নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা: সেবার সঙ্গে চাকরির নিশ্চয়তা

অনেকেই নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা করতে চান। কিন্তু সঠিক তথ্য তাঁদের জানা থাকে না। এই বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরছেন কলকাতার এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালের ডেপুটি নার্সিং সুপার সুমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতবর্ষে যে কোনও জায়গা থেকে নার্সিং কোর্স করা যেতে পারে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এখন নার্সিং পড়ানো হচ্ছে। শুধু কোর্স করার সময় দেখে নিতে হবে প্রত্যেকটির ইন্ডিয়ান নার্সিং কাউন্সিলের বৈধতা আছে কিনা। ইন্ডিয়ান নার্সিং কাউন্সিলের স্বীকৃতি ছাড়া নার্সিং কোর্স করে কোনও লাভ হবে না। একমাত্র তারাই ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অন্তর্ভুক্ত একটি স্বশাসিত সংস্থা। দেশে সমস্ত নার্সিং কোর্স পরিচালনার ভার তাদের উপরে। এখানে নার্সিং কোর্সগুলি সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে জেনে নেওয়া যাক।

 

অক্সিলারি নার্স অ্যান্ড মিডওয়াইফ (Auxiliary Nurse Midwifery):
দেড় থেকে দু’বছরের এই ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য আবেদন করতে হলে কমপক্ষে ১৭ বছর বয়স হওয়া প্রয়োজন। ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই পদের জন্য আবেদন করা যেতে পারে। শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে উচ্চমাধ্যমিকে কমপক্ষে ৪৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করলেই এই পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। নির্বাচন হবে উচ্চমাধ্যমিকের নম্বরের ভিত্তিতে। এই কোর্সে সুযোগ পেতে হলে আপনাকে শারীরিক দিক দিয়ে যথেষ্ট সুস্থ থাকতে হবে। কারণ আবেদনের পর একটি মেডিক্যাল টেস্ট পার করতে হয়।

নার্সিং ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত টপ ১০ টি প্রশ্ন-উত্তরঃ

এমনিতে কিছু প্রতিষ্ঠান পৃথক করে প্রবেশিকা পরীক্ষার ব্যবস্থা করলেও অধিকাংশ উচ্চমাধ্যমিকের নম্বর ও ইন্টারভিউর মাধ্যমে মেধাতালিকা প্রস্তুত করে। এক্ষেত্রে থিয়োরি ক্লাসের তুলনায় প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে হাতেকলমে কাজ শেখার ব্যবস্থাই বেশি থাকে। ১১টি সরকারি নার্সিং স্কুলে এই কর্সটি পড়ানো হয়। আসন সংখ্যা ৫৩০ ।

জেনারেল নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফেরি (General Nursing and Midwifery):
বয়সসীমা ১৭ থেকে ২৭ বছর। তবে ANM কোর্স করা থাকলে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই কোনও বয়সের ঊর্ধ্বসীমা দেখা হয় না। শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে উচ্চমাধ্যমিকে ৪০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। এই কোর্সটির মোট মেয়াদ সাড়ে ৩ বছর। এর মধ্যে শেষের ৬ মাস কোনও হাসপাতালে থেকে ইন্টার্নশিপ করা আবশ্যিক। এই কোর্স করা জেনারেল নার্সদের রাজ্য নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশনও থাকে। এই কোর্স করলে আপনি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি পেতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গে ৮২টি নার্সিং স্কুলে GNM কোর্সটি পড়ান হয়। তার মধ্যে ৪৩টি সরকারি। বাকিগুলি বেসরকারি স্কুল। আসন সংখ্যা প্রায় ৪০৪০। তবে স্কুলের সংখ্যা বা আসন সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

ব্যাচেলার অফ সায়েন্স ইন নার্সিং (Bachelor of Science in Nursing):
৪৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ কমপক্ষে যোগ্যতা হলেও বিজ্ঞানের পড়ুয়া হওয়া আবশ্যিক এক্ষেত্রে। কোর্সটির সময়সীমা চার বছরের। তবে আপনি যদি GNM হন, তাহলে আপনার পোস্ট বেসিক BSc নার্সিং-এর কোর্সের সময়সীমা কমে দাঁড়াবে দুই বছর। কিন্তু এই ডিগ্রি কোর্সটি করার জন্য আপনাকে বসতে হবে প্রবেশিকা পরীক্ষায়।

এর জন্য প্রতি বছর এপ্রিল-জুন মাস নাগাদ এই পরীক্ষা হয়ে থাকে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মেডিক্যাল টেস্টের মাধ্যমে আপনি কোর্সটি করার সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখাও জরুরি। পশ্চিমবঙ্গে ৩২টি কলেজে এই ডিগ্রি কোর্সটি পড়ান হয়। তার মধ্যে ১৩টি সরকারি কলেজ ও বাকিগুলি বেসরকারি। আসন সংখ্যা প্রায় ১৮৫০।

পোস্ট বেসিক BSc ডিগ্রি:
GNM কোর্স পাস করার পর এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে এই কোর্স পড়ার জন্য সুযোগ পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গে ১২টি কলেজে এই কোর্স পড়ান হয়। আসন সংখ্যা ৪৯৫ ।

1000 Life Science MCQ Questions and Answers PDF in Bengali – জীবন বিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর

MSc নার্সিং (Master of Science in Nursing):
২ বছরের এই কোর্সে কমপক্ষে শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে BSc নার্সিং’এ ৫৫ শতাংশ নম্বর লাগে। একটি কমন এন্ট্রান্স টেস্টে বসতে হয়। সেটিতে পাশ করলে তবেই এই উচ্চশিক্ষার দরজা আপনার কাছে খুলে যাবে। এই কোর্স একবার করে নিতে পারলে উচ্চপদের নার্সের চাকরি পাওয়ার সুযোগ থাকছে আপনার কাছে; যেমন: নার্সিং ইন চার্জ, ক্লিনিকাল ইন্সট্রাকটর, নার্সিং এক্সিকিউটিভ, নার্সিং সুপারিটেন্ডেন্ট, নার্সিং সুপারভাইসার, মেডিক্যাল অ্যাডভাইসার ইত্যাদি। এই কোর্সের জন্য পশ্চিমবঙ্গে ১৬টি কলেজ রয়েছে। এবং এর অধিকাংশ ১১টি সরকারি কলেজ। আসন সংখ্যা ২৮৫।
এছাড়া কেউ চাইলে নার্সিং বিষয়ে এমফিল এবং পিএইচডি করার সুযোগ আছে।

রাজ্যে এবং রাজ্য়ের বাইরে নার্সিং নিয়ে পড়ার একাধিক প্রতিষ্ঠান আছে। প্রায় সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কলেজ অব নার্সিং আছে। এছাড়া বহু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এটি পড়ানো হয়।

Leave a Reply