বাঙালির দার্শনিকদের তালিকা || বাঙালির সেরা মুক্তমনাদের তালিকা

মুক্তমনা হলো বাংলাভাষী মুক্তচিন্তকনাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার এবং লেখকদের প্রথম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যা অভিজিৎ রায় শুরু করেছিলেন। মুক্তমনা অর্থ “মুক্ত মন”। মুক্তচিন্তা ও মুক্তমন শব্দ দুটি অনেকটাই কাছাকাছি অর্থ বহন করে। ওয়েবসাইটটি মুক্ত মত প্রকাশের পক্ষে এবং ধর্মীয় মৌলবাদ, বিশেষত ইসলামী ধর্মীয় মৌলবাদের সমালোচনা করে থাকে।[১]

সেকুলার হিউম্যানিজম কাউন্সিল (ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদ পরিষদ) মুক্তমনাকে “বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সমসাময়িক মুক্তচিন্তকদের বৃহত্তম এবং দ্রুত বর্ধমান সংগ্রহ” বলে অভিহিত করেছে। এই দলটি সেন্টার ফর ইনকয়েরি এবং আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী ও নৈতিকতা ইউনিয়ন-এর মতো আন্তর্জাতিক এনজিওর সাথে কাজ করেছিল।[২]

ওয়েবসাইটটি পরিচালনা করতেন অভিজিৎ রায়। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫ তারিখে ইসলামবাদী দাবিদার সন্ত্রাসদল তাকে হত্যা করে। অনন্ত বিজয় দাশও ব্লগের জন্য লিখেছিলেন এবং তাকেও একই বছরের ১২ মে তারিখে হত্যা করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদা গ্রুপ বলেছিলো যে তারাই রায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী।[৩] অনন্ত বিজয় দাশ ও অভিজিৎ রায় উভয়ই ইসলামপন্থীদের করা খুনের টার্গেটের তালিকায় ছিলেন।[৩]

২০০১ সালের মে মাসে অভিজিৎ রায় মুক্তমনা নামে একটি ইয়াহু গ্রুপ শুরু করেছিলেন যার অর্থ “মুক্ত মন”। ২০০২ সালে মুক্তমনা একটি ব্লগের রূপ পায়। মুক্তমনা ইন্টারনেটে ডারউইন দিবস এবং আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনকারী প্রথম কোনো বাঙালি সংগঠন। এই সংগঠনটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং ধর্মনিরপেক্ষ লেখকদের স্বাধীনতার জন্য কাজ করে। তারা আন্তর্জাতিক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সংগঠনগুলোর সাথে হত্যা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কাজ করেছিল। তারা ধর্মীয় প্রশ্ন এবং এলজিবিটি বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা করেছিল, যেগুলি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ বিষয়।

নাস্তিক্যবাদ, মূলত ব্যাপক অর্থে বলতে বুঝায়, উপাস্যদের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস প্রত্যাখ্যান করা। নেতিবাচক অর্থে, নাস্তিক্যবাদ হলো, যে কোন উপাস্যের অস্তিত্বে অবিশ্বাস করা। সর্বাধিকভাবে, কেবল উপাস্যদের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাসের অভাবের কারণে নাস্তিক্যবাদ গড়ে উঠে।

 

শীর্ষ বাঙালী দার্শনিকদের তালিকা

 

  বাউল লালন শাহঃ

Read More: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী

ভারত উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত বাউল সম্রাট লালন শাহ একাধারে বাউল সাধক, গীতিকার, সুরকার ও গায়ক-এককথায় চারণ শিল্পী। যিনি লালন সাঁই, ফকির লালন, লালন শাহ, মহাত্মা লালন নামেও পরিচিত। লালনকে বাউল গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ‘বাউল-সম্রাট’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।

জন্ম

প্রখ্যাত বাউল সম্রাট লালন শাহ এর জন্ম কোথায় তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। লালন শাহ নিজে কখনো তা প্রকাশ করেননি। কিছু সূত্রে পাওয়া যায় লালন ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশের) ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হারিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, বাংলা ১৩৪৮ সালের আষাঢ় মাসে প্রকাশিত মাসিক মোহম্মদী পত্রিকায় এক প্রবন্ধে লালনের জন্ম যশোর জেলার ফুলবাড়ী গ্রামে বলে উল্লেখ করা হয়। কোন কোন লালন গবেষক মনে করেন, লালন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার চাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ভাড়ারা গ্রামে জন্মেছিলেন।

