পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এর জীবনী | Biography Of Pakistan primister Imran Khan In Bangla.

 পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক।তার অধিনায়কত্বে পাকিস্তান ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয় করে।পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের চেয়ারম্যান ও পাকিস্তানের বর্তমান অঘোষিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রাজনীতির খাতায় নাম লেখার আগে প্লেবয় হিসেবে পরিচিত হন প্রেমের অঙ্গনে।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জীবনে নানা সময়ে বহু নারীর আগমনের গুঞ্জন উঠলেও বিয়ে করেছেন তিনজনকে। তবে ইতিমধ্যে দুই জনের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে। প্রথম বিয়ে ইমরান খান প্রথম বিয়েটা করেন ১৯৯৫ সালে ৪২ বছর বয়সে। দারুণ ঢাকঢোল পিটিয়ে করেছিলেন প্রথম বিয়ে।

জেমিমা গোল্ডস্মিথও ভালোবাসার মোহে নিজের ধর্ম পরিবর্তন করে বিয়ের আসরে বসেন। ভালোই চলছিলো সবকিছু। কিন্তু বিয়ের ৯ বছরের মাথায় হয় বিচ্ছেদ। দাম্পত্য জীবনে বনিবনা না হওয়ায় ২০০৪ সালে প্রথম সংসার জীবনের ইতি টানেন ইমরান। তবে তাদের ৯ বছরের দাম্পত্য জীবনে ছিলো দুই ছেলে। সেসময় ২ ছেলেকে নিয়ে আবার নিজ দেশে পাড়ি জমান জেমিমা।

অনেকদিন একা থাকলেও নানা গুঞ্জন ওঠে ইমরান খান সম্পর্কে। অবশেষে বিবিসির টেলিভিশন সাংবাদিক রেহাম খানের সঙ্গে দ্বিতীয় গাটছড়া বাঁধেন ইমরান খান। ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি করেন দ্বিতীয় বিয়ে। তবে এ বিয়ে এক বছরও টেকেনি। বিয়ের দশ মাসের মাথায় অক্টোবরে ঘটে বিচ্ছেদ। দ্বিতীয় বিবাহ বিচ্ছেদের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন ইমরান খান। তার দ্বিতীয় স্ত্রী ইমরান খানকে নিয়ে করেন অনেক বেফাস মন্তব্য।

ইমরান খানও বলেন, দ্বিতীয় বিয়েটা তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। দ্বিতীয় বিচ্ছেদের কয়েক বছরের মাথায় আবার করেন আরেক বিয়ে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৃতীয়বারের মতো বসেন বিয়ের পিড়িতে। বুশরা মেনেকা নামের পাকিস্তানের পাকপাত্তান এলাকার পীর বংশের মেয়েকে বিয়ে করেন এবার। তখন তার বয়স ৪০। এসব বিয়ে ছাড়াও ইমরান খানের জীবনে ছিলো নানা প্রেম। তাকে নিয়ে নানা সময় নানা ধরনের প্রেমের গুঞ্জনে গরম থাকতো মিডিয়া পাড়া। ক্রিকেট মাঠে যেমন দুর্দান্ত পারফরমেন্ট দিয়েছিলেন, প্রেম নিয়ে খেলায়ও তার পারফরমেন্স প্রায় সমানতালে ছিল।

জন্ম ও পরিচয়

ইমরান খান ১৯৫২ সালের ৫ অক্টোবর, পাঞ্জাব rajje , পাকিস্তান জন্মগ্রহণ করেন। স্থানভেদে ১৫ নভেম্বৰ রাজনীতি ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৯৬ সালে রাজনীতির ময়দানে আসেন ইমরান খান। দুর্নীতি বিরোধী স্লোগানে ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠা করেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ। পরের বছর ১৯৯৭ সালে তিনি নির্বাচনে দুটি কেন্দ্র থেকে দাঁড়ালেও দুটিতেই হেরে যান। তবুও থেমে যান নি তিনি। ২০০২ সালে নির্বাচনে জয়ী হন ইমরান খান।

