কানে সমস্যা? জেনে নিন সমাধানের উপায়গুলি

মধ্যকর্ণ থেকে অন্তঃকর্ণের মাঝে ত্রিস্তরীয় পর্দার মতো একটি অংশ থাকে যার নাম টিমপ্যানিক মেমব্রেন। শব্দতরঙ্গ কানের পর্দায় কম্পন তৈরি করে। এই কম্পন মধ্যকর্ণের ছোট ছোট হাড়ের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে পৌঁছয়। এরপর অন্তঃকর্ণ থেকে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। তখনই সবাই শুনতে পায়। এটি খুবই স্পর্শকাতর। তাই আঘাতে বা অন্য কোনও কারণে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হলে মধ্যকর্ণে ইনফেকশন থেকে শ্রবণশক্তি লোপ পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

কেন পর্দা ফাটে:

  • কান ও নাকের মধ্যে সর্দি জমে কানে ইনফেকশন হলে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে।
  • বোমা বিস্ফোরণ, জেট প্লেনের আওয়াজ, ১৪০ বা তার বেশি ডেসিবেলের বেশি শব্দে হঠাৎ কানে বাতাসের চাপ বেড়ে যায়। এর ফলে কানের ফুটোতে আঘাতের ফলে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • কান পরিষ্কার করতে বাডস বা কিছু দিয়ে কান খোঁচালে কিংবা কানে কিছু ঢুকে গেলে তা অদক্ষ হাতে বের করার চেষ্টা করলেও কানের পর্দা ফাটতে পারে।

উপসর্গ: কান থেকে পুঁজ বেরনো, কম শোনা, তীব্র ব্যথা, কান ভার হয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা ইত্যাদি।

সদগুরু জাগ্গি‌ বাসুদেব ও তার জীবন ইতিহাস | Sadhguru Jaggi Vasudev

পরীক্ষা নিরীক্ষা:

  • কানের পর্দা ফাটার লক্ষণ দেখা দিলে অটোস্কোপিক পরীক্ষা করা হয়। অটোস্কোপ যন্ত্রের সাহায্যে ডাক্তার সাধারণত খালি চোখে পর্দা ফেটেছে কি না তা বুঝতে পারেন।
  • অড্রিওমেট্রি করে কানের পর্দা ফেটে যাওয়া বা কোনও ক্ষতের জন্য রোগীর শ্রবণশক্তিতে কতটা প্রভাব পড়েছে তা জানা যায়। এছাড়াও ইনফেকশন কানের হাড়ে প্রভাব ফেলেছে কিনা, কানের নার্ভ ঠিক আছে কিনা তাও অডিওমেট্রি করে জানা যায়। সেক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে অপারেশন করেও রোগী পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেন না। সেক্ষেত্রে কানে মেশিন বা হিয়ারিং এইড’ লাগাতে হয়।
  • সাধারণত এক্স-রে ও কানের স্ক্যানের মাধ্যমে কানের পিছনের হাড় অর্থাৎ ম্যাসটোয়েডে কোনও ইনফেকশন হয়েছে কি না তা জানা যায়। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু ও শেষ পর্যন্ত অপারেশন হয়।

কাদের বেশি: পর্দা ফাটা কিংবা ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা দুগ্ধজাত শিশু থেকে ১৫ বছর বয়সে বেশি হয়। কারণ শিশুদের সংক্রমণজনিত কারণে সর্দি কাশি বেশি হয়। ইউস্টেশিয়ান টিউবের গঠনগত কারণে সর্দি, কাশি হলে মধ্যকর্ণে ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মুখের তালু কাটা থাকলে কানে ইনফেকশন হতে পারে।

মেয়েদের স্তন সুন্দর ও আকর্ষণীয় করার নিয়ম

হরেক সমস্যা:
সেন্ট্রাল ইয়ারড্রাম পারফোরেশন: সাধারণত ইনফেকশন বা আঘাত থেকে কানের পর্দার মধ্যভাগে ছিদ্র বা ক্ষত হয়। এক্ষেত্রে প্রথমে অ্যাকিউট স্যাপিউরেটিভ ওটিটিস মিডিয়া বা এ.এস.ও.এম হয়, যা সাধারণত ওষুধে না সারলে তিন মাস বাদে সি.এস.ও.এম বা ক্রনিক স্যাপিউরেটিভ ওটিটিস মিডিয়ায় রূপান্তরিত হয়। সি.এস.ও.এম-তে অপারেশন করেই রোগী সুস্থ হতে পারেন।

