ঢাকার রাস্তায় পুলিশকে বিদেশি নাগরিকের টাকা ছুঁড়ে মারার ভিডিও কী বার্তা দিচ্ছে?

ঢাকায় একজন বিদেশি নাগরিক পুলিশের সাথে প্রচণ্ড বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে ট্রাফিক পুলিশের প্রতি টাকা ছুঁড়ে মেরেছেন, এ রকম একটি ভিডিও ফেসবুকে এবং ইউটিউবে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে।

পুলিশের সূত্রে জানা যায়, সে ব্যক্তি চীনা নাগরিক এবং বাংলাদেশের একটি গার্মেন্টস কারখানায় কর্মরত।

ভিডিওতে দেখা যায়, সে বিদেশি নাগরিক বিতণ্ডার এক পর্যায়ে ট্রাফিক পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলছেন – “ইউ ওয়ান্ট মানি? আই গিভ ইউ দিস (তুমি টাকা চাও? আমি তোমাকে তা দিচ্ছি)। একথা বলে তিনি টাকা ছুঁড়ে মারেন।

 

এই ভিডিও শেয়ার করে অনেকেই লিখেছেন, গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র চেক করার নামে পুলিশ টাকা চাইলে ঐ বিদেশি নাগরিক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

 

তবে পুলিশ দাবি করছে, সেখানে ঘুষ চাওয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি।

 

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহেদ আল মাসুদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ কোন টাকা দাবি করেনি।

 

টাকা ছোঁড়া কী বার্তা দিচ্ছে?

ফেসবুক এবং ইউটিউবে এই ভিডিও যারা শেয়ার করেছেন এবং মন্তব্য করেছেন সেখানে নানাবিধ মন্তব্য এসেছে।

 

তবে ভিডিওটি দেখে কেউ অবাক হননি। অনেকে বলছেন, বাংলাদেশের রাস্তায় গাড়ির কাগজপত্র চেক করার নামে পুলিশ যে কাজ করে, এই ভিডিওটি সেটির প্রতিফলন।

 

রাশিদুল ইসলাম জুয়েল ফেসবুকে লিখেছেন, “পুলিশকে যে ওই বিদেশি এভাবে গালি দিল, শেষে জনসমক্ষে পুলিশের মুখের উপর টাকা ছুঁড়ে মারল, তাতে জাতি হিসেবে কি আমাদের একটু লজ্জিত হওয়া উচিত? এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।”

ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা শামিমা আক্তার বিবিসি বাংলাকে বলেন, তিনি গাড়ি নিয়ে একাধিকবার পুলিশের ‘হয়রানির’ মুখে পড়েছেন।

 

“আমার গাড়ির সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও পুলিশ সেগুলো নিয়ে দীর্ঘ সময় আটকে রাখে।”

 

ফেসবুকে চীনা নাগরিকের টাকা ছুঁড়ে মারার বিষয়টি তার দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

 

শামিমা আক্তার বলেন, “পুলিশ রাস্তায় কী করে সেটি আমাদের সবার কম-বেশি অভিজ্ঞতা আছে।”

 

অনেকে বলছেন, বিদেশি নাগরিকের টাকা ছুঁড়ে দেবার বিষয়টি রাস্তায় পুলিশের দুর্নীতির বিষয়টি আবারো প্রকাশ্যে সামনে এনেছে।

 

“পুলিশের চাঁদাবাজির বিষয়টি আমরা বিভিন্ন সময় শুনে থাকি। চাইনিজ ব্যক্তির টাকা ছুঁড়ে মারার বিষয়টি এর প্রতীক হয়ে গেছে,” বলছিলেন বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন।

 

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শাহেদ আল মাসুদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, সেই বিদেশি নাগরিক উত্তেজিত হয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

তিনি বলেন, ঘটনাটি শুধু পুলিশের জন্য পুরো দেশের জন্য বিব্রতকর। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

“এজন্যই আমরা বিষয়টিকে এতোটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি এবং এর তদন্ত করছি।”

পুলিশ
পুলিশ

তদন্তের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। গাড়ির ড্রাইভারের বক্তব্য নিয়েছে পুলিশ। এখন সেই চীনা নাগরিকের সাথেও কথা বলবে পুলিশ।পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, রাস্তায় আইন ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না সেটি দেখা তাদের দায়িত্ব। বৈধ লাইসেন্স নিয়ে রাস্তায় গাড়ি চলছে কি না, আইন ভেঙ্গে পার্কিং করা হয়েছে কি না, উল্টো পথে গাড়ি যাচ্ছে কি না – এসব বিষয় দেখতে হয় পুলিশকে।

 

কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, আইন প্রয়োগ সবার জন্য সমান নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনের প্রয়োগ সবার জন্য না হলে পুলিশের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।

 

“এর অর্থ হচ্ছে সিস্টেমটা দাঁড়ায়নি। সিস্টেমটা আসলে কলুষিত হয়ে গেছে,” বলেন কাবেরী গায়ে

সমাধানের উপায় কী?

বাংলাদেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা কতটা বিশৃঙ্খলা সেটি বলার অপেক্ষা রাখেনা। রাস্তায় ট্রাফিক আইন না মেনে গাড়ি চালানো এবং একই সাথে পুলিশের হয়রানি দুটোই রয়েছে।

পুলিশ

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাস্তায় যখন-তখন গাড়ি দাঁড় করিয়ে পুলিশ যেভাবে গাড়ির কাগজপত্র চেক করে সেটি একবিংশ শতাব্দীতে কাম্য নয়।

 

বাংলাদেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের অধ্যাপক এম. হাদিউজ্জমান।

 

তিনি বলেন, ঢাকা শহরের রাস্তা প্রশস্ত নয়। রাস্তায় যখন-তখন গাড়ি দাঁড় করিয়ে চেক করা হলে পেছনের গাড়ি আটকে যায় এবং যানজট তৈরি হয়। এতে অন্যরা ভোগান্তিতে পড়ে।

 

এই বিষয়টি প্রযুক্তির মাধ্যমে হওয়া উচিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

“বাংলাদেশে গাড়ির নম্বর প্লেট এখন ডিজিটাইজ করা হচ্ছে। যখন কোন গাড়ি সন্দেহ করবে, তখন পুলিশ চাইলে সেটি প্রযুক্তির মাধ্যমে গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করতে পারে। এজন্য রাস্তায় দাঁড় করিয়ে গাড়ি চেক করার প্রয়োজন নেই”

 

প্রযুক্তির মাধ্যমে কাগজপত্র যাচাই করা হলে রাস্তায় শৃঙ্খলা আসবে। রাস্তায় শৃঙ্খলা এলে পুলিশের দুর্নীতিও কমে যাবে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক হাদিউজ্জামান।

স্ত্রীর বয়স ৬১, স্বামীর ২৪; সন্তান নিতে নতুন উদ্যোগ দম্পতির!

পুলিশ বলছে, রাস্তায় গাড়ির কাগজপত্র চেক করার কাউকে যাতে হয়রানি না করা হয় সেজন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশকে নির্দেশ দেয়া আছে।

 

“কেউ যদি পুলিশের আচরণে বিরক্ত হয়, তাহলে তিনি অভিযোগ করতে পারেন। আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে সেটি অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হয়,” বলেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহেদ আল মাসুদ।

Source: বিবিসি

Leave a Reply