২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট হয়ে মোশারফ তৎকালীন সেনা প্রধানের পদে থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছিলেন। ইমরান খান ওই নির্বাচনের বিরোধিতা করে ওই বছরের ২ অক্টোবর ৮৫ জন পার্লামেন্ট সদস্যদের সাথে পদত্যাগ করেন। সে বারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হয়ে মোশারফ পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা জারি করে। ইমরান খানকে গৃহবন্দী করা হয়। ওইসময় তিনি কিছুদিন হাজতবাসও করার পর মুক্তি পান। ২০১৩ সালে পাকিস্তানের ১০তম নির্বাচনে তার দল দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আসন জেতে। আর ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই পাকিস্তানের ১১ তম জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তার দল আসন সংখ্যার বিচারে সর্ববৃহৎ দলে পরিণত হয়। তিনি ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।।

ইমরান খানবাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীর সাজা বিষয়ে ইমরান খানের অবস্থানে বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে কিছু লোককে। পাকিস্তানি জামায়াত, পাকিস্তানি মুসলিম লিগের কথাবার্তা যেমন-তেমন। কিন্তু ইমরান খানের অবস্থানে তাঁরা নাকি আসমান থেকে পড়ে যাচ্ছেন। কিংবা মাথায় আসমান ভেঙে পড়ার উপক্রম হচ্ছে বলে তাঁরা জানাচ্ছেন। ইমরান খানের রাজনীতির ব্যাপারে আগে থেকে খোঁজখবরে থাকলে অবশ্য আসমান নিয়ে টানাটানি পড়ার কথা নয়।

ইমরান খান কি পাকিস্তানকে বদলে দিতে পারবেন? ২৭ জুলাই ২০১৮ শেয়ার করুন ফেসবুক শেয়ার করুন Messenger শেয়ার করুন টুইটার শেয়ার করুন ইমেইল শেয়ার করুন ছবির কপিরাইটEPA Image caption ইমরান খান বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট অধিনায়ক থেকে প্রধানমন্ত্রিত্বের পথে ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া ইমরান খানকে একসময় পশ্চিমের সাংবাদিক-বিশ্লেষকরা দেখতেন অক্সফোর্ডে পড়া একজন রমণীমোহন প্লেবয় হিসেবে, – যিনি ক্রিকেট খেলার অন্ধিসন্ধি যেমন জানতেন, তেমনি চিনতেন লন্ডনের নাইটক্লাবগুলো। গার্ডিয়ান পত্রিকার এক সময়কার পাকিস্তান সংবাদদাতা জোনাথন বুন লিখছেন, এমনটাই এখনো মনে করা হয় যে তার রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি তার ব্যক্তিগত জীবনের মতোই উদার হবে।

কিন্তু সত্যি কি তাই হবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, তা বোঝা যাবে আগামি কয়েক মাস বা বছরেই, কারণ এটা স্পষ্ট যে ইমরান খানই হতে যাচ্ছেন পাকিস্তানের আগামি প্রধানমন্ত্রী। এই পর্যবেক্ষকরা নানা দিক থেকে হিসেব-নিকেশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খান পাকিস্তানে কি পরিবর্তন আনতে চান, বা কতটা তিনি করতে পারবেন। ইমরান খান কি করতে চান? ইমরান খান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পরিবর্তন আনবেন। শিক্ষা আর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাবেন, তরুণদের জন্য সৃষ্টি করবেন কর্মসংস্থান। এই তরুণরাই মি. খানের প্রধান সমর্থক, এবং পাকিস্তানের জনসংখ্যার তারা ৬৪ শতাংশ।

ইমরান খানের প্রধান সমর্থক তরুণরা এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইমরান খানের অসুবিধা হবার কথা নয়। তিনি স্বতন্ত্র সদস্যদের সমর্থন নিয়েই সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যাবেন, তাকে পিপিপি বা মুসলিম লিগের মতো কোন দলের সাথে অস্বস্তিকর জোট গড়তে হবে না। তবে ইমরান খানে প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হলো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করা। কারণ তাকে সমালোচক ও প্রতিদ্বন্দ্বীরা দেখেন পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর এস্টাব্লিশমেন্টের একজন ‘প্রক্সি’ বা ক্রীড়নক হিসেবে। এদের অভিযোগ, ইমরান খানকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে সামরিক বাহিনী নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছে। তার বিরুদ্দে আরো অভিযোগ: ইমরান খান গত পাঁচ বছর ধরে নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে বিরামহীন প্রচারণা চালিয়ে গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। এই পর্যবেক্ষকরা বলেন, পাকিস্তানের আসল সমস্যাটা কোথায় এ নিয়ে ইমরান খানের যে ধারণা – তা একরকম অতি-সরলীকরণ।

