কারক কাকে বলে? কারক কয় প্রকার ও কী কী

#কারককাকেবলে #কারককয়প্রকারকীকী

বাংলা ব্যাকরণে “কারক” (কৃ+নক) একটি সুপরিচিত প্রসঙ্গ। কারক শব্দের অর্থ – যা ক্রিয়া সম্পাদন করে। বাক্যে কর্তাই ক্রিয়া সম্পাদন করে। সুতরাং কর্তাই কারক এরকম মনে হতে পারে।কিন্তু ব্যাকরনে শুধু কর্তাই কারক নয়।

কর্তা কী করছে, কার সাহায্যে করছে, কোথায় করছে অর্থাৎ ক্রিয়া সম্পাদনের অবলম্বন,উপকরণ, হেতু স্থান,কাল ইত্যাদি সবকিছুই এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। ক্রিয়া সম্পাদনে ক্রিয়ার সাথে ঐ সব ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, কাল ইত্যাদির যে সম্পর্ক রয়েছে ব্যাকরণে তা কারক নামে অভিহিত।

আরো জানতে: Narration কাকে বলে ? Narration বলতে কি বুঝায় ? Narration কত প্রকার ও কি কি ?

১. কে?দিয়ে প্রশ্ন করলে পাওয়া যায়-কর্তৃসম্পর্ক। যে ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্তৃকারক বলে।

২.কাকে/কী? দিয়ে প্রশ্ন করলে পাওয়া যায়-কর্মসম্পর্ক।ক্রিয়াটি যে বস্তু বা বিষয়কে অবলম্বন করে হয় তা হল কর্মকারক।

৩.কিভাবে/কীদিয়ে/কীসের দ্বারা? প্রশ্ন করলে পাওয়া যায়-করণসম্পর্ক।কর্তা যার সাহায্যে ক্রিয়া সম্পাদন করে তা হল করণকারক।

৪.কাকে(দান বোঝালে)/কার জন্য বা তার উদ্দেশ্যে? প্রশ্ন করলে পাওয়া যায়- সম্প্রদান/নিমিত্তসম্পর্ক।যার উদ্দেশ্যে কাজটি হয় তাকে নিমিত্তকারক বা সম্পাদনকারক বলে।

৫. কোথা থেকে? প্রশ্ন করলে পাওয়া যায় – অপাদানসম্পর্ক।যে স্থান থেকে ঘটে তা হল অপাদানকারক।

৬. কোথায়, কখন, কোন্ বিষয়ে? প্রশ্ন করলে পাওয়া যায় – অধিকরণ সম্পর্ক।যে সময়ে বা স্থানে কাজটি হয় তা হল অধিকরণকারক বলে।

মহারাণি কাশীশ্বরী কোষাগার থেকে দুর্গোত্সবের পূর্বে নিজের হাতে দীনদুঃখীদের জন্য অর্থাদি দান করতেন।

