জমি-ঘর পেলেন সেই আসপিয়া

পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ডাক পেয়ে রংপুরে ছয় মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণরত সেই আসপিয়া ইসলাম কাজলের (১৯) জন্য বরিশালের হিজলা উপজেলায় সরকারি জমিতে নবনির্মিত ঘরটি হস্তান্তর করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের খুন্ন গোবিন্দপুর এলাকায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ জমির দলিল ও নির্মিত ঘরের চাবি আসপিয়ার মা ঝর্না বেগমের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এসব তুলে দেন বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ ও বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দার।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বকুল চন্দ্র কবিরাজ, উপজেলা চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন ঢালীসহ অন্য কর্মকর্তারা।

নতুন ঘরের চাবি পেয়ে আনন্দে আপ্লুত আসপিয়ার মা ঝর্না বেগম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন। তবে রংপুরে প্রশিক্ষণে থাকায় আসপিয়া ইসলাম কাজল উপস্থিত ছিলেন না।

গুগল কোডস ব্যবহার করে লোকেশন শেয়ারের নিয়ম

আসপিয়ার মা ঝর্না বেগম জাগো নিউজকে বলেন, আমার শ্বশুরবাড়ি ভোলার চরফ্যাশনে। আমার স্বামী শফিকুল ইসলাম প্রায় তিন দশক আগে কাজের সন্ধানে বরিশালের হিজলায় আসেন। সেখানে এসে ঠিকাদারি কাজ করতেন। বিয়ের পর আমাকে নিয়ে বরিশালের হিজলায় একটি বাসাভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই জন্ম হয় আসপিয়াসহ তিন মেয়ে এবং এক ছেলের। ২০১৯ সালে শফিকুল ইসলামের মৃত্যু হয়। পরে আমরা হিজলা উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর এলাকার মেজবাহ উদ্দিন অপু চৌধুরীর বাড়ির একটি ঘরে আশ্রিত হিসেবে বসবাস করে আসছিলাম।

 

ঝর্না বেগম বলেন, পুলিশে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে আবেদন করেছিল আসপিয়া। গত ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইন্সে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও উত্তীর্ণ হয়। এরপর ২৪ নভেম্বর একই স্থানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হয়। ২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইন্সে চিকিৎসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আসপিয়ার। এতেও উত্তীর্ণ হয় সে। সবশেষ ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেখানেও উত্তীর্ণ হয় আসপিয়া। এরপর নিয়ম অনুযায়ী পুলিশের পক্ষ থেকে আসপিয়ার স্থায়ী ঠিকানা, নাম, পরিচয় তদন্ত করে দেখা হয়। তবে ওই সময় ঘটে বিপত্তি। কারণ তারা হিজলায় একজনের বাড়িতে আশ্রিত ছিলেন। এ কারণে আসপিয়ার পুলিশে নিয়োগ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পূজা পর্যায়

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নিয়োগ নিয়ে সব অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে জানিয়ে ঝর্না বেগম বলেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে বলে আসপিয়ার নিয়োগ নিয়ে জটিলতা দূর হয়েছে। আজ আমার হাতে ঘরের দলিল ও চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন আমাদের মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে। আর আমাদের আশ্রিত হিসেবে পরিচয় দেওয়া লাগবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বকুল চন্দ্র কবিরাজ জাগো নিউজকে বলেন, আসপিয়া যাতে কনস্টেবল পদে চাকরি পেতে পারে সেজন্য সরকারি জমিতে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার এমন নির্দেশনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পেয়ে আসপিয়ার জন্য হিজলায় জমির স্থান নির্ধারণ করা হয়। আসপিয়া ও তার মা ঝর্না বেগমের জমি পছন্দ হলে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে তার দুই কক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা ঘরের সব কাজ শেষ করা হয়েছে।

বস্তির সেই মেয়ে এখন মাইক্রোসফটের বড় কর্মকর্তা

ইউএনও আরও বলেন, আসপিয়া ইসলাম কাজল বর্তমানে রংপুরে ছয় মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণে রয়েছেন। ছুটি নিয়ে আসতে না পারায় তার মা ঝর্না বেগমের কাছে ঘরের জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে জমির দলিল আসপিয়া এবং তার মা ঝর্না বেগমের নামে করা হয়েছে।

Leave a Reply