তিনি তার সমর্থকদের বলে আসছেন, পাকিস্তানে চাকরি সৃষ্টি করতে হলে এবং সেবা খাতকে উন্নত করতে হলে দেশে পিপিপি আর মুসলিম লিগ(এন)-এর যে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি চলছে তার অবসান ঘটাতে হবে। দুর্নীতিবাজ নেতাদের ধরতে হবে এবং তাদের লুকানো সম্পদ বের করে আনতে তাদের বাধ্য করতে হবে। কিন্তু একটা প্রকৃত গণতান্ত্রিক পদ্ধতি আর সামরিক-বাহিনী-প্রভাবিত গণতন্ত্রের মোড়ক – এ দুটোর মধ্যে যে পার্থক্য আছে, সামরিক বাহিনী যে নিজের একটি বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য চালাচ্ছে, এবং তারা যে দেশের নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্রনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় – এসব নিয়ে ইমরান খানের কোন আগ্রহ দেখা যায় না। ইমরান খান এমন কোন ইঙ্গিতও দেন নি যে তিনি ধর্মীয় জঙ্গীবাদকে একটা সমস্যা বলে মনে করেন। সামরিক এস্টাব্লিশমেন্টের সাথে দ্বন্দ্ব অনেকেই মনে করেন যে কিছুকাল পরই একটা সময় আসবে যখন ইমরান খান দেখতে পাবেন যে তিনি সামরিক এস্টাব্লিশমেন্টের সাথে একটা সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন। তার দুই পূর্বসূরীর ক্ষেত্রে ঠিক এটাই ঘটেছে।

অনেকের অভিযোগ, ইমরান খানকে ক্ষমতায় আনার জন্য নেপথ্য থেকে কাজ করেছে সামরিক বাহিনী এর কারণ সম্পর্কে প্রবীণ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বলেন, যখন ইমরান খান ক্ষমতা গ্রহণ করবেন এবং বৃহৎ পরিসরের ছবিটা তার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে – তখন তিনি দেখবেন যে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান-অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে এগুতে গেলে তাকে এমন পথ দিয়ে যেতে হবে – যেখানে আগে থেকেই সামরিক বাহিনী আসন গেড়ে বসে আছে। এই পর্যবেক্ষকরা আরো বলেন, ইমরান খানকে অবশ্যই বিশেষত ভারতের সাথে আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব-উত্তেজনা কমাতে হবে। কিন্তু এসব ইস্যুর জন্য প্রধানত পাকিস্তানের নিরাপত্তা এস্টাব্লিশমেন্টকেই দায়ী করা হয়।

 

নির্বাচনী সমাবেশে ইমরান খান ইমরান খানকে পাকিস্তানের আমলাতন্ত্র এবং বিচার বিভাগকেও সংস্কার করতে হবে। কিন্তু সরকার তার কর্তৃত্ব পুনপ্রতিষ্ঠা করতে গেলে দেখা যাবে যে, যেসব ব্যবসায়িক স্বার্থের কাছে সরকারকে জায়গা ছাড়তে হয়েছে – তার পেছনেও সামরিক বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা আছে। সামরিক বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক অবস্থানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাকিস্তান এখন ওয়াশিংটনের ত্রাণের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের সম্মুখীন, অথচ তাদের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাদের প্রধান সাহায্যদাতাই হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসে অর্থায়নসংক্রান্ত একটি নজরদারির তালিকায় পাকিস্তানের নাম উঠেছে। আন্তর্জাতিক অর্থসহায়তা পাবার ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। পাকিস্তান এখন গুরুতর আর্থিক সংকটের মধ্যে আছে। তাদের বিপুল বৈদেশিক ঋণ রয়েছে এবং দেশটির মুদ্রার মানও ক্রমাগত কমছে। কিন্তু যখন পাকিস্তানের নাম সন্ত্রাসে অর্থায়নের তালিকায় উঠেছে, সে সময়ই আন্তর্জাতিক পরোয়ানায় থাকা কিছু জঙ্গী নেতাকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হয়েছে। শোনা যায় এর পেছনে রয়েছে সামরিক বাহিনী-সমর্থিত একটি নীতি – যার লক্ষ্য হচ্ছে জঙ্গীদেরকে রাজনীতির মূলধারার সাথে সংযুক্ত করা। দিল্লি বা ওয়াশিংটন কেউই এটা পছন্দ করে নি। এবং নির্বাচনী প্রচারণার সময় ইমরান খান এ বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন – যা তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী করেন নি। ইমরান খানের দু’টি বিকল্প বিশ্লেষকরা বলেন, ইমরান খানকে হয়তো নিম্নোক্ত দুটি পন্থার কোন একটি নিতে হবে।

