তসলিমা নাসরিনের আত্মজীবনী | Taslima Nasrin Biography

তসলিমা নাসরিন

(Taslima Nasrin)

তসলিমা নাসরিন (জন্ম: ২৫ আগস্ট, ১৯৬২) একজন নির্বাসিত বিতর্কিত বাংলাদেশী লেখিকা। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নের পর ১৯৮৬ সালে সরকারি চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। শৈশব থেকেই কবিতা লিখতেন, ছাত্রজীবনে সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশনার সাথে জড়িত ছিলেন। আশির দশক থেকেই তার কবিতা প্রকাশিত হতে শুরু করে। ১৯৮৯ সালে নাঈমুল ইসলাম খান সম্পাদিত সাপ্তাহিক খবরের কাগজে লিখতে শুরু করেন।

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে গদ্য প্রকাশিত হতে শুরু হয় আর বিতর্কের শুরুও তখন থেকে। ১৯৯২ সালে তার দু’টি উপন্যাস প্রকাশিত হয়, সেগুলো তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত লজ্জা উপন্যাস তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয় সেই সাথে বিতর্কেরও জন্ম দেয়। গোঁড়া ইসলামপন্থীদের বাইরে উদারপন্থীদের অনেকেও বইটির বিষয়বস্তুতে ক্ষুব্ধ হন।

এদিকে ১৯৯৪ সালে কলকাতার দি স্টেটসম্যান জানায় তসলিমা নাসরিন বলেছেন, নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে কুরআনের সংশোধন প্রয়োজন। এ খবর বাংলাদেশ ও ভারতের মুসলমানদের আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে। তবে তসলিমা নাসরিন দাবী করেন তিনি কেবল শরিয়াহ আইন বিলুপ্ত করার কথা বলেছেন।

তার বেশ কয়েকটি আত্মজীবনী বাংলাদেশ এবং ভারতে নিষিদ্ধ হয়েছে। আত্মজীবনীতে প্রকাশিত অনেক তথ্যে কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি মানহানির অভিযোগে মামলাও করেন। তবে তসলিমা নাসরিনের মতে তিনি আত্মজীবনীর মাধ্যমে পুরো সত্যই তুলে ধরতে চেয়েছেন।

সমালোচকদের মতে বিতর্কিত মন্তব্য এবং লেখালেখি তসলিমা নাসরিনের নিজেকে প্রচারের একটি কৌশল আর তসলিমা নাসরিনের সমর্থকদের মতে তসলিমা নাসরিন গোঁড়ামির বিরুদ্ধে এবং নারী অধিকার ও সাম্যের পক্ষে লড়ে যাওয়া এক সাহসী লেখিকা। বর্তমানে ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।

 

তসলিমা নাসরিন (জন্ম: ২৫ আগস্ট ১৯৬২) বাংলাদেশের একজন বিতর্কিত সাহিত্যিক ও চিকিৎসক। বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে একজন উদীয়মান কবি হিসেবে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করে তসলিমা এই শতকের শেষের দিকে নারীবাদী ও ধর্মীয় সমালোচনামূলক রচনার কারণে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন। তিনি তার রচনা ও ভাষণের মাধ্যমে লিঙ্গসমতা, মুক্তচিন্তা, নাস্তিক্যবাদ এবং ধর্মবিরোধী মতবাদ প্রচার করায় ইসলামপন্থীদের রোষানলে পড়েন ও তাদের নিকট হতে হত্যার হুমকি পেতে থাকায় ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ ত্যাগ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করতে বাধ্য হন।[২][৩] তিনি কিছুকাল যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছেন।[৪] এরপর তিনি ভারত সরকার কর্তৃক ভারতে অজ্ঞাতবাসে অবস্থানের সুযোগ পান।[৫] বর্তমানে তিনি দিল্লিতে বসবাস করছেন।

প্রথম জীবন:

