Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
পাঁচ ছেলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে সংকটাপন্ন রক্তিমের সুস্থতার জন্য মায়ের আকুতি

পাঁচ ছেলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে সংকটাপন্ন রক্তিমের সুস্থতার জন্য মায়ের আকুতি

নিহত ব্যক্তিদের বাবা সুরেশেরও মৃত্যু হয়েছিল মর্মান্তিকভাবে পাঁচ সন্তানের মৃত্যুর ১০ দিন আগে, অর্থাৎ গত ৩০ জানুয়ারি। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে এসে ৯ ভাইবোনের মধ্যে ৫ ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। আরেক ভাই পড়ে আছেন চট্টগ্রাম মহানগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। আরেকজন চিকিৎসাধীন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আর তাঁদের এক বোন হিরা সুশীল (৪৫) চিকিৎসাধীন চকরিয়ার মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে। গত বৃহস্পতিবার তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে।

১০ দিনের ব্যবধানে পাঁচ ছেলে ও স্বামীকে হারিয়ে নির্বাক সুরেশের স্ত্রী মানু রানী সুশীল। শোকের বোঝা সামলে তাঁকেই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান দেখভাল করতে হচ্ছে।

আরও পড়ুনদুই স্বামী নিয়ে এক ঘরে তরুণীর বসবাস

বেলা ১১টায় মানু রানীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, উঠানে টানানো শামিয়ানার নিচে পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে এক পাশে টাঙানো নিহত পাঁচ সন্তানের ছবি, ছবির ওপর পরানো ফুলের মালা। পুরোহিত পাশে বসে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা চালাচ্ছেন। মানু রানী নিহত পাঁচ সন্তানের স্ত্রীদের পূজার স্থলে নিয়ে আসেন। সবার পরনে সাদা শাড়ি।

মণ্ডপের পাশে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করছিলেন নিহত অনুপম সুশীলের স্ত্রী পপি সুশীল (৩৫)। পাশে মেয়ে দেবত্রী সুশীল (১৫)। পপি বলেন, স্বামীর অবর্তমানে দুই ছেলে–মেয়ে নিয়ে তিনি কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না। মেয়ে পড়ছে দশম শ্রেণিতে, ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে। তাঁর স্বামী ছিলেন পল্লিচিকিৎসক। চট্টগ্রামের আজিজনগর বাজারে তিনি রোগী দেখে সংসার চালাতেন, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতেন। এখন তিনি নেই, ছেলে–মেয়ের লেখাপড়ার খরচ, সংসার চালানোর মতো কোনো সম্বলও তাঁর নেই।

একই কথা বলেন নিহত দীপক সুশীলের স্ত্রী পূজা সুশীল (২৬) । তাঁর সংসারে একমাত্র ছেলে আয়ূশ সুশীল (৬)। পূজা বলেন, তাঁর স্বামী দীপক সুশীল কাতারপ্রবাসী ছিলেন। সেখানে তাঁর (দীপক) একাধিক দোকান ছিল। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে এসে পিকআপের চাপায় মারা গেলেন তিনি। এখন কাতারের দোকানের খবর নেওয়ার লোক নেই। তাঁর হাতে স্বামীর রেখে যাওয়া কিছুই নেই।

পূজার স্থলের আরেক পাশে চলছে রান্নাবান্নার কাজ। দুপুর থেকে সেখানে লোকজনকে খাওয়ানো হচ্ছে। সবকিছু সামাল দিচ্ছেন মানু রানী।

বাবা না খেয়ে আছে, চিন্তায় হাউমাউ করে মেয়ের কান্না ভাইরাল !

৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় মানু রানীর পাঁচ ছেলে অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৯) নিহত হন। আহত হন আরও তিন ভাই–বোন। ঘটনার ১০ দিন আগে তাঁদের বাবা সুরেশের মৃত্যু হয়। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে তাঁরা ৯ ভাইবোন বাড়িতে সমবেত হয়েছিলেন। সেখানকার একটি মন্দিরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে একসঙ্গে ৯ ভাইবোন (৭ ভাই ও ২ বোন) পায়ে হেঁটে বাড়িতে আসার জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

এ সময় পিকআপের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই একসঙ্গে চারজনের মৃত্যু হয়, বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আরেক ভাই। ঘটনায় অক্ষত অবস্থায় বেঁচে যান সুরেশ চন্দ্রের মেয়ে মুন্নী সুশীল। তিনি বলেন, ঘটনার চার দিন পার হলেও পুলিশ এখনো পিকআপচালককে আটক করতে পারেনি। চালক ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের চাপা দিয়েছেন। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

আরও পড়ুন সম্পর্ক ভাঙনের ফলে মানসিকভাবে কে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত?

