লেখিকা তসলিমা নাসরিন বিখ্যাত ব্যক্তি ,তসলিমা নাসরিনের উক্তি এবং কবিতাংশ । আলোচিত ও বিতর্কিত বাণী

সলিমা নাসরিন (জন্ম: ২৫ আগস্ট, ১৯৬২) বাংলাদেশের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত নারীবাদী সাহিত্যিক। তসলিমা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে অধ্যয়ন করেন এবং সেখান থেকে ১৯৮৬ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসক হিসাবে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ অবধি কাজ করেন। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে মামলায় জড়িয়ে পড়ে গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন। এরপর তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন।

ছাত্রজীবনে ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে কবি হিসেবে তাঁর পরিচিতি ঘটতে থাকে। নির্বাসন জীবনে তসলিমা লেখালিখিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বিদ্রোহী নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইসলামের সমালোচনার জন্য বিশ্বব্যাপী তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। স্বীয় জন্মভূমি বাংলাদেশ ত্যাগের পর তিনি প্রতিবেশী বাংলাভাষী পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ভারতীয় ইসলামী ধর্মগুরুদের আপত্তি ও মৌলবাদীদের প্রাণনাশের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে তাঁকে কলকাতা পরিত্যাগ করতে হয়। বর্তমানে তিনি সুইডেনে বসবাস করছেন। তাঁর রচনাসমূহের মধ্যে লজ্জা, আমার মেয়েবেলা, দ্বিখণ্ডিত, গোল্লাছুট, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। প্রাথমিক জীবন তাঁর প্রকৃত নাম নাসরিন জাহান তসলিমা।

স্কুল জীবনে কবিতা চর্চ্চার সময় তিনি ‘তসলিমা নাসরিন’ নাম গ্রহণ করেন। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ শহরে তাঁর জন্ম।) দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তাঁর পিতা রজব আলী পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। মা ইদুল আরা সাধারণ ধর্মভীরু বাঙ্গালী গৃহিনী, তসলিমার পিতার দ্বিতীয় স্ত্রী। । ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ময়মনসিংহ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল থেকে এস, এস, সি পাস করেন। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি আনন্দ মোহন কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে এম বি বি এস পাস করেন। অথঃপর তিনি সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসকের চাকুরী গ্রহণ করেন। তিনি যখন ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে দেশত্যাগ করেন তখন সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অজ্ঞানবিশেষজ্ঞ (অ্যানেসথেসিওলজিস্ট) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার শৈশব ও যৌবনের বিশদ বিবরণ তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থাদির বিভিন্ন খণ্ডে পাওয়া যায়। বিবাহ ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র প্রেমে পড়েন এবং বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজন কাউকে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করেন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।

পরে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খানের সাথে বিয়ে এবং ১৯৯১ সালে বিচ্ছেদ হয়। তিনি ১৯৯১ সালে সাপ্তাহিক বিচিন্তা’র সম্পাদক মিনার মনসুরকে বিয়ে করেন এবং ১৯৯২ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর তিনি আর বিয়ে করেন নি। তার কোন সন্তানাদি নেই। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যুগল জীবন যাপন করেছেন। তিনি একজন উভকামী। প্যারিস অবস্থান কালে একজন ফরাসী মেয়ের সঙ্গে যৌন জীবনযাপনের বিবরণ তাঁর আত্মজৈবিনক উপন্যাস ফরাসী প্রেমিক এবং আত্মজীবনিক রচনায় বিবৃত। সাহিত্যিক জীবন সাহিত্যে জগতে প্রবেশ সত্তর দশকের শেষভাগে কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে।