১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে আগস্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের ময়মনসিংহ শহরে তসলিমা নাসরিনের জন্ম হয়। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার মাতা ঈদুল ওয়ারা গৃহিণী এবং পিতা রজব আলী পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ময়মনসিংহ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পাস করেন। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আনন্দ মোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পাস করেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে এমবিবিএস পাস করেন।[৭] ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সরকারী গ্রামীণ হাসপাতালে এবং ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মিটফোর্ড হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বিভাগে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেকহা) তে অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন

সাহিত্য জীবন

তেরো বছর বয়স থেকে তসলিমা কবিতা লেখা শুরু করেন। কলেজে পড়ার সময় ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সেঁজুতি নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তসলিমার কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা নামক তার প্রথম কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে ও ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে আমার কিছু যায় আসে না কাব্যগ্রন্থগুলি প্রকাশিত হয়। এই সময় তসলিমা ঢাকা হতে প্রকাশিত নঈমুল ইসলাম খান দ্বারা সম্পাদিত খবরের কাগজ নামক রাজনৈতিক সাপ্তাহিকীতে নারী অধিকার বিষয়ে লেখা শুরু করেন।[৯] তার কাব্যগ্রন্থ ও সংবাদপত্রের কলামে নারীদের প্রতি ইসলামপন্থীদের শোষণের অভিযোগ করায় ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের একদল ইসলামপন্থী এই পত্রিকার অফিস ভাঙচুর করে। এই সময় নির্বাচিত কলাম নামক তার বিখ্যাত প্রবন্ধসংকলন প্রকাশিত হয়, যার জন্য ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তসলিমা আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে অতলে অন্তরীণ, বালিকার গোল্লাছুট ও বেহুলা একা ভাসিয়েছিল ভেলা নামক আরো তিনটি কাব্যগ্রন্থ; যাবো না কেন? যাব ও নষ্ট মেয়ের নষ্ট গল্প নামক আরো দুইটি প্রবন্ধসংকলন এবং অপরপক্ষ, শোধ, নিমন্ত্রণ ও ফেরা নামক চারটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে লজ্জা নামক তার পঞ্চম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসে বাংলাদেশের মুসলিমদের দ্বারা একটি সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের ওপর অত্যাচারের বর্ণনা করা হয়।[১০][১১] এই উপন্যাসটি প্রকাশের পর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় একদল ইসলামপন্থী তসলিমার ওপর শারীরিকভাবে নিগ্রহ করে ও তার এই উপন্যাস নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি জানায়। গ্রন্থমেলা কর্তৃপক্ষ তাকে মেলায় প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। এই বছর অক্টোবর মাসে কাউন্সিল অব ইসলামিক সোলজার্স নামক এক ইসলামপন্থী সংগঠন তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে।[১২][১৩] তসলিমা নাসরিনের সাতটি আত্মজীবনী গ্রন্থের অধিকাংশ বাংলাদেশ ও ভারত সরকার দ্বারা নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষিত হয়।

Read More: কপি না করে নিজ থেকে বলুন,গরীব ঘরের ছেলে থেকে যেভাবে হলেন গায়ক নকুল কুমার।

আমার মেয়েবেলা নামক তার প্রথম আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে ইসলাম ও মুহাম্মাদের প্রতি বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষিত হলেও ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে এই বইয়ের জন্য তসলিমা দ্বিতীয়বার আনন্দ পুরস্কার জয় করেন। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তার দ্বিতীয় আত্মজীবনী উতাল হাওয়া বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষিত হয়।[১৫] ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে ক নামক তার তৃতীয় আত্মজীবনী বাংলাদেশ উচ্চ আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে এই বইটি দ্বিখণ্ডিত নামে প্রকাশিত হলেও ভারতীয় মুসলিমদের একাংশের চাপে নত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে বইটি নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষিত হলে[১৬] সরকারের এই সিদ্ধান্ত লেখক মহলে তীব্রভাবে সমালোচিত হয়।[১৭] এই নিষেধাজ্ঞা ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বলবৎ ছিল।[১৮][১৯] ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে সেই সব অন্ধকার নামক তার চতুর্থ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

