বাচ্চাদের জন্য ৩০টি জনপ্রিয় ঘুমপাড়ানি গান | 30 Popular Bengali Lullaby With Lyrics ঘুম পাড়ানী ঘুমের পরী

শিশুদের ঘুমপাড়ানি গান শোনানোর উপকারিতা :
১. মা ও সন্তানের সম্পর্ক গভীর হয়
একটি শিশু সবার প্রথম তার মায়ের আওয়াজ চিনতে শেখে। বিশেষজ্ঞদের মতে ঘুমপাড়ানি গান এক্ষেত্রে বাচ্চাদের ভীষণভাবে সাহায্য করে। মা যখন তার সন্তানকে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়, সন্তান তার মায়ের উপস্থিতি বুঝতে পারে। মায়ের গান শুনে সে তখন নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারে। এভাবে মা ও সন্তানের সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে ওঠে।

২. শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটায়
ঘুমপাড়ানি গান শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। এটি শিশুর মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশকে উত্তেজিত করে যা মানসিক বিকাশ ঘটায়। এছাড়া বাচ্চার গানের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন ধ্বনির মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা বুঝতে শেখে।

৩. বাচ্চা ভালো ঘুমাতে পারে
গান বাচ্চাদের তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়াতে সাহায্য করে। ঘুম গাঢ় হয়। খেয়াল করে দেখবেন, অনেক সময় ঠিকঠাক ঘুম না হলে বাচ্চারা কান্নাকাটি করে। তাই দুষ্টু সোনাকে ঘুম পাড়াতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে ঘুমপাড়ানি গান।

৪. ভাষার উপর বাচ্চার দখল বাড়ায়
ঘুমপাড়ানি গান বাচ্চার ভাষা শেখার ক্ষমতা বাড়ায়। ধীরে ধীরে ওরা গানের শব্দ মনে রাখতে শেখে এবং সঠিক সময় তার প্রয়োগ করতে শুরু করে।

৫. শিশুর মনের ভয় দূর করে
মায়ের মুখে গান শুনতে শুনতে বাচ্চারা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে। মা যে পাশেই আছে এই অনুভূতি ওদের মনে সাহস জোগায়। যা ওদের সাহসী করে তোলে এবং ভবিষ্যতে যে কোনও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে শেখায়।

জানুন পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শিশুর কোন কোন সমস্যা হতে পারে
একটি শিশুর সার্বিক বিকাশের জন্য সঠিক ঘুম খুবই প্রয়োজনীয়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে লেপটিন নামক হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়। এই হরমোন খিদে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই হরমোনের ক্ষরণ কমে গেলে মস্তিষ্ক শরীরকে খিদে নিয়ন্ত্রণ করার সিগনাল পাঠাতে পারে না। ফলত নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। শুধু তাই নয় এর কারণে মানসিক সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেইসব সমস্যাগুলি –

মানসিক বিকাশ রোধ – সঠিক ঘুম না হলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ রোধ হতে পারে। যা ভবিষ্যতে আরও সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
শারীরিক বৃদ্ধি হ্রাস – শিশুর বৃদ্ধির জন্য যে হরমোন প্রয়োজন তা কেবলমাত্র ঘুমের সময় ক্ষরণ হয়। ঘুম কম হলে এই হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়। স্বাভাবিকভাবেই তখন শিশুর বৃদ্ধির হারও কমে।
ভারী শরীর বা ওবিসিটি – কম ঘুম শিশুদের মধ্যে এই সমস্যাটি ডেকে আনতে পারে। কম ঘুমের কারণে শরীরে লেপটিন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়। তখন খিদের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। বাচ্চারা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খায় ও ফলে ওজন বাড়তে থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে – কম ঘুমানোর কারণে স্বাভাবিকভাবেই শিশুর শরীর ক্লান্ত থাকে। রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমতে থাকে। অল্পতেই সর্দি-কাশি, জ্বরের মতো নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
শিশুর পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য কার্যকরী কিছু টিপস
জন্মের পর একটি শিশুর সারাদিনে অন্তত ১০-১৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সময়ের অঙ্কটা কমতে থাকলেও শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম ভীষণ দরকার। আপনার সোনামণি যাতে সঠিক সময় ভালোভাবে ঘুমাতে পারে তারজন্য রইল কিছু টিপস –