১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে স্ব-উদ্যোগে প্রথম কবিতা সংকলন প্রকাশ করেন যার নাম শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা। তাঁর কবিতা গীতিময়তায় পুষ্ট। আত্মজৈবনিকতা তাঁর কবিতার বৈশিষ্ট্য। প্রথম থেকেই তাঁর কবিতায় যৌনানুষঙ্গ প্রবলভাবে উপস্থিত, যা পরবর্তীতে তাঁর গদ্য রচনাতেও পরিদৃষ্ট হয়। নির্বাসিত জীবন তাঁরনির্বাসিত জীবন শুরু হয় ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে দেশ ত্যাগের সময় থেকে। এর আগে আদালতে মামলা দায়ের হলে এবং আদালত তাঁর বিরূদ্ধে গ্রেপ্তারী পরওয়ানা জারী করলে তিনি বিভিন্ন বন্ধু বান্ধবের বাসায় আত্মগোপন করেন। বাংলাদেশ ত্যাগের পর তিনি প্রধানত ফ্রান্স,সুইডেন এবং ভারত, এই তিনটি দেশে বসবাস করেছেন। বাংলাদেশের বাইরে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করতে তিনি আগ্রহী। প্রায়শ তাঁর ধর্ম ও প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখা ও মন্তব্য জনরোষ সৃষ্টি করে বিধায় সামাজিক শান্তির স্বার্থে ২০০৭ থেকে ভারত সরকার তাঁর ভারতে অবস্থানের ওপন নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করে। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ ত্যাগ ও ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত থেকে বিতারণ এবং পরবর্তী নিবার্সিত জীবনের বর্ণনা নিয়ে ১লা ফেব্রুয়ারি ২০১২ ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার আত্মজৈবনিক গ্রন্থ নির্বাসন।

১৯৯৪-২০০৪, পাশ্চাতে নির্বাসিত ২০০৪-২০০৭ কলকাতার জীবন ২০০৭ কলকাতা থেকে বিতারণ ২০০৮ দিল্লীতে অন্তরীণ সাহিত্যকর্ম পত্রিকার কলাম ও নিবন্ধ উপন্যাস আত্মজীবনী তসলিমা নাসরিন প্রধানত আত্মজীবনীমূলক রচনায় বেশী সময় ব্যয় করেছেন। তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের সংখ্যা ৭ যার সর্বশেষ খণ্ড ২০১২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। আত্মজীবনী বিবিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বর্ণনা দিয়ে তিনি বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন এবং এ কারণে তাঁর বিরূদ্ধে সৈয়দ শামসুল হক সহ অনেকে আদালতে মর্যাদাহানির জন্য ক্ষতিপূরণ মামলা করেছে। পুরস্কার ও সম্মাননা তসলিমা তার উদার ও মুক্তচিন্তার মতবাদ প্রকাশ করায় দেশ-বিদেশ থেকে একগুচ্ছ পুরস্কার ও সম্মাননা গ্রহণ করেছেন। সেগুলো হলো – আনন্দ সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯২ এবং ২০০০।

নাট্যসভা পুরস্কার, বাংলাদেশ, ১৯৯২ ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট কর্তৃক শাখারভ পুরস্কার, ১৯৯৪ ফ্রান্স সরকার প্রদত্ত মানবাধিকার পুরস্কার, ১৯৯৪[৯] ফ্রান্সের এডিক্ট অব নান্তেস পুরস্কার, ১৯৯৪[১০] সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল পেন কর্তৃক কার্ট টুকোলস্কি পুরস্কার, ১৯৯৪[১১] যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিউম্যান রাইটস্‌ ওয়াচ কর্তৃক হেলম্যান-হ্যামেট গ্রান্ট সম্মাননা, ১৯৯৪ নরওয়েভিত্তিক হিউম্যান-এটিস্ক ফরবান্ড কর্তৃক মানবতাবাদী পুরস্কার, ১৯৯৪ সাহিত্য সমালোচনা সাহিত্য রচনায় ব্যক্তিগত ও শারীরিক আকাঙ্খাকে কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আবর্তন তসলিমার লেখার বৈশিষ্ট্য। এর সাথে তিনি ইসলামধর্ম, কুরআন এবং নবী মুহাম্মদকে (সা:) সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু করেন এবং এ কারণে বাংলাদেশে এবং বিদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। একটি ধর্মভিত্তিক সংগঠনের নেতৃত্ব তাঁর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে এবং তাঁর বিরূদ্ধে ধর্মদ্রহিতারর মাধ্যমে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ আদালতে মামলা করা হয়। । কুরআন ও হাদিসকে ভুল অনুবাদ করে তার ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা প্রদান বাংলাদেশের সাধারণ মুসলমান জনগণের মনে অসন্তোষের সৃষ্টি করে। নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রন্থ তালিকা বাংলাদেশের আগামী প্রকাশনীর তাঁর অধিকাংশ গ্রন্থ বাংলাদেশে প্রকাশ করেছে।