কে দান করতেন? মহারাণি কাশীশশ্বর-কর্তা।

কী দান করতেন? অর্থাদি-কর্ম।

কীভাবে দান করতেন? নিজের হাতে-করণ।

কাদের জন্য দান করতেন? দীনদুঃখীদের জন্য-নিমিত্ত/সম্প্রদান।

কোথা থেকে দান করতেন? কোষাগার থেকে-অপাদান।

কখন দান করতেন? দূর্গোত্সবের সময়-অধিকরণ।

এইভাবে ক্রিয়াকর্ম প্রশ্ন করে বাক্যের ভিতরকার পদগুলির পরস্পরের সম্পর্কটি খুব সহজে বার করা যায়। এই সমস্ত কর্তা-কর্ম-করণ-নিমিত্ত-অপাদান-অধিকরণ প্রভৃতি পদই ব্যাকরণের ভাষায় কারক। কারক পদগুলি ছাড়া বাক্যে আরও দুটি পদ ব্যবহৃত হয় তাদের একটি সম্বন্ধ পদ ও অপরটি সম্বোধন পদ। যে পদ কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয় তাকে সম্বোধন পদ বলে। সাধারণত এই পদ বাক্যের প্রথমেই বসে। যেমন -ওরে, কেষ্ট এদিকে আয়।ছোট্টদা, ভালো আছেন তো? অপরদিকে সম্বন্ধ পদ হল ক্রিয়া সঙ্গে সম্পর্কহীন বিশেষ্য বা বিশেষ্য স্থানীয় সেই পদ যার সাথে বিশেষ্য বা সর্বনামের একটি সম্পর্ক আছে। কাজেই সম্বোধনপদ ও সম্বন্ধপদ কারক নয়, কারণ এদের সঙ্গে বার্ষিক ক্রিয়া কোনো সম্পর্ক নাই।

আরো জানতে: Person কাকে বলে? Person কত প্রকার ও কি কি? Person কাকে বলে? Person কত প্রকার ও কি কি?

কারক কাকে বলে?

সংজ্ঞাঃ বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সাথে নামপদ বা বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের যে সম্পর্ক তাকে কারক বলে। বিশেষণপদ যখন বিশেষ্য রূপ ব্যবহৃত হয় তখন তাকেও কারক বলে

কারক কত প্রকার?

বাংলা ব্যাকরনে দেখা যায় বাক্যে ক্রিয়াপদের সাথে নামপদের ছয় ধরনের সম্পর্ক হতে পারে। সূতরাং কারক ছয় প্রকার।  যথা-

১) কর্তৃকারক

২) কর্মকারক

৩) করণ কারক

৪) সম্প্রদান কারক

৫) অপাদান কারক

৬) অধিকরণ কারক

কারকের প্রকারভেদ – বিস্তারিত

নিচে ছয় প্রকার কারকের বর্ণনা দেয়া হলো ঃ-

কর্তৃকারক

সংজ্ঞা : বাক্যে কর্তার সাথে ক্রিয়ার যে সম্পর্ক তাকে কর্তৃকারক বলে।

উদাহরণ ঃ

“তানিয়া পড়ছে ”

এই বাক্যে কর্তা হচ্ছে তানিয়া।

ক্রিয়াকে কে? বা কারা? প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই কর্তৃকারক।

উপরের বাক্যে কে পড়ছে ? তানিয়া। সূতরং তানিয়া কর্তৃকারক। ওরা খেলছে। কারা খেলছে? ওরা। এখানে ওরা কর্তৃকারক।

কর্মকারক

সংজ্ঞা ঃ কর্তা যাকে অবলম্বন করে ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্মকারক বলে।

উদাহরন ঃ

“আব্দুল্লাহ লিচু কিনছে”

ক্রিয়াকে কি? বা কাকে? প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাকে বলে কর্ম। আর কর্মের সাথে ক্রিয়াপদের সম্পর্কই কর্মকারক।

এই বাক্যে আব্দুল্লাহ কী কিনছে? লিচু। সূতরং লিচু কর্মকারক। রফিক শার্ট রোদে শুকাতে দিচ্ছে? কি দিচ্ছে? শার্ট। এখানে শার্ট হচ্ছে কর্মকারক।

করণ কারক

সংজ্ঞা ঃ যার সাহায্যে ক্রিয় সম্পদিত হয় তাকে করণ কারক বলে।

উদাহরণ ঃ

“অবন্তী ফুল দিয়ে ঘর সাজায়”

“করণ” শব্দের অর্থ উপায় বা সহায়। বাক্যের ক্রিয়পদকে কার দ্বারা? বা কী উপায়ে? ্জিজ্ঞসা করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই করণ কারক।

উপরের বাক্যে অবন্তী কি দিয়ে ঘর সাজায়? ফুল দিয়ে। অর্থাৎ এই বাক্যে ফুল হচ্ছে করণ কারক।

সম্প্রদান কারক

সংজ্ঞা ঃ যার উদ্দেশ্যে স্বত্ব ত্যাগ করে কোনো কিছু দেয়া যায় তাকে সম্প্রদান কারক বলে।

উদাহরন ঃ

“গরিবের ছেলেটিকে ভাত দাও”

