কোন পরীক্ষায় কোন রোগ নির্ণয় হয় | Diagnostic test report l Pathology medical check up diagnostic

আমাদের দেশে সরকারিভাবে বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যবীমা নেই। মাসিক অর্জিত অর্থ সাধারণত কতটুকু সুস্থতার জন্য বরাদ্দ রাখা হবে তা নিয়ে বেশিরভাগ মানুষের সুনির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা থাকে না। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অভ্যাস এদেশের মানুষের নেই বললেই চলে।

তাই যখন আমরা অসুস্থ হই তখন চিকিৎসকের শরনাপন্ন হলে পরীক্ষা করানোর উপদেশ দেন চিকিৎসকরা রোগ ধরার প্রাথমিক ধাপ হিসাবে। এই পরীক্ষা নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক ভুল বুঝাবুঝির উপলক্ষ রয়েছে, রোগী মাত্রই ভাবেন বেশি বা অযাচিত দিয়েছেন পরীক্ষা।

রোগীকে কোন পরীক্ষা কেন দেওয়া হয়েছে তা সঠিকভাবে বুঝিয়ে হয়ত দেওয়া হয় না বলেই হয়ত এই বিপত্তি। কোনো পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক কী প্রত্যাশা করছেন, কোন পরীক্ষার সঙ্গে অন্য আরেকটি পরীক্ষার কী ধরনের সম্পর্ক থাকতে পারে তা বুঝিয়ে দিলে বিপত্তি অনেকাংশেই হয়ত থাকবে না। রোগীর অতিরিক্ত চাপ থেকে সময়ের অভাবে এই সমস্যা তৈরি হলে রোগীকে সেটি মানবিকভাবেই বিবেচনা করা উচিত। এটাও স্বাভাবিক যে রোগী তার রোগ নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকবে।

চিকিৎসকগণ যেসকল পরীক্ষা দিয়ে থাকেন তার মাঝে যে কয়েকটি রয়েছেঃ

কোন পরীক্ষায় কোন রোগ নির্ণয় হয়

১. সিবিসি

২. রুটিন একজামিনেশান অব ইউরিন

৩. লিভার ফাঙ্কশান টেস্ট

৪. কিডনি ফাঙ্কশান টেস্ট ইত্যাদি।

মনে হতে পারে কেন এতো পরীক্ষা বা একটি দিলেও সেটি কেন? আসুন জেনে নিই চিকিৎসকরা কোন টেস্ট কী রোগের সন্দেহে দিয়ে থাকেন।

সিবিসি: একটি সিবিসি একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষা যা বিভিন্ন কারণে করা হয়। রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য পর্যালোচনা: রোগীর সাধারণ স্বাস্থ্যের ওপর নজর রাখতে এবং রক্তস্বল্পতা জাতীয় বিভিন্ন রোগের জন্য স্ক্রিন করার জন্য ডাক্তার একটি রুটিন মেডিকেল পরীক্ষার অংশ হিসাবে সিবিসি করার পরামর্শ দিতে পারে।

রোগের সামগ্রিক অবস্থা নির্ণয় করা: রোগীর দুর্বলতা, অবসন্নতা, জ্বর, প্রদাহ, ক্ষত বা রক্তপাতের অভিজ্ঞতা থাকলে ডাক্তার সম্পূর্ণ সিবিসি পরামর্শ দিতে পারে। সিবিসি পরীক্ষা এই লক্ষণগুলি ও লক্ষণগুলির কারণ নির্ণয় করতে সহায়তা করতে পারে। ডাক্তার যদি সন্দেহ করে যে রোগীর কোনও সংক্রমণ রয়েছে তবে পরীক্ষাটি এটি নির্ণয় নিশ্চিত করতেও সহায়তা করতে পারে।

চিকিৎসারত রোগীর বর্তমান অবস্থা নিরীক্ষণ: রোগীর রক্তের সেলকে প্রভাবিত করে এমন একটি রক্ত ব্যাধি দ্বারা চিহ্নিত হয়ে থাকেন তবে ডাক্তার রোগীর অবস্থার উপর নজর রাখতে সিবিসি ব্যবহার করতে পারেন। রক্তের সেলের পরিমাণকে প্রভাবিত করতে পারে এমন কিছু গ্রহণ করা হলে রোগীর স্বাস্থ্যের নিরীক্ষণের জন্য সিবিসি ব্যবহার করা হয়। সিবিসি সাধারণত একটি চূড়ান্ত নির্ণয়ের পরীক্ষা নয় ।

