ফুসফুসের যত্নের কৌশল মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া জরুরি

দেশের শীর্ষস্থানীয় বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান শ্বাসতন্ত্রের রোগ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। এখন তিনি ফুসফুসের কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনা বা পুনর্বাসন বিষয়ে কাজ করছেন। ফুসফুসকে সুস্থ রাখার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজেও তিনি যুক্ত। গড়ে তুলেছেন ইনজিনিয়াস পালমো-ফিট নামের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শিশির মোড়ল ও নিজস্ব প্রতিবেদক সুহাদা আফরিন।সাম্প্রতিক সময়ে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) বা দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি এবং এসব অসংক্রামক রোগে মৃত্যু বাড়ছে বলে শোনা যাচ্ছে। সিওপিডি নিয়ে আলোচনা তুলনামূলকভাবে কম। দেশে সিওপিডির পরিস্থিতি আসলে কী বা কোন পর্যায়ে?

অধ্যাপক মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান: ২০০৭ সালে ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ (বার্ডেন অব অবস্ট্রাকটিভ লাং ডিজিজ) নিয়ে জরিপ করা হয়েছিল। সেই জরিপে দেখা যায়, চল্লিশোর্ধ্ব মানুষের মধ্যে প্রায় ২২ শতাংশ সিওপিডিতে ভুগছে। অর্থাৎ চল্লিশোর্ধ্ব প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের বেশি মানুষ ভুগছে সিওপিডিতে। সে হিসাবে বলা যায়, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ সিওপিডিতে ভুগছে।

দেশে প্রায় এক কোটি সিওপিডি রোগী আছে। সিওপিডি, হাঁপানি, আইএলডি (ইন্টারস্টিসিয়াল লাং ডিজিজ) মিলে প্রায় দুই কোটি মানুষ শ্বাসতন্ত্রের রোগে ভুগছে।

দেশে কি শ্বাসতন্ত্রের রোগ বা সিওপিডির প্রকোপ বাড়ছে? কী কী কারণে বাড়ছে বলে আপনি মনে করছেন?

মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান: এটা মূলত বয়স্ক মানুষের অসুখ। কিন্তু বাংলাদেশে বহু মানুষ ধোঁয়া, ধুলার পরিবেশে এবং নিয়ন্ত্রণহীন ধোঁয়ার মধ্যে কাজ করে। অনেকে শিল্পকারখানায় কাজ করে। এসব কারণে বয়স ৪০ হওয়ার আগেই সিওপিডির উপসর্গ দেখা যায়। দৈনিক ২০টি করে সিগারেট ২০ বছর খেলে সিওপিডি হয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আরও কম সিগারেট খেলেই সিওপিডি দেখতে পাওয়া যায়।
সিওপিডি একটি গুচ্ছ রোগ। ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, এমফাইসিমা, হাঁপানি, ব্রঙ্কিয়েকট্যাসিসে আক্রান্ত রোগীদের সিওপিডির আশঙ্কা থাকে।

এম এস এক্সেল এর কাজ কি? ms excel এর ব্যবহার জেনে নিন।

■ ধোঁয়া ও ধুলা সিওপিডির অন্যতম কারণ।

■ শরীরচর্চা ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস সিওপিডি রোগীর অন্যতম চিকিৎসা।

■ বাংলাদেশে বয়স ৪০ পেরোলে সিওপিডির উপসর্গ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি থাকে।

সাধারণ মানুষ হাঁপানি বা অ্যাজমার সঙ্গে কিছুটা পরিচিত। সিওপিডির সঙ্গে ততটা নয়। শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য রোগের সঙ্গে সিওপিডির পার্থক্য কোথায়? উপসর্গ কী?

মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান: সিওপিডি একটি গুচ্ছ রোগ। অর্থাৎ কতগুলো রোগের সমষ্টি। এর মধ্যে দুটি রোগকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়—ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস ও এমফাইসিমা। ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস বলতে বোঝায়, নিয়মিত কফ তৈরি হওয়া এবং বছরে তিন মাসের মতো কফ থাকে। চিকিৎসা না নিলে কফের পরিমাণ ও স্থায়িত্বও বাড়তে থাকে। যখন সিওপিডি মাঝারি বা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন ব্রঙ্কাইটিসের কারণে কফ সারা বছর থাকে।