নির্বাচনের পর প্রথম ভাষণ দিচ্ছেন ইমরান খান এক, তিনি হয়তো মুসলিম লিগ (এন) এবং পিপিপি – এই দুই শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে কাজ করার একটা উপায় বের করবেন, কারণ এরা হচ্ছে এমন দুটি বিরোধীদল যাদের ক্ষমতায় থেকে পাকিস্তানের বাস্তবতা দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে ইমরান খান দু’ দশক ধরে এই দুটি দলকেই তার প্রধান শত্রু হিসেবে চিত্রিত করেছেন, তাই তার জন্য সেটা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। নওয়াজ শরিফের মুসলিম লিগ ইতিমধ্যেই বলেছে, নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ থাকলেও তারা পার্লামেন্ট বয়কট করবে না, এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে ইমরান খানকে দেয়া জনগণের ম্যান্ডেটকে তারা সম্মান দেখাবে। দ্বিতীয় বিকল্প, পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মধ্যেই তিনি তার তরুণ সমর্থকদের নিয়ে প্রশাসন চালাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যতদিন ভালোভাবে চলে অন্তত ততদিন তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব করাটা উপভোগ করতে পারবেন।

পাকিস্তানকে সমর্থন জানানোর বাসনা থেকে যাঁরা খেলার মধ্যে রাজনীতি আনা ঠিক না বলে থাকেন, তাঁদের আগেই বলে রাখা যাক যে খেলোয়াড় ইমরান খান নয়, রাজনীতিক ইমরান খান নিয়ে এখানে কথা হচ্ছে। আর এ কারণেই ছাত্রজীবন ও খেলোয়াড়ি জীবনে ইমরান খানের নানা কীর্তিকলাপ, যেগুলো বিশেষত ভারতীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে বাংলার ঘরে ঘরে ঢুকে আছে, সেগুলোর উল্লেখ বাংলাদেশি যুদ্ধাপরাধীর শাস্তির বিরুদ্ধে তাঁর আস্পর্ধার আলোচনায় জরুরি নয়। জরুরি হচ্ছে এই ব্যক্তির রাজনীতির ধরনটা বোঝা।

জেনেও না-জানার ভানকারীদের কথা আলাদা। কিন্তু যাঁরা ইমরান খানের খবরাখবর রাখার প্রয়োজন মনে করেন না, তাঁদের জানানো যাক যে দেড় দশকের বেশি আগে তেহরিক-ই-ইনসাফ নামক দল নিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নামা ইমরান খানের বর্তমান বাজার বেশ ভালো। মে মাসের জাতীয় নির্বাচনে ভালোই ফল করেছে তেহরিক। আর প্রাদেশিক পরিষদে বেশি আসন পাওয়ার সুবাদে ধর্মীয় উগ্রবাদী-অধ্যুষিত খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের কোয়ালিশন সরকারের প্রধান শরিক হয়েছে তেহরিক। ইমরানের দলের নেতৃত্বাধীন সরকারের আরেক প্রভাবশালী শরিক হচ্ছে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামি। চোখ কচলানোর কিছু নেই—পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামি।

আরও আছে, ইমরান খান মনে করেন যে তালেবানরা একটি ‘ধর্মযুদ্ধ’ করছে। গত বছরের অক্টোবর মাসের ১৪ তারিখে পেশোয়ার শহরে একটি হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইমরান খান সুস্পষ্ট ভাষায় এই মত দেন। তালেবানদের অবস্থানকে তিনি ‘বৈধ’ হিসেবেও চিহ্নিত করেন। উল্লেখ্য, খানসাহেবের পরিদর্শনের মাত্র কয়েক দিন আগে এই হাসপাতালটিতেই তালেবানের গুলিতে বিদ্ধ মালালা ইউসুফজাইকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। তালেবানের প্রশংসা করার জন্য ঠিক এই হাসপাতালটিই কেন বেছে নিতে হয়েছিল? এ জন্যই, সম্ভবত পাকিস্তানের উদারপন্থীরা ইমরান খানকে ‘তালেবান খান’ ডাকে।