Read More:  শীর্ষ বাঙালী নাস্তিক | সেক্যুলারের তালিকা || Bangladesh nastik

আলোচিত এবং বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬২ সালের ২৫ আগষ্ট। নারীবাদী এবং ধর্মীয় উগ্রবাদী নানা রচনার কারনে তিনি দেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন। যদিও ধর্মীয় উগ্রবাদী লেখার কারণে তিনি মৌলবাদীদের রোষানলে পড়েন এবং ১৯৯৪ সালে দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। তিনি বর্তমানে(২০১৯) ভারতে বসবাস করছেন। তাঁর লেখার মধ্যে বারবার ফুটে উঠেছে নারীমুক্তি এবং ধর্মীয় উগ্রবাদ। অনেক পাঠকের মন জয় করার পাশাপাশি, হয়েছেন অনেকের রোষানলের স্বীকার। তাঁর অসংখ্য বিতর্কিত উক্তি, কবিতা, উপন্যাস একদিকে যেমন সুনাম কুড়িয়েছে, পাশাপাশি বয়ে এনেছে চরম ঘৃনা। পেশাগত জীবনে সাহিত্যিকের পাশাপাশি চিকিৎসক ছিলেন। তসলিমা নাসরিনের উক্তি, বিতর্কিত কবিতাংশ নিয়েই আত্মপ্রকাশের আজকের আয়োজন।

তসলিমা নাসরিনের উক্তিগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

  • নারী উক্তি
  • বিতর্কিত উক্তি
  • ভালোবাসার উক্তি

নারী এবং মেয়ে স্বত্বা নিয়ে লিখেননি এমন সাহিত্যিক খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য কাজ। মেয়ে এবং নারী নিয়ে তসলিমা নাসরিনের উক্তি গুলো অন্য ধারার সৃষ্টি করেছে।

নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে সামান্য সচেতন হলে মেয়েরা নিশ্চয়ই বুঝত যে জগতে যত নির্যাতন আছে মেয়েদের বিরুদ্ধে, সবচেয়ে বড় নির্যাতন হল- মেয়েদের সুন্দরী হওয়ার জন্য লেলিয়ে দেওয়া।

যৌন উত্তেজনা বেড়েছে তোমার, সে তোমার সমস্যা, আমার নয়। তোমার সেটি বাড়ে বলে আমার নাক চোখ মুখ সব বন্ধ করে দেবে, এ হতে পারে না। আমি তোমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নই যে তুমি আমাকে আদেশ দেবে আমি কি পরবো, কীভাবে পরবো, কোথায় যাবো, কতদূর যাবো। তোমার সমস্যার সমাধান তুমি করো। আমাকে তার দায় নিতে হবে কেন! যৌন উত্তেজনা আমারও আছে, সে কারণে তোমার নাক চোখ মুখ ঢেকে রাখার দাবি আমি করিনি।

“পৃথিবীর ইতিহাসে, কোনও অন্ধকার সমাজে যখনই কোনও নারী পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে উঠেছে, নিজের স্বাধীনতার কথা বলেছে, ভাঙতে চেয়েছে পরাধীনতার শেকল, তাকেই গালি দেওয়া হয়েছে পতিতা বলে।”

 

“নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে সামান্য সচেতন হলে মেয়েরা নিশ্চয়ই বুঝত যে জগতে যত নির্যাতন আছে মেয়েদের বিরুদ্ধে, সবচেয়ে বড় নির্যাতন হল- মেয়েদের সুন্দরী হওয়ার জন্য লেলিয়ে দেওয়া”।

 

“ ও মেয়ে, শুনছ !
বাইরে খানিক মেলে দাও তো এসব
দুঃখ তোমার একদম গেছে ভিজে…
হাওয়ার একটি গুণ চমৎকার
কিছু দুঃখ উড়িয়ে নেয় নিজে।”

“ ও কী গুণছ !
দিন!
দিন তো যাবেই ! দুঃখপোষা মেয়ে !
শুকোতে দাও স্যাঁতস্যাঁতে এ জীবন
রোদের পিঠে, আলোর বিষম বন্যা
হচ্ছে দেখ, নাচছে ঘন বন…
সঙ্গে সুখী হরিণ। ”

