স্কয়ার হাসপাতালের সেবা অনবদ্য, করোনাজয়ীদের অভিমত

দেশের বেসরকারি খাতে স্কয়ার হাসপাতাল আগে থেকেই চিকিৎসার মানের দিক থেকে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের শীর্ষে রয়েছে। করোনাকালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো স্কয়ারও চ্যালেঞ্জে পড়েছিল। কারণ শুরুতে করোনা সংক্রমিতদের চিকিৎসা প্রদানে এক ধরনের ভীতি ছিল চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে। রোগীর কাছে যেতেন না চিকিৎসক ও নার্সরা- এমন অভিযোগ ছিল ভুক্তভোগী অনেকের।

এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। মমত্ববোধ নিয়ে তারা রোগীর পাশে থেকেছেন, সেবা নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনাকে কেউ অনবদ্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আবার কেউ অভিভূত, মুগ্ধ হওয়ার কথা বলেছেন। স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া রোগীদের বক্তব্যে এমন অনুভূতি উঠে এসেছে।

 

 

হাসপাতালটির ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তাদের নিয়ে সোমবার বিকেলে প্রতিষ্ঠানটির পান্থপথ কার্যালয়ে এক মিলন মেলার আয়োজন করা হয়।

 

Square hospital

অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা -সমকাল

অনুষ্ঠানে করোনা সংক্রমিত ব্যক্তিরা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে করোনা আক্রান্ত হয়ে স্ত্রীসহ স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বারস অ্যান্ড কমার্স, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, তার ফুসফুস ইনফেকশন ছিল ৫০ শতাংশের মতো। শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল ছিলেন। কিন্তু সেবা দিয়ে স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাকে ও তার স্ত্রীকে সুস্থ করে তোলেন। তারা যেভাবে সেবা দিতেন তাতে মনে হতো হাসপাতালে নয়, নিজের বাসায় আছেন। এই অনবদ্য সেবার কথা তিনি কোনোদিন ভুলবেন না।

 

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানও করোনায় আক্রান্ত হয়ে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে তিন দফায় তিনি ৩৮ দিন স্কয়ারে ভর্তি ছিলেন। প্রথম দফায় করোনা নেগেটিভ হয়ে বাসায় ফেরেন। দ্বিতীয় দফায় নিউমোনিয়া ইনফেকশন এবং তৃতীয় দফায় করোনাপরবর্তী শারীরিক জটিলতা নিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। কিন্তু চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যেভাবে তাকে সেবা দিয়েছেন তাতে তিনি মুগ্ধ, অভিভূত।

এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এবং কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। সাবেক জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী করোনাকালীন সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

 

স্কয়ার হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার কেক কাটেন অতিথিরা -সমকাল

হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ গত বছরের মে মাসে করোনা সংক্রমিত হন। এ. কে. আজাদ বলেন, করোনা পজিটিভ হওয়ার পর তিনি অত্যন্ত ভয় পেয়ে যান। কারণ তখন চীনে করোনা সংক্রমিতদের মৃত্যুর খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। করোনা মানেই নিশ্চিত মৃত্যু- এমন ধারণা ছিল সবার। দেশে তখনও চিকিৎসকরা করোনা চিকিৎসা সম্পর্কে ততোটা জ্ঞানার্জন করেননি। এরপর স্কয়ারে ভর্তি হন। মৃত্যু নিশ্চিত ধারণা করে স্ত্রী-সন্তানদের ডেকে সম্পদের ভাগবাটোয়ারা করে দেওয়ার কথাও বলেন। কিন্তু স্কয়ারের চিকিৎসক-নার্সরা সার্বক্ষণিক যে সাহস জুগিয়েছেন তা কোনোদিন ভুলবেন না। আট দিন চিকিৎসা শেষে বাসায় ফেরার পর মনে হয়- যেন নতুন জীবন পেয়েছেন। তবে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় কিভাবে আরেকটু কমানো যায় তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

 

স্কয়ার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরেন স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী। তিনি বলেন, তার বাবা প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী থাইল্যান্ডের আদলে এই জায়গায় একটি শপিংমল ও পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারিবারিক একটি ঘটনায় আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তার বাবা হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নেন। লক্ষ্য ছিল মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা। এরপর থেকেই মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে স্কয়ার হাসপাতাল। এটি তাদের পরিবারের আয়ের উৎস নয়। মাঝে মাঝে অনাকাঙ্খিত ঘটনায় কিছুটা কষ্ট পেলেও হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে একজন অসুস্থ মানুষ যখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তখন তৃপ্তি পান। মানসম্পন্ন সেবা নিয়ে স্কয়ার হাসপাতাল যাতে সবসময় মানুষের আস্থায় সর্বোচ্চ জায়গায় থাকতে পারে, তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি।

Leave a Reply