“আমরা কাকে রেখে কাকে আস্তায় নিব! তাই চাই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা”-দুলাল চন্দ্র চৌধুরী সাংগঠনিক সম্পাদক

“শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য শিক্ষার মান উন্নয়নে বাধা নয় ” মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য। জানি না তিনি এর আগে পরে কি কথা বলেছেন? হঠাৎ করে তিনি এ কথায় চলে আসছেন!! এমনটা আমি বিশ্বাস করি না।আমাদের শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় উচ্চ শিক্ষিত লোক।তিনি আমাদের চেয়ে শিক্ষিত এটা স্বীকার করে নিয়ে কথা বলছি। তার কাছে অনেক গবেষণার ফলাফল আছে।
তথ্য উপাত্তের কমতি নেই। আমাদের থেকে অনেক জ্ঞানীজন তাকে তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেন। তার নিরীখে তিনি কথা বলেন। আমাদের দেশের শিক্ষার মান বিশ্ব মানের নয় এ কথা শুনতে কান ব্যাথা হয়েছে গেছে। আমাদের দেশের পরীক্ষা পদ্ধতি ভালো না। এ কথাও শুনে আসছি ছোট বেলা থেকে। সেই থেকেই পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের কাজ করেছে বিশেষজ্ঞ পন্ডিতগন।যখন যে পদ্ধতি চালু করুক না কেন? তার প্রতিবাদ হয়েছে। পদ্ধতির শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয় নাই।
কখনো পদ্ধতির পা কেটে বা হাত কেটে বাস্তবায়ন করতে হয়েছে যার ফলাফল আশানুরূপ হয়নি।বাদ দাও এ পদ্ধতি। আমদানি কর একটি নতুন পদ্ধতি। আবার এই পদ্ধতির উপর চালাও অস্ত্র, কর বাস্তবায়ন, ফলাফল আশানুরূপ হবে না।শিক্ষা কমিশন গঠন এবং তার রিপোর্ট তৈরি করা হল।সরকার পরিবর্তন হল সেই কমিশন রিপোর্ট চলে যায় হিমাগারে। গঠিত হয় নতুন কমিশন। এই খেলা দেখতে দেখতে ছাত্র জীবন শেষ করেছি। যখন ছাত্র ছিলাম তখন একটি ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম। ঐ ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতীয় শিক্ষানীতি রূপরেখা প্রনয়নের কাজে হাত নিয়ে মশিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বিভিন্ন শেণি পেশার মানুষের সাথে সংলাপ করে শিক্ষানীতি রূপরেখা তৈরি করেছিল।
করলে কি হবে? সেটা বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা তাদের ছিল না তবে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় তারা তাদের টনক নরাতে পেরেছিল। এভাবে এই কমিশন সেই কমিশন করতে, করতে ২০১০ সালে আমরা একটা নতুন শিক্ষানীতি পেলাম। সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই শিক্ষানীতি করা হয়েছে। সবাই সাধুবাদ জানাল।সেই মোতাবেক ২০১২ সালে একটি কারিকুলাম প্রনয়ণ করা হল।পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হল।কাঠামো বদ্ধ প্রশ্ন নিয়ে আন্দোলন শুরু হল। আমাদের দেশ বিচিত্র এক দেশ কোন বিষয় বুঝি আর না বুঝি মতামত দিতে ছারি না।আন্দোলন থামানোর জন্য শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মিটিং হল তারা বলল কাঠামো বদ্ধ প্রশ্ন বিষয়টি শিশু মনে অনেক কষ্ট দেয়। এই নাম পরিবর্তন করে একটা সুন্দর নাম দেওয়া দরকার। তারা সুন্দর নাম দিলেন সৃজনশীল প্রশ্ন সবাই খুশি।কিন্তু কোন পরিবর্তন ছাড়া শুধু নামের পরিবর্তন করার কারণে আমরা খুশিতে গদগদ হয়ে গেলাম।শিক্ষানীতি ২০১০ প্রনেতাদের অনেকই বলে আমরা শিক্ষানীতিতে বলেছি কী? বাস্তবায়ন হচ্ছে কী।