আরও স্মরণ করা যেতে পারে যে ২০০৯ সালে সোয়াত অঞ্চলে তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের বিতর্কিত এক রফার প্রতি সর্বপ্রথম সমর্থন জানানো রাজনীতিক ছিলেন ইমরান খান। অবশ্য ইমরান খান মাঝেমধ্যে, বিশেষ করে পশ্চিমা মিডিয়ার সামনে কথা বলার সময় ধর্মীয় উগ্রবাদীদের ব্যাপারে কোমল থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। আবার ধর্মীয় উগ্রবাদীরাও খানসাহেবকে একজন ‘উদারনীতিক’ হিসেবে চিহ্নিত করে মেরে ফেলার হুমকি-টুমকি দেয় মাঝেমধ্যে। কিন্তু বাস্তবে কী দেখা যায়? সর্বশেষ পার্লামেন্ট নির্বাচনের মৌসুমটির কথা ধরা যাক। পাকিস্তানজুড়ে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের টানা হামলার মুখে বলতে গেলে নির্বাচনী প্রচারণা করতেই পারেনি সে সময় ক্ষমতাসীন পিপিপি ছাড়াও আওয়ামী ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এএনপি) কিংবা মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টের (এমকিউএম) মতো খানিক উদারপন্থী দলগুলো। কোনো কোনো দলের

গায়ে ফুলের টোকাও লাগেনি? শরিফের মুসলিম লিগ এবং অবশ্যই ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ। লক্ষণীয় ব্যাপার, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীর সাজা নিয়ে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে আদবহীনতার সময় পক্ষ-বিপক্ষের দলগুলোর বিন্যাসও এভাবেই ছিল।

সেনা এস্টাবলিশমেন্ট ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ইমরান খানের বিশেষ সম্পর্কের ব্যাপারটিও পাকিস্তানে ব্যাপকভাবে আলোচিত। বর্তমানে ক্ষমতাসীন মুসলিম লিগ এ ব্যাপারে প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছিল একসময়। সময়টা ২০১১ সালের একেবারে শেষের দিকে—পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) তখন ক্ষমতায়। হঠাৎ করেই দেড় দশক ধরে টিমটিম করতে থাকা ইমরান খানের দলের পক্ষে বেশ জোশ দেখা যেতে শুরু করে; তেহরিকের জনসভাগুলোতে এন্তার জনসমাগম শুরু হয়। এই ব্যাপারটি মধ্যপন্থী পিপিপির চেয়ে নওয়াজ শরিফের মুসলিম লিগকে বেশি ভাবিয়ে তোলে। কেননা, নতুন-ডান তেহরিক পুরোনো-ডান মুসলিম লিগের ঘাঁটিগুলো দখল করে ফেলার মতো একটা অবস্থা তৈরি করতে শুরু করেছিল। এমনকি মুসলিম লিগের মূল ঘাঁটি পাঞ্জাবেও বড় বড় অনুষ্ঠান করতে শুরু করে তেহরিক।

লাহোরে, করাচিতে ইমরান খান সাহেবের জনসভায় প্রচুর মানুষ দেখা যেত তখন। এমন পরিস্থিতিতেই সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তেহরিকের সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে শুরু করে মুসলিম লিগ। একদিকে ভোটব্যাংক বেহাত হয়ে যাওয়ার ভয়, অন্যদিকে, সেনা এস্টাবলিশমেন্টের সঙ্গে ‘ঐতিহাসিক’ সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে মুখ খোলে মুসলিম লিগ। দলটি অভিযোগ আনে যে তহবিল জোগানো, জনসভায় লোক ভরানো থেকে শুরু করে সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (কিউ) থেকে লোক ভাগিয়ে তেহরিকে ঢুকিয়ে দেওয়ার কাজগুলো গোয়েন্দা সংস্থা করে চলেছে। শরিফের দল এই আক্ষেপও করে যে প্রধান সেনাপতি জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানিকে এ ব্যাপারে একাধিকবার জানানো হলেও কোনো কাজ হয়নি।