পাঁচ-ছেলের-শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে-সংকটাপন্ন-
পাঁচ ছেলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে সংকটাপন্ন রক্তিমের সুস্থতার জন্য মায়ের আকুতি

শ্রাদ্ধানুষ্ঠান তদারকি করছিলেন মুন্নী সুশীলের স্বামী খগেশপ্রতি চন্দ্র। তিনি বলেন, নিহত পাঁচ ভাইয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান দুপুরে শেষ হলে খাবার পরিবেশন শুরু হয়। অন্তত এক হাজার মানুষকে খাওয়ানো হবে, রকমারি সবজির সঙ্গে সাদা ভাতের নিরামিষ খাবার।

খগেশপ্রতি জানালেন, চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁদের ভাই রক্তিম সুশীলের অবস্থা সংকটাপন্ন। তাঁকে বাঁচানো যাবে কি না, সন্দেহ। গত বুধবার রাতে সেখানকার আইসিইউতে ৭২ ঘণ্টা পার হয়েছে, কিন্তু এখনো তাঁর নড়াচড়া নেই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্লাবন সুশীলের অবস্থাও অপরিবর্তিত, উন্নতি হচ্ছে না। বুধবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে হঠাৎ তিনি মাটিতে পড়ে যান। এখনো তিনি কথা বলতে পারছেন না।

শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে চট্টগ্রামের হাসপাতালের আইসিইউতে সংকটাপন্ন সন্তান রক্তিম সুশীলের সুস্থতা কামনা করে প্রার্থনা করেন মা মানু রানী। ক্ষণে ক্ষণে বলছিলেন, ‘ভগবান, রক্তিমকে ফিরিয়ে দাও। মায়ের কাছে পাঠিয়ে দাও। এ জীবনে আর কত পরীক্ষা নিবা ভগবান।’ এই কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধা।

 কক্সবাজারের-চকরিয়ার-পিক

স্বজনেরা জানান, রীতি অনুযায়ী স্বাভাবিক কারও মৃত্যু হলে ১০ দিন পর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়, আর অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে ৪ দিনের মাথায় করতে হয় এই অনুষ্ঠান।

এই দুর্ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে জানালেন চকরিয়ার মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শেফায়েত হোসেন। তিনি বলেন, পিকআপ ভ্যান জব্দ করা হয়েছে। ভ্যানের চালক ও মালিককে ধরার চেষ্টা চলছে।

বেঁচে যাওয়া এক ভাই আইসিইউতে, আরেক ভাই ও বোন হাসপাতালে

একসঙ্গে পাঁচ ছেলেকে হারিয়ে আহাজারি করছেন মা মানু রানী সুশীল। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের চকরিয়ার হাসিনাপাড়ায় ছবি: প্রথম আলো

পুলিশ ও সুরেশের পারিবারিক সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার ভোরে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় সুরেশের পাঁচ ছেলে অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৯) নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন সুরেশের আরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে।  ঘটনার ১০ দিন আগে ৩০ জানুয়ারি সুরেশ মারা যান। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে  যোগ দিয়ে তাঁরা ৯ ভাইবোন বাড়িতে সমবেত হয়েছিলেন। সেখানে একটি মন্দিরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে হেঁটে বাড়িতে আসার জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় পিকআপের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই একসঙ্গে চারজনের মৃত্যু হয়।

বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন স্মরণ সুশীল। ঘটনায় অক্ষত অবস্থায় বেঁচে যান সুরেশ চন্দ্রের মেয়ে মুন্নী সুশীল।

সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের মধ্যে সুরেশের ছেলে রক্তিম সুশীল (৩৫) পড়ে আছেন চট্টগ্রাম মহানগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। অপর ছেলে প্লাবন সুশীল (২৩) চিকিৎসাধীন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আর মেয়ে হিরা সুশীল (৪৫) চিকিৎসা নিচ্ছেন চকরিয়ার মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে।

মুন্নী সুশীল প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁদের ভাই রক্তিম সুশীলের অবস্থা সংকটাপন্ন। গতকাল বুধবার রাতে সেখানকার আইসিইউতে ৭২ ঘণ্টা পার হয়েছে, কিন্তু ভাইয়ের নড়াচড়া নেই। চিকিৎসকেরাও ভালো খবর দিচ্ছেন না।

রক্তিম সুশীল থাকেন রামুর চৌমুহনী এলাকায়। হাসপাতালে তাঁর দেখভাল করছেন স্ত্রী শান্তা শর্মা। শান্তার সঙ্গে আছে একমাত্র সন্তান অন্তিক শর্মা। শান্তা শর্মা বলেন, তাঁর স্বামীর পেটের ওপর দিয়ে চাপা দিয়েছিল পিকআপ ভ্যানটি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাতে রক্তিম সুশীলের হাড় ভেঙে গেছে। হাসপাতালে ভর্তির প্রথম দিন ১০ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছিল। এরপর দেওয়া হয় আরও ৫ ব্যাগ রক্ত, সব রক্ত ফুসফুস দিয়ে নাকি বেরিয়ে গেছে। স্বামীর নড়াছড়া নেই দেখে সবাই উদ্বেগ–উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

কক্সবাজারের চকরিয়ার হাসিনাপাড়ায় শোকাহত মানু রানী সুশীলের বাড়িতে স্বজনদের ভিড়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তোলা ছবি 
প্রথম আলো

মুন্নী সুশীলের স্বামী খগেশপ্রতি চন্দ্র খোকন বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্লাবন সুশীলের অবস্থারও উন্নতি হচ্ছে না। গত বুধবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে হঠাৎ তিনি মাটিতে পড়ে যান। এখনো তিনি কথা বলতে পারছেন না।

হাসপাতালের চিকিৎসকদের উদ্ধৃতি দিয়ে খগেশপ্রতি চন্দ্র বলেন, গতকাল বুধবার রাতে গুরুতর আহত সুরেশের মেয়ে হিরা সুশীলের পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। পিকআপ চাপায় তাঁর দুই পায়ে গুরুতর জখম হয়েছিল, ধাক্কায় পায়ের হাড় ভেঙে গেছে, মাথায় জখম হয়। হাসপাতালের শয্যায় তিনিও অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছেন।
হিরা সুশীলের বিয়ে হয় মহেশখালীর ঝাপুয়াবাজার এলাকার। তাঁর স্বামী টিটু রাম শীল প্রবাসী। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে ৭ ফেব্রুয়ারি দুই ছেলেকে নিয়ে হিরা সুশীল মহেশখালী থেকে হাসিনাপাড়ায় আসেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সুরেশের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে লোকজনের ভিড়। সুরেশের স্ত্রী মানু রানী সুশীলসহ পরিবারের সদস্যরা নিহত পাঁচ ভাইয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান পালন নিয়ে ব্যস্ত। আগামীকাল শুক্রবার এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হবে জানিয়ে মানু রানী সুশীল (৬০) বলেন, স্বাভাবিক কারও মৃত্যু হলে ১০ দিন পর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়, আর অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে চার দিনের মাথায় করতে হয়। ‘আমার পাঁচ ছেলের মৃত্যু তো স্বাভাবিকভাবে হয়নি’ জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মানু রানী সুশীল। তিনি রক্তিম সুশীলের রোগমুক্তি কামনা করে প্রার্থনা করছেন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত পিকআপ ভ্যানের চালক ও তাঁর সহকারীতে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এ প্রসঙ্গে চকরিয়ার মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শেফায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পিকআপ ভ্যান জব্দ করা হয়েছে। ভ্যানের চালক ও মালিককে শনাক্তকরণের কাজ চলছে। চালক ও তাঁর সহকারীকে আটক করলে নিশ্চিত হওয়া যাবে, এটা দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড।

Leave a Reply