“তুমি মেয়ে,
তুমি খুব ভাল করে মনে রেখো
তুমি যখন ঘরের চৌকাঠ ডিঙোবে
লোকে তোমাকে আড়চোখে দেখবে।
তুমি যখন গলি ধরে হাঁটতে থাকবে
লোকে তোমার পিছু নেবে, শিস দেবে।
তুমি যখন গলি পেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠবে
লোকে তোমাকে চরিত্রহীন বলে গাল দেবে।
যদি তুমি অপদার্থ হও
তুমি পিছু ফিরবে
আর তা না হলে
যেভাবে যাচ্ছ, যাবে।”

উপরোক্ত তসলিমা নাসরিনের উক্তি, তাঁর রচিত ‘চরিত্র‘ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।

“যে সমাজে শিক্ষিত, স্বনির্ভর, সচেতন মেয়ের সংখ্যা বেশি, সেই সমাজে বিচ্ছেদের সংখ্যাটা বেশি, বিয়ের সংখ্যাটা কম।”

কাজী নজরুল ইসলামের নারী বিষয়ক উক্তিগুলো পড়ে নিন >> কাজী নজরুল ইসলামের নারী উক্তি

আলোচিত এবং বিতর্কিত উক্তি

কোনো কিছু লিখলেই আলোচিত এবং বিতর্কের কারণ হওয়া খুব কম লেখকের মধ্যে তসলিমা নাসরিন একজন। তাঁর বিতর্কিত উক্তি এবং বাণী সমূহ একদিকে যেমন গায়ে কাঁটা দিবে, অন্যদিকে বাস্তব কিছু চরিত্রকের তুলে ধরবে। পাশাপাশি দেখা মিলবে প্রচলিত সমাজের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

পুরুষরা যেমন গরম লাগলে খালি গায়ে ঘুরে বেড়ায় নারীরাও তেমনি খালিগায়ে ঘুরে বেড়াবে, তাদের স্তন সবাই দেখবে”।

“হে নারী, কেউ যদি তোমাকে ধর্ষণ করতে আসে, তুমিও তাকে ধর্ষণ করে দাও। পুরুষদের দেখিয়ে দাও, ধর্ষণ শুধু তারা নয়, তোমরাও পারো।”

 

“যৌন উত্তেজনা বেড়েছে তোমার, সে তোমার সমস্যা, আমার নয়। তোমার সেটি বাড়ে বলে আমার নাক চোখ মুখ সব বন্ধ করে দেবে, এ হতে পারে না। আমি তোমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নই যে তুমি আমাকে আদেশ দেবে আমি কি পরবো, কীভাবে পরবো, কোথায় যাবো, কতদূর যাবো। তোমার সমস্যার সমাধান তুমি করো। আমাকে তার দায় নিতে হবে কেন! যৌন উত্তেজনা আমারও আছে, সে কারণে তোমার নাক চোখ মুখ ঢেকে রাখার দাবি আমি করিনি”।

“আমার সংজ্ঞায় চরিত্রহীনতার সঙ্গে যৌনতার কোনও সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক আছে শঠতা, নীচতা, অসততা, মিথ্যে, প্রতারণা, ছলনা, চাতুরীর সঙ্গে”।

 

“বাংলাদেশ আর ভারতকে ভাগ করলে চলবে? ভাগ করতে হবে খারাপ লোক আর ভালো লোক। ভারতের সকলে যেমন ভালো নয়, বাংলাদেশের সকলেও তেমন ভালো নয়।”

 

“মানুষের চরিত্রই এমন
বসলে বলবে না, বসো না
দাঁড়ালে, কি ব্যাপার হাঁটো
আর হাঁটলে, ছি: বসো।
শুয়ে পড়লে ও তাড়া – নাও উঠো,
না শুলে ও স্বষ্তি নেই, একটু তো শুবে!”