চিকিত্সক যে পরীক্ষার জন্য এই পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন তার উপর নির্ভর করে স্বাভাবিক পরিসরের বাইরে ফলাফলগুলি অনুসরণ করতে পারে বা নাও পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি স্বাস্থ্যবান হন এবং অসুস্থতার লক্ষণ বা লক্ষণ না থাকে তবে সিবিসি স্বাভাবিক পরিসরের বাইরে সামান্য ফলাফল উদ্বেগের কারণ নাও হতে পারে, এবং এর জন্য ফলোআপের প্রয়োজন নাও হতে পারে।

কোন পরীক্ষায় কোন রোগ নির্ণয় হয়

রোগীর জ্বর নানা কারনে হতে পারে, জ্বরকে সাধারন বলা যায় না।কারন পরিপূর্ণভাবে বের না করা ভবিষ্যতে আরও বড় কিছু হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। রক্তের রিপোর্ট সেই কারণ বের করার প্রাথমিক ধাপ। ইউরিন বা প্রস্রাব পরীক্ষা রক্তের সিবিসির পরবর্তী একেবারে কমন পরীক্ষা হল রুটিন ইউরিন একজামিনেশন। এর মাধ্যমে রোগী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিনা, কিডনি থেকে প্রস্রাব করার রাস্তার একেবারে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত কোনও ইনফেকশান আছে কিনা, ফাঙ্গাস আক্রান্ত কিনা, কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কিনা তার প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। অনেক রোগ রয়েছে যা কিডনিকে ক্ষতি করে, ইউরিন বা প্রস্রাব পরীক্ষা করা ছাড়া তার সম্পরকে ধারণা পাওয়া দুষ্কর।

লিভার ফাঙ্কশান টেস্ট নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে প্রায়শই লিভার ফাংশন টেস্টের পরামর্শ দেওয়া হয়:

১. হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি এর মতো লিভারের সংক্রমণের ক্ষয়ক্ষতি পরীক্ষা করতে,

২. লিভার বা যকৃত প্রভাবিত করার জন্য পরিচিত কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি পর্যবেক্ষণ করতে,

৩. রোগী যদি ইতিমধ্যে কোনও লিভারের রোগ থাকে তবে এই রোগটি পর্যবেক্ষণ করতে এবং একটি নির্দিষ্ট চিকিত্সা কতটা ভাল কাজ করছে,

৪. ডাক্তার যদি দেখেন রোগীর মাঝে লিভার ডিজঅর্ডারের লক্ষণগুলি রয়েছে।

৫. রোগী যদি উচ্চতর ট্রাইগ্লিসারাইডস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বা রক্তস্বল্পতার মতো কিছু নির্দিষ্ট শর্ত থাকে

৬. রোগী যদি পিত্তথলি রোগের ইতিহাস থাকে।

কিডনি ফাঙ্কশান টেস্ট কেন করা হয়? রোগীর কিডনিতে সমস্যা চিহ্নিত করতে পারে এমন লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে: উচ্চ রক্তচাপ প্রস্রাবে রক্ত প্রস্রাব করার জন্য ঘন ঘন urges প্রস্রাব শুরু করা অসুবিধা বেদনাদায়ক প্রস্রাব শরীরে তরল তৈরির কারণে হাত ও পা ফোলা একক লক্ষণ বলতে মারাত্মক কিছু বোঝাতে পারে না। যাইহোক, একই সঙ্গে সংঘটিত হওয়ার সময়, এই লক্ষণগুলি পরামর্শ দেয় যে রোগীর কিডনিগুলি সঠিকভাবে কাজ করছে না।

কিডনি ফাংশন পরীক্ষা কারণ নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে। এখন দেখা গেলো সব রিপোর্ট স্বাভাবিক তাহলে কি ডাক্তার ভুল করেছেন?

রিপোর্ট স্বাভাবিক হলেই যে ডাক্তার অসাধু উদ্দেশ্যে দিয়েছেন তা বলা যাবে না। চিকিৎসা শাস্ত্রের এ পর্যন্ত যেসকল বই বের হয়েছে তাতে স্পষ্ট করে লেখা আছে রুটিন বেজ লাইন একজামিনেশান করে রোগের চিকিৎসা ধাপে ধাপে এগুনোর জন্য। আর্থ সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় হয়ত চিকিৎসক পরীক্ষা কমিয়ে দিতে পারেন বা নাও করাতে পারেন নিজস্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে। তবে মানুষ যেমন প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার চেষ্টা চালায় তেমনি জীবাণুও চেষ্টা করে।