ধর্ম

প্রখ্যাত বাউল সম্রাট লালন শাহ এর জীবদ্দশায় তাঁকে কোন ধরনের ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন করতে দেখা যায়নি। তিনি হিন্দু ও ইসলাম ধর্মে প্রথাগত অনুশাসন সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত ছিলেন। কিন্তু কোনো ধর্মই নিষ্ঠার সাথে পালন করেন নি। সব ধর্মের বন্ধন ছিন্ন করে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন লালন।

লালন বলেন,

সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে

লালন বলে, 

জাতের কী রূপ দেখলাম না এই নজরে।

জীবনী

একসূত্র থেকে জানা যায়, লালন শাহের পিতার নাম কাজী দরীবুল্লাহ্ দেওয়ান ও মাতার নাম আমিনা খাতুন। কাজী তাদের বংশগত উপাধি। হিতকরী পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ নিবন্ধে বলা হয়েছে, লালন তরুণ বয়সে একবার তীর্থভ্রমণে বের হয়ে পথিমধ্যে গুটিবসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। তখন তার সাথীরা তাঁকে ভেলায় ভাসিয়ে দিয়ে চলে যায়। কালিগঙ্গা নদীতে ভেসে আসা মুমূর্ষু লালনকে উদ্ধার করেন মলম শাহ। মলম শাহ ও তার স্ত্রী মতিজান তাকে বাড়িতে নিয়ে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। এরপর লালন তার কাছে দীক্ষিত হন এবং কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়াতে স্ত্রী ও শিষ্যসহ বসবাস শুরু করেন। কথিত আছে গুটিবসন্ত রোগে তিনি একটি চোখ হারিয়েছিলেন। ছেউড়িয়াতে তিনি দার্শনিক গায়ক সিরাজ সাঁইয়ের সাক্ষাতে আসেন এবং তার দ্বারা প্রভাবিত হন। পরে তাঁর কাছে দীক্ষা নেন।

লালনের আখড়া

লালন শাহ কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার ছেউড়িয়াতে একটি আখড়া তৈরি করেন। কুষ্টিয়া শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে ছেঁউড়িয়ায় তার আখড়া অবস্থিত। যেখানে তিনি তার শিষ্যদের নীতি ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিতেন। তার শিষ্যরা তাকে “সাঁই” বলে সম্বোধন করতেন। অনেক দূর পর্যন্ত বাংলার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে বহুসংখ্যক লোক লালন ফকিরের শিষ্য ছিলেন। শোনা যায় তাঁর শিষ্যের সংখ্যা প্রায় দশ হাজারের বেশি ছিল। আখড়ার প্রবেশ মুখের দু’পাশে রয়েছে বিভিন্ন দোকান। রয়েছে কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজা, বাঁশি, একতারা, নানা রকম বাদ্যযন্ত্রের পাশাপাশি  কাঠের তৈরি নানা জিনিসপত্র। কয়েকটি দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে  লালনের ভাস্কর্য, ছোটদের খেলনা। সাড়ে ১৪ একর জায়গার ওপর নির্মিত আখড়ায় রয়েছে লালন একাডেমি ভবন ও কমপ্লেক্স, পাঠাগার, অডিটোরিয়াম, রিসোর্স সেন্টার ও লালন জাদুঘর। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে আছেন সাধক বাউল লালন শাহ। তার সমাধির পাশে রয়েছে পালক মা মতিজান ফকিরানী এবং বাহিরে পালক পিতা মাওলানা মলম শাহর সমাধি।