উপরোক্ত তসলিমা নাসরিনের উক্তি, তাঁর রচিত ‘বড় ভয়ে গোপনে গোপনে বাঁচি’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।

তসলিমা নাসরিনের কবিতা থেকে সংগৃহীত উক্তি

প্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে উক্তি

প্রত্যেক মানব জীবনেই প্রেম আসে। তাঁর বহিপ্রকাশ এক একজন এক এক ভাবে করে থাকেন। সবাই যে বহিঃপ্রকাশ করতে পারেন, এমনও নয়। তসলিমা নাসরিনের প্রেম ভালোবাসার উক্তি যেকোনো প্রেমিক হৃদয়কে রাঙ্গাবে, কাঁদাবে এবং ভাসাবে।

“যদি ভুলে যাবার হয়, ভুলে যাও।
দূরে বসে বসে মোবাইলে, ইমেইলে হঠাৎ হঠাৎ জ্বালিয়ো না,
দূরে বসে বসে নীরবতার বরফ ছুড়ে ছুড়ে এভাবে বিরক্তও করো না।”

 

“ভুলে যেতে হলে ভুলে যাও, বাঁচি।
যত মনে রাখবে, যত চাইবে আমাকে, যত কাছে আসবে,
যত বলবে ভালোবাসো, তত আমি বন্দি হতে থাকবো তোমার হৃদয়ে, তোমার জালে,
তোমার পায়ের তলায়, তোমার হাতের মুঠোয়, তোমার দশনখে”।

উপরোক্ত তসলিমা নাসরিনের উক্তি দুটি, তাঁর রচিত ‘মুক্তি‘ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।

“ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত, তবু
এখনো কেমন যেন হৃদয় টাটায়
প্রতারক পুরুষেরা এখনো আঙুল ছুঁলে
পাথর শরীর বয়ে ঝরনার জল ঝরে”।

“এখনো কেমন যেন কল কল শব্দ শুনি
নির্জন বৈশাখে, মাঘচৈত্রে
ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত, তবু
বিশ্বাসের রোদে পুড়ে নিজেকে অঙ্গার করি”।

“প্রতারক পুরুষেরা একবার ডাকলেই
ভুলে যাই পেছনের সজল ভৈরবী
ভুলে যাই মেঘলা আকাশ, নাফুরানো দীর্ঘ রাত।
একবার ডাকলেই
সব ভুলে পা বাড়াই নতুন ভুলের দিকে
একবার ভালোবাসলেই
সব ভুলে কেঁদে উঠি অমল বালিকা।

 

“ভুল প্রেমে তিরিশ বছর গেল
সহস্র বছর যাবে আরো,
তবু বোধ হবে না নির্বোধ বালিকার।”

উপরোক্ত তসলিমা নাসরিনের বাণী তিনটি, তাঁর রচিত ‘ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত‘ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।

“ইচ্ছে ছিল বেড়াতে নিয়ে গিয়ে ব্রহ্মপুত্রের জলে, কেউ জানবে না,
ভাসিয়ে দেব একদিন
কচুরিপানার মতো, খড়কুটোর মতো, মরা সাপের মতো ভাসতে ভাসতে দুঃখরা
চলে যাবে কুচবিহারের দিকে…”
দুঃখবতী মা – তসলিমা নাসরিন

উপরোক্ত তসলিমা নাসরিনের বানী, তাঁর রচিত ‘দুঃখবতী মা‘ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।

“কাছে যতটুকু পেরেছি আসতে, জেনো
দূরে যেতে আমি তারো চেয়ে বেশী পারি।
ভালোবাসা আমি যতটা নিয়েছি লুফে
তারো চেয়ে পারি গোগ্রাসে নিতে ভালোবাসা হীনতাও।
জন্মের দায়, প্রতিভার পাপ নিয়ে
নিত্য নিয়ত পাথর সরিয়ে হাঁটি।
অতল নিষেধে ডুবতে ডুবতে ভাসি,
আমার কে আছে একা আমি ছাড়া আর?”

উপরোক্ত তসলিমা নাসরিনের বানী, তাঁর রচিত ‘অভিমান’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।

“ঠকতেই হবে ভালবেসে যদি গোপনে কিছুর করো
প্রত্যাশা কোনও, এমনকি ভালবাসাও পাবার আশা।”

উপরোক্ত তসলিমা নাসরিনের উক্তি, তাঁর রচিত ‘প্রত্যাশা’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।

“আজকাল তো ব্যস্ততাও বেড়েছে খুব।
সেদিন দেখলাম সেই ভালবাসাগুলো
কাকে যেন দিতে খুব ব্যস্ত তুমি,
যেগুলো তোমাকে আমি দিয়েছিলাম।”

