পাগলা মসজিদের দান বাক্সে মিললো তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দান বাক্সে এবার মিললো তিন কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা। শনিবার (১২ মার্চ) সকালে মসজিদের আটটি দান বাক্স খুলে টাকাগুলো ১৫টি বস্তায় ভরা হয়। এরপর শুরু হয় গণনা। চার মাস দুই দিন পর দান বাক্সগুলো খুলে এই পরিমাণ টাকা মিলেছে।

এর আগে, ৬ নভেম্বর এগুলো খোলা হয়েছিল। তখন পাওয়া গিয়েছিল তিন কোটি সাত লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা। তারও আগে গত বছরের ১৯ জুন খোলা হয়েছিল। তখন সবমিলিয়ে পাওয়া গেলো দুই কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। শুধু দেশি টাকা নয়, প্রতিবারই বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়।

খামার থেকে গৃহবধুর আয় ৬ লক্ষ টাকা

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি দান বাক্স খোলা হয়। এরপর এগুলো ১৫টি বস্তায় ভরে মসজিদের দোতলায় নিয়ে গণনার কাজ শুরু করা হয়। এখানকার জেলা প্রশাসক পদাধিকার বলে মসজিদটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০০ লোক গুনছিল দানের টাকা। টাকার বস্তাগুলো একে একে ঢেলে দেওয়া হয় তাদের সামনে। এভাবে বস্তার পর বস্তা টাকা গণনার কাজ এগিয়ে চলে। একইসঙ্গে ব্যাংকের লোকজন মেশিন দিয়ে টাকাগুলো আবার গণনা করেন।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল ইসলামের নেতৃত্বে আট জন ম্যাজিস্ট্রেট টাকা গণনার কাজ তদারকি করেন। আর একদল আনসার সদস্য নিরাপত্তায় ছিলেন।

জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এটি আসলে দেখার মতো ঘটনা। মানুষ তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য এখানে কোটি কোটি টাকা দান করেন। থাকে স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রাও। টাকা-পয়সার সঙ্গে চিঠিপত্রও থাকে। সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে লেখা চিঠিগুলোতে নিজেদের অভাব, অভিযোগ, রোগমুক্তি ও মনোবাসনার কথা থাকে।’

তিনি বলেন, ‘এসব টাকা মসজিদের উন্নয়নের কাজে ব্যয় হয়। দুস্থদের সহযোগিতা করা হয়। তাছাড়া জটিল রোগীদের চিকিৎসায়ও অনুদান দেওয়া হয়।’

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত উদ্দিন ভুঁইয়া জানান, বিভিন্ন মাদ্রাসার ১২০ জন ছাত্র, মসজিদের ৩৪ জন কর্মচারী ও রূপালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী টাকা গণনার কাজ করেছেন।

তিনি আরও জানান, যারা মসজিদে টাকা গণনার কাজে সহযোগিতা করেন, তাদের জন্যও থাকে সম্মানির ব্যবস্থা।

৭০০ টাকা বিনিয়োগে মনিরার মাসে বিক্রি ৪০ হাজার টাকা

পাগলা মসজিদের সাধারণ সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. পারভেজ মিয়া জানান, মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজ ছাড়াও দানের টাকায় দুস্থ ও অসহায়দের নানাভাবে সহযোগিতা করা হয়। দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় অনুদান দেয় এই মসজিদ। সম্প্রতি শত কোটি টাকায় এই মসজিদের বহুতল কমপ্লেক্স নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দানের টাকা দিয়ে এই প্রকল্পের ব্যয় মেটানো হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘মসজিদের তহবিল থেকে করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্রের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।’

পাগলা মসজিদে টাকা গণনা দেখতে শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অনেকেই ছুটে যান সেখানে। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মসজিদটির দান বাক্সগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার দান করেন। এছাড়া গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও মসজিদটিতে দান করা হয়। লোকজনের বিশ্বাস এই মসজিদে দান করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এ কারণে দূর-দূরান্ত থেকে এসেও অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন। শুধু মুসলমান নয়, সব ধর্মের লোকজন এখানে টাকা-পয়সা দান করেন।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে খ্যাতিও।

Leave a Reply