Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
ভারতে আগামী আকর্ষণ কি যোগী-কেজরিওয়াল

ভারতে আগামী আকর্ষণ কি যোগী-কেজরিওয়াল

রাজনৈতিক আচরণের এই মিল পাঞ্জাবেও দেখা যেতে পারত। কিন্তু সেখানে লেজেগোবরে হলো কংগ্রেস! আট বছর আগে জন্ম নেওয়া আম আদমি পার্টি কংগ্রেসের মান-ইজ্জত হরণ করল! উত্তর প্রদেশসহ চার রাজ্যের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ধুয়েমুছে বিজেপি ভোটের হার ও আসন বাড়াল, অথচ পাঞ্জাবে কংগ্রেস হারাল আম ও ছালা দুই–ই! উত্তরাখন্ডে গত পাঁচ বছরে বিজেপি তিনবার মুখ্যমন্ত্রী বদলে জিতে গেল (যদিও মুখ্যমন্ত্রী নিজে হেরেছেন), অথচ পাঞ্জাবে কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী বদলে মুখ থুবড়ে পড়ল। ভেসে গেল অকূলপাথারে!

উত্তর প্রদেশে প্রিয়াঙ্কা কিন্তু চেষ্টায় ত্রুটি রাখেননি। পরিসংখ্যান বলছে, যেকোনো দলের নেতার চেয়ে উত্তর প্রদেশে তাঁর জনসভা ও রোড শোর সংখ্যা বেশি। যোগী আদিত্যনাথ করেছেন ২০৩ সভা, অখিলেশ ১৩১, প্রিয়াঙ্কা ২০৯টি। যদিও ভোটারদের আকর্ষণ করতে সভাই একমাত্র শর্ত নয়। তবু বলতেই হয়, প্রিয়াঙ্কা দায়সারা কাজ সারেননি। দলের হাল বিবেচনা করে রাজনীতিটা তিনি করতে চেয়েছিলেন নতুন ধারায়। জাতপাত ও ধর্মীয় মেরুকরণে এঁটে উঠবেন না জেনে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরেছিলেন লিঙ্গ-রাজনীতিকে। নির্ভর করেছিলেন নারী শক্তির ওপর। কিন্তু ব্যর্থ হলেন। উত্তর প্রদেশের ভোট এবার দ্বিমুখী না হলে তাঁর মান ও মুখ কিছুটা হলেও বাঁচতে পারত।

রাহুলও কি পারবেন? সেপ্টেম্বরে রাহুলকে সভাপতি করার তোড়জোড় চলছে। যদিও আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই দল চলছে ভাইবোনের ইশারায়। তাঁদের বড় চ্যালেঞ্জ রাজস্থান ও ছত্তিশগড় ধরে রাখা। মোদির লক্ষ্য, ওই দুই রাজ্য কেড়ে নিয়ে কংগ্রেসকে আরও অনাথ করা। এই ভোটের পর রাষ্ট্রপতি পদে পছন্দের প্রার্থীকে জেতানোর কাজ মোদির পক্ষে সহজ হয়ে যাবে। যতটুকু ধন্দ ছিল, তা উধাও।

