জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণার হাইকোর্টের রায় ৪ সপ্তাহ স্থগিত

সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নিজস্ব প্রকৌশলী থাকার পরও ৪৩৯ কোটি টাকা পরামর্শক খাতে খরচের প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যান করেছে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে পাইলট প্রকল্পেই প্রতি মাসে পরামর্শকের পেছনে ব্যয় ৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা, যা অযৌক্তিক বলছে পরিকল্পনা কমিশন। সঠিক নিয়মে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করায় আপত্তিও উঠেছে প্রকল্প চার হাজার ৩১৫ কোটি টাকা খরচ নিয়ে।

৫০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগে প্রকল্প হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী সমীক্ষা করতে হবে। আর ১৬৮টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের প্রস্তাবও যৌক্তিকভাবে দেখছে না পরিকল্পনা কমিশন। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো: মামুন-আল-রশীদ বলেন, পরামর্শক খাতে এত বিশাল খরচ আমরা গ্রহণ করিনি। তাই এই ব্যয় কমিয়ে এক-চতুর্থাংশ করে ডিপিপি সংশোধন করার জন্য প্রকল্প ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) বলছে, দুর্ঘটনাজনিত কারণে গুরুতর জখম ও মৃত্যু বাংলাদেশের একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সঙ্কট। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনাজনিত প্রতি লাখে ১৫.৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা উন্নত দেশের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি। বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির প্রায় ২ থেকে ৩ শতাংশ। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নতি সাধনের মাধ্যমে নিরাপদ, সাশ্রয়ী, সুলভ ও টেকসই পরিবহন ব্যবস্থায় সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল কি সত্যিই ওজন বাড়ায়?
প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার এবং নাটোর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার, মোট ১৪০ কিলোমিটার মহাসড়কাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে নিরাপত্তামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ইন্টারসেকশনাল উন্নয়ন, সড়ক প্রশস্তকরণ, পার্কিং এরিয়া নির্ধারণ ও বিভিন্ন ট্রাফিক সাইন সিগন্যাল সংক্রান্ত ক্ষুদ্র ও মধ্যমানের পূর্তকাজ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা নামে এটি হলো পাইলট প্রকল্প। প্রকল্পে বিশ^ব্যাংকের ঋণসহ মোট খরচ ধরা হয়েছে চার হাজার ৩১৫ কোটি ৫৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। যার মধ্যে বিশ^ব্যাংকের ঋণ তিন হাজার ৯৩ কোটি ৫৫ হাজার টাকা। প্রকল্পটি পাঁচ বছরে বাস্তবায়নের জন্য নেয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধানের অভিমত হলো, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গ্রহণে আগে প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়নি। মন্ত্রিপরিষধ বিভাগের গত ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর তারিখের দেয়া এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বের বিনিয়োগ প্রকল্পের জন্য আবশ্যিকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই বা সমীক্ষা নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে পরিকল্পনা কমিশন থেকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রতিবেদন প্রণয়নের জন্য একটি নির্ধারিত ফরম্যাট প্রকাশ করা হয়েছে কমিশনের ওয়েবসাইটে। তাই প্রকল্পের খরচ চার হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বিধায় সুনির্দিষ্ট ফরম্যাটে পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা যাচাই করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (উন্নয়ন) সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় জানান, বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের অবকাঠামো নির্মাণবিষয়ক কাজ গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। দু’টি বিভাগের মধ্যে একটা সমন্বয় রয়েছে।

সওজ বলছে, বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পটি প্রথাগত সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ভিন্নধর্মী। প্রকল্পটি নেয়ার আগে সমীক্ষায় ১১টি নির্ণায়কের ওপর ভিত্তি করে সমগ্র বাংলাদেশকে চারটি জাতীয় মহাসড়ক এবং চারটি ঢাকার এলাকার ও চারটি জেলা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরামর্শকের ব্যাপারে সওজ বলছে, ক্রয় পরিকল্পনা বা কর্মপরিধি নিয়ে ডিপিপি প্রণয়নের প্রাক্কালে বিভিন্ন সংস্থার ফোকাল পারসনদের সাথে আলোচনা হয়। তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, পরামর্শক নিয়োগের মাধ্যমে পূর্তকাজের ডিজাইন করা হবে। পরবর্তীতে সংস্থাগুলোর এপিডি ইউনিটের সমন্বয়ে জাতীয় পরামর্শকের মাধ্যমে এ সিভিল কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।
অর্থায়নের ব্যাপারে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) পক্ষ থেকে ভৌত অবকাঠামো বিভাগকে জানানো হয়, বিশ্বব্যাংকের সাথে পত্রযোগাযোগ শুরু হয় ২০২০ সারের ফেব্রুয়ারিতে। তারা ৩৬ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সম্মতি প্রদান করেছে। কিন্তু মহামারীর কারণে বিশ^ব্যাংকের মিশন সফরে আসতে পারেনি।