দিনের বেলা বাচ্চাকে যতটা সম্ভব চনমনে থাকতে দিন। হাত পা ছুড়ে খেলা করতে দিন। শারীরিক পরিশ্রম হলে তবেই বাচ্চা রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বে, ঘুম গাঢ়ও হবে।
বিকেলের পর বাচ্চাকে এমন কিছু খেলাবেন না, যা ওদের আরও উত্তেজিত করতে পারে। কারণ একবার কোনও কিছু নিয়ে মেতে উঠলে বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানো খুব কঠিন।
অবশ্যই প্রত্যেকদিন একই রুটিন মাফিক খাবার খাইয়ে বাচ্চাকে ঘুম পাড়ান। তবেই ধীরে ধীরে ওদের সেটি অভ্যাসে পরিণত হবে।
বাচ্চাকে নিরাপদ বোধ করতে দিন। বাড়িতে এমন পরিবেশ রাখুন যাতে বাচ্চার কোনও অসুবিধা না হয়।
খেয়াল রাখুন বাচ্চার ঘুমের সময় শোবার ঘরে যাতে কোনও বেশি আওয়াজ না যায়। প্রয়োজনে ঘরে হালকা আলো জ্বালিয়ে রাখুন। ঘর অন্ধকার থাকলে বাচ্চার ঘুম ভালো হয়।
বাংলায় ৩০টি জনপ্রিয় ঘুমপাড়ানি গান
১. ঘুম পাড়ানি মাসি পিসি
ঘুম পাড়ানি মাসি পিসি
মোদের বাড়ি এসো।
খাট নাই পালং নাই
আসন পেতে বসো।
বাটা ভরা পান দেবো
গাল ভরে খেয়ো।
বিন্নি ধানের খই দেবো
আঁচল পেতে নিও।
খোকার চোখে ঘুম নাই
ঘুম এনে দিও।

২. আয়রে পাখি লেজ ঝোলা
আয়রে পাখি লেজ ঝোলা
খোকাকে নিয়ে কর খেলা।
খাবি দাবি কলকলাবি
খোকাকে মোর ঘুম পাড়াবি।

৩. চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে
চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে
কদম তলায় কে ?
হাতি নাচছে, ঘোড়া নাচছে
সোনামণির বে।

৪. খোকন খোকন করে মায়
খোকন খোকন করে মায়
খোকন গেছে কাদের নায় ?
সাতটা কাকে দাঁড় বায়
খোকনরে তুই ঘরে আয়।

৫. খোকা ঘুমালে পাড়া জুড়ালো
খোকা ঘুমালে পাড়া জুড়ালো
বর্গী এলো দেশে।
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে?
ধান ফুরালো পান ফুরালো
খাজনার উপায় কী?
আর কটা দিন সবুর করো
রসুন বুনেছি।

৬. খোকা যাবে শ্বশুর বাড়ি
খোকা যাবে শ্বশুর বাড়ি
সঙ্গে যাবে কে?
ঘরে আছে হুলো বেড়াল
কোমর বেঁধেছে।

৭. খোকন খোকন ডাকপাড়ি
খোকন খোকন ডাকপাড়ি
খোকন মোদের কার বাড়ি ?
আয়রে খোকন ঘরে আয়
দুধ মাখা ভাত কাকে খায়।

৮. পুঁটু নাচে কোন খানে?
পুঁটু নাচে কোন খানে?
শতদলের মাঝখানে।
সেখানে পুঁটু কী করে?
চুল ঝাড়ে আর ফুল পাড়ে।

