Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
যখন জানতে পারলাম, বাবার আরেকটি সন্তান আছে

যখন জানতে পারলাম, বাবার আরেকটি সন্তান আছে

বয়স এখনো ১৭ পার হয়নি। মা–বাবার আদরযত্নে কৈশোরের দিনগুলো ভালোই কাটছিল। কিন্তু হঠাৎই মায়ের কাছে ছেলেটি জানতে পারে, বছর চারেক আগে আরেকটি বিয়ে করেছিলেন তার বাবা। সেই সংসারে ২ বছরের একটি ছেলেও আছে। মা তাদের এক নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে এ সংবাদ পেয়ে নিজেই অনুসন্ধান করে সম্প্রতি সত্যতা পেয়েছেন। মুহূর্তেই ছেলেটির দুরন্তপনা যেন থমকে যায়, মনের ভেতর নেমে আসে ঘোর অমানিশা। কী করবে সে! এক দিকে মায়ের কষ্ট, আরেক দিকে বাবার প্রতি অবিশ্বাস, ঘৃণা। বাবার আরেক ঘরে যে সন্তান, তাকে সে কীভাবে দেখবে, ভবিষ্যতে কী হবে তাদের সম্পর্ক। বাবার এমন কাণ্ড মন থেকে মেনে নেওয়া যায় না। সাবালক হওয়ার আগেই সে এক অসহ্য জটিলতায় পড়ে গেল যেন।

এবারের গল্পটা একটু ভিন্ন। জন্মের পর থেকেই মিতুল (ছদ্মনাম) দেখে এসেছে তার বাবার আরেক স্ত্রী রয়েছে। বাবার সেই ঘরে এক ছেলে ও মেয়ে আছে। মিতুলের বয়স এখন ২৫ পেরিয়েছে কিন্তু তার বাবার অন্য সন্তানেরা তার চেয়ে বয়সে বড়, তবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক। আলাদা থাকলেও বিভিন্ন সামাজিক, পারিবারিক এবং ধর্মীয় উত্সব তারা একসঙ্গেই উদ্‌যাপন করে। অন্য ভাই–বোনদের বড় ভাই, বড় আপু বলেই সম্বোধন করে। যদিও মিতুলের বাবা আর বেঁচে নেই, কিন্তু বাবার অনুপস্থিতে তাদের সম্পর্কের কোনো হেরফের হয়নি।

এগুলো নিছক গল্প নয়। কখনো কখনো আমাদের চেনা পরিসরেই এ রকম ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। বাবার একাধিক বিয়ে এবং অন্য ঘরে সন্তানসন্ততির কথা কখনো আচমকা শুনে কিংবা তাদের উপস্থিতি মেনে নিয়েই চলতে হয়। এমনও হয় একসঙ্গে চলা যায় না, কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না। সম্পর্কগুলো তখন হয়ে যায় ফিকে কিংবা জটিল।

প্রসূতী ও গাইনী বিশেষজ্ঞ রাজশাহী | Gynee Specialist in Rajshahi

বাবার আরেক স্ত্রী এবং সেই ঘরে সন্তান থাকলে জানার পর শুরু হয় নতুন এক বাস্তবতা। তবু কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতেই হয়, পালিয়ে থাকা তো যায় না। বাবার অন্য ঘরের সন্তানেরাও ভাই–বোন। প্রচলিত ভাষায় আমরা যাকে সৎভাইবোন বলেই জানি। বাবা যদি তার অন্য স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদও করেন, সৎভাইবোনের কিন্তু বিচ্ছেদ হয় না। আইনতই হয় না। সৎভাইবোনের অস্তিত্ব মেনে নিয়েই চলতে হয়। সম্পর্কের জটিলতা মেনে নিতেই হয়। বাবা ভুল করেছেন কিংবা প্রয়োজনেই অন্যত্র বিয়ে করেছেন এবং সন্তান জন্ম দিয়েছেন, তাকে তো আর অস্বীকার করা যায় না। এখন প্রশ্ন আসে, যদি মেনে না নেওয়া যায় কিংবা মেনে নিতে রাজি না হয়, তাহলে? উত্তর হলো বাস্তবতা কঠিন হলেও মেনে নিতেই হবে। অনেক গল্পে তো ভালো সম্পর্কও থাকে। বাবা জীবিত না থাকলেও সম্পর্কগুলো সুন্দর–স্বাভাবিক থাকে। বাবার সম্পত্তি বিষয়–আশয় নিয়েও কোনো ঝামেলা হয় না। আবার কখনো সেই ভাগ–বাঁটোয়ারা কিংবা সৎভাইবোনের অস্তিত্ব স্বীকার–অস্বীকার গড়ায় আদালত পর্যন্ত।

 

প্রশ্ন যখন অধিকারের

 

