১৯০৬সালে স্ত্রী স্বর্ণপ্রভা দেবীর দাদা স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর বাড়িতে আনন্দ মোহন মারা গেলে কলেজটি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়৷সেই সময় প্রিন্সিপাল বৈকুণ্ঠনাথ চক্রবর্তীর উদ্যোগে এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি.জে. আর.ব্লাকউডের নেতৃত্বে নতুন ভাবে কলেজ পরিচালনা কমিটি এবং তহবিল গঠিত হয়৷
বিভাগীয় কমিশনার কলেজের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করেন ৫৫,০০০টাকা ৷
কলেজের সার্বিক উন্নতির জন্য স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিগতভাবে ১,১৮,৩৯৫ টাকা এককালীন ভাবে দান করেন। যাঁদের মধ্যে ছিলেন—
মুক্তগাছার মহারাজা শশীকান্ত আচার্য্য চৌধুরী
রামগোপালপুরের রাজা যোগেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী
সন্তোষের রাণী দিনমনি চৌধুরাণী
গৌরীপুরের রাজা জগতকিশোর রায় চৌধুরী
পুটিয়ার রাণী হেমন্ত কুমারী দেবী
ভবানীপুরের শ্রীমতি বামা সুন্দরী দেবী … প্রমুখ৷
আনন্দমোহন বসুর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের সহপাঠী বন্ধু বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমদ কলেজের জন্য জমি দান করে তাঁর বন্ধু আনন্দমোহন বসুর নামে কলেজটির নামকরণের প্রস্তাব করেন। সরকারি-বেসরকারি নানা উৎস থেকে সংগৃহীত অর্থ এবং জমি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কলেজটির নতুন ভবন নির্মিত হয় কাঁচিঝুলীতে৷ ১৯০৮ সালের শেষের দিকে “ময়মনসিংহ কলেজ”এর প্রতিষ্ঠাতা আনন্দমোহন বসুর নামানুসারে ” আনন্দ মোহন কলেজ ” রাখা হয়৷১৯১৪ সালেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এটিকে প্রথম গ্রেডের কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
এরপর থেকে কলেজটির খ্যাতি ছড়িয়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে । ১৯৬৪ সালের অক্টোবরে কলেজটিকে সরকারিকরণ করা হয়।
১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠাকালে আনন্দ মোহন কলেজে ছাত্র ছিল ১৭৮ জন এবং শিক্ষক ছিলেন ৯জন৷ বর্তমানে ছাত্র সংখ্যা প্রায় ২৫,০০০ ৷শিক্ষকের সংখ্যা ২০০ জনেরও বেশি৷
বর্তমানে এখানে প্রথম বর্ষে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা মানবিক শাখায় জন্য এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ-২.৫০ আর বিজ্ঞান ও ব্যবসা শিক্ষায় ভর্তির জন্য এসএসসিতে জিপিএ-৩ এবং এইচএসসিতে জিপিএ-২.৫০ নির্ধারণ করা হয়েছে৷
সব ঠিক আছে, আবার নেইও ৷আনন্দ মোহন বসুর মতন অনেক কৃতিমান হারিয়ে গেছেন৷তাঁদের বসত বাড়িসহ সমগ্র স্থাপনা এখন দখলদারের দখলে৷ নিজেদের আপনজন কেউ বসবাস করেন না সেখানে৷শুধু এক জায়গার বাতাস অন্য জায়গায় বয়ে যাবার সময়ে ফিসফিসেয়ে অতীতের কথা বলে যায়৷
আনন্দ মোহন বসুর একশত পঁচাত্তরতম জন্ম বার্ষিকীতে এই কথাই বলা যায়—
“তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ..
চিহ্ন হেথা পড়ে আছে,
তুমি হেথা নাই…৷”
ছবি এবং তথ্য ইন্টারনেট
প্রথম আলো পত্রিকা৷

Read More: হ্যাল এলরড 10টি বানী হ্যাল এলরড 10টি বানী

 

 

আরও পড়ুনStephen Hawking Biography

 

আপনার এই পোস্টটি কেমন লেগেছে, মন্তব্য করে আমাদের জানান এবং এই পোস্টে কোনও ত্রুটি থাকলেও আমরা অবশ্যই এটি সংশোধন করে আপডেট করব।

 

 

ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।

 

 

তথ্যসূত্র: Wikipedia, Online

ছবিঃ ইন্টারনেট

দৃষ্টি আকর্ষণ এই সাইটে সাধারণত আমরা নিজস্ব কোনো খবর তৈরী করি না.. আমরা বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবরগুলো সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি.. তাই কোনো খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Reply