৯. আয় আয় চাঁদ মামা
আয় আয় চাঁদ মামা
টিপ দিয়ে যা।
চাঁদের কপালে চাঁদ
টিপ দিয়ে যা।
ধান ভাঙলে কুড়ো দেব
মাছ কাটলে মুড়ো দেব,
কালো গরুর দুধ দেব
দুধ খাওয়ার বাটি দেব,
আয় আয় চাঁদ মামা
টিপ দিয়ে যা।

১০. আয় আয় টিয়ে
আয় আয় টিয়ে
নায়ে ভরা দিয়ে।
না নিয়ে গেল বোয়াল মাছে
তাই না দেখে ভোঁদর নাচে।
ওরে ভোঁদর ফিরে চা
খোকার নাচন দেখে যা।

১১. এসো এসো এসো ঘুমের পরী এসো
এসো এসো এসো ঘুমের পরী এসো
মায়ের সোনা টুকুর চোখে
আসন পেতে বসো।

১২. গোল করোনা গোল করোনা ছোটন ঘুমায় খাটে
গোল করোনা গোল করোনা ছোটন ঘুমায় খাটে
এই ঘুমকে কিনতে হল নওয়াব বাড়ির হাটে।
সোনা নয়, রূপা নয়, দিলাম মোতির মালা
তাই তো ছোটন ঘুমিয়ে আছে ঘর করে উজালা।

১৩. সূর্যিমামা নামল পাটে
সূর্যিমামা নামল পাটে
নিভল দিনের আলো।
চাঁদ মামাগো এবার তুমি
পিদিম খানি জ্বালো।
সূর্যিমামা নামলো পাটে
নিভল দিনের আলো।
খোকনকে মোর গান শোনালে
বুল-বুলিরা এসে।
শালিক পাখি গান শুনিয়ে
গেল ভালোবেসে।
ঠোঁট দুটি তার টুকটুকে লাল
পালক গুলো কালো।
চাঁদমামাগো এবার তুমি
পিদিমখানি জ্বালো।
মায়ের মুখে গল্প শুনে
খোকন বুঝি ভাবে,
কবে সে স্বপ্নপুরে
পরীর দেশে যাবে।
একটু পরে ঘুমের দেশে
যাবে খোকন ভেসে,
সাত-সাগরের পারেতে
সেই তেপান্তরের দেশে।
ঘুমের রানী তখন তারে
বেসো তুমি ভালো,
চাঁদমামাগো এবার তুমি
পিদিমখানি জ্বালো।

১৪. কে মেরেছে কে ধরেছে
কে মেরেছে কে ধরেছে
কে দিয়েছে গাল ?
তাইতো খুকু রাগ করেছে
ভাত খায়নি কাল।

১৫. হাট্টিমা টিম টিম
হাট্টিমা টিম টিম
তারা মাঠে পাড়ে ডিম।
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টিমা টিম টিম।

১৬. আমরা দুটি ভাই
আমরা দুটি ভাই
শিবের গাজন গাই।
ঠাকুমা গেছেন গয়া কাশী
ডুগডুগি বাজাই।

১৭. আমার পুষি ভীষণ ভালো
আমার পুষি ভীষণ ভালো
মাছ খায় না মোটে।
দুধ দিয়ে ভাত মেখে দিলে
খায় সে চেটেপুটে।

১৮. তাঁতির বাড়ি ব্যাঙের বাসা
তাঁতির বাড়ি ব্যাঙের বাসা
কোলাব্যাঙের ছা,
খায় দায়, গান গায়
তাই-রে-নাইরে না।

১৯. সিংহমামা সিংহমামা
সিংহমামা সিংহমামা
মাংস খেতে চাও?
রাজহাস দেব তোমায়
হিংসা ভুলে যাও।