সব সন্তানের প্রতি সমান দায়িত্ব পালন করা বাবার নৈতিক দায়িত্ব। পাশাপাশি যেকোনো সন্তান, যতই সে ভিন্ন স্ত্রীর ঘরে জন্ম নিক, নাবালক এবং কর্মহীন অবস্থায় তার ভরণপোষণ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আইনত বাবার। মা–বাবার মধ্যে যদি বিচ্ছেদও হয়, তবু জীবিত অবস্থায় বাবাকেই সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করতে হবে। সন্তানের মা যদি জীবিত না–ও থাকে, তবু এ দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ বাবার নেই।

সৎভাই কিংবা বোনেরও বাবার সম্পত্তিতে সমান অধিকার থাকে। মনে রাখা দরকার, মা ভিন্ন বলে সৎভাই বা বোনকে কোনোভাবেই বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যায় না। বাবার সম্পত্তিতে নিজের যে অধিকার, ভিন্ন মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া ভাইবোনের অধিকারও একই রকম। তবে বাবার জীবিত অবস্থায় তার নামে থাকা সম্পত্তি, হোক সেটা টাকা কিংবা জমিজমা, কোনোভাবেই তার মালিক সন্তান নয়। বাবার মৃত্যুর পরই শুধু তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার হয় সন্তান, তার আগে না। মুসলিম আইনে কখনো কখনো সৎভাইবোনের সম্পত্তিতেও তাদের মৃত্যুর পর অধিকার জন্মায়।

বাবার ইচ্ছা যদি হয় অন্য রকম

কোনো সন্তানকে বাবা তার ইচ্ছা অনুযায়ী, কমবেশি সম্পত্তি দিতে চাইলে কি পারেন? হ্যাঁ, পারেন। তবে সেই সম্পত্তি দেওয়ার পদ্ধতি হতে হবে আইনসিদ্ধ। বাবা যদি চান জীবিত অবস্থায় কোনো তরফের সন্তানকে সম্পত্তি লিখে দেবেন, তাহলে তিনি হেবা বা দান করতে পারেন। তবে হেবা বা দান হতে হবে লিখিত ও নিবন্ধিত। হেবা করার সঙ্গে সঙ্গে সম্পত্তি হস্তান্তর করে দিতে হবে। বাবা চাইলে নাবালক সন্তানকেও দান করতে পারে। তবে সন্তান সাবালক হওয়ার আগে দান কার্যকর হয় না। জীবিত অবস্থায় বাবা উইলও করে যেতে পারেন, তবে মুসলিম আইন অনুযায়ী পুরো সম্পত্তি উইল করা যাবে না। করতে হবে এক–তৃতীয়াংশ। এর বেশি হলে চ্যালেঞ্জ করতে পারে অন্য সন্তানেরা। যদি এমন হয়, মায়ের অনুমতি না নিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেছেন বাবা, তাহলে নিজে বাদী হয়ে মামলা করতে পারেন মা। এমনকি দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে যদি আগের বিয়ে গোপন রাখেন তাহলে তিনিও মামলা করতে পারেন।

তবে কী তার সমাধান

তাই হঠাৎ করে যদি সৎ ভাইবোনের খবর জানা যায়, তাহলে বাবার সম্পত্তিতে নিজের পুরো অধিকারের দাবি ত্যাগ করতে হবে। আর বাবার জীবিত অবস্থায় কোনোভাবেই তাকে জোরজবরদস্তি করা যাবে না। কোনো এক পক্ষের সন্তান যদি জোরজবরদস্তি করে সম্পত্তির ভাগ–বাঁটোয়ারা করে বা করতে চায়, তাহলে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন বাবা। বৃদ্ধ অবস্থায় সব সন্তানের কাছে ভরণপোষণও দাবি করতে পারেন বাবা। যদি এমন হয় কোনো এক পক্ষের সন্তানদের ভরণপোষণ করছেন বাবা, অন্য পক্ষের করছেন না, তাহলে বঞ্চিত নাবালক সন্তানের পক্ষে পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে পারে তার মা।

তাই বাবার আরেকটি সন্তান আছে, জানার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে স্থির করাই হচ্ছে আসল কাজ। সৎভাই বা বোনটিকে সহজ ও সুন্দরভাবে মেনে নিয়ে সম্ভব হলে সুস্থ–স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর নিতান্তই যদি মন থেকে মেনে নিতে না পারেন, তাহলেও বাবার অন্য সন্তানদের ঠকানো বা বঞ্চিত করা বা পাঁয়তারা করা উচিত না। সম্পর্কের এই জটিল সমীকরণ ঠিকঠাক মিলাতে না পারলে হতে পারে বড় বিপদ, জেল–জরিমানাতেও গড়াতে পারে পরিণাম।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Leave a Reply