সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার অপচেষ্টা দুলাল চন্দ্র চৌধুরী :প্রধান শিক্ষক ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয়

এ লকডাউন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য নয়। লকডাউন হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করার জন্য। এক কথা যারা বলে তাদের আটকাতে না পারলে আমরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফল হতে পারব না। টিকা কর্মসূচিকে ব্যর্থ করার জন্য নানা ফতোয়া দিচ্ছেন। একজন নেতা বলেছেন, তিনি মরে গেলেও টিকা নেবেন না। এগুলোর অর্থ কী? এর অর্থ যে কোনোভাবে সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা। এতে মানুষ বাঁচুক আর মরুক তাতে তাদের কিছু যায় আসে না।

আরো জানুন:বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী অধ্যাপক বাংলাদেশি বালক!

প্রয়োজন আইন মানে না’ এ প্রবাদটি সবার জানা। তবে এ কথাটি ভুক্তভোগী ব্যক্তি ছাড়া কেউ মানতেই চায় না। প্রয়োজনেই মানুষ আইন মানে না। আমরা যদি এ প্রবাদ প্রবচনটি শিরধার্য মনে করে সবাই আইন অমান্য করি তবে কি দেশের শৃঙ্খলা বজায় থাকবে? দেশে করোনা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক আকার ধারণ করায় সরকার বাধ্য হয়েছে লকডাউন দিতে। সরকার রাষ্ট্রের প্রয়োজনে জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন। এবার লকডাউনের ঘটনার প্রভাবগুলো একটু লক্ষ্য করুন। পেশাগত দায়িত্ব পালনে জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি নেই। তাদের ২৪ ঘণ্টা অনডিউটিতে থাকতে হচ্ছে। সে কারণে তাদের বেতন বেশি দেওয়া হবে, এবার কিন্তু সে ঘোষণা সরকার দেন। তাহলে জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই লকডাউনের কারণে ছুটি পায়নি বরং দায় দায়িত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। পক্ষান্তরে কিছু সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছুটি ভোগ করছেন। শুরু হলো এই দুই শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব।

আরো জানুন:নতুন এমপিও নীতিমালা ও জনবলকাঠামোর দশটি দুর্বল দিক

এখানে কেউ আর প্রয়োজনের কথাটি স্মরণ রাখে না। এমন কি যারা এই দুর্যোগের সময় আমাদের সেবা প্রদান করছেন? তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা বোধটুকু পর্যন্ত নেই। আবার যারা এ কাজ করেছেন তারা আবার হীনম্মন্যতায় ভোগেন অথবা ভাবেন জাতির জন্য তারা অনেক ত্যাগ করেছেন। কেউ প্রয়োজন কথাটি মনে রাখে না। শুধু আইন অমান্য করার জন্য, নিজের কথা চিন্তা করে ব্যবহার করি এই প্রবাদ প্রবচনটি। ডাক্তারকে জরুরি সেবার জন্য বাইরে যেতে এটাই প্রয়োজন কিন্তু সঙ্গে করে আইডি কার্ডটা নিয়ে এলে কোনো সমস্যা হতো? এত এত পরিচয় দেওয়ার দরকার ছিল। দেখুন ডাক্তার মহোদয়ের আইডি কার্ড নেই, এটা আমার মনে হয় না। আপনাকে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে, কেউ আপনার পরিচয় জানতে চাইলে এটা আপনি প্রর্দশন করবেন। কিন্তু এটা আপনি সঙ্গেই আনেননি। তাহলে কর্তব্যরত ব্যক্তি কীভাবে বুঝবেন আপনি ডাক্তার? হঁ্যা, এখানে কর্তব্য কী ছিল? ডাক্তার হিসেবে আপনি আপনার পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি এটা ভালো করে বললে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার বা ম্যাজিস্ট্রেট আপনার কথা রাখতেন। আপনি তা না করে আপনি কত বড়, আপনার বাবা কী ছিলেন? সে সম্পর্কে একটি রচনা লিখে ফেললেন। যার কোনো প্রয়োজন ছিল না। প্রয়োজন ছিল আইডি কার্ডের। দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ অফিসারকে বলব সাধারণ সেন্স বলতে একটা বিষয় আছে। আপনারা আইন করতে করতে সাধারণ সেন্সসের বিষয়টা ইচ্ছকৃতভাবে ভুলে গেছেন। তারা চাকরিরত অবস্থায় বংশ পরিচয় দেওয়া শুরু করলেন। এখানে ডাক্তার, পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেট সবাই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে তারা তাদের কোটারি পরিচয় দিয়ে নিজের অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন।

আরো জানুন:“প্রয়োজন আইন মানে না”

বাংলাদেশের মানুষ আমরা কেউ ডাক্তারের পক্ষে পুলিশের পক্ষে আবার কেউ ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে কথা বলছেন। তাদের কারও পক্ষেই কথা বলা যায় না। তারা কেউই প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মচারী তার প্রমাণ দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে শিল্পকারখানা খোলা রেখে সরকার লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সরকার গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন। গত বছর লকডাউনের মধ্যে শিল্পকারখানা বন্ধ ছিল। শিল্পকারখানা মালিক এবং শ্রমিক উভয়ই লকডাউনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছিলেন। মালিক বললেন, লকডাউনের কারণে তাদের ব্যবসার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে দিতে হবে। সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করলেন। শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে শিল্পকারখানা খুলে দিলেন। এবারে শিল্পকারখানা খোলা রেখেই লকডাউন দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে মালিকদের কিছু শর্ত দেওয়া হলো। শিল্পকারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিজস্ব পরিবহণে কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের আনা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। মালিক পক্ষ এ শর্ত মেনেই কারখানা চালাচ্ছে। শিল্পকারখানায় মালিক ও শ্রমিকের সন্তোষ বিরাজ করেছে। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যাইনি। শ্রমিকদের প্রয়োজন পড়েনি আইন অমান্য করার। তাই তারা আইন অমান্য করেনি। ধন্যবাদ শ্রমিক ভাইদের। কোনো কিছু করার পূর্বে ভালো-মন্দ চিন্তা করে সংশ্লিষ্টদের সুবিধা অসুবিধার কথা চিন্তা করে সব পক্ষই মেনে নেয়।