২০. ঘুম পাড়ানী ঘুমের পরী
আয়রে আয় আয়রে আয়
সোনামনির দুটি চোখে
ঘুমের পরশ দিয়ে যা।।
ফুলের দেশে যাবে সে
স্বপ্ন মধুর আবেশে
পাখনা মেলে উড়ে উড়ে
বহু দূরে নিয়ে যা।।
আয়রে পরী আয়না রে
ধরছে খুকু বায়না যে
ছন্দ তুলে দুলে দুলে
ফুলে ফুলে নিয়ে যা।।

———————
গানটির কথা লিখেছেন আবদুল হাই আল-হাদী এবং সুর করেছেন এ.এফ.এম.আলিমউজ্জামান

২১. আয় ঘুম আয়রে
আয় ঘুম আয়রে
মাধবী এ রাতে তন্দ্রাহারা চোখে।
ঘুম নেমে আয়
আয়রে ঘুম নেমে আয়।
আয় ঘুম আয়রে
মাধবী এ রাতে তন্দ্রাহারা চোখে।
ঘুম নেমে আয়রে
ঘুম নেমে আয়রে।

২২. আয় ঘুম যায় ঘুম
আয় ঘুম যায় ঘুম
দত্ত পাড়া দিয়ে।
দত্ত বুড়ি পান খেয়েছে
দোক্তা পাতা দিয়ে।

২৩. কিসের মাসি কিসের পিসি
কিসের মাসি কিসের পিসি
কিসের বৃন্দাবন?
এতদিনো জানল খুকু
মা বড় ধন।

২৪. নোটন নোটন পায়রাগুলি
নোটন নোটন পায়রাগুলি
ঝোটন বেঁধেছে।
ওপাড়া তে ছেলেমেয়ে
নাইতে নেমেছে।
দুই ধারে দুই রুই কাতলা
ভেসে উঠেছে।
কে দেখেছে কে দেখেছে
দাদা দেখেছে।
দাদার হাতে কলম ছিল
ছুঁড়ে মেরেছে,
উঃ বড্ড লেগেছে।

২৫. বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এল বান
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এল বান,
শিব ঠাকুরের বিয়ে হল তিন কন্যা দান।
এক কন্যা রাঁধেন বাড়েন, এক কন্যা খান,
এক কন্যা রাগ করে বাপের বাড়ি যান।

২৬. দোল দোল দুলুনি
দোল দোল দুলুনি
রাঙা মাথায় চিরুনি,
বর আসবে যখনি
নিয়ে যাবে তখনি।

২৭. খোকা গেল মাছ ধরতে
খোকা গেল মাছ ধরতে
ক্ষীর নদীর কূলে,
ছিপ নিয়ে গেল কোলা ব্যাঙে
মাছ নিয়ে গেল চিলে।

২৮. ঝিলের জলে পদ্ম ভাসে
ঝিলের জলে পদ্ম ভাসে
মায়ের কোলে খোকন হাসে,
খোকন যাবে মামার বাড়ি
সঙ্গে নেবে রসের হাঁড়ি।

২৯. তাই তাই তাই মামা বাড়ি যাই
তাই তাই তাই মামা বাড়ি যাই
মামা বাড়ি ভারী মজা কিল চড় নাই।
মামি দিল দুধ ভাত দুয়ারে বসে খাই
তাই তাই তাই মামা বাড়ি যাই।
মামা বাড়ি ভারী মজা কিল চড় নাই
মামা এলো ছিপ নিয়ে মাছ ধরতে যাই।
তাই তাই তাই মামা বাড়ি যাই
মামা বাড়ি ভারী মজা কিল চড় নাই।

৩০. টিয়া টিয়া সবুজ টিয়া
টিয়া টিয়া সবুজ টিয়া
ঠোঁটটা তোমার লাল।
আজ তুমি যাও গো উড়ে
আবার এসো কাল।

এই বাচ্চাদের ঘুমপাড়ানি গানের তালিকায় যদি অন্য কোনো এইধরনের গান যোগ করতে চান তাহলে আমাদের জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।

Leave a Reply