এন. টি আর সি এ এর সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ৩য় গনবিজ্ঞপ্তির ভুল এবং তা সংশোধনের উপায়। ৩য় পর্ব

এন. ট. আর. সি. এ ৩য় শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শূণ্য পদে এন.টি আর.সি. এ’র সুপারিশ প্রাপ্ত পদে নিয়োগ প্রাপ্ত এম. পি. ও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইনডেক্সধারী সহকারী শিক্ষক /প্রভাষকদের আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু কর্মরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছ থেকে কর্মরত শিক্ষকদের পূর্বানুমতি নেওয়ার জন্য বলা হয় নাই।ফলে সমস্যা তৈরি হয়েছে।পূর্বানুমতি না নেওয়ার কারনে প্রতিষ্ঠান প্রধান জানতে পারে নাই, তার প্রতিষ্ঠান থেকে কতজন সহকারী শিক্ষক বা প্রভাষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের আবেদন করেছে। পূর্বানুমতির শর্ত থাকলে শিক্ষকবৃন্দ আগে থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আবেদন করতেন। প্রতিষ্ঠান প্রধান অনুমতি দিলেই কেবল আবেদন গ্রহণ করার শর্ত থাকলে সহকারী শিক্ষক বনাম প্রতিষ্ঠান প্রধান বা ম্যানেজিং কমিটি মধ্যে কোন প্রকার ভুল বুঝা বুঝির সুযোগ থাকত না।
এন. টি. আর. সি. এ. আবেদন করার সুযোগ দিয়ে সিলেকশন করে ইনডেক্সধারীদের প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার শর্তে নিয়োগ দেওয়ার কথা গ্রহণ যোগ্য নয়।এখন যদি কোন প্রতিষ্ঠান প্রধান বা ম্যানেজিং কমিটি ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের ছাড় না দেয়, এ নিয়ে একটি জঠিলতা তৈরি হবে এর দায় কে নিবে। এটা করা কোন ভাবে ঠিক হয়নি। কোন প্রতিষ্ঠান দুটি শূন্য পদে চাহিদা দিয়েছে। তাদের প্রাপ্যতাও তাই ছিল। তিন বছর পরে দুজন শিক্ষক পেয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের ধারণা ছিল তার শিক্ষক স্বল্পতা থেকে মুক্তি পেলেন। কিন্তু দেখা গেল তার ইনডেক্সধারী শিক্ষক ৫ জন শিক্ষক অন্য স্কুলে বদলি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।যদি এই পাঁচ জন শিক্ষক চলে যায় তিনি আবার শিক্ষক স্বল্পতার মধ্যে পরে যাবেন। প্রতিষ্ঠান প্রধান অবশ্যই তার প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের কথা সবার আগে বিবেচনা করবে।তাহলে তিনি কী ঐ পাঁচজন শিক্ষককে অন্য স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিবে?শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা বিবেচনা করে এটা কেউ দেবে না। তাই শুরু হবে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে মানসিক দ্বন্দ্ব। সহকারী শিক্ষক অনুমতি না পেয়ে বিকল্পপথে তার দাবি আদায়ের চেষ্টা করবেন। এখানে অবৈধ ভাবে অনুমতি নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।তবে অনৈতিক সুবিধা কে নিবে এবং কে নিবে না এটা বলা কঠিন হবে। ভালো মন্দ সবার উপর সন্দেহ হবে।
ইনডেক্সধারীদের এবং নতুন নিবন্ধনধারীদের এক সাথে আবেদন করার সুযোগ দেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এখন এ সমস্যা থেকে উত্তরনের একমাত্র সমাধান হলো প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান প্রধানকে তার স্কুলের যে সকল শিক্ষকদের অন্যত্র চাকুরির সুযোগ হয়েছে তাদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া।এ রকম একটি সমস্যা থেকে উত্তরনের উপায় হিসাবে এডহক কমিটিকে শুধুমাত্র এন. টি. আর. সি এ. সুপারিশকৃতদের সহকারী শিক্ষক / প্রভাষকদের নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করেন। তখন অনেক স্কুলের প্রধন এডহক কমিটি নিয়োগের ক্ষমতা নেই বলে কালক্ষেপন করেছেন। ২০২১ সালের জনবল কাঠামো ও এম. পি. ও নীতিমালায়ও এ সুযোগ নেই।
