ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে আর শিক্ষককে লাঞ্চিত করলে গুজব রটনাকারীর বিচার হবে? Dulal Chowdhury

ধর্ম অবমাননা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় এবং আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ের সাথে দ্বিমত করার অবকাশ নেই। আপনি আমার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে পারেন না।আমিও আপনার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারিনা।সবার মধ্যে এই পারস্পরিক শ্রদ্ধা বোধ থাকা উচিত। আমি বিশ্বাস করি ৯৯% মানুষের মধ্যে সেটা আছে। তবে প্রত্যেকেরই তার নিজ ধর্মের প্রতি আবেগ অনুভূতি আছে।অনেক সময় এই আবেগ আমাদের বিবেককে ভূলুণ্ঠিত করে।

আমাদের দেশে ঘটে যাওয়া কথিত ধর্মীয় অবমাননার তদন্তের শেষে দেখা যায় কিছু দুষ্ট চক্র তাদের নিজেদের হীন স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নাটক মঞ্চায়িত করে।সাধারণ ধর্ম প্রান মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি বা আবেগকে পুজি করে ঘোলা পানিতে শিকার ধরার চেষ্টা করে। কখনো কখনো তারা সফল হয়।আমার প্রশ্ন হলো যারা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে শ্বাশত অসাম্প্রদায়িক বাংলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করেছেন তাদের বিচারের জন্য আইন করা প্রয়োজন অথবা ধর্মীয় অবমাননার কথা মিথ্যা প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীকে মিথ্যে অভিযোগে গুজব রটনার জন্য শাস্তির বিধান রাখতে হবে।

তাহলে ধর্মীয় অবমাননার মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা বন্ধ হবে। এতে করে যদি কেউ সত্যি সত্যি ধর্মীয় অবমাননা করে থাকে তবে তাকে বিচারের আওতায় আনা সহজ হবে। ধর্মীয় অবমাননার মিথ্যে গুজব ছড়িয়ে নিজ স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টায় এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে এখন কেউ এটা আর বিশ্বাস করতে চায় না।

আরও পড়ুন: গন্ধটা খুব সন্দেহজনক – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধান , ভারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রধান, প্রভাষক ও সহকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননা অভিযোগ উঠেছে তার অধিকাংশই অসত্য বলে প্রমানিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী শিক্ষক, প্রভাষক, ম্যানেজিং কমিটি সভাপতি, সদস্যবৃন্দের মধ্যকার দ্বন্দের কারণে একজন অন্যজনকে শায়েস্তা করার জন্য এটা ব্যবহার করে আসছে।তাই আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

এর পারেও আমাদের চিন্তায় রাখতে হবে যে ধর্মীয় অবমাননার জন্য আমাদের দেশে প্রচলিত আইনে বিচার ব্যবস্থা আছে। শাস্তির বিধান আছে। তাহলে ধর্মীয় অবমাননার বিচার আমরা কেন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছি। বিচার নিজের হাতে তুলেও নেওয়া কিন্তু অন্যায়। অন্যায় আছে বলেই আইন আছে।

আরও পড়ুন: হৃদয় মণ্ডল: ধর্ম অবমাননার অভিযোগে উনিশ দিন কারাভোগের পর জামিন পেলেন মুন্সিগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক

আইন প্রয়োগের একটা প্রক্রিয়া আছে।আমরা কেন তা বার বার ভুলে যাই।ভুলে যাওয়ার কারণে বারবার দুষ্ট লোকগুলো কৌশলে তাদের স্বার্থ চৈতার্থ করার জন্য ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে দেয়।এই দুষ্ট চক্র যার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে সবার আগে তার দূর্বল দিক খুঁজে বের করবে।সে ক্ষেত্রে দেখুন ধর্মীয় অবমাননা অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, নড়াইলসহ সম্প্রতি যে শিক্ষক নির্যাতন হয়েছে তা সবই হিন্দু শিক্ষকদের উপর এবং অভিযোগ সেই পুরনো ধর্মীয় অবমাননা।

হিন্দু শিক্ষক না হয়ে মুসলিম শিক্ষক হলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় শারীরিক শাস্তির অথবা যৌন কেলেঙ্কারির, প্রতিষ্ঠান প্রধান হলে তাঁর বিরুদ্ধে আনা হহ অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ বানিজ্যেসহ নানা অভিযোগ। এ সকল অভিযোগ যে কেউ যে কার বিরুদ্ধে আনতে পারে।

আরও পড়ুন: চিতলমারীতে নবী অবমাননার গুজবে হিন্দু কিশোরী আটক, থানায় উগ্রপন্থীদের হামলায় আহত ২৫

সে অভিযোগ করার যথাযথ কর্তৃপক্ষ আছে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট এবং সুনির্ধারিত প্রক্রিয়ায় তদন্ত সম্পন্ন করে,, তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ শাস্তি প্রদান করবে।তাহলে আপনি অভিযোগকারী কিন্তু বিচারক নয়।আপনার চাহিদা মোতাবেক কর্তৃপক্ষ শাস্তিও দিবে না।তাই আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে বিচারকের রায় পর্যন্ত।

আপনি তা না করে বিচার নিজের হাতে তুলে নিবেন ? আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার জন্য ইচ্ছে মত যাকে যেভাবে ফাঁসানো যায় তাঁর বিরুদ্ধে সে রকম গুজব ছড়িয়ে দিবেন এটা হয় না।যদি কেউ সত্যি সত্যি ধর্ম অবমাননা করে তাঁর বিচার আমরা চাই। কিন্তু যদি কেউ কাউকে ফাঁসানোর জন্য গুজব ছড়ায় তাকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে অর্থাৎ তার বিচার করতে হবে।

দুলাল চন্দ্র চৌধুরী
সাংগঠনিক সম্পাদক
কেন্দ্রীয় কমিটি
বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ।

Leave a Reply