ইমরান খানের দলের জন্য সেনা কর্তৃপক্ষের সাহায্য-সহযোগিতার ব্যাপারে শরিফের দল এতটাই তেতে ওঠে যে তারা কেবল ব্যক্তি রাজনীতিক নয় বরং দলের আয়-ব্যয়, দলের নেতাদের স্থানে স্থানে ভ্রমণ ব্যয়ের বিশদ বিবরণ প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা প্রতিষ্ঠায় জাতীয় পরিষদে একটি বিল উত্থাপন করার হুমকিও দেয়। ইমরান খান ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে একবার গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি—পাকিস্তানি রাজনীতি ও পাকিস্তানি মিডিয়ার উদারনীতিক অংশটির কাছে তিনি এস্টাবলিশমেন্টের পেয়ারের মানুষ হিসেবে চিহ্নিত। এবং তাঁর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো কখনো কখনো সরকারকে আঘাত করলেও এস্টাবলিশমেন্টকে কখনোই নয়। এই তো মাত্র মে মাসে আহমদিয়াদের অমুসলিম হিসেবে ঘোষিত হয়ে থাকার পক্ষে শক্ত শক্ত কথা বলে এস্টাবলিশমেন্টের পক্ষের আরেক দফা অবস্থান নিয়েছেন ইমরান খান।

জামায়াতের সঙ্গে প্রদেশে সরকার গঠন, তালেবানদের ব্যাপারে উদারতা, সেনা-ঘনিষ্ঠতা—এত সব ‘বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত’ ব্যাপক ডানপন্থী ইমরান খানের বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ প্রসঙ্গে সঠিক অবস্থানে দাঁড়ানোটাই হতো আশ্চর্যের। পাকিস্তান জানে যে, আজ হোক কাল হোক, একাত্তরের অপরাধসমূহের জন্য পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সামরিক নেতৃত্বের বিচারের উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশ। আর কাদের মোল্লার সাজার ব্যাপারে তাঁদের চুপ থাকার অর্থ হতো একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ-মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারটি মেনে নেওয়া। দেয়ালের লিখন পড়তে না পারলে যে ভুল হয়, ইমরান খান তথা পাকিস্তানি কায়েমি স্বার্থবাদীরা সেই ভুলই করছে।

কিন্তু বাংলাদেশে যাঁরা ইমরান খানের ভূমিকায় ব্যথা পেয়েছেন, তাঁদের তো ব্যথা পাওয়া চলবে না। জানা থাকতে হবে যে পাকিস্তানের ইমরানের তো এটাই করার কথা। ইমরানে ইমরানে কত তফাত। পাকিস্তানি ইমরান যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। আর বাংলাদেশের ইমরানরা গণজাগরণ মঞ্চ বানায় যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শেষ না করে ঘরে না ফেরার কথা বলে।

আরও পড়ুন:দার্শনিক আরজ আলী মাতব্বরের জীবনী

 

ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব  ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।

তথ্যসূত্র: Wikipedia

ছবিঃ ইন্টারনেট

#BanglaBiography #BanglaDocumentary #NHTvBangla পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এর জীবনী , Biography Of Pakistan primister Imran Khan In Bangla. একনজরে ইমরান খানের জীবনের গল্প, ক্রিকেটার থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী Imran khan Biography Of prime minister pakistan Imran Khan In Bangla , Biography Of Crickter Imran Khan #Imran #Khan #Biography কিংবদন্তি ক্রিকেটার থেকে প্রধানমন্ত্রী, ইমরান খানের জীবন কাহিনী, Biography Of Crickter Imran Khan কিংবদন্তি ক্রিকেটার থেকে প্রধানমন্ত্রী,ইমরান খানের জীবন কাহিনী,Biography Of Crickter Imran Khan,Biography Of Imran Khan, একনজরে ইমরান খানের জীবনের গল্প,ক্রিকেটার থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী imran khan,imran khan,ইমরান খান,পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী imran khan জীবনের গল্প, জীবন কাহিনী, Life Of Story, Famous People Biography, Jiboner Golpo, কিংবদন্তি ক্রিকেটার থেকে প্রধানমন্ত্রী, ইমরান খানের জীবন কাহিনী, Biography Of Crickter Imran Khan, Biography Of Imran Khan, biography of imran khan pakistani cricketer, biography of imran khan cricketer, imran khan, imran khan biography, cricket, ক্রিকেটার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এর জীবনী, Biography Of Imran Khan In Bangla, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, ইমরান খান এর জীবনী, Biography Of Imran Khan, Imran Khan In Bangla, Imran Khan, ইমরান খান, Prime Minister of Pakistan, Imran Ahmed Khan Niazi, Pakistani politician, former cricketer, chairman of the Pakistan Tehreek-e-Insaf, imran khan life story, imran khan lifestyle, cricketer imran khan great life story

Leave a Reply