তর্কাতীতভাবে এই ভোট নরেন্দ্র মোদিকে অন্যদের ধরাছোঁয়া থেকে আরও দূরে সরিয়ে দিল। তবে এবারের ভোটের আকাশে উজ্জ্বলতর হলো দুই নক্ষত্র। অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও যোগী আদিত্যনাথ। পাঞ্জাব তালুবন্দী হওয়ার পর ভরা জনসভায় কেজরিওয়াল ‘দিল্লি মডেল’–এর সফল প্রয়োগের উল্লেখ করে অভিনব ‘ইনকিলাব’ বা বিপ্লবের সাতকাহন শুনিয়ে দিলেন। বললেন, ‘দিল্লির জনগণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সরকারি পরিষেবায় বিপ্লব দেখেছে। এবার দেখবে পাঞ্জাব। আগামী দিনে সেই ইনকিলাব দেখবে দেশবাসী। কেজরিওয়ালের অনুগামীরা ইতিমধ্যেই তাঁকে বিজেপিবিরোধী মুখ ও মোদির বিকল্প হিসেবে খাড়া করেছেন। করবেন না–ই বা কেন? শারদ পাওয়ার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রশেখর রাও, স্ট্যালিন বা অন্য কেউ আজ পর্যন্ত যা পারেননি, কেজরিওয়াল তা করে দেখালেন! আঞ্চলিক দল হিসেবে দিল্লির পর দখল করলেন পাঞ্জাব। সৃষ্টি করলেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এবার তাঁর লক্ষ্য হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা ও গুজরাট। কংগ্রেস সৃষ্ট ফাঁক ভরাট করাই কেজরিওয়ালের উদ্দেশ্য, যে লক্ষ্যে নেমে ত্রিপুরা ও গোয়ায় নিদারুণ ব্যর্থ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দেড় মাস আগে লিখেছিলাম, ‘আপ’ সাফল্যে রং বদলে চনমনে হবে রাজনীতি। পাঞ্জাব জয় সেই রং বদলানোর প্রথম ধাপ। মমতার মতো কেজরিওয়ালও উৎসুক কংগ্রেসের জায়গা দখল করতে। এই অভীপ্সা রাজনীতিগতভাবে কাছাকাছি থাকা মমতা ও কেজরিওয়ালের মধ্যে অচিরেই দূরত্ব সৃষ্টি করবে। দুজনেই উচ্চাশী। কংগ্রেসকে নেতৃত্বের বাইরে রেখে বিরোধী ঐক্য গড়তে মমতার আগ্রহ বহুদিনের। সেই আগ্রহে বেড়া দিতে চাওয়া কেজরিওয়ালের আগ্রাসী মনোভাবের মোকাবিলা মমতা কীভাবে করেন, তা দেখার আগ্রহ বাড়ছে। ইতিমধ্যে খবর এসেছে, উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় মুঠোফোনে ‘মিসড কল’ দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহের কাজে নেমেছে আম আদমি পার্টি। দুই ‘বন্ধুর’ সংঘাত শুরুর সময় ঘনাল বলে।

৭০০ টাকা বিনিয়োগে মনিরার মাসে বিক্রি ৪০ হাজার টাকা

বিজেপিকে রুখতে গোয়ায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল ও আপ হাত মেলালে বিজেপিকে হাত কামড়াতে হতো। কিন্তু এ দেশের বিরোধী জোট ‘এক দেহ বহুমুখী প্রাণী’! নেতৃত্বের প্রশ্নে কংগ্রেসকে নিয়ে আঞ্চলিক দলের আড়ষ্টতা যতখানি, ততখানিই অনড় গান্ধীদের পরিবারতন্ত্র। তা ছাড়া বিরোধীদের ছাড়া ছাড়া রাখার কৌশলেও মোদি অদ্বিতীয়। তাঁর সামনের ময়দান তাই ক্রমেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।

দ্বিতীয় উজ্জ্বল নক্ষত্রের গতিবিধি আগামী দিনে বিজেপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির নতুন ‘পাওয়ার সেন্টার’ হতে পারে। যোগী আদিত্যনাথ কখনো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহর পছন্দের ছিলেন না। পছন্দের মানুষ ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের বর্তমান উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা। এবারের জয় আদিত্যনাথের জৌলুশ আরও ঝলমলে করল। রাজ্য রাজনীতিতেও তাঁকে নিয়ে গেল ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিজেপিতে মোদির বাইরে একমাত্র যোগীই স্বতন্ত্র। বয়স তাঁর মাত্র ৪৯। গোরক্ষপুর আশ্রমের চৌহদ্দির বাইরে বেরিয়ে গোটা উত্তর প্রদেশকে তিনি নিজের খাস তালুক করে তুলেছেন। ২০২৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় ৭৮ বছরের নরেন্দ্র মোদি নিজের তৈরি নিয়ম মেনে অবসর নিলে উত্তরাধিকারের ব্যাটন যোগীই যে হাতে নেবেন না, কে বলতে পারে? তত দিনে চ্যালেঞ্জার হিসেবে কেজরিওয়ালের মাথা আরও উঁচু হলে শুরু হবে ভারতীয় রাজনীতির নবযুগ;

Leave a Reply