এক রুটি খেয়ে যিনি দিন পার করেছেন তিনি আজ বিসিএস ক্যাডার!

মানুষের ইচ্ছাশক্তি থাকলে অর্থাৎ মনোবল থাকলে মানুষ সবকিছুই করতে পারেন। যেমন অদম্য ইচ্ছাশক্তির অধিকারী সায়েম এ বেলা খেয়ে না খেয়েও আজ বিসিএস ক্যাডার! বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় যাওয়ার মতো তেমন কোনে ভালো পোশাক ছিল না সায়েমের। এক বন্ধু তখন তার পাশে এসে দাঁড়ায়। চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত কোনোদিন সকালে নাশতা করেননি তিনি। শুধু দুপুরের দিকে পাঁচ টাকা দামের একটা পাউরুটি খেয়ে দিন পার করতেন এই যুবক সায়েম। সেই ছেলেই আজ বিসিএস ক্যাডার। আজ আপনাদের জন্য রয়েছে সেই সায়েমের গল্প।

লাজুক মেধাবী ছেলেটি আজ দেশসেরা ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম

কুড়িগ্রামে বাড়ি আবু সায়েমের। তার বাবা অন্যের জমিতে কাজ করতেন। বাবার আয়ে তিনবেলা পেটপুরে ভাত জুটতো না তাদের। বাড়তি আয়ের জন্য মা ঘরে বসে কাঁথা সেলাই করতেন। তারপর সেই কাঁথা বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিক্রি করতেন। কতোদিন কতোরাত সায়েম যে না খেয়ে কাটিয়েছেন, সে হিসাব তার জানা নেই।

এখন সায়েমের কষ্টের দিন ঘুচেছে। ৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সমাজকল্যাণে মেধাতালিকায় দ্বিতীয় হয়েছেন আবু সায়েম। সংবাদকর্মীর সঙ্গে কথায় কথায় শৈশবের দিনে ফিরে গেলেন সায়েম, ‘আম্মা খুব ভোরে উঠে অন্য মানুষের পেয়ারাগাছের তলা হতে বাদুড়ে খাওয়া পেয়ারা কুড়িয়ে আনতেন। ওই পেয়ারাই ছিল আমাদের সকালের একমাত্র নাশতা।’

মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পথটি আবিষ্কার

তার ঘরের সামনেই ছিল পেঁপেগাছ। ভাতের জোগাড় না হলে কাঁচা-পাকা পেঁপে খেয়েই থাকতে হতো অনেক সময়। চাল না থাকায় একবার নাকি তার আব্বা খেত থেকে কলাই তুলে আনেন। সেই কলাই ভাজা খেয়েই শুরু হয়ে যায় তার পেটজ্বালা। অসুস্থ হয়ে পড়েন সায়েম। ভাগ্যগুণে সে যাত্রায় বেঁচেও যান সায়েম।

এভাবে অনাহারে-অর্ধাহারে, অসুস্থতায় কাটতো সায়েমের দিনগুলো। তবু পড়াশোনা চালিয়ে যেতেন, কখনও পড়াশুনা ছাড়েননি সায়েম। মাধ্যমিকের ভালো ফলের ধারা ধরে রাখেন উচ্চমাধ্যমিকেও। এইচএসসি পরীক্ষার পর গ্রামের একটি কোচিং সেন্টারে কিছুদিন ক্লাস নিয়েছেন সায়েম।

রোজ একটি করে নতুন ইংরেজি শব্দ শিখতে চান? Google খুললেই হবে, কীভাবে জানুন?

সায়েম বলেন, ‘ক্লাস করিয়ে ২ হাজার ৩শ’ টাকা পেলাম। সেই টাকাতেই আমি ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। ভর্তির সুযোগ পেয়ে গেলাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।’ ছাত্র পড়িয়ে চললো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ও বেঁচে থাকার লড়াই। সে লড়াইয়ে আজ সত্যিই জয়ী হলেন সায়েম। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে অবশেষে বিসিএস পরীক্ষা দিলেন। এরপরের গল্প এখন সবার জানা! আজ সেই সায়েম সত্যিই বাবা মায়ের গর্ব।

সংবাদ মাধ্যমকে সায়েম বলেছেন, ‘মা অন্যের কাঁথা সেলাই করতেন। প্রতি কাঁথা হিসেবে মজুরি পেতেন ৭০ হতে ১০০ টাকা। মায়ের হাতের ১০টি আঙুলে জালির মতো অজস্র ছিদ্র হয়ে গেছে। আজ আমার মায়ের জীবন সার্থক হয়েছে।’

সত্যিই জীবন যুদ্ধে এক অপরাজেয় সৈনিক আবু !সায়েম। ইচ্ছা থাকলে মানুুষ যে সব কিছুই করতে পারে সায়েম তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ!

Leave a Reply