বিশ্ব সাহিত্যে লালনের অবদান

লালনের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তিনি প্রায় দুহাজার গান রচনা করেন। তাঁর গান মরমি ব্যঞ্জনা ও শিল্পগুণে সমৃদ্ধ। সহজ-সরল শব্দময় অথচ গভীর তাৎপর্যপূর্ণ ও মর্মস্পর্শী তাঁর গানে মানব জীবনের আদর্শ, মানবতাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে। লালন শাহের গান ও দর্শনের দ্বারা অনেক বিশ্বখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক প্রভাবিত হয়েছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ লালনের মৃত্যুর ২ বছর পর তার আখড়া বাড়িতে যান এবং লালনের দর্শনে প্রভাবিত হয়ে ১৫০টি গান রচনা করেন। লালন শাহের মানবতাবাদী দর্শনে প্রভাবিত হয়েছেন সাম্যবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আমেরিকান কবি এলেন গিন্সবার্গ লালনের দর্শনে প্রভাবিত হন এবং তার রচনাবলিতেও লালনের রচনাশৈলীর অনুকরণ দেখা যায়। তিনি আফটার লালন নামে একটি কবিতাও রচনা করেন। লালনের গান লালনগীতি বা লালন সংগীত হিসেবে পরিচিত। সমগ্র বিশ্বে, বিশেষ করে বাংলাদেশসহ সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে লালনের গান বেশ জনপ্রিয়। শ্রোতার পছন্দ অনুসারে বিবিসি বাংলার করা সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় লালনের “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়” গানটির অবস্থান ১৪তম।

বাউল দর্শন

লালনকে বাউল মত এবং গানের একজন অগ্রদূত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর গানের জন্য উনিশ শতকে বাউল গান জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বাউল গান মানুষের জীবন দর্শন সম্পৃক্ত বিশেষ সুর সমৃদ্ধ। বাউলরা সাদামাটা জীবনযাপন করেন এবং একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানোই তাদের অভ্যাস। ২০০৫ সালে ইউনেস্কো বাউল গানকে বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে।

লালনের কয়েকটি জনপ্রিয় গান

  • সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে
  • সময় গেলে সাধন হবে না
  • আছে আদি মক্কা এই মানব দেহে
  • তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে
  • এসব দেখি কানার হাট বাজার
  • মিলন হবে কত দিনে
  • খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়
  • কে বানাইলো এমন রঙমহল খানা
  • জাত গেলো জাত গেলো বলে
  • খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়
  • আপন ঘরের খবর লে না
  • যেখানে সাঁইর বারামখানা

মৃত্যু

১৮৯০ সালের ১৭ই অক্টোবর লালন ১১৬ বছর বয়সে কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেউড়িয়াতে নিজ আখড়ায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর দিন ভোর ৫টা পর্যন্ত তিনি গান-বাজনা করেন এবং এক সময় তাঁর শিষ্যদের বলেন, “আমি চলিলাম” এবং এর কিছু সময় পরই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর নির্দেশ বা ইচ্ছা না থাকায় তাঁর মৃত্যুর পর হিন্দু বা মুসলমান কোন ধরনের ধর্মীয় রীতি নীতি পালন করা হয় নি। তারই উপদেশ অনুসারে ছেউড়িয়ায় তার আখড়ার একটি ঘরের ভিতর তার কবর দেওয়া হয়।

‘পার করো হে দয়াল চাঁদ আমারে/

ক্ষমা হে অপরাধ আমার/

এই ভব কারাগারে…’

ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব—কীর্তিমান বাঙালি, কিংবদন্তী বিশ্বমানব, D. Govinda Chandra Dev

ঈশ্বরচন্দ্র দেব পুরকায়স্থ ও শরৎ সুন্দরী দেবীর সন্তান গোবিন্দচন্দ্র দেব পুরকায়স্থ জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। বহুমুখী প্রতিভা, অসামান্য পাণ্ডিত্য এবং দর্শনশাস্ত্রে বৈপ্লবিক যুগের সূচনা করা এই মহামনিষীকে আমরা চিনি অধ্যাপক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব বা জি সি দেব নামে। সদাহাস্যজ্জ্বল পরোপকারী এই কীর্তিমান বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের দর্শনশাস্ত্রে সৃষ্টি করে গেছেন নতুন ধারা। বাংলাদেশের আধুনিক দর্শনের পথিকৃৎ বিশ্ববরেণ্য এই মানবতাবাদী দার্শনিককে তার অবদানের জন্য প্রাচ্যের সক্রেটিস হিসেবে অভিহিত করা হয়।

তার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল রিপন কলেজেই, ১৯৩১ সালে যোগদান করেন তিনি। ১৯৩৪ সালে মহারাষ্ট্রের অমলনারের বিশ্বখ্যাত দর্শন গবেষণা কেন্দ্রে উচ্চতর শিক্ষার জন্য যান, সেখান থেকে ফিরে ১৯৩৭ সালে আবারও রিপন কলেজে যোগ দেন। ১৯৩৯ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধের কারণে কলেজটি কলকাতা থেকে দিনাজপুরে স্থানান্তরিত হলে তিনি চলে আসেন। বিশ্বযুদ্ধ শেষে আবার ১৯৪৫ সালে কলেজটি কলকাতার স্থানান্তরের প্রয়োজন হলে তিনি সবার সহযোগিতায় কলেজটিকে এখানেই নতুন নামে প্রতিষ্ঠা করে অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রিপন কলেজের নাম হয় সুরেন্দ্রনাথ কলেজ। যা বর্তমানে দিনাজপুর সরকারি কলেজ নামে সুপরিচিত।

দেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন ১৯৫৩ সালে। পরবর্তী ১৮ বছরে ৭টা ইংরেজি, দু’টি বাংলা গ্রন্থ এবং শতাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা করেন তিনি। দর্শনশাস্ত্রে প্রাচ্যের ধ্যান-ধারণা এবং চিন্তায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনে দেবের গবেষণা। প্রাচ্য দর্শনের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের তুলনামূলক আলোচনা, দর্শনের ব্যবহারিক মূল্য, বিভিন্ন ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের তথা সমগ্র পৃথিবীর মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় দর্শন কী ভূমিকা পালন করতে পারে—এ ধরনের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধান করেছিলেন দেব।

আরও পড়ুন:করোনা দেশের শিক্ষা-স্বাস্থ্যখাতের স্বরূপ উন্মোচন করেছে । অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন

আরজ আলী মাতব্বর:

নাম: আরজ আলী মাতুব্বর
বাবা:এন্তাজ আলী মাতুব্বর।
মা: লালমন্নেছা বিবি

পড়াশুনা: আরজের বয়স যখন ১৩ তখন এই গ্রামের আবদুল করিম মুনশি নামে একজন বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি তাঁর বাড়িতেই খুলে বসলেন একটি মক্তব। আরজের পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে এবং এতিম ছেলে বলে মুনশি সাহেব তাঁকে তাঁর মক্তবে ভর্তি করে নিলেন বিনা বেতনে। তাল ও কলাপাতা যোগাড় করে রোদের তাপে শুকিয়ে সে ক্লাসে লেখাজোখা করে।

কিন্তু মুনশি আবদুল করিমের মক্তবের অধিকাংশ পড়ুয়াই দরিদ্র কৃষকের সন্তান। অভিভাবকের ইচ্ছা ছেলেদের লেখাপড়া শেখাবে। কিন্তু কোনোভাবে বই কিনে দিলেও মক্তবের বেতন দেয়ার সামর্থ্য তাদের ছিল না। ছাত্রদের বেতন অনাদায়ে সৃষ্টি হলো অচলাবস্থা। ফলে সেই বছরই বন্ধ হয়ে গেল মক্তবটি।

মুনশি আবদুল করিমের মক্তবের পাট চুকে গেল। সে সাথে উৎসাহী পড়ুয়া আরজের পড়াশোনাও গেল বন্ধ হয়ে। অর্থের অভাবে আরজ আলীর আর কোনো বিদ্যালয়ে পড়া হয়নি। আবদুল করিম মুনশির মক্তবে শেখা স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, বানানকলা টুকুই আরজের সম্বল হলো। এর পরের বাকি জীবনে তাঁর পড়ালেখা হয়েছে পৃথিবীর পাঠশালায়।

আনুষ্ঠানিক অথবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অক্ষর জ্ঞানটুকু সম্বল করে অদম্য স্পৃহায় পুস্তক পাঠে মনোনিবেশ করলেন আরজ। বিভিন্ন বিষয়ী বই।

কর্মজীবন: ১৩২১ সালে আরজ আলীর প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা বন্ধ হলে কিছুকাল ইতস্তত ঘোরাফেরা করে ১৩২৬ সালে নিয়োজিত হন পৈতৃক পেশা কৃষিকাজে। কৃষিকাজের ফাঁকে ফাঁকে আরজ আলী আমিনের কাজ (জমি জরিপকারী বা ইংরেজিতে ল্যান্ড সার্ভেয়ার) শিখে ফেলেন। ক্রমে এই কাজের প্রতি তাঁর আগ্রহ গাঢ় হতে থাকে। পরবর্তীকালে জমি জরিপের কাজকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৩৩২ সালে আমিনি পেশা শুরু করেন। এই পেশায় তাঁর দক্ষতার কথা উত্তরোত্তর আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে খুব অল্পকালের মধ্যেই আমিন পেশায় তাঁর সাফল্য করায়ত্ত হয়। গাণিতিক ও জ্যামিতিক নিয়মের ওপর অসম্ভব দখল অর্জন করেছিলেন। বিশেষ করে সূক্ষ্ম মাপ ও বন্টনে তাঁর বিস্ময়কর দক্ষতা সুবিদিত। সূক্ষ্মভাবে মাপজোকের কৃতিত্বের কথা বরিশাল অঞ্চলে মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

