এবার মুখ দিয়ে লিখে এইচএসসি জয় করা জোবায়েরের পাশে ডিসি-ইউএনও

মনে শক্তি থাকলেও হাত-পা অকেজো থাকায় দাঁড়াতে পারেন না। শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জোবায়ের হোসেন উজ্জ্বল। মুখ দিয়ে উত্তরপত্র লিখে এইচএসসি পরীক্ষা জয় করেছেন। মেধাযুদ্ধে ৪.৫৮ পয়েন্ট নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে কৃতকার্য হয়েছেন জোবায়ের। –যুগান্তর

বৃহস্পতিবার বিকালে মিঠাপুকুর উপজেলার বালারহাট ইউনিয়নের হয়রতপুর গ্রামের জোবায়েরের বাড়িতে যান মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের সভাপতি ফাতেমাতুজ জোহরা।

 

এ সময় তিনি জোবায়েরের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। তাকে আর্থিক সহযোগিতা হিসেবে পাঁচ হাজার টাকার একটি চেক প্রদান করেন। পরবর্তীতে জোবায়েরের স্বপ্নপূরণে সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা গোলাম রব্বানীসহ কর্মকর্তারা।

Viral Video: পরণে টুকটুকে লাল শিফন, তাই পরেই প্রকাশ্যে একপায়ে ডিগবাজি মহিলার

এর আগে রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিনের সহায়তায় ইতোমধ্যে তাকে একটি ল্যাপটপের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

জানা গেছে, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালারহাট আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন জোবায়ের হোসেন উজ্জ্বল। ৪.৫৮ পয়েন্ট নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে কৃতকার্য হন। হতে চান কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। উজ্জ্বল উপজেলার বালারহাট ইউনিয়নের হযরতপুর গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক জাহিদ সারোয়ারের তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। জন্মের পর থেকে নানা রকম শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় বেড়ে উঠেন উজ্জ্বল। নিজ বিছানাকে শ্রেণিকক্ষ বানিয়ে দিনরাত মুখে কাঠি নিয়ে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে চলত পড়াশোনা। শুধু তাই নয়, মুখ দিয়ে মোবাইল চালিয়ে অনলাইনে ক্লাসও করতেন। মুখে কাঠি নিয়ে কিবোর্ডে আঁচড় ফেলে কম্পিউটারে টাইপ করতেন।

চরম আনন্দ পেতে ট্রাই করুন এই ভঙ্গিমা

উজ্জ্বলের বাবা জাহিদ সারোয়ার জানান, এসএসসি পাস করার পর উজ্জ্বলকে বালারহাট কলেজে ভর্তি করি। করোনার কারণে অটোপাশ দেওয়ার খবরে তার মন খারাপ ছিল। তার ইচ্ছা ছিল, পরীক্ষা দিয়ে সে এইচএসসি বাধা টপকাবে। পরে সশরীরে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত শুনে সে দারুণ খুশি হয়েছিল। বাসা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অটোরিকশায় শুয়ে সে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া-আসা করত। কেন্দ্রে বিছানায় শুয়ে সব পরীক্ষা দেয় উজ্জ্বল। সে পরিবারের বোঝা না হয়ে সরকারি চাকরি করে আত্মনির্ভরশীল হতে চায়।

 

উজ্জ্বল বলেন, সব প্রতিকূলতাকে হারিয়ে এভাবেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। আরও পড়ালেখা করে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। স্বপ্নপূরণে সবার ভালোবাসা ও সহযোগিতা চাই।

 

বালারহাট আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আতোয়ার রহমান বলেন, মেধাবী উজ্জ্বল কোনো দিন কলেজের বেঞ্চ দেখল না, শিক্ষকদের চিনল না। বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও সে ভালো ফলাফল করল। লেখাপড়ার দিকে মেধাবী উজ্জ্বল। সে যে ফল বয়ে এনেছে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীও তা করতে পারেনি।

 

মিঠাপুকুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী বলেন, রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিনের সহায়তায় ইতোমধ্যে তাকে একটি ল্যাপটপের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভতিষ্যতে তার স্বপ্নপূরণ হোক- এটাই আমাদের চাওয়া।

 

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সভাপতি ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, আমরা চাই তার অদম্য অগ্রযাত্রা যেন থেমে না যায় এবং সে যেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে- এজন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসন জোবায়েরের পাশে আছে।

 

 

Leave a Reply