কপি না করে নিজ থেকে বলুন,গরীব ঘরের ছেলে থেকে যেভাবে হলেন গায়ক নকুল কুমার।

নকুল কুমার বিশ্বাস একজন বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী, যন্ত্রশিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক। ১৯৯৬ সালে বিটিভির ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে প্রচারিত হওয়া তার গাওয়া ‘বিয়া করলাম ক্যানরে দাদা, বিয়া করলাম ক্যান’ গানটির মাধ্যমে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান।

নকুল কুমার বিশ্বাস ১৯৬৫ সালে মাদারীপুর জেলার দত্ত কেন্দুয়া ইউনিয়নের পূর্ব কলাগাছিয়া গ্রামের এক সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে তার অবস্থান পঞ্চম।[২] তার পিতার নাম সুরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস এবং মাতার মঙ্গলী দেবী।

মাত্র আট বছর বয়সে যাত্রার দলে শিল্পী হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার সঙ্গীতের ক্যারিয়ার শুরু। সেই থেকে যাত্রাসহ গ্রাম ও শহরাঞ্চলে বহু অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেছেন তিনি। গানের পাশাপাশি তিনি সেতার, তবলা, বাঁশি, সরোদ, সন্তুর, দোতারা, ও ম্যান্ডালিনসহ আরো নানারকম বাদ্য যন্ত্রে পারদর্শী, বিশেষ করে হারমোনিয়াম বাজানোতে রয়েছে তার বিশেষ দক্ষতা। বাংলাদেশ বেতারে যন্ত্র ও সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে চাকরি করেছেন অনেকদিন। তবে ক্যারিয়ারে তার সবসেরা সুযোগটি আসে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। ‘ইত্যাদি’ তে গান পরিবেশনের সুবাদেই শ্রোতা-দর্শকদের কাছে তার সর্বাধিক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পরে।

উল্লেখযোগ্য গান সমূহ

  • চাচায় চা চায় [৫]
  • এই আমার পকেটে আছে
  • মানুষটা পাঁচ ফিট
  • হ্যালো হ্যালো মাই ডিয়ার
  • মাগো তুমি যেন না কাঁদো
  • পাঁচতলার ঐ চিলেকোঠায়
  • ভালো হইতে পয়সা লাগে না
  • কোরআন হলো জীবন্ত গ্রন্থ।[৬]
  • ম তে মাওলা ম তে মুহাম্মদ [৭]
  • ন থাকে
  • একদিকে ফেসবুক আর অন্য দিকে টুইটার
  • আরও পড়ুন:Biography of Buddhist guru Dalai lama || বৌদ্ধ ধর্মগুরু দালাইলামার জীবন কাহিনী

নকুল কুমার বিশ্বাস একজন গায়ক। গান লেখেন, সুর করেন। তাঁর কৌতুক-গানগুলো যেমন মানুষকে দেয় বিমল আনন্দ, তেমনি তাঁর লেখা ‘একদিন কান্নার রোল উঠবে আমার বাড়িতে’ গানটি জনপ্রিয় গায়ক কুমার বিশ্বজিতের কণ্ঠে শুনে অগণিত শ্রোতা কেঁদেছে। নানা রকমের বাদ্যযন্ত্র বাদনে তাঁর দারুণ দক্ষতা। এখানেই শেষ নয়, আছেন অভিনয়শিল্পীর তালিকায়ও। অনুষ্ঠান নির্মাণ করছেন। এত পরিচয়!
তাহলে কী বলব আপনাকে?
নকুল কুমার হাসলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত দর্শকই নিক না! দর্শক আমাকে ভালোবেসে যা বলেন, তা-ই আমার অর্জন।’
গানের পাশাপাশি নকুল নিজের পরিচালনায় সম্পূর্ণ ছন্দভিত্তিক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের কাজ করছেন। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ‘ছন্দ আনন্দ’। ছন্দভিত্তিক এই ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা থেকে শুরু করে সবকিছুই ছন্দের মাধ্যমে তৈরি হয়। আগে বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হলেও খুব শিগগির অনুষ্ঠানটি একটি বেসরকারি চ্যানেলে প্রতি দুই মাস অন্তর প্রচারিত হবে। এই অনুষ্ঠানের রচনা, গ্রন্থনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা তাঁর নিজের।