সংসার জীবন: ১৩২৯ সালের ১৯ আগ্রহায়ণ লালমন্নেছার সাথে তাঁর বিয়ে সম্পন্ন হয়। এই স্ত্রীর ঘরে জন্ম নেয় ১টি ছেলে ও ৩টি মেয়ে। পরে আরেকবার পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন আরজ আলী মাতুব্বর। পার্শ্ববর্তী গ্রামের আবদুল করিম মৃধার মেয়ে সুফিয়া খাতুনকে আরজ বিয়ে করেন ২৯ আষাঢ় ১৩৪০ সালে। সুফিয়া খাতুনের ঘরে জন্ম নেয় ৬টি ছেলেমেয়ে এর মধ্যে ৪টি মেয়ে এবং দুটি ছেলে । সব মিলিয়ে মোট ১০ জন ছেলে-মেয়ের জনক ছিলেন আরজ আলী মাতুব্বর।

লাইব্রেরি: বাংলা ১৩৩০ সাল থেকে আরজ আলী ব্যক্তিগত পাঠাগার গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। বন্ধু-স্বজনদের কাছে চেয়ে নেয়া এবং উপহার পাওয়া সামান্য কটি বই জমেছিল। এছাড়া, পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য কৃষিকাজে যে শ্রম দেয়া দরকার তার চাইতে অধিক সময় শ্রম দিয়ে যে বাড়তি আয় হতো সেই অর্থে বই কিনতেন। সামান্য পরিমাণ অর্থও বাজে ব্যয় না করে শুধুই বই কিনেছেন। এভাবে আঠারো বছর বই কিনে সংগ্রহের ফলে বইয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় নয় শ’তে। বই গুছিয়ে রাখার জন্য আলমারি কেনার সামর্থ্য না হওয়ায় বৈঠকখানার ঘরের তাকে সাজিয়ে রাখা ছিল বইগুলো। ১৩৪৮ সালের ১২ জ্যৈষ্ঠ এক ভয়াবহ বিনাশী ঘূর্ণিঝড় প্রবাহিত হয় অই এলাকার ওপর দিয়ে। এই সর্বনাশা ঘূর্ণিঝড় আরজদের বৈঠকখানার ঘর এবং সে সাথে বৈঠক ঘরে রাখা সবগুলো বই উড়িয়ে নিয়ে যায়। একটি বইও অক্ষত উদ্ধার করতে পারেননি পরে। জীবনের এ এক মর্মান্তিক বাস্তবতার পরম অভিজ্ঞতা বলে মনকে প্রবোধ দিয়ে পুনরায় বই সংগ্রহে ব্রতী হয়েছেন। এবারও একই প্রক্রিয়া অর্থাৎ বাড়তি শ্রম, বাড়তি আয় এবং তা থেকে বই ক্রয়। নিরলস হাড়ভাঙা খাটুনি খাটেন। এভাবে ১৭ বছর পর তার বইয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় চারশ। ঠিক এ সময় পুনরায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিম হয়। ১৭ বছরের ব্যবধানে আরেক দফা প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। উড়িয়ে নিয়ে যায় একই বৈঠকখানার ঘর এবং একইভাবে রাখা সংগৃহীত বইগুলোও। এই ঘটনা ঘটে ১৩৬৫ সালের ৬ কার্তিক। শোকে-দুঃখে-ক্ষোভে আরজ এবার প্রতিজ্ঞা করেন, ‘না, আর বই সংগ্রহ নয়, বই সংগ্রহের আগে বই সংরক্ষণের জন্যে উপযুক্ত বাড়ি বানানো চাই।’ হ্যাঁ, সেদিনের দুঃখ-তাপে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, পরবর্তীকালে তা রক্ষা করেছিলেন আরজ। দীর্ঘ একুশ বছর কঠোর পরিশ্রম করে ক্রমে সঞ্চিত অর্থে শুধুমাত্র বই রাখার জন্যই মজবুত দালান ঘর বানিয়েছিলেন। ১৩৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত করেছেন শুধুমাত্র বই সাজানো একটি ঘর-আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি।