ফেসবুক-টুইটার নিষিদ্ধ করলো রাশিয়া

প্রস্তাবিত ব্যয় পর্যালোচনার তথ্য থেকে জানা গেছে, বাণিজ্যিক চালকদের প্রশিক্ষণ খাতে ৩০ কোটি ৪৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু সওজের অধীনে বিআরটিসি কর্তৃক ভারী যানবাহন চালক তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান শীর্ষক ৯৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকার একটি প্রকল্প চলমান আছে, যা গত ২০১৯ সালের অক্টোবরে শুরু হয়েছে। আগামী ২০২৫ সালের জুনে শেষ হবে। ফলে চালক প্রশিক্ষণের দু’টি প্রকল্পে দ্বৈধতা হবে।
প্রকল্পে কম্পিউটার বিভিন্ন সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৪ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। আইটিএস হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার খাতে আবার ৩০ কোটি ৪২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। এই সমজাতীয় খাতের ব্যয়ের ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রকল্পে পরামর্শক বিষয়ে পাঁচটি উপ-খাতে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৪৩৯ কোটি ৩৫ লখ ১৩ হাজার টাকা। যেখানে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা পরামর্শক খাতে ৮৭ কোটি ১৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।
প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের খাতে ৩৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু কোথায় কী পরিমাণ ভূমি প্রয়োজন তার কোনো বিভাজন ডিপিপিতে উল্লেখ নাই বলে পরিকল্পনা কমিশন বলছে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো: মামুন-আল-রশীদের সাথে প্রকল্পের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা বলতে আমাদের সড়কগুলোতে অ্যাক্সিডেন্ট হয় বেশি। আমাদের রাস্তাগুলোতে যে অ্যালাইনমেন্ট, এগুলোতে কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন কি না, এসব নিয়ে বিশ^ব্যাংক আগে স্টাডি করবে। তারপর সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিবে। তিনি বলেন, এ প্রকল্পে পুলিশের জন্য একটা ট্রেনিং সেন্টার ধরেছে, যেখানে নিরাপদ সড়কের ব্যাপারে ট্রেনিং দেবে। আরেকটা আছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ট্রাম বিভাগকে আধুনিকীকরণ করবে। এমন কিছু কম্পোনেন্ট আছে।

হত্যা-চুরি-ছিনতাই করে পালানোর সময় সংকেত দেবে সিসিটিভি
তিনি বলেন, আমরা এই প্রকল্পের ব্যাপারে খুব সন্তুষ্ট না। পরামর্শক খাতে অতিমাত্রায় বরাদ্দ ধরা হয়েছে। পুলিশের জন্য সেন্টার নির্মাণ করবে, তাতে পরামর্শক খাতে ব্যয় হবে ৪৬ কোটি টাকা। সড়ক ও জনপথ বিভাগের জন্য ২৩৪ কোটি টাকার পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে। আবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের জন্য ৮৬ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে পরামর্শক খাতেই।
সচিব মামুন বলেন, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্সি খাতে ৮৭ কোটি টাকা। আমরা সরাসরি বলেছি প্রকল্প ব্যবস্থাপনা পরামর্শক নামে কোনো খাত থাকবে না। কারণ সওজের নিজস্ব প্রকৌশলী আছে। লোকবল আছে। তারা অনুরোধ করে বলেছে বিভিন্ন প্রকল্পে জনবল নিয়োগের কারণে এখন লোকবল নেই। আমরা বলেছি, প্রকল্প সহায়তা পরামর্শক হতে পারে। প্রকল্প ব্যবস্থাপনা হলো সওজের কাজ। এটা পরামর্শকরা করবে কেন?

পিইসি সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে মামুন-আল-রশীদ বলেন, যতগুলো খাতে পরামর্শক ধরা হয়েছে তাতে চার ভাগের তিন ভাগ কমিয়ে ফেলতে হবে। এক কথায় এক-চতুর্থাংশ রাখতে পারবে। বসে বসে সরকারি অর্থ খরচ করে পরামর্শক আমরা দেবো না। এই তথ্য সেই তথ্য নেবে সেটায় আমরা নাই। এটার সব কিছু ঠিক করে দেয়ার পর আবার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করব

Leave a Reply