এন.টি. আর. সি. এ ইনডেক্সধারীদের সুযোগ দেওয়া কোন ভাবে ঠিক হয়নি। যদি বদলির প্রয়োজনে এ কাজ করা হয় তবে তা এভাবে করলে, তাতে শূন্য পদ কোন দিনই পূরণ হবে। শুধুমাত্র ইনডেক্সেধারীদের এ সুযোগ দেওয়ার কারনে প্রতিবারই পদ শূন্য হবে। বদলির জন্য জনবল কাঠামোর১২.২ ধারা অনুযায়ী নীতিমালা তৈরি করে বদলির ব্যাবস্থা করতে হবে। যতদিন নীতিমালা তৈরি না হয় ততদিন প্রথমে শুধু ইনডেক্সধারীদের আবেদন নিয়ে তাদের চাহিদা মোতাবেক পদায়ন সম্পন্ন করে বাকী শূন্য পদে নতুন করে নিয়োগ দিতে হবে। তাহলেই কেবল এ সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব।এন.টি. আর. সি.এ যে ইনডেক্সধারীদের আবেদন করার সুযোগ দিলেন এটা তারা কোন আইনে দিলেন।বদলি এবং নতুন ভাবে নিয়োগ দেওয়া এক বিষয় নয়। আমার মনে হয় এন. টি. আর. সি. এ এর ৩য় গনবিজ্ঞপ্তীতে নিম্নলিখিত ভুলগুলো ছিল।
০১.ইনডেক্সধারীদের এবং নিবন্ধন সার্টিফিকেটধারীদের কাছ থেকে এক সাথে আবেদনের সুযোগ দেওয়া।
০২।ইনডেক্সধারীদের আবেদনের সাথে কর্মরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছ থেকে অগ্রহায়ণ পত্র না নেওয়া।
০৩. জনবল কাঠামো ও এম. পি. ও নীতিমালার ১২.২ অমান্য করা।
০৪. প্রতিষ্ঠান প্রধান / ম্যানেজিং কমিটির সাথে সহকারী শিক্ষক / প্রভাষকদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব উসকে দেওয়া।
০৫. অবৈধ লেনদেনের সুযোগ তৈরি করা।
এরূপ সমস্যার সমাধান করার জন্য নিম্নলিখিত দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।
০১.জনবল কাঠামো ও এম. পি. ও নীতিমালার ১২.২ ধারা অনুযায়ী বদলীর প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রনয়ণ করে বদলির ব্যাবস্থা চালুকরা।
০২. সহকারী শিক্ষক /প্রভাষকদের শূন্যপদে
শুধুমাত্র নিবন্ধনধারীদের নিকট থেকে আবেদন চাওয়া। অর্থাৎ নতুনদের থেকে শূন্য পদ পূরণ করা।
০৩.বদলিনীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত শূন্য পদসমূহে প্রথমে ইনডেক্সধারীদের কাছ থেকে আবেদন নিয়ে তাদের চাহিদা মোতাবেক পদায়ন করে বাকী শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
০৪.তবে ইনডেক্সধারীদের বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করতে হলে অবশ্যই কর্মরত শিক্ষক /প্রভষক কে প্রতিষ্ঠান থেকে অগ্রহায়ণ পত্র নিতে হবে।
০৫.নিবন্ধনধারীদের মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে শূন্য পদের চাহিদা আসার সাথে সাথে মেধা তালিকা থেকে অতিদ্রুত শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করতে হবে।
০৬.মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়ার সাথে সাথে তাকে তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
উল্লেখিত প্রস্তাবসমুহ বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জঠিলতা নিরসন হবে এবং শিক্ষক নিয়োগের দীর্ঘসূত্রীতার অবসান ঘটবে।
দুলাল চন্দ্র চৌধুরী
সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ।
ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।

Leave a Reply