তাই রোগের ধরন কিন্তু পাল্টায়, গবেষণা চলে প্রতিনিয়ত কিভাবে এসব কে জয় করা যায়। অনেকেই ভেবে থাকেন ডাক্তারের কাছে গেলেই টেস্ট দিবেন তার চেয়ে দোকান থেকেই চিকিৎসা নিয়ে ফেলি। এতে রোগের লক্ষন চলে যায় হয়ত তবে অন্য অনেক সমস্যার সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যে জীবাণুর বিরুদ্ধে যে ওষুধ ব্যবহার করা দরকার তার অভাবে সেই জীবাণু পরবর্তীতে আরও ক্ষতি করার শক্তি অর্জন করে নয়ত সেই ওষুধ টি অকার্যকর হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ডাক্তার সময় দেয়না কথা শুনার এটি আমাদের অভিযোগ। অমুলক নয় একেবারে। বড় ডাক্তারের সঙ্গা আসলে আপেক্ষিক।

সঠিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন সঠিক রোগ নির্ণয়। প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি হলো চিকিৎসকের কাছে সঠিকভাবে আপনার সমস্যাগুলো বলা। এরপর চিকিৎসক আপনার প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন এবং কিছু কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে দেন। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার কিছু করানো হয় সঠিক রোগের দিকে এগোনোর জন্য, আর কিছু করানো হয় সম্ভাব্য অন্য মারাত্মক রোগগুলোর অনুপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য। বিশ্বব্যাপী এটিই চিকিৎসার আদর্শ নিয়ম। সঠিক নিয়মে পরীক্ষা না করার কারণে অনেক সময় ভুল রিপোর্টও আসে।

■ অনেকগুলো পরীক্ষার জন্য কয়েকবার রক্ত নিলে শরীরের রক্ত কমে যায়—এ ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। মানুষের শরীরে স্বাভাবিকভাবে যতটা রক্ত থাকে, তার খুব সামান্য অংশই পরীক্ষার সময় নেওয়া হয়। রক্তদানের সময় শরীর থেকে প্রায় আধা লিটার রক্ত নেওয়ার নিয়ম, সে তুলনায় দু-এক টেস্টটিউব ভর্তি রক্ত কিছুই নয়।

■ কখন কীভাবে রক্ত দেবেন চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন। চেষ্টা করুন মানসম্মত ল্যাবে পরীক্ষাগুলো করাতে।

■ কিছু পরীক্ষা খালি পেটে করাতে হয়। যেমন খালি পেটে রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষার জন্য অন্তত আট ঘণ্টা খালি পেটে থাকতে হয়। রক্তে চর্বির মাত্রা পরীক্ষা করাতে ৯-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত খালি পেটে থাকার নিয়ম। খালি পেটে থাকার অর্থ হলো আপনি এই সময়টাতে কেবল পানি পান করতে পারবেন। ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য খালি পেটে রক্ত নেওয়ার পর অনেক ক্ষেত্রে গ্লুকোজ পানি খেতে বলা হয় এবং এর দুই ঘণ্টা পর পুনরায় পরীক্ষার জন্য রক্ত নেওয়া হয়। এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো খাবার খাওয়া যাবে না, বেশি পরিশ্রমও করা যাবে না। সময়ের হেরফেরে পরীক্ষার ফলাফলে পরিবর্তন আসতে পারে।

■ প্রস্রাব পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট টিউব সংগ্রহ করার পর আপনার কিছু করণীয় রয়েছে। প্রস্রাব করার পূর্বে প্রস্রাবের জায়গা পরিষ্কার করে নিন। নারীদের ক্ষেত্রে পরিষ্কার করার নিয়মটি হলো সামনে থেকে পেছনের দিকে। প্রস্রাবের প্রথম অংশটুকু টিউবে নেবেন না। মাঝামাঝি সময়ের প্রস্রাবটুকু নিতে চেষ্টা করুন। একেবারে শেষের অংশটাও নেবেন না।

■ চিকিৎসক যে পরীক্ষা লিখে দেবেন, সেগুলোর জন্য কোনো নির্দিষ্ট প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে কি না, তা জেনে নিন।

■ আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এন্ডোস্কপি, কলনোস্কপি প্রভৃতি পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট প্রস্তুতির প্রয়োজন। যেখানে পরীক্ষা করাবেন, আগেই সেখানে কথা বলে জেনে নিন আপনার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির বিষয়ে।

>প্রশ্ন-উত্তর
প্রশ্ন: ঘুমন্ত অবস্থায় পা নড়াচড়া করে। এর প্রতিকার কী?
উত্তর: সম্ভবত আপনার রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম আছে। একজন নিউরোলজিস্ট বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো হবে।
ডা. আ ফ ম হেলালউদ্দিন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