আরো জানুন:নতুন এমপিও নীতিমালা ও জনবলকাঠামোর দশটি দুর্বল দিক

এবারের লকডাউন তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় অত্যন্ত সুন্দরভাবে পালিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সবাই সাড়া দিয়েছেন। তবে রিকশাচালক, সিএনজি চালক, রাস্তার পাশের খুচরা ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করলে আরো সুন্দরভাবে লকডাউন পালিত হতো। করোনা সংক্রমণের হার আরও কমতো বলে বিজ্ঞজনের ধারণা। রিকশা/সিএনজি মালিকদের মাধ্যমে যদি চালকদের কোনো মতে পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে বাঁচার মতো প্রণোদনা দেওয়া হতো তবে তারা রিকশা/সিএনজি নিয়ে রাস্তায় নামত না। তাদের রাস্তায় নামার প্রয়োজন পড়ত না। আর তারা আইন অমান্য করত না। আমার মনে হয়, এদের নিয়ে কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। তাদের রাস্তায় বের হতে নিষেধ করেননি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের রিকশা উল্টে দিয়েছেন। চাকার গ্যাস ছেড়ে দিয়ে। দুই-তিন ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। যেটা অমানবিক। এরা কিন্তু সেভাবে তারা প্রতিবাদ করেনি। তারা বুঝতে পেরেছে এটা তাদের উচিত হয়নি। তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা থাকলে তারা অবশ্যই রাস্তায় বের হতেন না। সবারই মৃতু্য ভয় আছে। দিনমজুরেরও আছে। কিন্ত ভয় করলেতো তাদের চলে না। তারা কাজ না করলে পরিবারের বাকি সদস্যরা তো না খেতে পেয়ে মারা যাবে। তাই প্রয়োজনে তারা আইন অমান্য করেছেন। এদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা সত্যিই ছিল অমানবিক। ওদের বের হওয়া তো নিষেধ ছিল না। তাহলে ওদের ওপর এ অবিচার কেন করা হলো? বিশিষ্ট জনদের কাছে এটি বড়ই অন্যায় বলেই মনে হয়েছে। আর কয়েকটি শ্রেণির দিকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের খেয়াল দিতে হবে- তারা হলো হকার, যারা রাস্তায় ঘুরে বাদাম, ঝালমুড়ি, আইসক্রিম, বিক্রি করেন। যারা পাড়ায় মহলস্নায় ঘুরে পুরাতন জিনিসপত্র ক্রয় করেন। রাস্তার পাশে ফুটপাতে যারা চা, সিগারেট, বিস্কুট, বনরুটি বিক্রি করেন। এদের প্রণোদনার আওতায় নিয়ে লকডাউন দিলে আরও ফলপ্রসূ হতো। কারণ এরা বাঁচার তাগিদে রাস্তায় নেমেছে। প্রয়োজনের কারণে আইন অমান্য করেছেন।

আরো জানুন:প্রধান শিক্ষকদের অধিকার বাস্তবায়নে আসছে নতুন সংগঠন

আর এ সব পেশার মানুষ রাস্তায় না থাকলে কিছু বেহুদা মানুষ রাস্তায় থাকার সুযোগ পেত না। তবে প্রয়োজন ব্যতিরেকে কেউ রাস্তায় বেরিয়েছে এ আমার মনে হয় না। কিছু ব্যতিক্রম তো থাকবেই একজন খেটে খাওয়া মানুষ মাস্ক না পরার পক্ষে যুক্তি দিলেন। তার দাদার বংশের কেউর করোনা হয়নি। তার নানার বংশের কেউর করোনা হয়নি। সে কেন মাস্ক পরবেন? দাবি ন্যায্য। এ লোকটার দোষ আমরা দেব না। এ অবুঝ, একে আমরা বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। তবে এটা যে তার নিজের কথা নয়। এটা সহজেই অনুমান করা যায়। এক শ্রেণির বুঝদার লোক জেনে বুঝে সাধারণ মানুষকে উল্টা-পাল্টা বুঝাচ্ছেন। তারা বলছেন, করোনা বলতে কিছু নেই। এক শ্রেণির সাধারণ মানুষ তাই বুঝে নিয়েছে। যারা এই ভুল বুঝালো তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। করোনার ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হলো। তারা বলে দিলেন, হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন কর্মসূচি বানচালের জন্য লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন। একজন নেতা তো ঘোষণা করেছে লকডাউন বন্ধ করুন, প্রয়োজন হলে তারা সবাই কারাগারে যাবে। এর মানে কী? এ লকডাউন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য নয়। লকডাউন হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করার জন্য। এক কথা যারা বলে তাদের আটকাতে না পারলে আমরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফল হতে পারব না। টিকা কর্মসূচিকে ব্যর্থ করার জন্য নানা ফতোয়া দিচ্ছেন। একজন নেতা বলেছেন, তিনি মরে গেলেও টিকা নেবেন না। এগুলোর অর্থ কী? এর অর্থ যে কোনোভাবে সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা। এতে মানুষ বাঁচুক আর মরুক তাতে তাদের কিছু যায় আসে না।

দুলাল চৌধুরী :প্রধান শিক্ষক ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয় ও যুগ্ম আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় কমিটি বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ

Leave a Reply