দেশত্যাগ

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইসলামি ধর্মীয় আইন শরিয়া অবলুপ্তির মাধ্যমে কুরআন সংশোধনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।[২২] এর ফলে ইসলামপন্থীরা তার ফাঁসির দাবি জানাতে শুরু করে। তিন লাখ ইসলামপন্থীদের একটি জমায়েতে তাকে ইসলামের অবমাননাকারী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দালালরূপে অভিহিত করে।

দেশ জুড়ে তার শাস্তির দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়। হাবিবুর রহমান সিলেটে একটি সমাবেশে তার মাথার দাম ৫০ লাখ টাকা ঘোষণা করে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে জনগণের ধর্মীয় ভাবনাকে আঘাত করার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয় এবং জামিন-অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।[২৪] সেসময় আলোকচিত্রী শহিদুল আলম সহ[২৫] বিভিন্ন জনের আশ্রয়ে তিনি দুই মাস লুকিয়ে থাকার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে তার জামিন মঞ্জুর করা হয় এবং তসলিমা বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

নির্বাসিত জীবন

বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হওয়ার পর তিনি ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে সুইডেনে ও ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জার্মানিতে বসবাস করেন।

১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সুইডেন ফিরে গেলে রাজনৈতিক নির্বাসিত হিসেবে জাতিসংঘের ভ্রমণ নথি লাভ করেন। এই সময় তিনি সুইডেনের নাগরিকত্ব লাভ করেন ও সুইডিশ কর্তৃপক্ষের নিকট তার বাংলাদেশের পাসপোর্ট জমা দেন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এই সময় তার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি বাংলাদেশ সরকারের নিকট দেশে ফেরার অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হলে তিনি জাতিসংঘের ভ্রমণ নথি ত্যাগ করে সুইডিশ কর্তৃপক্ষের নিকট হতে তার বাংলাদেশের পাসপোর্ট ফেরত পান ও বিনা অনুমতিতে বাংলাদেশ প্রবেশ করেন। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে পুনরায় জামিন-অযোগ্য গ্রেপ্তারী পরোয়ানা রুজু হলে তিনি পুনরায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

১৯৯৯ থেকে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সে বসবাস করেন। দীর্ঘ ছয় বছর অপেক্ষার পর ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতে প্রবেশ করার ভিসা সংগ্রহ করতে সমর্থ হলে তিনি কলকাতা যাত্রা করেন। এই বছর মার্চ মাসে তিনি শোধ নামক তার একটি উপন্যাসের মারাঠি ভাষায় অনুবাদকর্মের প্রচারে মুম্বই শহরে পৌঁছানোর সময় ইসলামপন্থীরা তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার হুমকি দেন।[২৮] ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তসলিমার পিতা মৃত্যুশয্যায় শায়িত হলে তসলিমার বাংলাদেশ প্রবেশে অনুরোধ করে ব্যর্থ হন।

২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাকে অস্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হলে তসলিমা কলকাতা শহরে বসবাস শুরু করেন।[২৯] ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম সৈয়দ নূরুর রহমান বরকতি নাসরিনের মুখে কালিলেপন করলে পুরস্কৃত করার কথা ঘোষণা করেন।[৩০] ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল বোর্ড নামক একটি সংগঠন তার মুন্ডচ্ছেদের জন্য পাঁচ লাখ টাকা ঘোষণা করেন।[৩১] এই বছর ৯ই আগস্ট তিনি শোধ উপন্যাসের তেলুগু ভাষায় অনুবাদকর্মের প্রচারে হায়দ্রাবাদ শহরে গেলে অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন নামক একটি রাজনৈতিক দলের প্ররোচনায় উত্তেজিত জনতা তাকে আক্রমণ করে।