দুই পরীক্ষায় জানুন কিডনি রোগ হয়েছে কি না

কিডনি রোগ বেশ জটিল। তবে এই জটিল রোগ প্রতিরোধ করা যায় কেবল দুটো পরীক্ষার মাধ্যমে। আর সেগুলো হলো রক্তের ক্রিয়েটিনিন ও প্রস্রাবে অ্যালবুমিন পরীক্ষা।

কিডনি রোগ প্রতিরোধ, কিডনি রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা, কাদের এই পরীক্ষা করতে হবে—এসব বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১৯৮তম পর্বে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ। বর্তমানে তিনি বিআরবি হাসপাতালের কিডনি রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : কিডনি রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আসলে কী করণীয়?

উত্তর : কিডনি রোগ ভয়াবহ। ভয়াবহ বললে তো সবাই ভয় পেয়ে যায়। তবু বলি, এটা ভয়াবহই। কেন ভয়াবহ? এটা খুব প্রচলিত। আমাদের দেশে তাকালে দেখব, দুই কোটির বেশি লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। ঘণ্টায় পাঁচজন মারা যায় কিডনি বিকল হয়ে। আর প্রতিবছর চল্লিশ হাজারের বেশি রোগীর কিডনি বিকল হয়ে মারা যায়।

আবার যদি দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের কথা বলি, এটি কিন্তু ধীরে ধীরে এগোতে থাকে। আমরা বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখেছি, বাংলাদেশে ১৬ থেকে ১৮ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ রয়েছে। এগুলো সুপ্ত, ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে।

রোগটি কতটা তীব্র, সে অনুযায়ী পাঁচটা ভাগে ভাগ করা হয়। এক, দুই, তিন, চার পর্যায়ে লক্ষণগুলো বোঝাই যায় না। কিডনি রোগের কারণে সে কিন্তু মারা যাচ্ছে না। তবে এর কারণে অন্যান্য রোগের আক্রমণ সাধারণের চেয়ে ২৯ গুণ বেশি হতে পারে। কাজেই যত রোগী কিডনি ফেইলিউর হয়ে মারা যাচ্ছে, এর চেয়ে অনেক বেশি মারা যায় হার্ট ফেইলিউর হয়ে। এ জাতীয় সমস্যা থেকে অন্য জটিলতা বেশি হয়। এই জন্য একে বলা হয় ‘ডিজিস মাল্টিপ্লায়ার’।

এবার বলছি কীভাবে চিনব রোগটিকে? যেহেতু লক্ষণ প্রকাশ পায় না, তাই বোঝা খুব কঠিন। কিন্তু আমরা যদি দেখি যারা খুব ঝুঁকিতে রয়েছে, তারা যদি মাত্র দুটো পরীক্ষা করে, তাহলে রোগ ধরতে পারবে। একটি হলো রক্তের ক্রিয়েটিনিন। এতে বের করা যায় ১০০ ভাগের মধ্যে কিডনি কত ভাগ কাজ করছে। আরেকটি হলো প্রস্রাবে কোনো অ্যালবুমিন যাচ্ছে কি না। এই দুটো পরীক্ষা করলেই ৯০ ভাগের বেশি ক্ষেত্রে কিডনি রোগ রয়েছে কি না, সেটা বোঝা যায়। যে কেউ এই পরীক্ষা করতে পারে।

যাদের অবশ্যই করতে হবে, তাদের বছরে অন্তত দুবার করা উচিত। কাদের করতে হবে? তারা হলো, যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, যাদের কখনো শরীর-মুখ ফুলে গিয়েছে, যাদের ওজন বেশি, যারা ধূমপান করে, যারা ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছে, তীব্র অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছে, কারো যদি জন্মগত ত্রুটি থাকে অথবা যদি প্রস্রাবে বাধা থাকে। যেমন : যারা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, তারা পঞ্চাশের ওপর গেলে কিন্তু প্রোস্টেট বড় হয়ে যায়, কারো যদি ঘন ঘন প্রস্রাবে সংক্রমণ হয়ে থাকে অথবা পাথর হয়ে থাকে, সবাই কিন্তু এই কিডনি রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া যাদের বয়স চল্লিশের ওপর, সবারই বছরে অন্তত দুটো করে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগ ধরা পড়বে। প্রাথমিক অবস্থায় এটি শনাক্ত করা যেতে পারে। আসলে ভয়াবহ বললে সবাই ভয় পেয়ে যাচ্ছে।