উপরোক্ত তসলিমা নাসরিনের বানী, তাঁর রচিত ‘ব্যস্ততা’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।

“সে তোমার বাবা, আসলে সে তোমার কেউ নয়
সে তোমার ভাই, আসলে সে তোমার কেউ নয়
সে তোমার বোন, আসলে সে তোমার কেউ নয়
সে তোমার মা, আসলে সে তোমার কেউ নয় ।
তুমি একা।”

 

“যে তোমাকে বন্ধু বলে, সেও তোমার কেউ নয় ।
তুমি একা।
তুমি যখন কাঁদো, তোমার আঙুল
তোমার চোখের জল মুছে দেয়, সেই আঙুলই তোমার আত্মীয়।”

 

“তুমি ছাড়া তোমার কেউ নেই
কোন প্রানী বা উদ্ভিদ নেই।
তবু এত যে বলো তুমি তোমার,
তুমিও কি আসলে তোমার ?”

উপরোক্ত তসলিমা নাসরিনের বাণী তিনটি, তাঁর রচিত ‘দ্বিখন্ডিত’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।

“শোনো শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, সীতাকুণ্ড- পাহাড়-আমি ফিরব।
যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েও ফিরব একদিন।”

উপরোক্ত তসলিমা নাসরিনের উক্তিটি, তাঁর রচিত ‘যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েও ফিরব একদিন’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।

“আমি তাকে ভালোবেসে,ঘৃণা করে, তাকে সসম্মানে, গোপনে,
তাকে হৃৎপিণ্ডে, রক্তচলাচলে বহন করি, বাঁচাই।
আমার সময়। আমার আততায়ী, আমি জন্মে তাকে জন্ম দিই।”

উপরোক্ত তসলিমা নাসরিনের উক্তিটি, তাঁর রচিত ‘আমার সময়’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।

রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লার ভালোবাসার উক্তিগুলো জেনে নিন >> রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভালোবাসার উক্তি

“কতটুকু ভালোবাসা দিলে,
ক তোড়া গোলাপ দিলে,
কতটুকু সময়, কতটা সমুদ্র দিলে,
কটি নির্ঘুম রাত দিলে, কফোঁটা জল দিলে চোখের –
সব যেদিন ভীষণ আবেগে শোনাচ্ছেলে আমাকে,
বোঝাতে চাইছিলে আমাকে খুব ভালোবাসো;”

উপরোক্ত তসলিমা নাসরিনের উক্তিটি, তাঁর রচিত ‘হিসেব’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।

“আমি বুঝে নিলাম-
তুমি আমাকে এখন আর একটুও ভালোবাসোনা।
ভালোবাসা ফুরোলেই মানুষ হিসেব কষতে বসে, তুমিও বসেছো।
ভালোবাসা ততদিনই ভালোবাসা
যতদিন এটি অন্ধ থাকে, বধির থাকে,
যতদিন এটি বেহিসেবি থাকে।”

উপরোক্ত উক্তিটি তসলিমা নাসরিনের ‘হিসেব’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।

“যেরকম ছিলে, সেরকমই তুমি আছ
কেবল আমাকে মাঝপথে ডুবিয়েছ
স্বপ্নের জলে উলটো ভাসান এত
আমি ছাড়া আর ভাগ্যে জুটেছে কার!”

বড়শিতে গাঁথা হৃদপিন্ডের আঁশ
ছিঁড়ে খেতে চাও, তুমি তো পুরুষই খাবে।
সাঁতার জানি না, মধ্যনদীতে ডুবি
অন্ধকে টোপ দেবার মানুষ নেই।”

উপরোক্ত কবিতার চরণ দুটি তসলিমা নাসরিনের ‘টোপ’ কবিতা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।চ

“তুমি মেয়ে,
তুমি খুব ভাল করে মনে রেখো
তুমি যখন ঘরের চৌকাঠ ডিঙোবে
লোকে তোমাকে আড়চোখে দেখবে।
তুমি যখন গলি ধরে হাঁটতে থাকবে
লোকে তোমার পিছু নেবে, শিস দেবে।
তুমি যখন গলি পেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠবে
লোকে তোমাকে চরিত্রহীন বলে গাল দেবে।
যদি তুমি অপদার্থ হও
তুমি পিছু ফিরবে
আর তা না হলে
যেভাবে যাচ্ছ, যাবে।