১৭ই আগস্ট কলকাতা শহরের মুসলিম নেতারা তসলিমাকে হত্যা করার জন্য বিপুল অর্থ পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।[৩৪] ২১শে নভেম্বর অল ইন্ডিয়া মাইনোরিটি ফোরাম নামক একটি ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী কলকাতা শহরে তাণ্ডব শুরু করলে সেনাবাহিনীকে আইন ও শান্তিরক্ষার জন্য মোতায়েন করা হয়।[৩৫] এই দাঙ্গার পর নাসরিনকে কলকাতা থেকে জয়পুর হয়ে নতুন দিল্লি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।[৩৬][৩৭][৩৮] ভারত সরকার তাকে পরবর্তী সাত মাস একটি অজ্ঞাত স্থানে গৃহবন্দি করে রাখে[৩৯] ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে তাকে সিমোন দ্য বোভোয়ার পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হলেও[৪০] তিনি ভারতে প্রবেশে অনুমতি না পাওয়ার আশঙ্কায় ফ্রান্স যাত্রা করে পুরস্কার নিতে অসম্মত হন।

এই সময় তিনি নেই কিছু নেই নামক তার আত্মজীবনীর ষষ্ঠ ভাগ প্রকাশ বাতিল করেন ও কলকাতার দাঙ্গার জন্য দায়ী দ্বিখণ্ডিত নামক তার বিতর্কিত বইটির কিছু অংশ অপসারণ করতে বাধ্য হন।[৪৪] ভারতের প্রাক্তন বিদেশসচিব মুচকন্দ দুবে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে একটি পত্রে ভারত সরকারকে চাপ দিয়ে তসলিমার গৃহবন্দী অবস্থার মুক্তির জন্য অনুরোধ করেন।[৪৫] ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে মার্চ তসলিমা ভারত ছাড়তে বাধ্য হন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত ইসলামপন্থীরা তার প্রাণনাশের হুমকি দিলে সেন্টার ফর ইনক্যুয়ারি তাকে ঐ বছর ২৭শে মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে সহায়তা করে[৪৬] এবং তার খাদ্য, বাসস্থান নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।”[৪৭] নির্বাসিত হওয়ার পর তসলিমা নাসরিন ভারতে থাকাকালীন সময়ে প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে জনপ্রিয় টেলিভিশন শো বিগ বস ৮ -এ আমন্ত্রণ পান। কিন্তু তিনি এই আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করেন।[৪৮]

বৈবাহিক জীবন

Read More:  শীর্ষ বাঙালী নাস্তিক | সেক্যুলারের তালিকা || Bangladesh nastik

১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তসলিমা কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র প্রেমে পড়েন এবং গোপনে বিয়ে করেন।[৪৯] ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানের সাথে তার বিয়ে এবং ১৯৯১ সালে বিচ্ছেদ হয়।[৫০] তিনি ১৯৯১ সালে সাপ্তাহিক বিচিন্তার সম্পাদক মিনার মাহমুদকে বিয়ে করেন এবং ১৯৯২ সালে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়।[৫১] তসলিমার কোন সন্তানাদি নেই।

সমালোচনা

নানান সময়ে তসলিমা নাসরিন সমালোচিত হয়েছেন। ২০২১ সালের এপ্রিলে ইংরেজ জাতীয় দলের ক্রিকেটার মঈন আলীকে নিয়ে টুইট করেন। তিনি বলেন, ‘মঈন আলী ক্রিকেট না খেললে সিরিয়াতে গিয়ে আইএসআইয়ের সঙ্গে যোগ দিত।’ তার এই টুইটের ফলে আরো অনেক ক্রিকেটার এর বিরোধিতা করেন। ইংরেজ জাতীয় দলের পেসার আর্চার রি-টুইট করে লিখেছেন, “আপনি কি সুস্থ? আমার মনে হয় না।” তবে, তোপের মুখে এবং বিরোধিতার মুখে তসলিমা নাসরিন তার এই টুইট সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হন।[৫২] এছাড়াও আরো কিছু ইংরেজ ক্রিকেটার স্যাম বিলিংস ও বেন ডাকেট টুইটারে তসলিমা নাসরিনের আইডিটিকে রিপোর্ট করার জন্য আহবান জানান। তসলিমা নাসরিন পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি মূলত মঈন আলীকে নির্দেশ করে টুইটটি করেন নি। তিনি “কট্টর ইসলাম”কে নির্দেশ করে টুইটটি করেছেন। এবং এই টুইটের কারণে তার মাঝে কোন অনুশোচনা নেই। তাকে নিয়ে ইংরেজ ক্রিকেটারদের বিরোধিতা নিয়ে তিনি বলেন, “তারা তাদের সতীর্থকে সমর্থন করছে ভালো কথা। তারা বলেছে বলে আমি টুইটটি মুছে দিয়েছি, কিন্তু তারা আমার সম্পর্কে কতদূর জানে?

