ব্র্যাক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা ‘রেপিস্ট’ সেই বাবা গ্রেপ্তার

রাজধানীর দক্ষিণখানের মোল্লারটেকে ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় তার বাবা শাহীন আলমকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

বুধবার ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ঢাকাটাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রেমের টানে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে লাশ হলেন শান্তা, স্বামী পলাতক

গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে সানজানা মোসাদ্দিকা নামের ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারে অধ্যয়ন করছিলেন তিনি। একটি সুইসাইড নোটে বাবাকে নিজের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন সানজানা। সেখানে বাবাকে বলেছেন ‘অত্যাচারী’, ‘রেপিস্ট’। এই ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে বাবা শাহীন আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

 

এদিকে সানজানার মরদেহ উদ্ধারের পর ঢাকা টাইমস জানতে পারে, তাদের পরিবার একসময় অনেক স্বচ্ছল ছিল। সানজানার বাবা শাহীন আলম একসময় গাড়ির ব্যবসা করতেন। হঠাৎ করেই শাহীনের গাড়ির ব্যবসায় ধ্বস নামলে অন্য ব্যবসা শুরু করেন। সবশেষ তিনি রেন্ট-এ কারের ব্যবসা করতেন। এতে পরিবারের সঙ্গেও শাহীনের দূরত্ব কমতে থাকে। এরমধ্যে মাদক সেবনেও জড়িয়ে যান শাহীন। আবার আরেকটি বিয়েও করেন; যা আগের স্ত্রী (উম্মে সালমা) জানতেন না।

 

গত বছর শাহীনের গোপনে করা বিয়ের খবর জানাজানি হলে আগের স্ত্রী সালমাকে তালাক দেন। এসব বিষয় ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ও নম্রভদ্র সানজানার জন্য মানসিক পীড়ার কারণ হয়। এজন্য তিনি মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্নও হন।

 

এছাড়া স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর শাহীন আলম সানজানাসহ তার তিন ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার জন্য টাকাও কমিয়ে দেন। এসব নিয়ে প্রায় ঝগড়া-ফ্যাসাদ হতো।

 

পুলিশ বলছে, সানজানার মরদেহ উদ্ধারের পর তার রুম থেকে চিরকুট ছাড়াও বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। একটি প্রেসক্রিপশন পাওয়া গেছে। চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছিলেন- সানজানার মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা রয়েছে।

 

এরপর থেকে তার মা (উম্মে সালমা) সব সময় নজরদারিতে রাখতেন। ঘটনার দিন বাসার সিকিউরিটি গার্ডের কাছ থেকে ছাদের চাবি নিয়ে ছাদে যান। এরপর সেখান থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন।

 

বিভিন্ন সময় সানজানার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার সহপাঠী অর্ণব দেব বলেন, ‘সানজানার বাবা একাধিক বিয়ে করেছেন; দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে আলাদা থাকতেন। সানজানা দুই ভাই–বোন নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকতেন। বাবা মাঝেমধ্যে তাদের বাসায় এসে তার মাকে মারধর করত। এমন আচরণের প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করা হতো।’

 

অর্ণবের ভাষ্য, গত ঈদের আগেও সানজানার বাবা তাকে মেরে হাতের আঙুল ভেঙে দেন। এ ঘটনায় থানায় জিডিও করেছিলেন তার মা। আর কোনো দিন গায়ে হাত না তোলার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর ওই জিডি তুলে নেওয়া হয়।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোমবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে সানজানা আত্মহত্যা করবে এটা আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিল। কারণ তার সহপাঠীদের কাছ থেকে যে বই নিয়েছিল সেগুলো একটি প্যাকেটে মুড়িয়ে সেখানে ট্যাগ লাগিয়ে রেখেছিল; কাকে এই বই দেওয়া হবে। তাছাড়া আত্মহত্যার আরও বেশ কিছু আলামত আমরা পেয়েছি।’

 

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে বা পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এমন কিছু পাওয়া যায়নি। তবে কাজের মহিলা বা দ্বিতীয় বিয়ে করায় পরিবারে মধ্যে অশান্তি ছিল। পাশাপাশি মাদকাসক্ত ছিল সানজানার বাবা। একাধিক নারীও সঙ্গেও অনৈতিক সম্পর্ক ছিল তার। এসব নিয়ে মানসিক অশান্তিতে ভূগছিলেন সানজানা। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।’

 

চিরকুটে যা লেখা:

 

আত্মহত্যার আগে একটি চিরকুট লিখে গেছেন ওই ছাত্রী। চিরকুটটি উদ্ধার করেছে দক্ষিণখান থানা পুলিশ। চিরকুটে লেখা রয়েছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য বাবা দায়ী। একটা ঘরে পশুর সাথে থাকা যায়, কিন্তু অমানুষের সাথে না। একজন অত্যাচারী রেপিস্ট যে কাজের মেয়েকেও ছাড়েনি। আমি তার করুণ ভাগ্যের সূচনা।’

Leave a Reply