উপরোক্ত উক্তি, কবিতাংশটি , তসলিমা নাসরিনের ‘চরিত্র’ কবিতা থেকে চয়ণ করা হয়েছে।

আশির দশকের জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত লেখিকা আজো তাঁর লেখাইয় শান দিয়ে যাচ্ছেন। নাস্তিক বাদীতা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানায় সমানভাবেই মৌলবাদীদের রোষালনে পড়ছেন। বিতর্কিত বিষয় সমূহ বাদ দিয়ে সার্বিকভাবে চিন্তা করলে তসলিমা নাসরিন একজন ক্ষণজন্মা লেখিকা। তসলিমা নাসরিনের উক্তি এবং বানী, যুগ যুগ বিতর্কের জন্ম দিয়ে যাবে।

আশির দশকের জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত লেখিকা আজো তাঁর লেখাইয় শান দিয়ে যাচ্ছেন। নাস্তিক বাদীতা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানায় সমানভাবেই মৌলবাদীদের রোষালনে পড়ছেন। বিতর্কিত বিষয় সমূহ বাদ দিয়ে সার্বিকভাবে চিন্তা করলে তসলিমা নাসরিন একজন ক্ষণজন্মা লেখিকা। তসলিমা নাসরিনের উক্তি এবং বানী, যুগ যুগ বিতর্কের জন্ম দিয়ে যাবে।

পশ্চিম বঙ্গে তার প্রধান প্রকাশক প্রকাশক শিবানী মুখোপাধ্যায়। কবিতা শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা (Hunger in the Roots), ১৯৮১ নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে (Banished Without and Within), ১৯৮৯ আমার কিছু যায় আসে না (I Couldn’t Care Less), ১৯৯০ অতলে অন্তরীণ (Captive In the Abyss), ১৯৯১ বালিকার গোল্লাছুট (Game of the Girls), ১৯৯২ বেহুলা একা ভাসিয়েছিল ভেলা (Behula Floated the Raft Alone), ১৯৯৩ আয় কষ্ট ঝেঁপে, জীবন দেবো মেপে (Pain Come Roaring Down, I’ll Measure Out My Life for You), ১৯৯৪ নির্বাসিত নারীর কবিতা(Poems From Exile), ১৯৯৬ জলপদ্য (Waterlilies), ২০০০ খালি খালি লাগে (Feeling Empty), ২০০৪ কিছুক্ষণ থাকো (Stay For A While), ২০০৫ ভালোবাসো? ছাই বাসো! (It’s your love! or a heap of trash!), ২০০৭ বন্দিনী (Prisoner), ২০০৮ প্রবন্ধ সংকলন নির্বাচিত কলাম (Selected Columns), ১৯৯০ যাবো না কেন? যাব (I will go; why won’t I?), ১৯৯১ নষ্ট মেয়ের নষ্ট গল্প (Fallen prose of a fallen girl), ১৯৯২ ছোট ছোট দুঃখ কথা (Tale of trivial sorrows), ১৯৯৪ নারীর কোন দেশ নেই (Women have no country), ২০০৭ ‘নির্বাসন’, ২০১২। উপন্যাস অপরপক্ষ ১৯৯২ শোধ, ১৯৯২. ISBN 978-81-88575-05-3 নিমন্ত্রণ, ১৯৯৩ ফেরা , ১৯৯৩ লজ্জা, ১৯৯৩. ISBN 978-0-14-024051-1. ভ্রমর কইও গিয়া, ১৯৯৪ ফরাসি প্রেমিক ,২০০২ শরম,২০০৯ ছোট গল্প দু:খবতী মেয়ে ১৯৯৪ মিনু ২০০৭ আত্মজীবনী Amar Meyebela (My Girlhood), 1999 (ISBN 978-1-58642-051-2) Utal Hawa (Wild Wind), 2002 Ka (Speak Up), 2003; published in West Bengal as Dwikhondito (Split-up in Two), 2003 Sei Sob Andhokar (Those Dark Days), 2004 Ami Bhalo Nei, Tumi Bhalo Theko Priyo Desh (“I am not okay, but you stay well my beloved homeland”), 2006. সূত্র : সাহিত্য জগত।

Leave a Reply