এমফাইসিমা হচ্ছে, ফুসফুস বেলুনের মতো বড় হয়ে যাওয়া। ফুসফুসের কাজ হচ্ছে, শ্বাস নেওয়ার সময় ফুসফুস বেলুনের মতো বড় হবে এবং শ্বাস ফেলার সময় সংকুচিত হবে। কিন্তু সিওপিডি রোগীর এমফাইসিমা থাকার কারণে সব সময় ফুসফুসটা বড় হয়ে থাকে। যখন শ্বাস ফেলে তখন আর ছোট হয় না। এ কারণে রোগী একটু হাঁটলে হাঁপিয়ে ওঠে।

এই ফুসফুস যখন অনেক বড় হয়ে যায়, তখন ঠিকমতো অক্সিজেন নিতে পারে না। তখন শরীরে অক্সিজেনের অভাব হয়। এ ছাড়া ফুসফুসে কফ জমে যাওয়ার কারণে ফুসফুস থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড বের হতে পারে না। তখন শরীরে কার্বন ডাই–অক্সাইড জমা হয়। এতে শ্বাসতন্ত্র অকার্যকর হয়ে যায়।

সিওপিডির প্রধান দুটি উপসর্গ হচ্ছে, অল্প হাঁটলে হাঁপিয়ে যাওয়া এবং সব সময় কিছু না কিছু কফ তৈরি হওয়া। প্রথম দিকে এই কফ সাদা থাকে। তারপর ধূসর হয়, পরে কালো হয়। বারবার সংক্রমণ হওয়ার কারণে হলুদ, সবুজাভ কফ হতে থাকে। সংক্রমণ বেশি হলে সিওপিডি রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হবে।

ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস ও এমফাইসিমার বাইরে আরও কিছু রোগ সিওপিডির কারণ। হাঁপানি, ব্রঙ্কিয়েকট্যাসিস অর্থাৎ ফুসফুসের মধ্যে পকেট বা গর্ত গর্ত হয়ে যাওয়া। সেখানে সংক্রমণ থেকে যায়। যেটা ওষুধ দিয়ে সহজে সারানো যায় না। তৃতীয় রোগটি হচ্ছে গ্যাস্ট্রো ইসোফেজিয়াল রিফ্ল্যাক্স ডিজিজ (জিইআরডি)। অর্থাৎ খাওয়ার পর খাবারের অংশ খাদ্যনালি থেকে শ্বাসনালিতে চলে আসা। এতে খাওয়ার পর রোগীর কাশি হয় ও বুক জ্বালা করে।

সিওপিডি মারাত্মক পর্যায়ে গিয়ে রোগী নিউমোনিয়ায় মারা যায়। নিউমোনিয়ার একটি কারণ হচ্ছে এই জিইআরডি। বৃদ্ধ বয়সে সিওপিডি রোগীদের এটা বেশি হয়। চতুর্থ রোগটি হচ্ছে, স্লিপ অ্যাপনিয়া। ঘুমের ঘোরে শরীরে অক্সিজেন না পাওয়া বা শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া। মাঝারি বা মারাত্মক পর্যায়ে সিওপিডির প্রায় অর্ধেক রোগীর মধ্যে এ সমস্যা দেখা যায়। এই চারটি সমস্যা সিওপিডির সঙ্গে থাকার কারণে রোগটি জটিল পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা জেলা পর্যায়েও হতে পারে

এ ছাড়া অন্যান্য রোগ ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগজনিত সমস্যা, ক্ষুধামান্দ্য, বেশি দুশ্চিন্তা, হতাশা, বৃদ্ধ বয়সে একাকিত্ব, পুষ্টিহীনতা ও শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি সিওপিডির রোগীকে জটিল করে তোলে।

আপনার বক্তব্য থেকে সিওপিডি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া গেল। এর চিকিৎসা সম্পর্কে যদি কিছু ধারণা দেন।

মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান: সিওপিডির চিকিৎসার জন্য ধোঁয়া ও ধুলামুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বছরে একটা ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নিতে হবে। এ ছাড়া পাঁচ বছরে একটা নিউমোনিয়ার টিকা নিতে হবে।

এই রোগ মানুষকে নির্জীব করে তোলে। রোগীকে সজীব করে তোলার জন্য প্রয়োজন ফুসফুসের কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনা বা পুনর্বাসন কর্মসূচি। এটা সব মানুষেরই প্রয়োজন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ নির্জীব হয়ে যায়। তাদের সজীব করতে প্রয়োজন ফুসফুসের ব্যায়াম। এটা অন্যান্য রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে। যদি কেউ ফুসফুসের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচি অনুসরণ করে, তাহলে ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, রক্তচাপ, বাতের রোগ, প্যারালাইসিসের মতো রোগ নিয়ন্ত্রণেও উপকার হয়।