Read More:  Chanakya Biography

আলাপচারিতায় টেবিলে চা আসে। ধূমায়িত চায়ে টোস্ট ভেজাতে ভেজাতে কড়া নাড়ি তাঁর শৈশবে। খুলে যায় মাদারীপুরের পূর্ব কলাগাছিয়া গ্রাম। সংগীত পরিবারে জন্ম। বাবা প্রয়াত সুরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও মা মঙ্গলী দেবী। নকুলের জীবনে বড় ট্র্যাজেডি জন্মের ছয় বছর পরই মাকে হারানো। মনে পড়ে ১৯৭৫ সালের কথা। সে বছর মেজো ভাই হীরালাল বিশ্বাসের হাত ধরে গোপালগঞ্জে আসেন তিনি। আট বছরে প্রায় অর্ধশত যাত্রাপালায় অভিনয় করেছেন।

একসময় হারমোনিয়ামে রাগসংগীতের তালিম নেন নকুল। মাত্র ছয় মাসেই এটা আয়ত্ত করেন এবং প্রধান হারমোনিয়াম মাস্টার হিসেবে একটি স্কুলে শিক্ষক নির্বাচিত হন। গুরু আশু মিয়ার কাছে বিখ্যাত সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশঙ্করের গল্প শুনতেন। গল্প শুনতে শুনতে বিখ্যাত হওয়ার বাসনা জাগল মনে। ১৯৮০ সালে পকেটে মাত্র ৫০০ টাকা নিয়ে পাড়ি জমান কলকাতায়। ছোট্ট নকুল কলকাতায় সুভাষ বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রখ্যাত সেতারবাদক ওস্তাদ মোস্তাক আলী খানের নাতি-শিস্য রণজিৎ বিশ্বাসের কাছে আসেন। তাঁর কাছে কিছুদিন সেতার শেখেন। কলকাতা থেকে ২৮০ টাকা দিয়ে কিনে নেন একটি সেতার। এরপর ফিরে আসেন দেশে। দেশে ফিরতে গিয়ে আরেক সংগ্রাম; সে গল্প হবে আরেক দিন।
১৯৮৩ সালে বেতার ও টেলিভিশনের শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চলে আসেন ঢাকায়। আশ্রয় নেন মোহাম্মদপুরে ওস্তাদ আমানউল্লাহ খানের বাড়ির ভাঙা বারান্দায়। সেখানে বৃষ্টি এলে বিছানা গুটিয়ে বসে থাকতে হতো, বৃষ্টি থামলে বিছানা বিছিয়ে ঘুমাতেন।

১৯৮৬ সালে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেন। আবার আসেন ঢাকায়। এর মধ্যে বাজারে চলে আসে তাঁর গানের একাধিক অ্যালবাম। একই সঙ্গে গান ও পড়াশোনা চলতে থাকে। ১৯৯৬ সালে ‘ইত্যাদি’তে প্রচারিত হয় তাঁর গাওয়া ‘বিয়া করলাম ক্যানরে দাদা, বিয়া করলাম ক্যান’ গানটি। এই গানই তাঁকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়। যে নকুল করতেন বাউল-আধ্যাত্মিক গান, সেই নকুলই ওই সময় হয়ে ওঠেন অসাধারণ এক জীবনমুখী গায়ক। দীর্ঘদিন তিনি ‘ইত্যাদি’তে জনপ্রিয় শিল্পী হিসেবে জীবনমুখী গান নিয়ে হাজির হয়েছেন। এর মধ্যে কলকাতার অডিও বাজারে লাগে নকুলের গানের ঢেউ। সেখান থেকে প্রকাশ পায় একাধিক অ্যালবাম। ভারত-বাংলাদেশে মিলে এভাবে তাঁর প্রায় অর্ধশত অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।

ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।

স্ত্রী এবং দুই সন্তান পলক কুমার বিশ্বাস ও মেয়ে প্রত্যাশা বিশ্বাসকে নিয়ে নকুলের সুখের সংসার। তাঁর গানের মধ্যে ‘চাচায় চা চায়’, ‘এই আমার পকেটে আছে’, ‘মানুষটা পাঁচ ফিট’, ‘হ্যালো হ্যালো মাই ডিয়ার’, ‘মাগো, তুমি যেন না কাঁদো’, ‘পাঁচতলার ওই চিলেকোঠায়’, ‘ভালো হইতে পয়সা লাগে না’ বেশ জনপ্রিয়।
নতুন একটি অ্যালবামের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন তিনি। অ্যালবামটি আসবে আগামী ঈদে।

Leave a Reply