লেখালেখি: লেখালেখি সূচনার পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ১৫ খানি পান্ডুলিপি রচনা করে গেছেন। এর মধ্যে জীবদ্দশায় প্রকাশিত ৪টি বইয়ের নাম ‘সত্যের সন্ধান’, ‘অনুমান’, ‘সৃষ্টি রহস্য’ ও ‘স্মরণিকা’। মৃত্যুর কিছুকাল পরে প্রকাশিত হয় আরেকটি বই। এর নাম ‘মুক্তমন’।
গ্রন্থাকারে প্রকাশিত এই বইগুলো ছাড়াও রয়েছে আরো কয়েকটি পান্ডুলিপি। এগুলোর নাম হচ্ছে- সীজের ফুল (কবিতা), সরল ক্ষেত্রফল (গলিত), জীবন বাণী (আত্মজীবনী), ভিখারীর আত্মকাহিনী (আত্মজীবনী), কৃষকের ভাগ্য গ্রহ (প্রবন্ধ), বেদের অবদান (প্রবন্ধ), পরিচয়, আমার জীবন দর্শন। এছাড়া, ঘটনাবলী, জন্ম বংশাবলী, বংশ পরিচয়, অধ্যয়নসার, ডাইরী ইত্যাদি পান্ডুলিপিও সংরক্ষিত রয়েছে।

মৃত্যু: আরজ আলী মাতুব্বর ১ চৈত্র ১৩৯২ সালে ৮৬ বছর বয়সে বরিশাল মেডিক্যাল হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র: আরজ আলী মাতুব্বর, লেখক-আইয়ুব হোসেন, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী

বর্তমান সময়ের প্রথম সারীর  শীর্ষ বাঙালী মুক্তমনাদের তালিকা

অভিজিৎ রায়

আহমেদ শরীফ:

হুমায়ুন আজাদ:

কবি শামসুর রহমান:

তসলিমা নাসরিন:

আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীঃ

জাফর ইকবাল:

লেখক আনিসুল হকঃ

সুলতানা কামাল: জন্মসূত্রে মুসলমান হলেও বিয়ে করেছে শ্রী সুপ্রিয় চক্রবর্তী নামে এক হিন্দুকে।কপালে সবসময় একটা ট্রেডমার্ক টিপ থাকে।

প্রবীর ঘোষ:

কবির চৌধুরী (হ):

সৈয়দ শামসুল হক:

মুনতাসির মামুন:

আরও পড়ুন: হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

ব্লগার রাজীব :

ফরহাদ মজহার:

শফিক রেহমান:

 কবি দাউদ হায়দারঃ

 

হাফেজ মাওলানা মুফতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদঃ

মুফাসসিল ইসলামঃ 

লোপা রহমানঃ

আসিফ মহিউদ্দিনঃ

আসিফ মহিউদ্দিন একজন ব্লগার। তিনি ব্লগারের মাধ্যমে ইসলামের অপপ্রচারের যাত্রা শুরু করেন। ইসলাম সম্পর্কে নানারকম অযৌক্তিক কথাবার্তা লিখলে তার উপর কিছু যুবক ক্ষিপ্ত হয়ে আক্রমণ করেন। বর্তমানে তিনি জার্মানিতে আছেন এবং সেখানে বসেই ইসলাম সম্পর্কে নানারকম সমালোচনা করছেন। আসিফ মহিউদ্দিন নিজেদের উদারপন্থী মুক্তচিন্তার নাস্তিক হিসেবে দাবী করে থাকেন। তারা দীর্ঘদিন থেকেই মুক্তচিন্তার নামে ধর্মকে, বিশেষ করে ইসলামকে নানা ভাবে হেয় করে আসছেন। একজন মানুষ তখনই নিজেকে সুস্থধারার মুক্তচিন্তার দাবী করতে পারেন, যখন তার আচরনে কোন আক্রোশ বা বিদ্বেষ প্রকাশ না পেয়ে বরং যৌক্তিকভাবে তার অভিমত প্রকাশ পাবে। আসিফ মহিউদ্দিন তাদের মুক্তচিন্তার মুখোশের আড়ালে ইসলামের প্রতি তাদের বিদ্বেষকে ঢেকে রাখতে পারেননি। সেটা তাদের বিভিন্ন লিখা থেকেই প্রকাশ পায়।