পাশাপাশি আরেকটি সুসংবাদ রয়েছে। আমরা একটু সচেতন হলে পঞ্চাশ থেকে ষাট ভাগ ক্ষেত্রে এই ভয়াবহ কিডনি বিকল প্রতিরোধ করতে পারি। কিন্তু যখন বিকল হয়ে যায়, এর চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল হয় যে শতকরা ১০ ভাগ রোগীও এর চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন না।

তাহলে প্রতিরোধের উপায়গুলো কী? লাইফস্টাইল বা আমাদের যে জীবনধারা রয়েছে, সেই জীবনধারার কিছু যদি পরিবর্তন করলে এটি প্রতিরোধ করা যায়।

দেখা যায়, তিন কিলোমিটার, দুই কিলোমিটার দূরে অফিস হলেও আমরা গাড়িতে করে যাই। আমরা গাড়িতে না উঠে হেঁটে গেলে, অর্থাৎ আমরা কাজ করলে, আমরা হাঁটলে, ব্যায়াম করলে, দেখা যাবে, রোগ প্রতিরোধ করা যায়। অনেকগুলো বিষয় রয়েছে, যে কারণে কিডনি রোগ বেড়ে যায়। যেমন : উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এগুলো কিন্তু কমে যাবে।  কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। কিডনি রোগের পাশাপাশি আরো কিছু রোগ থেকে রেহাই পেতে পারে এই জীবনধারা মেনে চললে।

ব্যায়াম করতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো খাবার। খাবারের মধ্যে যেগুলো অবশ্যই থাকতে হবে, সেগুলো হলো, শাকসবজি এবং কিছু ফল। সেইসঙ্গে মাছ-মাংস থাকবে পরিমিতভাবে। শর্করা জাতীয় খাবার ভাত, রুটি যেগুলো খাই, সেগুলো থাকবে। তবে চর্বিজাতীয় খাবারের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যেগুলোতে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকে, ফাস্টফুড এড়িয়ে যেতে হবে। গরু, খাসির মাংস যেগুলো তেলযুক্ত রয়েছে, সেগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। ঘি থেকে রান্না করা খাবার, ডিমের কুসুম, দুধের সর এগুলোতে কোলেস্টেরল বেশি থাকে। এগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। তবে যেগুলো ভেষজ তেল, সেগুলো খেতে পারি। মাছের তেল আমরা খেতে পারি। এরপর যেটি আসে, সেটি হলো ধূমপান। ধূমপান কেবল ক্যানসারই করে না, এটি সরাসরি কিডনিকে নষ্ট করে।

এরপর যেটি আসে, সেটি হলো স্থূলতা। স্থূলতা যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী, তেমনি এ থেকে ক্যানসারও হতে পারে; হাড়গুলো ক্ষয় হয়ে যায় এবং এটি সরাসরি কিডনির ছাঁকনি নষ্ট করে দেয়। কাজেই আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমরা ব্যথার ওষুধ যত্রতত্র খাব না। এগুলো যদি আমরা এড়িয়ে চলতে পারি, তাহলে ভালো থাকতে পারি।

জন্মগত কিছু কিডনি রোগ হয়। বাচ্চাদের জন্মের পরপর পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত জন্মগত ত্রুটি রয়েছে কি না। একটু আলট্রাসনোগ্রাম করলে এগুলো বোঝা যায়।

আমাদের এই কয়েক দিনের কাজই হলো এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, হাসপাতালে, বাইরে, মিডিয়ায় সব জায়গায় আমরা কাজ করে মানুষকে জানাতে চাইছি। দ্বিতীয়ত, যেই পরীক্ষাগুলো ব্যয়বহুল, সেগুলো দরিদ্রদের জন্য স্বল্পমূল্যে বিআরবি হাসপাতাল করে দিচ্ছে। কিডনি রোগ থাকলে তাদের বিনা পয়সার চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে।

যোগ্যতা সম্পন্ন ডাক্তারের অভাব কিন্তু অনেকটাই কমে এসেছে বর্তমানে। যে ডাক্তার বেশী রোগী দেখেন তিনিই যে বড় তা কিন্তু নয়, অনেকেই রয়েছেন আপনাদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার দক্ষতা সম্পন্ন। কাজেই চিকিতসকের যেমন এই ব্যাপারে কর্তব্য রয়েছে তেমনি রোগীদেরও রয়েছে সঠিক ভাবে রোগের চিকিৎসা সঠিকভাবে নেওয়ার রাস্তা সুগম রাখার। আস্থাহীনতার দোলাচলে পড়ে যেন আমরা পথ হারিয়ে না ফেলি সেটিই আমাদের সকলের কাম্য।

Leave a Reply