ভারত, সোমালিয়া এবং মাদাগাস্কার নিয়ে তৈরি হবে নতুন মহাদেশ

ভারত রয়েছে এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে। আর সোমালিয়া রয়েছে সেই পূর্ব আফ্রিকায়। তারও দক্ষিণে মাদাগাস্কার দ্বীপ। আর মাঝে বয়ে গেছে ভারত মহাসাগর। কিন্তু আমেরিকান জার্নাল অফ সায়েন্স- এর সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে আর ২০ কোটি বছরের মধ্যেই এক আমূল বদল ঘটতে চলেছে আমাদের নীলগ্রহে। যা পাল্টে দিতে পারে পৃথিবীর বর্তমান মানচিত্রের দৃশ্যপট । আর তার জেরেই হয়তো পাশাপাশি অবস্থান করবে ভারত আর সোমালিয়া! ঠিক তার পাশেই দেখা যেতে পারে মাদাগাস্কারকেও। এই পরিবর্তনের জেরে ভারতের পশ্চিম উপকূল বরাবর একটি দীর্ঘ পর্বতশ্রেণি গঠন হবে ,” যার নাম হতে চলেছে ‘সোমালয়’।

 

 

 

indianexpress.com-এর সাথে কথা বলার সময়, উট্রিচট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক অধ্যাপক ডুয়ে ভ্যান হিন্সবার্গেন, যিনি এই বিজ্ঞানী দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি জানান ‘আমাদের কাছে এখন উত্তর আছে যে ভবিষ্যতের পর্বত এবং মহাদেশগুলি কেমন হবে৷ আমি অতীতের পুনর্গঠন করেছি এবং দেখতে পেয়েছি একটি মহাদেশ ছিল যা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অদৃশ্য হয়ে গেছে, আরেকটি প্রধান মহাদেশ ছিল যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অদৃশ্য হয়ে গেছে যার ধ্বংসাবশেষ আমরা সমগ্র ইন্দোনেশিয়া জুড়ে দেখতে পাই। কিন্তু আমি কোনো ভবিষ্যৎ সিমুলেশন তৈরি করিনি। ” গবেষণা দলটি উল্লেখ করেছে যে, সেশেলস এবং মরিশাস দ্বীপপুঞ্জ ধাক্কা খেয়ে মুম্বাই সোমালয় রেঞ্জের পাদদেশের কাছে চলে আসবে যেমন আজ নতুন দিল্লি হিমালয়ের পাদদেশে রয়েছে। বিজ্ঞানীদের দলটি জানাচ্ছে , ”গোটা দক্ষিণপূর্ব ভারত, তিরুবনন্তপুরম থেকে করাচি এবং আফ্রিকার দক্ষিণপ্রান্ত থেকে সোমালিয়া পর্যন্ত অংশটা পুরোটাই একসঙ্গে তালগোল হয়ে যেতে পারে। তৈরি হতে পারে নতুন পর্বতমালা।”

 

কীভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন বিজ্ঞানীরা ?

সুইজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখের পিএইচডি ছাত্র থমাস শৌটেন ব্যাখ্যা করেছেন , “আমরা অনেক গবেষণা করে অতীতের পুনর্গঠন করেছি যার জেরে আমরা জানতে পেরেছি কীভাবে টেকটোনিক প্লেটগুলি স্থানচ্যুত হয়েছিল। আমাদের গবেষণায়, আমরা ধরে নিয়েছি যে আফ্রিকা মহাদেশের মধ্য দিয়ে যাওয়া এবং পূর্ব আফ্রিকান হ্রদের নীচে যে ফাটল রয়েছে তা আফ্রিকার দুটি অংশকে বিভক্ত করতে থাকবে এবং পরবর্তী ২০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে একটি মহাসাগর তৈরি হবে। তিনি আরও বলেন, আফ্রিকায় যখন এই কর্মকান্ড চলবে , তখন ভারত মহাসাগরে স্থানও পরিবর্তন হবে। মূলত মালাবারের সৈকতগুলি এবং প্রবাল প্রাচীর ভাঁজ হয়ে গিয়ে উচ্চ শিখরে পরিণত হবে।

 

বর্তমান সেশেলস দেশটি চলে আসবে একেবারে মুম্বই শহরের কাছে। আর সোমালিয়া থাকবে লাক্ষাদ্বীপের কাছাকাছি। এই এলাকাজুড়ে যে পর্বত তৈরি হবে, তার উচ্চতাও হবে প্রায় ৮ হাজার মিটার। অর্থাৎ হিমালয়ের সমান। ”

 

আফ্রিকা কেন ভাঙবে?

বৈজ্ঞানীদের দলটি ব্যাখ্যা করেছেন যে, অতীতে দুটি প্রাচীন মহাদেশের যে ফল্ট লাইনগুলির সাথে সংঘর্ষ হয়েছিল তার জেরে দুর্বল হয়ে গেছে আফ্রিকা । আফ্রিকার মতো আধুনিক মহাদেশগুলি সেই পুরানো ফল্ট লাইনগুলির জেরে ভেঙে পড়তে পারে। ঠিক যেমন ৯০মিলিয়ন বছর আগে মাদাগাস্কার থেকে যেভাবে ভারত বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। ব্যাখ্যা করেছেন , ডঃ ভ্যান হিন্সবার্গেন। সেই সঙ্গে তিনি জানান , ”এখানে মনে রাখার বিষয় হলো, মহাদেশগুলি চিরকালের জন্য বিদ্যমান নয়। আমরা আজকে জানি মাত্র গত কয়েক মিলিয়ন বছর আগে ভারত ভূখণ্ড তৈরি হয়েছে। তার আগে এটি একটি দ্বীপ ছিল।

 

ভারত মহাসাগরের অবস্থান পরিবর্তনের জেরে একটি মহাদেশ ভারতকে আঘাত করবে। এবং এটি হয় আফ্রিকা বা অ্যান্টার্কটিকা, অথবা এটি অস্ট্রেলিয়াও হতে পারে।” পরিবর্তনের জন্য অনেকটাই দায়ী থাকবে আফ্রিকা। সেই সঙ্গে গবেষক দলটির অনুমান , দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সম্ভবত পূর্ব ভারতের সাথে সংঘর্ষ করবে। ডঃ ভ্যান হিন্সবার্গেন বলেছেন “ভবিষ্যতে ভারত কখনও মঙ্গোলিয়ার মতো দেখতেও হতে পারে – উচ্চ পর্বতশ্রেণী দ্বারা বেষ্টিত একটি বিশাল মহাদেশ। যার ঠিক মাঝখানে অবস্থান করবে পর্বতশ্রেণী সোমালয়। ”

সূত্র : indianexpress.com

 

Leave a Reply