সেফুদার

সিফাত উল্লাহর ধর্ম : সিফাত উল্লাহকে ব্লগ, ফেসবুক গ্রুপ, পেজে নাস্তিক সম্বোধন করা হলেও নিজেকে তিনি সুন্নী মুসলিম হিসেবে দাবি করেন। তার মতে, তিনি কারো ধন সম্পদ আত্নসাৎ করেন না, স্রষ্টায় বিশ্বাসী, নামাজ-রোজা রাখেন, হজে যেতে চান।

জানা যায়, ২০১৩-১৪ সালে বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার তথা মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যার ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন সেফুদা।

সেফুদা খুলনার সোনাডাঙ্গায় ৫ নভেম্বর ১৯৪৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। ১৯৮৫ (মতান্তরে ১৯৮৮) সালে প্রথম সৌদি আরব যান এবং সেখান থেকে ১৯৮৮ সালে (মতান্তরে ১৯৯১) সালে অস্ট্রিয়ায় যান।

এরপর আর তিনি কখনো দেশে ফিরে আসেননি। বিদেশের মাটিতে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় বসবাস করেন।

তথ্য অনুযায়ী, সেফাত উল্লাহ ১৯৭৯/১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে ভিয়েনায় এক স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হিসেবে রয়েছেন। পাশাপাশি একটি অনলাইন শপে পার্টটাইম কাজ করেন। স্বীকৃত কাজ ছাড়াও তিনি কবিতা লেখেন, গান লেখেন, স্থানীয় গনমাধ্যম তথা টেলিভিশনে কাজ করেন।

সেফুদার স্ত্রী এবং এক সন্তান রয়েছে। যদিও বর্তমানে তার স্ত্রী-সন্তান কিংবা পরিবারের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। পারিবারিক সম্পর্কবিহীন সিফাত উল্লাহ দেশের ওপর রাগ করে একাকী প্রবাস যাপন করছেন দীর্ঘদিন।

সিফাত উল্লাহর প্রিয় খাবার হলো চেরিফল, মদ/ওয়াইন। অধিকাংশ সময় লাইভে এসে এই খাবারগুলো খান এবং মানুষকে এগুলোর গুণাগুন বর্ণনা করেন। খেতে উৎসাহিত করেন। হাফপ্যান্ট এবং সবুজ কালারের টিশার্ট পরতে ভালোবাসেন। তার প্রিয় কাজগুলোর মধ্যে একটা হলো বাংলাদেশের চলমান বিষয়গুলো নিয়ে অশ্লীলভাবে ব্যক্তি বিশেষকে গালাগালি করা।

সেফুদার উল্লেখযোগ্য কিছু উক্তি :

*মদ খাবি মানুষ হবি
*আমার মতো হতে চাও
*আমাকে দেখে হিংসে হয়
*মদ খাও আর পরী…(অশ্লীল)
*শুটকি খাও আর পেত্নি
*ট্রস ট্রস করে মারবো
*কত মেয়েরা আমাকে ভালবাসে। আমি কি সবাইকে ভালবাসতে পারি?
*আমি প্রেম সম্রাট

Read More: হ্যাল এলরড 10টি বানী হ্যাল এলরড 10টি বানী

 

 

আরও পড়ুনStephen Hawking Biography

উপসংহার

বন্ধুরা, এই পোস্টে আমরা আপনাকে লালন শাহ Lalon  সম্পর্কে বলেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পছন্দ করবেন।

আপনার এই পোস্টটি কেমন লেগেছে, মন্তব্য করে আমাদের জানান এবং এই পোস্টে কোনও ত্রুটি থাকলেও আমরা অবশ্যই এটি সংশোধন করে আপডেট করব।

 

লালন শাহ Lalon biography  Biography, Famous Quotes ও উক্তি সমূহ লেখাটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো। এই ধরনের লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি ফলো ।

 

ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।

উক্ত আর্টিকেলের উক্তি ও বাণীসমূগ বিভিন্ন ব্লগ, উইকিপিডিয়া এবং Narendra modi রচিত গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

 

তথ্যসূত্র: Wikipedia, Online

ছবিঃ ইন্টারনেট

দৃষ্টি আকর্ষণ এই সাইটে সাধারণত আমরা নিজস্ব কোনো খবর তৈরী করি না.. আমরা বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবরগুলো সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি.. তাই কোনো খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ সবাইকে।

 

Leave a Reply