সিওপিডির রোগীর উপযুক্ত খাদ্য এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ খেতে হবে। কফের রং পরিবর্তন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী
এটা সব মানুষেরই প্রয়োজন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ নির্জীব হয়ে যায়। তাদের সজীব করতে প্রয়োজন ফুসফুসের ব্যায়াম। এটা অন্যান্য রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে। যদি কেউ ফুসফুসের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচি অনুসরণ করে, তাহলে ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, রক্তচাপ, বাতের রোগ, প্যারালাইসিসের মতো রোগ নিয়ন্ত্রণেও উপকার হয়।

সিওপিডির রোগীর উপযুক্ত খাদ্য এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ খেতে হবে। কফের রং পরিবর্তন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। হাঁপানি থাকলে ইনহেলার ব্যবহার করতে হবে। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন। একবারে পেট ভরে না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাওয়া ভালো। খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর ঘুমাতে যাওয়া। ডাল, মিষ্টি, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, অতিরিক্ত ঝাল ঘুমানোর আগে না খাওয়া।

 

সিওপিডির চিকিৎসায় ফুসফুসের গর্ত বা পকেট তৈরি হলে নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন প্রয়োজন। শীতকালে সপ্তাহে তিন দিন করে অথবা এক দিন পরপর নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করলে ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

স্লিপ অ্যাপনিয়া হলে তাদের স্লিপ টেস্ট করে দেখা হয়, তার ঘুমের কী পরিমাণ অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। তখন বাইপাপ মেশিনের সাহায্য নেওয়া হয়।

এ ছাড়া যাদের সিওপিডি অনেক জটিল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, তাদের বাসায় অক্সিজেন মেশিন রাখার পরামর্শ দিই। প্রাথমিক পর্যায়ে সিওপিডি ধরা পড়লে ও চিকিৎসা করলে রোগীর অবস্থা খারাপ হয় না। প্রত্যেক রোগীর জন্য চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করে দেওয়া চিকিৎসকের কর্তব্য।

বিজ্ঞাপন

এবার মহামারির প্রসঙ্গে আসা যাক। কোভিড-১৯ মূলত শ্বাসতন্ত্রের রোগ। এই মহামারির সময় শ্বাসনালি বা ফুসফুসের অন্যান্য অসুখ কি বাড়তে দেখা গেছে? সিওপিডিতে আক্রান্ত রোগীর পরিমাণ কেমন ছিল?

মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান: করোনার সময়ে দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ কমেছিল। এর কারণ মূলত দুটি, করোনা বিধিনিষেধের কারণে যানবাহন কমে যায়। ফলে পরিবেশের উন্নতি হয়েছিল। ধুলা ও ধোঁয়াও কমে যায় তখন। আরেকটি কারণ, মানুষ মাস্ক পরা শুরু করে। এতে শুধু করোনা থেকে সুরক্ষাই নয়, অন্যান্য রোগজীবাণু থেকে আক্রান্ত হওয়াও কমে যায়। যখন ব্যাপকভাবে করোনার সংক্রমণ ছিল, তখন হাঁপানি ও সিওপিডির রোগী কমে গিয়েছিল। মানুষকে উৎসাহিত করছি, করোনা চলে গেলেও যেন মাস্ক না ছাড়ে।

সিওপিডির জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসার প্রয়োজন। বাংলাদেশে সিওপিডির চিকিৎসায় হাসপাতাল ও জনবল কেমন আছে? প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তোলার ব্যবস্থা কি আছে?

মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান: সিওপিডির চিকিৎসার জন্য তিন ধরনের জনবল দরকার। চিকিৎসক, নার্স ও থেরাপিস্ট—যাঁরা ফুসফুসের ব্যায়াম শেখাবেন। দেশে এই থেরাপিস্টদের অভাব রয়েছে। দেশে ৫০ থেকে ৬০ হাজার এই থেরাপিস্ট দরকার। প্রতিটি হাসপাতালে তাঁদের প্রয়োজন। কিন্তু এদের কোনো পদ নেই। বাংলাদেশে যে ফিজিওথেরাপিস্ট আছেন, তাঁদের যদি দু–তিন মাসের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাহলে তাঁরাই এই কাজ করতে পারবেন।