কোলেসটিয়াটোমা: মধ্যকর্ণে কোলেসটিয়াটোমা বলে এক ধরনের অস্বাভাবিক ক্যানসারপ্রবণ নয় এমন চামড়ার বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। পিঁয়াজের খোসার মতো এক ধরনের কোশ কানের পর্দার পিছনে মধ্যকর্ণে বাড়তে থাকে। এটি জন্মগত হতে পারে এবং এর কারণে কানে বার বার ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা না করলে কানের হাড়ের ক্ষয় হয়, মুখের নার্ভ বেঁকে যায়, খিঁচুনি, মাথা ঘোরা এবং ব্রেনেও প্রভাব পড়ে। কোলেসটিয়াটোমার সঙ্গে এটিক পারফোরেশন নামক এক ধরনের কানের ক্ষত যুক্ত থাকতে দেখা যায়। দ্রুত অপারেশন না করলে ঝুঁকি বেড়ে যায়। কোলেসটিয়াটোমা থাকলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগ নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে বহিঃকর্ণে কোলেসটিয়াটোমা গঠিত হয়ে কানের চামড়া ছিদ্রের মাধ্যমে মধ্যকর্ণে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক্ষেত্রে অপারেশন করে দ্রুত চিকিৎসা করার অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে।

চিকিৎসা: অনেক ক্ষেত্রে কানের পর্দা ফুটো হয়ে গেলে তা ওষুধে সেরে যায়। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শমাফিক ওষুধ খেতে হবে। কিন্তু যদি ইনফেকশন কানের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে রোগীর অবস্থা পরীক্ষা করে কোন ধরনের অপারেশন করতে হবে তা ঠিক করা হয়।

  • মাইরিঙ্গোপ্লাস্টি: এই অপারেশনের মাধ্যমে কানের পর্দার পুনর্গঠন হয়। কানের উপরের স্ক্যাল্পের চামড়া থেকে কানের পর্দার যেখানে ক্ষুদ্র ছিদ্র বা ক্ষত দেখা যায় সেখানে লাগানো হয়।
  • টিমপ্যানোপ্লাস্টি: কানের পর্দায় বড় ছিদ্র বা ইনফেকশন থাকলে টিমপ্যানোপ্লাস্টি করা হয়।
  • ওসিকুলোপ্লাস্টি: ইনফেকশন অথবা আঘাতের কারণে যদি কানের তিনটে হাড়ের মধ্যে এক বা একাধিক হাড়ে পচন বা ক্ষতের সৃষ্টি হয় তাহলে ওসিকুলোপ্লাস্টি করা হয়।
  • মাসটয়েডেকটমি: এটি সি.এম.ও.এম অর্থাৎ ক্রনিক স্যাপিউরেটিভ ওটিটিস মিডিয়া অথবা কোলেসটিয়াটোমার জন্য করা হয়। আবার কখনও কখনও এ.এস.ও.এম হলে কানের পিছনের হাড়ের জীবাণুমুক্ত করতেও করা হয়।

বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম-Breastfeeding Mother দুধ খাওয়ানো বিষয়ে ১৪টি ভুল ধারণার অবসান

কান বাঁচাতে কী করবেন:

  • সাধারণ সর্দি-কাশি থেকেও স্থায়ী বধিরতা হতে পারে। যা হয়ত ধরা পড়ার আগেই অনেক বেশি আকার ধারণ করতে পারে। তাই সামান্য সর্দিতেও অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। দীর্ঘদিন সর্দি জমে কানের পর্দায় ক্ষত তৈরি হতে পারে। কানে সামান্য ব্যথা অনুভূত হলেই ইএনটি বিশেষজ্ঞের মতামত নিন।
  • বাচ্চাদের যাতে বারবার সর্দি, কাশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কানে পুঁজ হলে বা বাচ্চা কানে কোনও অস্বস্তি বোধ করলে শীঘ্রই চিকিৎসকের মতামত নিন। বাচ্চাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন ও নিউমোকোক্কাল ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
  • বাডস বা অন্য কিছু দিয়ে কান খোঁচালে সংক্রমণের সম্ভবনা থাকে। সাধারণত যাদের এলার্জির প্রবণতা রয়েছে তাদের কানের ভিতর চুলকায়। কিন্তু বাডস বা অন্য কোনও কিছু দিয়ে কান পরিষ্কার করার চেষ্টা করলে তা আদতে আপনার কানের ক্ষতি করে।
  • নিজে থেকে কানে ড্রপ বা কোনও ওষুধ ব্যবহার করবেন না।

অপারেশনের পর সতর্কতা:

  • সাঁতার কাটা যাবে না।
  • ডাক্তারের পরামর্শমাফিক জীবনযাপন করবেন। অপারেশনের পরে কোনও অস্বাভাবিক সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • কোনওভাবেই বাডস বা অন্য কিছু দিয়ে কান খোঁচাবেন না।
  • বারো বছর বয়সের আগে বাচ্চাদের কানের পর্দা ফেটে গেলে বা কানে কোনও ক্ষত হলে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। যদি সি.এস.ও.এম-এর সঙ্গে কোলেসটিয়াটোমা থাকে তাহলে যে কোনও বয়সে অপারেশন করা হয়।

পরামর্শে যোগাযোগ করুন এই নম্বরে: ০৩৩ ৪০৩১৫০০১

Leave a Reply