এই বাক্যে গরিবের ছেলেকে ভাত দেয়ার ক্ষেত্রের কোনো ধরনের স্বত্ব নেই। এক্ষেত্রে গরিবের ছেলেটি সম্প্রদান কারক।

একটা কথা জেনে রাখা ভালো, আধুনিক ব্যাকরণবিদেরা সম্প্রদান কারক স্বীকার করতে চান না। তাঁদের মতে এটি কর্মকারকের অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিৎ। তবুও প্রথাগত বাংলা ব্যাকরণে সম্প্রদান কারকের ব্যবহার এখনো আছে।

অপাদান কারক

সংজ্ঞা ঃ যা থেকে ক্রিয়া সম্পাদিত হয় এবং ক্রিয়ার বিচিত্র ভাবের প্রকাশ ঘটে তাকে অপাদান কারক বলে।

উদাহরণ ঃ

“আখ হতে গুঢ় হয়”

 

এই বাক্যে গুঢ় হওয়ার কাজটি সম্পন্ন হয় আখ হতে। সুতরাং আখ হচ্ছে অপাদান কারক।

অধিকরণ কারক

সংজ্ঞা ঃ যে “সময়” বা “স্থান” কে আশ্রয় করে কর্তা তার কর্ম সম্পাদন করে সেই সময় বা স্থানকে অধিকরণ কারক বলে।

উদাহরণ ঃ

দুয়ারে দাড়ায়ে প্রার্থী, ভিক্ষা দেও তারে।

এই বাক্যে দুয়ারে হচ্ছে অধিকরণ কারক।

কিভাবে কারক নির্ণয় করতে হয়?

কিছু ছোট ছোট প্রশ্ন করে সহজেই কারক নির্ণয় করা যায়।

আরো জানতে: Parts Of Speech কাকে বলে.? কত প্রকার ও কি কি.?

প্রশ্নসমূহ

কারকের নাম

কে, কার?

কর্তৃকারক

কী করে?

কর্মকারক

কাকে?/ কার জন্যে?

সম্প্রদান কারক

কোথা থেকে?

অপাদান কারক

কি দিয়ে?

করণ কারক

কোথায় করে? কখন?

অধিকরণ কারক

যেমন ঃ বেগম সাহেবা প্রতিদিন ভাঁড়ার থেকে গরিবদের চাল দিতেন/

প্রশ্নসমূহ

কারকের নাম

কে দেয়?

বেগম সাহেবা (কর্তৃকারক)

কী দেয়?

চাল (কর্মকারক)

কি দিয়ে দেয়?

হাত (করণ কারক)

কোথা থেকে দেয়?

ভাঁড়ার ( অপাদান কারক)

কাকে দেয়?

গরিবকে (সম্প্রদান কারক )

কখন দেয়?

প্রতিদিন (অধিকরণ কারক)

কারক নির্ণয়ের সহজ পদ্ধতি – ছন্দে ছন্দে কিভাবে কারক নির্নয় করা যায়?

প্রশ্ন করো কে বা কারা

কর্তা তোমায় দিবে সাড়া।

প্রশ্ন করো কি বা কাকে

পাবে তখন কর্মটাকে।

প্রশ্ন করো দ্বারা , দিয়া

করণ তোমার হবে প্রিয়া।

প্রশ্নকরো শুধু কাকে,

পাবে তখন সম্প্রদানটাকে।

প্রশ্ন করো হতে,থেকে

আটকে ধরো অপাদানটাকে।

প্রশ্ন করো কোথায়,কখন

তখন পাবে অধিকরণ।

বিভক্তি কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি , কারক কয় প্রকার ও কি কি, কারক কাকে বলে উদাহরণসহ, বিভিন্ন প্রকার কারক কাকে বলে ও কয় প্রকার, কারক শব্দের আক্ষরিক অর্থ কি, কর্তৃ কারক কাকে বলে কারক শব্দের অর্থ কি, কারক কাকে বলে উদাহরণসহ, বিভিন্ন প্রকার কারকের পরিচয়

Leave a Reply