জারজ বলে কোন গালি হতে পারে না কারণ সে তো অন্যান্য সন্তানের মতোই মায়ের গর্ভে ভূমিষ্ঠ হয়েছে, তার তো জন্ম নেওয়াটা কোন পাপ ছিল না -জাহাঙ্গীর আলম

মধ্য রাতে আমার মা ও প্রতিবেশি কিছু মহিলার ফিসফিস শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। বিছানা ছেড়ে আমাদের ঘরের বারান্দায় এসে দেখি আমার মা একটু আগে পৃথিবীতে আসা একটা ছোট মানুষের বাচ্চা কোলে নিয়ে বসে আছে। মায়ের পাশে পাগলীটা তখনো কান্না করছে। পাগলীর সারা শরীরে রক্ত। বাচ্চাটা ঐ পাগলীর। প্রতিবেশি নানি পাগলিকে আমাদের টিউবওয়েলের কাছে নিয়ে ঐ রাতে গোসল করিয়ে আমার মায়ের শাড়ী শায়া ও ব্লাউজ পরিয়ে দিয়েছিল।

এক সপ্তাহ পর এক মহিলা এসে আমার মাকে মুখের উপর বলে বসে,” কার না কার বাচ্চা পাগলীটা পেটে ধরেছে আর তুমি ঐ পাগলিটাকে ঘরে আশ্রয় দিয়েছ। সমাজের মানুষের সামনে তোমাদের মতো মহিলাদের জন্য মুখ দেখাতে পারিনা। বের করে দাও বাড়ি থেকে ঐ জা*রজ বাচ্চা আর তার মাকে। ” আমার মা সেদিন জবাব দিয়েছিল,” পাগলীর কি দোষ? ওর তো মাথা ঠিক নেই এজন্যই তো ও রাস্তায় রাস্তায় বাজারে বাজারে ঘুরে বেড়ায় রাত বিরোতে।

রাস্তায় একা পেয়েই তোমাদের সভ্য সমাজের কোন সভ্য লোক তাকে ধরে তার পেটে বাচ্চা দিয়েছে। তোমাদের সমাজের সুস্থ পুরুষগুলোই ঐ কাজ করেছে পাগলীটার সাথে। বের করতে হলে সমাজ থেকে ঐ সুস্থ পুরুষদের বের করে দাও। বাড়ি থেকে খেদাতে হলে ঐ সুস্থ মাথার পুরুষদের খেদাও। আর তুমিও পারলে এখুনি এই মুহূর্তে আমার সামনে থেকে চলে যাও। কখনো আর আসবেনা আমার সামনে।” আমার মা ছিল এমনই।

আরও পড়ুন: সন্তান জন্ম দেওয়ার এত দরকার কেন? From Facebook Taslima Nasrin

 

পরে ঐ পাগলীটা আমার মাকে মা বলে ডাকতো বলে সমাজের অনেক মানুষ অনেক অপমান করতো। তবুও মা আমার সব সহ্য করেছিল। তাছাড়া পাগলীটাকে আমাদের বাড়ি থেকে বের করেও দেয়নি কোনদিনও। মা ঐ পাগলীর খাবার রান্না করা মাঝে মাঝে তার ময়লা কাপড়চোপড় কেচে দেওয়া ছাড়াও ঐ পাগলিটাকে প্রায় প্রায় তার নিজের তোলা শাড়ীও পরতে দিতো। হঠাৎ একদিন রাতে মা মারা গেল সাপে কেটে। কি কান্নাটাই না করেছিল ঐদিন ঐ পাগলীটা আমার মাকে হারিয়ে! পাগলীটার ছেলে আজ অনেক বড় হয়ে গেছে।

পছন্দসই একটা নাম ও দিয়েছিল তার আমার মা । আমার মায়ের দেওয়া নামেই সবাই তাকে এখন ডাকে আলামিন বলে। আলামিনকে অনেক ভালোবাসি আমি। ও এখন আমাদের মফস্বল শহরে থাকে। শহরে যেখানে সেখানে সভ্য ভদ্র লোকদের ফেলে দেওয়া পানির বোতল কুড়িয়ে ওর জীবন চলে। আজকাল ঐ আলামিনের সঙ্গে দেখতে পাই শহরের অনেক পাগলীর অনেক খাতির। অনেক ভাব। ও দিন দিন পুরুষ হয়ে উঠছে।

হয়তোবা একদিন ওর দ্বারাও হতে পারে কোন পাগলী এক সন্তানের মা। যে সন্তানকে ভদ্র সভ্য সমাজের লোকগুলো ডাকবে জা*রজ বলে। আমি কিন্তু কোন সন্তানকেই জা*রজ বলবো না। বরং জা*রজ বলবো এই সমাজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মুখোশধারী ঐসব পুরুষদের যারা সুযোগ পেলেই নারীদের শরীর খুবলে খায়। এবং সমাজের অধিকাংশ মানুষের চিন্তাধারাকে বলবো জা*রজীয় চিন্তাধারা। Yes, জা*রজীয় চিন্তাধারা।

আরও পড়ুন: কার ঔরসজাত সন্তান সেটা বড় কথা নয় Nusrat,- Taslima Nasrin

 

জারজ তো কোন সন্তান অপরাধী হতে পারে না হলে তার জন্মদাতা পিতা হতে পারে কারণ সে তো আর দশটা সন্তানের মতোই মায়ের কোলে ভূমিষ্ঠ হয়েছে জারজ বললে তো কোন সন্তান হতে পারে না কারণ সে তো আর দশটা ছেলের মত আর দশটা সন্তানের মত মাতৃগর্ভে তার জন্ম হয়েছে যদি অপরাধী হয় ওই সমস্ত নরপিচাশ পুলিশ দিয়ে বলতে পারো যারা তার ভিত্তিতে লুকিয়ে রেখেছে।
জারজ বলে কোন গালি হতে পারে না কারণ সে তো অন্যান্য সন্তানের মতোই মায়ের গর্ভে ভূমিষ্ঠ হয়েছে তার তো জন্ম নেওয়াটা কোন পাপ ছিল না যদি গালি দিতে হয় তবে ওই মুখোশধারী নরপিচাশ পুরুষকে গালি দেন জে তার সন্তানকে পিতৃত্ব থেকে গোপন রেখেছেন।ঐসব মুখোশধারী নরপিচাশ পুরুষ যারা সুযোগ পেলেই নারীদের শরীর খুবলে খায়।
জাহাঙ্গীর আলম ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

Leave a Reply