কবিতা
  • শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা, ১৯৮১
  • নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে, ১৯৮৯
  • আমার কিছু যায় আসে না , ১৯৯০
  • অতলে অন্তরীণ, ১৯৯১
  • বালিকার গোল্লাছুট, ১৯৯২
  • বেহুলা একা ভাসিয়েছিল ভেলা, ১৯৯৩
  • আয় কষ্ট ঝেঁপে, জীবন দেবো মেপে, ১৯৯৪
  • নির্বাসিত নারীর কবিতা, ১৯৯৬
  • জলপদ্য, ২০০০
  • খালি খালি লাগে, ২০০৪
  • কিছুক্ষণ থাকো, ২০০৫
  • ভালোবাসো? ছাই বাসো!, ২০০৭
  • বন্দিনী, ২০০৮
প্রবন্ধ সংকলন
  • নির্বাচিত কলাম, ১৯৯০
  • যাবো না কেন? যাব, ১৯৯১
  • নষ্ট মেয়ের নষ্ট গল্প, ১৯৯২
  • ছোট ছোট দুঃখ কথা, ১৯৯৪
  • নারীর কোন দেশ নেই, ২০০৭
  • নিষিদ্ধ, ২০১৪
  • তসলিমা নাসরিনের গদ্য পদ্য, ২০১৫
  • উপন্যাস
    • অপরপক্ষ ১৯৯২
    • শোধ, ১৯৯২
    • নিমন্ত্রণ, ১৯৯৩
    • ফেরা , ১৯৯৩
    • লজ্জা, ১৯৯৩
    • ভ্রমর কইও গিয়া, ১৯৯৪
    • ফরাসি প্রেমিক ,২০০২
    • শরম,২০০৯
    ছোট গল্প
    • দু:খবতী মেয়ে, ১৯৯৪
    • মিনু, ২০০৭
    আত্মজীবনী
    • আমার মেয়েবেলা, ১৯৯৯ [৫৪]
    • উতাল হাওয়া, ২০০২
    • , ২০০৩; (পশ্চিমবঙ্গে দ্বিখণ্ডিত নামে প্রকাশিত, ২০০৩)
    • সেই সব অন্ধকার, ২০০৪
    • আমি ভালো নেই, তুমি ভালো থেকো প্রিয় দেশ, ২০০৬
    • নেই, কিছু নেই, ২০১০
    • নির্বাসন, ২০১২
    • চলচ্চিত্র তসলিমা নাসরিনের জীবনভিত্তিক প্রথম চলচ্চিত্র নির্বাসিত ২০১৪ সালে মুম্বাই চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তি পায়।[৫৫] ২০১৫ সালে এই চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্র বিভাগে ৬২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছে।
    • পুরস্কার ও সম্মাননা

      তসলিমা তার উদার ও মুক্তচিন্তার মতবাদ প্রকাশ করায় দেশ-বিদেশ থেকে একগুচ্ছ পুরস্কার ও সম্মাননা গ্রহণ করেছেন। সেগুলো হলো –

      তথ্যসূত্র: bn.wikipedia

    • লেখিকা তসলিমা নাসরিন বিখ্যাত ব্যক্তি,তসলিমা নাসরিন মিনার মহম্মদ, তসলিমা নাসরিনের খারাপ কবিতা, তসলিমা নাসরিনের লজ্জা কবিতা, তসলিমা নাসরিনের কবিতা, তসলিমা নাসরিন স্বামী বা স্ত্রী, তসলিমা নাসরিন বই, তসলিমা নাসরিনের আত্মজীবনী, pdf তসলিমা নাসরিনের আমার মেয়েবেলা উপন্যাস,taslima nasrin biography,তসলিমা নাসরিনের আলোচিত এবং বিতর্কিত কবিতা সমূহ

Leave a Reply