J.S. C & P. E. C এই জাতীয় পরীক্ষা তারা কোথায় পেল।আমরা তো এটা করতে বলি নাই।এখন আবার সেটা বাদ।তবে এর মধ্যে এই পদ্ধতির অনেক ভক্ত তৈরি হয়েছে।এটা বন্ধ হওয়ায় তারা খুশি নয়।আমাদের দেশের শিক্ষার মান নিয়ে যত গবেষণা হয়েছে তার কোনটাতে বাংলাদেশের বেতন বৈষম্যর কথা আসে নাই। যদিও এটা আমাদের প্রধান সমস্যা বলে আমরা শিক্ষকবৃন্দ মনে করি( বেসরকারি শিক্ষক)।যখন এই গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ পায় তখন কিন্তু কোন শিক্ষক সংগঠন বলি না যে গবেষণা রিপোর্ট যথার্থ নয়।গবেষণার জন্য গবেষক যখন আমাদের কাছে যায় তখন তথ্য উপাত্ত দেওয়ার সময় আমাদের হুস থাকে না। আমরা বৈষম্যর কথা বলি না নিজে এমন ভাবে উপস্থাপন করি সরকারি স্কুলের থেকে আমরা ভালো শিক্ষা দেই।আমরা বেশি পড়াই।তখন তারা ধরে নেয়। শিক্ষার মান উন্নয়নে বেতন বৈষম্যের কোন প্রভাব নেই বা বাধা নেই।
সরকারি স্কুলের চেয়ে কম বেতন নিয়ে বেসরকারি শিক্ষকবৃন্দ ভালো পড়াচ্ছেন। তাহলে সমস্যা কোথায়?সমস্যা ০১.শিক্ষা কারিকুলাম ০২ শিক্ষক প্রশিক্ষিন ০৩ ভৌত অবকাঠামো ০৪. পরীক্ষা পদ্ধতি ০৫. সহশিক্ষা কার্যক্রম ০৭. শারিরীক নির্যাতন ০৮. শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি ০৯. শিক্ষকদের শ্রেনি পাঠদানে অমনোযোগীতা ১০.মিড ডে মিলের অভাব১১. দারিদ্রতা। ইত্যাদি ইত্যাদি। এর কোথাও কি বেতন বৈষম্যের কথা আছে? নাই!! তাহলে শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় এর দোষ কী? গবেষণার তথ্য থেকে তিনি বলেছেন। আমাদের শিক্ষক সমাজের মূল্যায়ন হল শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রধান বাধা বেতন বৈষম্যই নয়, কম বেতন দেওয়া।
শিক্ষার মান উন্নয়নে যে সকল বাধার কথা গবেষণায় উঠে আসছে।এগুলোর সাথে একমত। তবে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি না করে এবং বৈষম্য নিরসন না করে গুণগত শিক্ষা সম্ভব নয়। শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করে এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিয়ে এমন পর্যায়ে নিয়ে আসুন যেন মেধাবীদের এ পেশায় আশার জন্য প্রথম চয়েজ দেয়।বি.সি.এস পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে গিয়ে সর্বশেষ চয়েজ দেয় শিক্ষা ক্যাডার। শুধু শুধু মুখে মুখে সম্মান দেখালে হবে না।
শিক্ষামন্ত্রনালয় কি একবার ভেবেছেন? কেন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা চাকরির ক্ষেত্রে, শিক্ষাকে কেন প্রধান্য দেয় না।যারা এ পেশায় আছে তারা খারপ এটা বলছি না।শুধমাত্র বেতন বৈষম্য বা কম বেতনের জন্য এ পেশাকে ছোট করে দেখে।টাকা ছাড়া অন্য সবক্ষেত্রেই আমাদের বেশ গুরুত্ব দেন।মেয়ে বিয়ে দেওয়ার সময় শিক্ষকের কাছে পরামর্শ নিতে আসে।কিন্তু শিক্ষকদের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে চায় না।মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় বিনয়ের সাথে বলছি ছোট মুখে বড় কথা শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রধান বাধা বেতন বৈষম্য। একটু ভেবে দেখবেন!! শিক্ষায় মেগা প্রজেক্ট দিচ্ছেন এটা অস্বীকার করছি না। শিক্ষকদের দাবি বেতন বৈষম্য নিরসন,পূর্নাঙ্গ উৎস ভাতা, বাড়ি ভাড়া এনিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে। এই সময় আপনার এ বক্তব্য কাঁচা ঘায়ে নূনের ছিটা দেওয়ার মত। শিক্ষকদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনায় বসুন। শিক্ষক সমাজ অবিবেচক নয়।তারা আপনার কথা শুনছে এবং মানছে। আপনি শিক্ষকদের আস্তায় নিয়ে আসুন। শিক্ষকদের মনের আনন্দে কাজ করতে দিন।জোর করে শিক্ষা দান হয়না।
দুলাল চন্দ্র চৌধুরী
সাংগঠনিক সম্পাদক
কেন্দ্রীয় কমিটি
বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ।

Leave a Reply