বস্তির সেই মেয়ে এখন মাইক্রোসফটের বড় কর্মকর্তা

বড় হয়েছেন বস্তিতে। ঘুমাতেন রাস্তায়। দু’বেলা দু’মুঠো আহার জুটতো না ঠিকমতো। এমন একজন যদি স্বপ্ন দেখেন কম্পিউটার কেনা। তাহলে সেটা বাড়াবাড়ি বৈকি। শাহিনা আত্তারওয়ালা সেরকম একজন অদম্য নারী যিনি রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতো ছাইভস্ম হতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন।

তিনি এখন দুনিয়ার অন্যতম বড় সফটওয়্যার কোম্পানি মাইক্রোসফটের ডিজাইন বিভাগের প্রধান! সম্প্রতি টুইটারে শাহিনা আত্তারওয়ালার জীবন কাহিনি তুলে ধরা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওতে শাহিনা নিজের মুখে তার জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের সঙ্গে লড়াই করে উঠে দাঁড়ানোর কাহিনী শুনিয়েছেন।সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সের ‘ব্যাড বয় বিলিওনেয়ার্স: ইন্ডিয়া’ ওয়েবসিরিজে মুম্বইয়ের বস্তি এলাকার একটি দৃশ্যে নিজের পুরনো বাড়ি দেখার পর আবেগআপ্লুত হয়ে তিনি ওই টুইট করেন। শাহিনা লেখেন, ওই ওয়েবসিরিজে মুম্বইয়ের বস্তি এলাকার যে বাড়িগুলি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, তার মধ্যে একটি বাড়ি আমার। আমি ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই বাড়িতেই থেকেছি।

পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ফল

বান্দ্রা রেলওয়ে স্টেশনের কাছে দরগা গলি বস্তিতে থাকতেন শাহিনা। তার বাবা বাড়িতে বানানো তেল ফেরি করতেন। তার পরিবার উত্তরপ্রদেশ থেকে মুম্বই চলে আসে। প্রথমবার স্কুলে কম্পিউটার দেখার পর থেকেই কম্পিউটার নিয়ে তার আগ্রহ জন্মায়। আগ্রহ দেখে, বাবা টাকা ধার করে মেয়েকে স্থানীয় কম্পিউটার ক্লাসে ভর্তি করেন।

বস্তির সেই মেয়ে এখন মাইক্রোসফটের বড় কর্মকর্তা

নিজের কম্পিউটার কিনতে শাহিনা না খেয়ে দুপুরের খাবারের টাকা জমাতে শুরু করেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ স্কুলছাত্রীকে। এক সাক্ষাতকারে শাহিনা বলেন, বস্তির জীবন খুব কঠিন ছিল এবং আমাকে যৌন হয়রানির মুখোমুখিও হতে হয়েছিল।

বাংলাদেশে মেডিকেল টেকনোলজির উন্নয়ন, প্রয়োজন ও করণীয়ঃ

শাহিনার কথায়, ১৫ বছর বয়সের মধ্যেই আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি আমার চারপাশে অনেক মহিলাকে অসহায়ভাবে নির্যাতিত হতে দেখেছি। বেশিরভাগ বিষয়েই স্বাধীনতা ছিল না। তবে এই জীবন মেনে নিতে চাননি শাহিনা। সেই জেদ সম্বল করেই এগোতে থাকা। শেষে মাইক্রোসফটে চাকরি।

তবে নিজের সাফল্যের জন্য বরাবর বাবাকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথমে বি কম-এ স্নাতক হন শাহিনা। পরে তিনি এনআইআইটি থেকে ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডিজাইনে ডিপ্লোমা করেন। ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনো শেষ করে তিনি বিভিন্ন সংস্থার পণ্যের ডিজাইন শুরু করেন।

এর পরই গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে তার ঝুলিতে আসে মাইক্রোসফটের চাকরি। ধীরে ধীরে ডিজাইন বিভাগের প্রধান হন। নিম্নবিত্ত বা বস্তি এলাকার মহিলা, যারা জীবনের প্রতিকূলতাকে হার মানাতে চান, সেই মেয়েদের অনুপ্রেরণা জোগাবে শাহিনার জীবনের গল্প।

যে গ্রামের সব তরুণীই সুন্দরী, তবুও বিয়ের জন্য পাত্রই জোটে না!

সম্প্রতি শাহিনা বলেছেন, দেশে লাখ লাখ পরিবার আমারই মতো দারিদ্রের মধ্যে বাস করে। যে দারিদ্র আপনাদের চোখে পড়ে না। আশার আলো এটাই যে, ক্ষমতায় যারা রয়েছেন, তাদের একজন গড়পড়তা শিক্ষিত ভারতবাসীও প্রশ্ন করতে পারেন এবং এর ফলে তাদের জীবনে বদল আসতে পারে।

Leave a Reply