এ ছাড়া সিওপিডি বিষয়ে চিকিৎসকও অপ্রতুল। বেশির ভাগ হাসপাতালে ফুসফুসের অবস্থা বুঝতে স্পাইরোমেট্রি পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, যেটা সিওপিডি নির্ণয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি। রোগটি নির্ণয় হচ্ছে আন্দাজের ওপর। পরীক্ষার ভিত্তিতে হচ্ছে না। সিওপিডি চিকিৎসার জন্য জেনারেল প্র্যাকটিশনার ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ যাঁরা আছেন, তাঁদেরও প্রশিক্ষণ দরকার, যা বাংলাদেশের চিকিৎসকদের এখনো হয়নি। সিওপিডি রোগীকে চিকিৎসা দিতে শর্টকোর্স প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, যা সব চিকিৎসককে উদ্বুদ্ধ করবে। এ ছাড়া হাসপাতালগুলোতে রোগনির্ণয়ের জন্য দরকার স্পাইরোমেট্রি, সিপেড মেশিন এবং ছয় মিনিটের হাঁটার পরীক্ষা ও এবিজি মেশিন।
সরকারের বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে দেশের সব সিওপিডি রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। রোগটির বিষয়ে বেসরকারি উদ্যোগ কি আছে?

মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান: সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ যদি সঠিকভাবে হয়, তাহলে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। যক্ষ্মা নির্মূলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। সিওপিডি প্রতিরোধেও দেশব্যাপী রোগনির্ণয় কার্যক্রম, ধূমপানমুক্ত পরিবেশ তৈরি করার জন্য প্রচারণা, টিকাদান কর্মসূচিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই দেশ থেকে রোগটি নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পৃথিবীতে সিওপিডি হচ্ছে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। দ্রুত রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করতে না পারলে এতে মৃত্যুর হার আরও বেড়ে যাবে।

আপনি দীর্ঘদিন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এখন নিজেই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। আপনাদের প্রতিষ্ঠান ইনজিনিয়াস পালমো-ফিট সিওপিডি নিয়ে কী ধরনের কাজ করছে?

মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান: ইনজিনিয়াস পালমো-ফিট ২০১৬ সালে কাজ শুরু করে। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, চিকিৎসার পাশাপাশি ফুসফুসের যত্নের কৌশল মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ফুসফুসের যত্ন বলতে ধোঁয়া ও ধুলামুক্ত পরিবেশ, ফুসফুসের পুনর্বাসন কর্মসূচি ও চিকিৎসার জন্য উদ্বুদ্ধ করা। প্রতিবছর প্রায় তিন হাজার মানুষকে এখান থেকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখানে রোগীরা আসছে, শিখছে এবং বাসায় গিয়ে নিজেরা অনুশীলন করছে।

সিওপিডিতে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে নির্লিপ্ততা চলে আসে। ভালো হওয়ার ইচ্ছা চলে যায়। এই রোগীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য পরিবারের সমর্থন প্রয়োজন। মানসিক ও সামাজিক সমর্থনের বিষয়ে আমরা তাদের উদ্বুদ্ধ করে থাকি।

রোগীকে ব্যায়াম করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। এর জন্য আমাদের সেন্টারে দুই মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। তারা সপ্তাহে দুই দিন করে আসে। প্রশিক্ষণ নিলে রোগীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

ইনজিনিয়াস পালমো-ফিট এখানো সরকারের সঙ্গে কোনো কাজ করেনি। তবে চেষ্টা করে যাচ্ছিমানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, সচেতন করার কাজে গণমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজের কী করার আছে?

মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান: গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় নাট্যজন সিওপিডিতে আক্রান্ত ছিলেন। তাঁকে আমরা নিয়ে আসতাম। তিনি অন্য রোগীদের নিজের কথা বলতেন। এ ছাড়া জাতীয় দলের একজন সাবেক ফুটবলার নিজের অভিজ্ঞতার কথা মানুষকে শুনিয়েছেন। এভাবে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যখন নিজেদের কথা বলবেন এবং মানুষকে সচেতন করবেন, তখন অন্যরা উৎসাহিত হবে। আমি মনে করি, যার সিওপিডি হয়েছে, তাদের সবারই উচিত অন্যকে সচেতন করা। যেসব রোগী আমাদের এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে যায়, আমরা তাদের বলি অন্যদের শেখাতে। এতেও মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়।
তথ্যসূত্র প্রথম আলো

Leave a Reply